অধ্যাপক রেহমান সোবহান
অধ্যাপক রেহমান সোবহান

রেহমান সোবহানের বিশ্লেষণ

সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশে সংস্কারের আলোচনা ও উদ্যোগ নতুন কিছু নয়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি। এবার অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও বিভিন্ন মহল থেকে সংস্কারের দাবি উঠেছে এবং বেশ কিছু সংস্কার কমিশনও গঠিত হয়েছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে সংস্কারপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত, তা নিয়ে লিখেছেন রেহমান সোবহান

সামনের চ্যালেঞ্জ

বিগত শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অপশাসন নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগ, দুর্নীতি, নির্বাচনী প্রক্রিয়া—এই ছয় ক্ষেত্রে সংস্কার-পরিকল্পনার খসড়া তৈরির জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এ ছাড়া দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি দেশের মূল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য। আরেকটি কমিটি হয়েছে নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো অবিলম্বে মোকাবিলা করা এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সুপারিশ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য, নারী, গণমাধ্যম ও শ্রম-সম্পর্কিত আরও চারটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে এটি একটি বিশাল কাজ, বিশেষ করে এর বাস্তবায়ন। আমরা অতীতে এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারি নীতির বাস্তবায়ন ব্যর্থতার পাশাপাশি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমবর্ধমান অবক্ষয় প্রত্যক্ষ করেছি। অনুমান করা যায়, এই অপশাসনের প্রক্রিয়া ঘুরিয়ে দিতে কমিশন ও কমিটিগুলোর নিজ নিজ ক্ষেত্রে কী করা দরকার, সে সম্পর্কে একগুচ্ছ উপযুক্ত ধারণা হাজির করবে।

তবে এ বিষয়ে জনসাধারণের কাছে একটি বিষয় তেমন স্পষ্ট নয়। তা হলো, কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংস্কারগুলো কার্যকর করা হবে এবং কারা এসব সংস্কার কার্যকর করবেন?

আমাদের মনে রাখা দরকার, যেসব ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন, সেসব সমস্যা যে কেবল বিগত শাসনামলেই উদ্ভূত হয়েছে, এমন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাগুলো কয়েক দশকের বেশি সময় আগের। প্রতিটি শাসনামলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানে ব্যর্থতা সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসন এসব সমস্যাকে ক্যানসারের মতো গভীরতর করেছে। আমাদের রাজনীতিকে অপূরণীয় ক্ষতি থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন গুরুতর অস্ত্রোপচারেরমতো হস্তক্ষেপ।

সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলো যেসব সমস্যা সুরাহা করার কথা, সেগুলো দীর্ঘদিনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মনে রাখতে হবে যে বিগত বছরেও সংস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব জনগণের সামনে হাজির করা হয়েছিল। সেগুলোর কোনোটা এসেছিল বিভিন্ন কমিশন বা কমিটির মাধ্যমে, কোনোটা নাগরিক সমাজ বা গবেষকদের পক্ষ থেকে।

প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারে (ডিসেম্বর ১৯৯০-মার্চ ১৯৯১) আমি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলাম। সে সময় ২৯টি টাস্কফোর্স গঠনে আমি নিজেও যুক্ত ছিলাম। টাস্কফোর্সগুলোর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতি ও প্রশাসনপ্রক্রিয়ার নানা রকম সমস্যার সমাধান করা।

এসব সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে এরশাদের আমলে। টাস্কফোর্সগুলোয় ছিলেন সেই সময়ের দেশের ২৫৫ জন সেরা পেশাদার প্রতিভাবান ব্যক্তি। সেখানে নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব ছিল। তাঁরা স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে দুই মাসের মধ্যে এসব প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য কাজ করেছিলেন।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা) ছিলেন স্বনির্ভরতাবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন টাস্কফোর্সের প্রধান। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ছিলেন সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে টাস্কফোর্সের প্রধান। আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী ও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতো যাঁরা এখন বিভিন্ন কমিশন বা কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরাও সে সময় এসব টাস্কফোর্সের সদস্য ছিলেন।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল, যেন ১৯৯১ সালের মার্চের নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার এবং সংসদে বিরোধী দল উভয়কেই পেশ করা যায়। দুঃখজনকভাবে, নির্বাচিত বিএনপি সরকার প্রতিবেদনগুলো সামান্যই কাজে লাগিয়েছিল।

২০০১ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে একই রকম চেষ্টা করেছিল সিপিডি। সেই সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও সংস্কারের প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৬০ জন পেশাদার ব্যক্তিকে নিয়ে ১৬টি টাস্কফোর্স গঠন করেছিল। সেই প্রতিবেদনগুলোকেও তৎকালীন নির্বাচিত সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি।

বিভিন্ন সরকার নীতি সংস্কারের জন্য এ রকম আরও কমিশন গঠন করেছিল। সেই প্রতিবেদনগুলোও সেসব সরকারের দ্বারাই বহুলাংশে উপেক্ষিত থেকে গেছে। এ রকম দুটি প্রতিবেদনের কথা মনে পড়ছে। একটি হচ্ছে, শেখ হাসিনার প্রথম সরকার কর্তৃক কমিশনকৃত জনপ্রশাসন সংস্কার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন (১৯৯৬-০১) এবং ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গঠিত শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন।

সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য কোন শাসকগোষ্ঠী কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেটাই এখনো প্রাসঙ্গিক বিষয় হয়ে আছে। প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন কোনো সরকারের সংস্কার বিষয়ে আন্তরিকতা নিয়ে সামান্যই সন্দেহ করা যায়। বিশেষ করে যেহেতু এই সরকার বাংলাদেশের তরুণদের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। এত বছর ধরে জাতীয় রাজনীতি যে রোগের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে, এসব তরুণ এখনো সেই রোগে দূষিত হননি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ধরে নিয়ে আমি নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু বাস্তব প্রসঙ্গ উত্থাপন করছি। বিগত সরকারগুলোর সংস্কার প্রচেষ্টার তুলনায় বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রচেষ্টা যাতে তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক ফল প্রদান করে, তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের এসব বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

১. সংস্কার চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া

ক. কমিশনের খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে কার সঙ্গে আলোচনা করা হবে?

রাজনৈতিক দল: কোন দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে, তা নির্ধারণের জন্য মানদণ্ড কী হবে?

সুশীল সমাজ: এই বড় অংশের মধ্য থেকে কারা আলোচনার জন্য অগ্রাধিকার পাবে?

তরুণ: যাঁরা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেবল তাঁরাই কি সুযোগ পাবেন, নাকি অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অন্যরাও সুযোগ পাবেন?

অংশীজন: নির্দিষ্ট কমিশনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর অংশীজন?

খ. উপরিউক্ত প্রতিটি অংশে উদ্ভূত মতামতের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কাদের মতামত অগ্রাধিকার দেওয়া হবে?

গ. ধরে নিচ্ছি, সব (?) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনা করা হবে। কিন্তু প্রতিনিধিত্ব ও সম্ভাব্য নির্বাচনে গুরুত্বের বিচারে সব দল সমান নয়। এই রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে আমলে নেবেন?

ঘ. জনসাধারণের সঙ্গে পরামর্শপ্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনের চূড়ান্ত খসড়াটি সম্ভবত পুরো উপদেষ্টা পরিষদ দ্বারা আলোচিত ও অনুমোদিত হবে। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সংস্কার এজেন্ডায় সেটিই কি অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দিষ্ট অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হবে? উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত সংস্কার এজেন্ডা কি আবার অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে? যদি হয়, তাহলে সেখানে উদ্ভূত মতবিরোধ কীভাবে খসড়ায় স্থান পাবে?

২. সংস্কার বাস্তবায়ন

উপদেষ্টা পরিষদ দ্বারা চূড়ান্ত সংস্কার কখন, কীভাবে এবং কে বাস্তবায়ন করবে?

ক. সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের সুপারিশগুলোকে নীতি প্রস্তাব, আইন প্রণয়ন এমনকি সাংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কার্যকর করা যায়। কাজটি করার দায়িত্ব কার হবে?

খ. অন্তর্বর্তী সরকার কি তার মেয়াদেই প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বা সব সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করার পরিকল্পনা করছে? এই সরকার যদি কেবল কিছু নির্বাচিত সংস্কার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোন সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হবে, তা বেছে নেওয়ার জন্য নীতিমালা কী হবে?

গ. কিছু রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপি ইঙ্গিত দিয়েছে যে সংস্কার শুধু নির্বাচিত সরকারই বাস্তবায়ন করতে পারে।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী?

রাজনৈতিক দলগুলো যদি সবুজ সংকেত দেয়, তবেই কি অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে?

অন্তর্বর্তী সরকার যদি মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান যা-ই হোক না কেন, সংস্কারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকারের এগিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করা উচিত?

ঘ. চূড়ান্ত বিচারে, প্রশাসন ও নাগরিকদের জীবনকে প্রভাবিত করে এ রকম অর্থপূর্ণ সংস্কার এমন একটি সরকারকে টেকসই ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত, যা চার-পাঁচবছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবে বলে আশা করা যায়। আর তা সাধারণত নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই সম্ভব। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সংস্কারের ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ বাড়ানোও সম্ভব হতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারে, বিশেষ করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে। অন্তর্বর্তী সরকার কি আদৌ এই পথে যেতে আগ্রহী?

৩. অন্তর্বর্তী সরকার-পরবর্তী পর্যায়ে সংস্কার বাস্তবায়ন

এমনও হতে পারে যে অন্তর্বর্তী সরকার অনিচ্ছুক এবং/অথবা সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম নয়। তাহলে অনুমান করা যেতে পারে যে কোনো উল্লেখযোগ্য সংস্কার এজেন্ডার ভাগ্য সম্ভাব্য নির্বাচিত সরকার দ্বারা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে। বিষয়টি মাথায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের সম্ভাবনা আছে, এমন রাজনৈতিক দল/দলগুলোর সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি, ইচ্ছা ও ক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে।

সংস্কার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নির্বাচিত শাসনামলের সময়জুড়ে টিকিয়ে রাখতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টাই শুধু যথেষ্ট নয়; বরং তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থকেও সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং এর উদ্দিষ্ট ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

নীতি ও সংস্কার উভয় ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শাসক দল ও এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং প্রভাবশালী সামাজিক শক্তিগুলোর মধ্যকার এই দ্বন্দ্বই ঐতিহাসিকভাবে পরবর্তী শাসনের সময়কালে সংস্কার বাস্তবায়নকে হতাশায় পর্যবসিত করেছে। এ জাতীয় উদ্বেগগুলোকে মাথায় রেখে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো প্রণিধানযোগ্য:

ক. বড় নির্বাচনী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোনো সরকার যদি সংস্কারের সূচনা করা বা সংস্কার অব্যাহত রাখার মধ্যে নিজের স্বার্থ আর খুঁজে না পায়, তাহলে সংস্কারের টেকসই নিশ্চিত করার জন্য কী করা যেতে পারে?

খ. অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা চূড়ান্ত করা সংস্কারগুলো কি এমনভাবে করা হবে, যাতে সম্ভাব্য নির্বাচিত সরকারগুলোর সংস্কারগুলো সম্পাদন করতে বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা যায়?

গ. নিচের পক্ষগুলোর মাধ্যমে সংস্কারের ক্রমাগত তদারকি নিশ্চিত করার জন্য সংস্কারগুলোর মধ্যে কী রকম তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহির ব্যবস্থা তৈরি করা যায়:

১.সংসদ; ২. বিচার বিভাগ; ৩.সুশীল সমাজ; ৪. সংবাদমাধ্যম; ৫.সংস্কারের দাবি তুলেছেন যেসব তরুণ; ৬.অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

জনপরিসর বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা সীমিত। সেই তুলনায় বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে আমার দীর্ঘ সময়ের পরিচিতি আছে। এই দুই থেকে আমার বিশ্বাস জন্মেছে যে সব সরকার যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, তা আসলে নীতির ঘাটতি বা সংস্কারের অভাব নয়। সমস্যা ছিল বরং নিজস্ব নীতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতায়। এই ব্যর্থতাগুলোর উৎপত্তি ঐকান্তিকতার অভাব, কায়েমি স্বার্থের উপস্থিতি থেকে।

নীতিগুলো বাস্তবায়িত হলে কায়েমি স্বার্থের ক্ষতি হয়। আর সেই সঙ্গে আছে প্রশাসনের গুণমানে ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের কারণে সক্ষমতার অভাব। আশা করি প্রফেসর ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকার এবং কমিশনগুলো সংস্কারের জন্য তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দৃষ্টিকোণ মাথায় রাখবেন।

(ইংরেজি থেকে অনূদিত)

  • রেহমান সোবহান অর্থনীতিবিদ এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা