সৌদি আরব থেকে খালি হাতেই ফিরলেন জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ‘শান্তি আলোচনা’ শেষ পর্যন্ত কোনো সাফল্যই পেল না। ইউক্রেন আশা করেছিল, এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে ইউক্রেনের নীতির বিষয়ে অনেক ‘নিরপেক্ষ’ দেশের সমর্থন পাওয়া যাবে। তবে সে ধরনের কিছুই হয়নি। সৌদি আরব অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে সম্মেলন করার পরও ইউক্রেনের উপকারে আসতে পারে, এমন কোনো অর্জন না আসায় ইউক্রেনের লোকজন নাখোশ হয়েছেন।

সম্মেলনে রাশিয়া ছিল না। রাশিয়ার এখানে থাকার কথাও নয়। কারণ, সম্মেলনে মস্কোকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হলে সেখানে ইউক্রেনের কাউকে দেখা যেত না। সুতরাং যেটি দাঁড়িয়েছে, সেটি হলো রাশিয়াও নেই, শান্তিও নেই।

হাজির হওয়া ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা একটি সাধারণ বিবৃতিতে একমত হতে পারেননি বলে সম্মেলনের কথিত অর্জনের বিষয়ে কোনো বিবৃতি ছাড়াই সম্মেলনটি শেষ হয়েছে। সন্দেহ নেই, সম্মেলনটি নেপথ্য থেকে আয়োজন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাতে ইউক্রেন ইস্যুতে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোকে রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত রাখা যায়। রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট সংগঠন হলো ব্রিকস। এসব দেশের বাইরে আরও কয়েকটি দেশ অবশ্য সংগঠনটির সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে। এদের মধ্যে শান্তি সম্মেলনে ব্রাজিল, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা যোগ দিয়েছিল। ইরানও সেখানে ছিল।

সম্মেলন শেষে চীন বলেছে, সম্মেলনটি দরকারি ছিল এবং ভবিষ্যতে আরেকটি সম্মেলন হবে বলে তারা আশা করে। উল্লেখ্য, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিরসনে চীন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। চীনকে একটি দোদুল্যমান দেশ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে যে কি না, রাশিয়াকে ছাড়াই একটি শান্তি চুক্তি অনুমোদন দিতে রাজি হতে পারে। তবে সেটি অনেক দূরের পরিকল্পনা। চীনের ওপর আবারও কোনো চাপ দেওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিরত রাখার চেষ্টায় চীন এই খেলা খেলছে।

এমনিতেই চীনের অর্থনীতি এখন সাংঘাতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে অপসারণ করা এবং চীনের ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়াসহ নানা খাতে শুদ্ধি অভিযান চালানোর জের ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। যদি চীনের অর্থনীতি ক্রমাগত বিপর্যস্ত হতে থাকে এবং লাগাতারভাবে চীন থেকে বিদেশি বিনিয়োগ সরে যেতে থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে সি চিন পিংয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শাসনের মাথার ওপর কালো মেঘের ঘনঘটা শুরু হবে।

রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের আগে থেকেই ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি তুলেছিল। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক ও ইসরায়েল উদ্যোগ নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে সে উদ্যোগ নস্যাৎ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই ইউক্রেনকে যুদ্ধে জয়ী করার চেষ্টা করেছে এবং রাশিয়ায় সরকার বদলের জন্য সর্বোচ্চ উসকানি দিয়ে এসেছে।

এখন যে বিষয়গুলো পরিষ্কার হয়েছে, তা হলো পুতিনের দৃশ্যমান দৃঢ় অবস্থানে থাকার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে রাশিয়ায় পুতিন সরকারকে উৎখাতের সব পশ্চিমা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইতিমধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ একটি ব্যয়বহুল ব্যর্থতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং সেই ব্যর্থতার ফলস্বরূপ ন্যাটোতে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

আমরা ইউক্রেনের সম্পূর্ণ পতনের কতটা কাছাকাছি, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেনের বিপুলসংখ্যক সেনা ও সাধারণ মানুষের হতাহত হওয়া এবং ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষয়প্রাপ্ত মনোবল দেখে মনে হচ্ছে, সেই ক্ষণগণনার দিন খুব বেশি দূরে নয়। সর্বশেষ সৌদি আরবের ‘শান্তি সম্মেলন’-এর ব্যর্থতা আরেকটি আভাস দিল যে ইউক্রেন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সমস্যা সমাধানে ইউক্রেনকে এখন নিজেদের মতো করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিতভাবে অনূদিত

  • স্টিফেন ব্রায়েন সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির সিনিয়র ফেলো