মতামত

মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে যে কৌশল নিয়েছে রাশিয়া  

কামালা হ্যারিস, ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
কামালা হ্যারিস, ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

আর কিছুদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচন যারা প্রভাবিত করতে চায়, তাদের মধ্যে অন্যতম রাশিয়া। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, এ জন্য রাশিয়া বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করছে। আর সে জন্য ব্যবহার করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি রাশিয়ার পাশাপাশি ইরানও ব্যবহার করছে দক্ষতার সঙ্গে। এসব কনটেন্টের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কোনো এক দিকে ভোটারদের আকৃষ্ট করা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথাগুলো জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দপ্তর থেকে একজন।

রাশিয়া নানা রকম কৃত্রিম ছবি, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিশিষ্ট আমেরিকান ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কনটেন্ট আছে। তাঁদের মুখ দিয়ে বলিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রকম সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কথা।

এসব বিষয় আমেরিকায় জাতীয় পর্যায়ে বিভাজন তৈরি করার মতো স্পর্শকাতর। যেমন অভিবাসন নিয়ে চাঞ্চল্যকর কথাবার্তা সহজেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। রুশ কনটেন্টগুলো সম্ভবত সেটাই চায়। কর্মকর্তারা বলেছেন যে এসব চেষ্টা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসাহিত করতে আগ্রহী। আর স্বাভাবিকভাবেই বেকায়দায় ফেলতে চায় কমলা হ্যারিসকে।  

কমলা হ্যারিসের ভিডিওগুলো বিভিন্ন উপায়ে বদলে ফেলা হচ্ছে। সেখানে কমলাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন নিন্দনীয় মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয়ে তাঁর মুখ থেকে বেফাঁস কথা বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও লক্ষ করা গেছে।

তবে রাশিয়ার সাধারণ প্রযুক্তির ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে। মার্কিন সেই কর্মকর্তা বলেছেন যে রুশদের উদ্যোগে একটা ভিডিও তৈরি হয়েছিল। সেটা বেশ সাড়া ফেলে। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন নারী দাবি করছেন যে ২০১১ সালে নাকি কমলা হ্যারিসের গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে না থেমেই পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে মাইক্রোসফট পরীক্ষা করে জানিয়েছে, এটা ছড়িয়েছিল সান ফ্রান্সিসকোর স্থানীয় এক টিভি স্টেশনের ওয়েবসাইট থেকে। সেই টিভি স্টেশনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কমলা হ্যারিসের বক্তৃতার কিছু ভিডিও কারসাজির পেছনেও রাশিয়া রয়েছে বলে কর্মকর্তারা দাবি করছেন। বক্তৃতাগুলো এডিটিং টুল ব্যবহার করে বা এআই ব্যবহার করে পরিবর্তন করা হয়। পরে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রুশরা এই কনটেন্টগুলো তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের চ্যানেলকেই ব্যবহার করতে চায়। এটা বেশ উদ্বেগজনক এক ব্যাপার মার্কিনদের জন্য।

কমলা হ্যারিসের ভিডিওগুলো বিভিন্ন উপায়ে বদলে ফেলা হচ্ছে। সেখানে কমলাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন নিন্দনীয় মানুষ হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংবেদনশীল বিষয়ে তাঁর মুখ থেকে বেফাঁস কথা বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও লক্ষ করা গেছে।

মার্কিন এই কর্মকর্তারা অবশ্য অন্য আরও অনেক কিছু বলেন। একদিকে কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কনটেন্ট তৈরি করছে রাশিয়া। অন্য দিকে ইরান নেমেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ট্রাম্পের নামে বিভিন্ন স্টোরি তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন ছদ্ম ‘বৈধ’ নিউজ আউটলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইরানিদের এসব স্টোরি আবার শুধু ইংরেজিতে নয়, স্প্যানিশ ভাষায়ও তৈরি হচ্ছে। এসব কনটেন্ট মূলত তৈরি হচ্ছে গাজা যুদ্ধ আর প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিভিন্ন কেচ্ছাকাহিনি নিয়ে।

এদিক থেকে চীনও নাকি পিছিয়ে নেই। দাপ্তরিকভাবে মার্কিন নির্বাচনের জন্য তৃতীয় প্রধান বিদেশি হুমকি হিসেবে দেখা হয় চীনকে। তারা নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মার্কিন নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের ফায়দা তুলতে চাইছে। তবে তাঁদের মূল উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাববলয়কে শক্তিশালী করা। বিশ্বকে নিয়ে চীন কী ভাবে তা সবার কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা। সেই সঙ্গে  যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের ব্যবহার, অভিবাসন নিয়ে সমস্যা এসব নিয়ে অনেক কনটেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দিচ্ছে চীন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গোয়েন্দারা বলেছে যে বেইজিং আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আগ্রহী নয়। এই নির্বাচন যে আসলে তাঁদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না, তা দেখাতে যেন তারা বেশি মনোযোগী।

মার্কিন কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে দেশের ভেতরেও উদ্বিগ্ন আছেন। যেমন ডিপফেক দিয়ে অস্বস্তিকর বা বিপজ্জনক ভিডিও বানানো বা অডিও বানিয়ে সেখানে প্রার্থীদের দিয়ে কিছু বলিয়ে নেওয়া। এসব করে সহজেই ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা যে হচ্ছে না, তা বলার উপায় নেই। তবে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মিম, কৌতুক তৈরিতে তা সীমিত আছে। তেমনই যে থাকবে, এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।

  • শ্যানন বন্ড সাংবাদিক
    এনপিআর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন