ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর সর্বত্র এখন রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি। সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়েও জোরেশোরে আলোচনা চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে সংবিধান সংস্কার নিয়ে একটি কমিশনও গঠন করেছে। কিন্তু নতুন সংবিধান প্রণয়ন কীভাবে হবে, এর প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি কেমন হবে, চ্যালেঞ্জগুলো কী কী—এসব বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণমূলক এ লেখা লিখেছেন এম এ মতিন ও রিদওয়ানুল হক
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিচারপতি টমাস এম কুলি (১৮২৪–১৮৯৮) তাঁর ক্ল্যাসিক বই কনস্টিটিউশনাল লিমিটেশনস-এ সংবিধানের একটি সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘সংবিধান হচ্ছে একগুচ্ছ নিয়ম ও নীতি, যার মাধ্যমে সার্বভৌম ক্ষমতা সাধারণত কার্যকর করা হয়।’
ছাত্র–জনতার কল্যাণে একটি অন্ধকার শ্বাসরুদ্ধকর একনায়কত্বের শিকল থেকে বেরিয়ে এসে জাতি নতুন করে তার সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগের বিরল সুযোগ পেয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রাক্কালে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সামরিক শাসন থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্নে গোটা জাতি প্রায় একবাক্যে ছয় দফায় ভোট দিয়েছিল। জনগণের রায়কে পদদলিত করে ইয়াহিয়া খান একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে নিরস্ত্র জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাসের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনি। রচিত হয় বাহাত্তরের সংবিধান। অচিরেই সে সংবিধান জন্ম দেয় আরেক স্বৈরশাসকের।
স্বৈরাচারের অভিশাপে গত ১৫ বছর জনগণ স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত থাকে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনরোষ শেষতক—এক দফা অর্থাৎ—সরকার পতনের আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসে। আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ফাইয়াজ, সৈকতসহ অগণিত তাজা প্রাণ তাদের হাতে শহীদ হন। আন্দোলন বিপ্লবে পরিণত হয়, যার ফলে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরই কারণে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে এমন একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা উপহার দেওয়া, যার মাধ্যমে এ দেশে স্বৈরশাসক আর কোনো দিন চেপে না বসতে পারে।
বিপ্লবের সাংবিধানিক অধিকার
প্রাচীন চীনে স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বিপ্লবের নামকরণ করা হয়েছিল ‘ম্যান্ডেট অব হ্যাভেন’। এ নামেই ঝো বা চৌ ডাইনেস্টি, সাং ডাইনেস্টির বিরুদ্ধে জনগণকে বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। প্রাচীন রোমে টারকুইন দ্য প্রাউডকে স্বৈরশাসক নাম দিয়ে তাঁকে উৎখাত করা হয়েছিল। সম্রাট নিরোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন প্রিটোরিয়ান গার্ডদের নেতা সুব্রিয়াস ফ্লেবাস। তিনি জনগণের বিপ্লব করার অধিকারকে জন্মগত অধিকাররূপে ব্যাখ্যা করেছিলেন। মধ্যযুগে ইউরোপে একই অধিকার বারবার কার্যকর হয়েছে।
১৬৮৮ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বিতীয় জেমসকে অপসারণ করে, তাঁর জায়গায় তৃতীয় উইলিয়ামকে নতুন শর্তে রাজা রূপে প্রতিষ্ঠা করে। জনগণের সেই অধিকারের সাংবিধানিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জন লক তাঁর টু ট্রিটাইজেস অব গভর্নমেন্ট বইয়ে বলেন, ‘যখনই আইনপ্রণেতারা জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করে এবং তাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার জোরে জনগণকে দাসে পরিণত করে, তখন বাস্তবে তারা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তখন জনগণ এদের শাসন মান্য করতে বাধ্য থাকে না। তারা স্রষ্টার দেওয়া আশ্রয়ে চলে যায়। এর মাধ্যমে শাসক বিশ্বাস ভঙ্গ করে এবং জনগণ তাদের দেওয়া ক্ষমতা নিজেদের হাতে ফিরে পায়।’
এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকান বিপ্লব সংঘটিত হয়। টমাস জেফারসন তাঁর ‘স্বাধীনতার ঘোষণায়’ বলেন, ‘আমরা কিছু শাশ্বত বাণীকে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিই, যেমন প্রত্যেক মানুষ কিছু অলঙ্ঘনীয় জন্মগত অধিকার নিয়ে জন্মায়, যার মধ্যে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও আনন্দঘন জীবন অন্বেষণের অধিকার উল্লেখযোগ্য।’
যখনই কোনো শাসক ওই সব অধিকার হরণ করে, তখনই জনগণের জন্য সেই শাসককে পরিবর্তন বা উৎখাত করা অবশ্যকর্তব্য হয়ে যায়। ওই ব্যবস্থার পরিবর্তে বিপ্লবী জনগণ তাদের প্রয়োজন, দর্শন, ধ্যানধারণা ও ইতিহাসের ভিত্তিতে নতুন সংবিধান রচনা করার অধিকার লাভ করে।
সুতরাং পুরোনো ব্যবস্থাকে পরিবর্তন বা উৎখাত করার পর নতুন সরকার এবং তার কাঠামো ও ক্ষমতার বিন্যাস তারাই করবে, যারা বিপ্লব সফল করেছে, অর্থাৎ ছাত্র-জনতা। তারা পুরোনো ব্যবস্থার কিছু অংশ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন যেমন করতে পারবে, তেমনই পুরো ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে নতুন সংবিধানও রচনা করতে পারবে। বিপ্লবের এটাই ন্যায়সংগত অধিকার ও পরিণতি।
নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি
অভূতপূর্ব বিপ্লবের সফলতার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ যে সাংবিধানিক মুহূর্তে উপনীত হয়েছে, তাতে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উত্থাপিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পক্ষসহ বিদগ্ধজনেরা একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলছেন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংবিধান পুরোপুরি না বদলালে সামনের দিনগুলোয় নতুন স্বৈরাচারের উত্থান ঠেকানো যাবে না। অন্য কিছু লেখক-চিন্তাবিদও একই মত দিয়েছেন। তরুণ লেখক রিফাত হাসান বলেছেন, রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে সুসংহত করতে হলে একটি সর্বদলীয় ‘অভিভাবক কাউন্সিল’ গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও তা গণভোটের মাধ্যমে গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা বুঝতে পারি, একটি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের জন-আকাঙ্ক্ষাই নতুন সংবিধানের দাবির ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। আর এই দাবির অন্তর্নিহিত অনুমান হলো বিদ্যমান সংবিধান অকেজো বা তা স্বৈরাচারী শাসনের অনুকূল বা সহায়ক। এই অনুমানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। অনুমানের বাইরেও সত্যিকার অর্থে সংবিধানের ভেতর সরকারের তিন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। তারপরও বলতে হয়, সংবিধান কেবল লিখিত একটি দলিল নয়। এই একই সংবিধানের অধীন আমরা ১৯৯৯-৯৬, ১৯৯৬-২০০১, ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৯-২০২৪–এর সরকারের চেয়ে ভালো সরকারব্যবস্থা পেয়েছি। অল্প কথায়, সংবিধানের অক্ষরের বাইরে যেকোনো দেশের সংবিধান একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিও বটে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় বৈধভাবেই একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব, সে কথা মেনে নিয়েও এই প্রস্তাবের রাজনৈতিক, আইনগত ও সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব। কোনো স্বাধীন দেশে যখন বিপ্লব সংঘটিত হয়, তখন তার সফল সমাপ্তি অনিবার্যভাবে সংবিধানব্যবস্থার পরিবর্তনে গিয়ে দাঁড়ায়। এ পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে।
প্রথমত, সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান লিখনের মাধ্যমে নতুন ব্যবস্থায় যাওয়া, যেমনটি ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৯০–এর দশকে বর্ণবাদ বিলুপ্ত হওয়ার পর। আরব বসন্ত-উত্তর আরবের কিছু দেশেও এ ধরনের বিপ্লব-উত্তর নতুন সংবিধান রচিত হয়েছে। সাংবিধানিক আইনজ্ঞ স্টিফেন গার্ডবাউম এ প্রক্রিয়াকে বৈপ্লবিক সাংবিধানিকতা (রেভল্যুশনারি কনস্টিটিউশনালিজম) বলেছেন। দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটি হলো সফল নির্বাচনের মাধ্যমে সংঘটিত বৈপ্লবিক মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য সংবিধানের বিপুল পরিবর্তন। স্টিফেন গার্ডবাউম এটিকে বিপ্লবমুখী সাংবিধানিকতা (কনস্টিটিউশনালিজম টু রেভল্যুশন) বলেছেন।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড আলবার্ট দেখিয়েছেন, সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমেও রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপ্লব ও নবায়ন (রেভল্যুশন অ্যান্ড রিনিউয়াল) সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ তিনি ২০০৭ সালের তুরস্কের সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছেন, যার মাধ্যমে তুরস্কে সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল। আমাদের দেশেও চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে সেই সংশোধনী অবশ্য বেআইনিভাবে প্রণয়ন করা হয়েছিল।
স্টিফেন গার্ডবাউমের ভাষা ধার নিয়ে বলতে পারি, ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া ছিল নির্বাচনের মাধ্যমে সংঘটিত বিপ্লবসম। তদানীন্তন স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় সংগ্রামের ফলে এরশাদ পদত্যাগ করলে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সাংবিধানিক-রাজনৈতিক বিপ্লবের পর সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুনরায় গ্রহণ করা হয়েছিল।
সংস্কারের পদ্ধতি কী হবে
আমাদের জুলাই বিপ্লব অবশ্য আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী বিপ্লবসহ এ দেশের অন্যান্য আন্দোলন-বিপ্লব থেকে আলাদা। জুলাই বিপ্লব প্রথমে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হলেও দ্রুতই তা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। কাজেই বিপ্লব-উত্তর জনগণ তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার কারণেই সাংবিধানিক সংস্কারের বৈধ ক্ষমতা ধারণ করে। প্রশ্ন হলো, সেই সংস্কারের পদ্ধতি কী হবে?
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার কীভাবে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চায়, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। সরকার কি নির্বাচনের পর সংসদের মাধ্যমে সংশোধনীর দিকে যাবে, নাকি সংবিধান সভা গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে?
বিপ্লব-উত্তর পরিবেশ, বিশেষত যে সমাজে রাজনৈতিক মেরুকরণ রয়েছে এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা রয়েছে, তেমন সমাজে সংবিধান পুনর্লিখন যথেষ্ট দুরূহ হতে পারে। বিষয়টি তিউনিসিয়ার সাম্প্রতিক বিপ্লব ও নতুন সংবিধান তৈরির ইতিহাসের বরাতে ব্যাখ্যা করা যায়।
২০১০ সালে সংঘটিত বিপ্লবের কারণে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে স্বৈরশাসক বেন আলী দেশ ত্যাগ করেন। রাজনৈতিক দল নয়, বরং সাধারণ জনতাই সেই বিপ্লবের কারিগর বা অগ্রসেনা ছিল। এ বিপ্লব ছিল সে দেশের চরম দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনিবার্য পরিণতি। মানুষ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংবিধানের দাবি তোলে। ২০১১ সালের অক্টোবরে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ও সংবিধান গৃহীত হয়।
ইসলামপন্থী দল এননাহদা সর্বাধিক ভোট পেলেও ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে। তার পরপরই এননাহদা সরকারব্যবস্থায় একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে ধর্মনিরপেক্ষ দলের নেতা (বিরোধী নেতা) খুন হলে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নাটকীয়তার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। নতুন সংবিধান প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বণ্টনের মাধ্যমে আধা রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারপদ্ধতি প্রবর্তন করে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির বাইরে থেকে কায়িস সায়িদকে প্রেসিডেন্ট ও একটি বিভক্ত সংসদ নির্বাচিত করে।
কালক্রমে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সায়িদ স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি সংসদ ভেঙে দেন এবং নিজেই একটি নতুন সংবিধান তৈরি করেন। এর মধ্যে দুবার নতুন সরকার নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। ২০২২ সালের জুলাইয়ে গণভোটের মাধ্যমে সেই সংবিধান পাস করিয়ে নেন প্রেসিডেন্ট। এর মাধ্যমে তিউনিসিয়া বিপ্লব-পূর্ববর্তী শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিশাসিত অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যায়।
সংক্ষেপে, দেশ একটি সংবিধান প্রণয়নের দিকে গেলে সেই যাত্রায় বাধাবিপত্তি নিয়ে একটু ভাবতে হবে। আমাদের সাংবিধানিক পরিচিতি, জাতীয় পরিচিতি ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে হবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে থাকবে কি না অথবা তা ধর্মনিরপেক্ষতার একই সঙ্গে থাকবে কি না ইত্যাদি বিষয়ে একটি ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে হবে সর্বাগ্রে।
নতুন সংবিধান তৈরি কিংবা সংশোধনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কার গ্রহণ করা হোক না কেন, একটি সর্বদলীয় মতামত ও অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার আগেই সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি, বিশেষ করে বিপ্লব সংঘটনকারী ছাত্র–জনতার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাসংক্রান্ত চুক্তি বা প্যাক্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ধরনের চুক্তির বড় একটি রাজনৈতিক, আইনগত ও সাংবিধানিক মূল্য রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী বিচারপতি অলিভার উইনডেল হোমস বলেন, ‘আইনের ইতিহাস যুক্তিবিজ্ঞান নয়; এটা হচ্ছে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা।’ তাই অতীতের অর্জন ও ব্যর্থতা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে জনগণের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে এবং তাদের সম্মতিক্রমে হয় পুরোনো সংবিধানকে সংশোধন অথবা নতুন সংবিধান রচনার মাধ্যমে জাতিকে আগামীর সুন্দর ও নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার এখনই সময়।
এম এ মতিন সাবেক বিচারপতি, আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
ড. রিদওয়ানুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত