রাজধানীর বাড্ডার সিরাজ মিয়া মেমোরিয়াল মডেল স্কুল। সেখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুব কম। এটি ঢাকা-১১ আসনের মধ্যে পড়েছে
রাজধানীর বাড্ডার সিরাজ মিয়া মেমোরিয়াল মডেল স্কুল। সেখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুব কম। এটি ঢাকা-১১ আসনের মধ্যে পড়েছে

দেখা থেকে লেখা

ভোটারেরও লাগিয়া...

‘ভোট দিয়ে যা/আয় ভোটার আয়/মাছ কুটলে মুড়ো দেব/গাই বিয়োলে দুধ দেব/দুধ খাবার বাটি দেব...’।

এই প্যারোডি কবিতা লিখেছিলেন ‘দাদাঠাকুর’খ্যাত শরৎচন্দ্র পণ্ডিত। সেই কবিতায় সুর বসিয়ে ১৯৬২ সালে গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখার্জি।

তার প্রায় ৬২ বছর পর আজ ৭ জানুয়ারি রোববার সকাল পৌনে নয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় আসার সময় মোবাইল ফোনে সেই গান বাজিয়ে দিলাম।

না বাজিয়ে উপায় ছিল না। কারণ ভোটের দিনে চারপাশে যে ‘ভোট ভোট’ উৎসব থাকার কথা, তার কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।

রাস্তা ছিল একেবারে ফাঁকা। গাড়ি-ঘোড়া একেবারে নেই। মানুষজনের চলাচল চোখে পড়ার মতো না। যা-ও দু-একজনকে দেখা যাচ্ছে, তাদের কাউকেই ঠিক ‘ভোট দিতে যাওয়া লোক’ বলে মনে হচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের একটি ভোটকেন্দ্র। এখান থেকে যখন বের হই ( সোয়া আটটা) তখন ভোটারের দেখা ছিল না। যাঁদের দেখা মিলছিল, তাঁরা বিভিন্ন প্রতীকের এজেন্ট।
চাষাঢ়া এলাকায় এসে একটি কেন্দ্রে পাঁচ ছয়জন নারীকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।

যা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি এবং যা অনলাইন পত্রিকায় দেখছি তাতে ভোট নিয়ে প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে বাঁচিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি সকালে রাজধানীর সিটি কলেজে নিজের ভোট দিয়ে বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে।’ তাঁর কথায় আশা দেখছি।

একজন বোরকা পরা নারী আরেকজনকে বলছিলেন, ‘কতক্ষণ খাড়ায় থাকব?’ সেই আরেকজন বললেন, ‘থাক, আর বিশ বাইশ মিনিট। লোকজন আহুক।’

৩০ মিনিটের মধ্যে এক টানে চলে এলাম ঢাকার সবুজবাগের মায়াকানন এলাকায়।
ঢাকা-৯ আসনের ভোটকেন্দ্র কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভোটের লাইনে তের-চৌদ্দজন। তাঁদের প্রায় সবাই তরুণ ও যুবক বয়সী। লাইনে তাঁরা খুব সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। ভোট নিয়ে কোনো তাড়া নেই।

লাইনের একেবারে পেছনের দিকে দাঁড়ানো একজন ছিল পরিচিত। কাছে গিয়ে বললাম, ‘ভোট দিবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ, ভোট দিমু।’ বললাম, ‘ভোটার আসেনি কেন?’ তিনি বললেন, ‘অহনও আসে নাই, তয় আইসা পড়ব।’ আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তিনি আবার ডেকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, ‘বোঝেন না! আমরা আছি কয়জন, কারণ আমাগো থাকতে অইবো।’

কেন্দ্রের গেটের কাছে স্থানীয় একজন কাউন্সিলরের গাড়ি এসে দাঁড়াল। তিনি গাড়ি থেকে নামতেই ভোটের লাইন থেকে ভোটারদের একটা অংশ চলে এসে তাঁকে ঘিরে ধরল। একটু আগে লাইনটাকে যা-ও একটু ভোটের লাইন বলে মনে হচ্ছিল, কাউন্সিলর মহোদয়ের আগমনে সেটুকুও আর থাকল না।

কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রেও প্রায় একই ছবি দেখা গেল। সেখানে ভোটারের চেয়ে প্রার্থীদের এজেন্ট আর স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা বেশি দেখা গেল। রাস্তার পাশে টেবিল পেতে স্বেচ্ছাসেবকেরা ভোটারদের সাহায্য করতে বসেছেন। কিন্তু সাহায্যপ্রার্থীদের দেখা মিলছে কম।

ভোটকেন্দ্রে ভোটারের এমন আকাল দেখে অফিসে এসে লিখতে বসেছি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর দেখছি। ‘ঢাকা ১৮: ৪ কেন্দ্রে ২ ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১ শতাংশ’, ‘ঢাকা-১৩: ভোটকেন্দ্রে ডামি লাইন, খাওয়ানো হচ্ছে খিচুড়ি, আছে যাতায়াতের সুব্যবস্থাও’, ‘পুরান ঢাকার এক কেন্দ্রে প্রথম এক ঘণ্টায় ভোটার হাতে গোনা’, ‘মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের এক কেন্দ্রে প্রথম আধঘণ্টায় নারী ভোট নেই’—এই ধরনের শিরোনাম দেখছি।

যা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি এবং যা অনলাইন পত্রিকায় দেখছি তাতে ভোট নিয়ে প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তবে বাঁচিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি সকালে রাজধানীর সিটি কলেজে নিজের ভোট দিয়ে বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়তে পারে।’ তাঁর কথায় আশা দেখছি।

সকালের সেশন দেখে এসেছি। আনিছুর রহমানের আশা পূরণ হতে হলে, অর্থাৎ ৫০ শতাংশ ভোট পড়তে হলে বিকেলের ‘সেশনে’ ভোটার-সুনামি হতে হবে।
দেখা যাক, সন্ধ্যায় কী দাঁড়ায়।    

  • সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক
    sarfuddin2003@gmail.com