বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে ডাব-নারকেলের উৎপাদন কম হচ্ছে। বিদেশি জাতের চারা আমদানি কিংবা ভারত থেকে নারকেল আমদানি করে এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হয়নি। ডাব-নারকেল ফলন কেন কম হচ্ছে এবং এ বিষয়ে করণীয় কী, তা নিয়ে লিখেছেন গওহার নঈম ওয়ারা
আমাদের কোষাগারে যতই ডলারের টান পড়ছে, ততই আমাদের আমদানির তালিকা লম্বা হচ্ছে। আমদানির খাতায় নতুন নাম যুক্ত হয়েছে নারকেল। পান, শজনে, কচুলতির সঙ্গে এখন নারকেল আসছে ট্রাকের পর ট্রাক।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুই ট্রাকে মোট ৫০ টন নারকেল প্রথমবারের মতো হিলি স্থলবন্দরের পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড চত্বরে খালাস হয়। এক হাজার বস্তায় সুদূর তামিলনাড়ু রাজ্যের এনায়েতপুর এলাকা থেকে আমদানি করা হয় এসব নারকেল। এটি ছিল মোট ২০০ টনের প্রথম চালান, আরও ১৫০ টন আসছে। বলা বাহুল্য, দেশে নারকেলের চাহিদা পূরণের জন্যই এই অপ্রচলিত আমদানি।
চাহিদা কত
চাহিদা কত, জোগান কত তার কোনো বস্তুনিষ্ঠ হিসাব কারও কাছে নেই। পরিসংখ্যান নিয়ে আমাদের খাবি খাওয়ার ইতিহাস বহু প্রাচীন। একবার এক দাপুটে কৃষিমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রকাশ্যে এ বিষয়ে তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। মাননীয় মন্ত্রীর তিরস্কার বা হতাশায় সংশ্লিষ্টরা সাময়িক মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেও পরিস্থিতির খুব একটা রকমফের হয়নি। তেমনটা হলে হালের খাদ্য গ্রহণে মাথাপিছু ব্যয়ের হিসাব নিয়ে বিতর্কের জটলা পাকত না।
সচেতন পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণে গড় মাথাপিছু ব্যয় মাসে ১ হাজার ৮৫১ টাকা। তাদের মতে, এটিই ‘ফুড পোভার্টি লাইন’ বা খাদ্য দারিদ্র্যসীমা। অন্যদিকে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হিসাবে, গত ডিসেম্বরজুড়ে একই খাদ্য গ্রহণে ব্যয় করতে হয়েছে মাথাপিছু ২ হাজার ৭৯৯ টাকা।
দেখা যাচ্ছে, বিবিএসের মাথাপিছু ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণের ব্যয় ডব্লিউএফপির তুলনায় ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ৯৪৮ টাকা কম। পরিসংখ্যান পণ্ডিতেরা ৪ থেকে ৫ শতাংশ পরিসংখ্যান চ্যুতিকে গ্রহণযোগ্য মনে করলেও প্রায় ৩৪ শতাংশ গরমিলকে ‘গোঁজামিল’ বলেই মনে করবেন। গোঁজামিলের পরিসংখ্যান দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন আর আন্দাজে ঢিল মারার মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।
যা-ই হোক, নারকেলের কথায় ফিরে আসি। ডাব-নারকেলের যে একটা ঘাটতি দেশে তৈরি হয়েছে, তা কোভিডের কাল থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। সে সময় ডাবের দাম একঝটকায় বেড়ে যায়। দফায় দফায় অভিযান চালিয়েও সেটা আর কমানো সম্ভব হয়নি।
শ্রীলঙ্কায় বছরে মাথাপিছু নারিকেলের ব্যবহার ১৪০টি। আর বাংলাদেশে একজন মানুষ বছরে মাত্র একটি নারকেল ব্যবহার করে। এই হিসাবে বছরে আমাদের প্রয়োজন প্রায় ১৭ কোটি নারকেল।
জোগান পরিস্থিতি
জোগান যে দিন দিন কমছে, তার অনেক আলামত খালি চোখেই ধরা পড়ছিল অনেক দিন থেকেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে নারকেল উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৬ হাজার টন। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ৫ লাখ ১০ হাজার টন। বস্তুত ২০১৬-১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নারকেলের উৎপাদন কমতে থাকে। সেই বছর নারকেলের ফলন ছিল ৬ লাখ ৮৮ হাজার টন।
দেশের মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নারকেল ডাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ৪৫ শতাংশ ঝুনা নারিকেল হিসেবে খাওয়া হয়। ৯ শতাংশ দিয়ে তেল তৈরি হয় এবং অবশিষ্ট ৬ শতাংশ থেকে চারা তৈরি করা হয়। ডাব আর নারিকেলের জোগান মৌসুমে বাড়ে-কমে। উৎপাদনের সঙ্গে আবহাওয়ার নিবিড় সম্পর্ক আছে। শীতের সময় ফলন কমে যায়। আবার শীতের সময় তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে তার একটা দীর্ঘমেয়াদি চাপ পড়ে সার্বিক উৎপাদনের ওপর।
ফলন কমে যাচ্ছে কেন
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নারকেল বেশি উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নারকেল বেশি হয়। উপকূলীয় দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে বিশাল নারকেলবাগান। যে কারণে দ্বীপটির স্থানীয় জনপ্রিয় নাম হলো নারিকেল জিঞ্জিরা। সেখানকার পরিস্থিতিও এখন অন্য রকম।
দ্বীপে ফলন না হওয়ায় পর্যটনের মৌসুমে টেকনাফ থেকে ডাব নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তবে এতেও জমছে না ব্যবসা। সেন্ট মার্টিনে নারকেল উৎপাদন ক্রমেই হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি সংবাদকর্মীরা সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৃষ্টিতে আনলে তারা জানায়, দ্বীপে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে নারকেলগাছের শিকড় বিস্তৃত হতে পারছে না। ভূগর্ভে তৈরি হচ্ছে পানির সংকট। এ ছাড়া একধরনের মড়কের কারণেও কমেছে নারকেলের ফলন। তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা শেষ কথা বলতে পারবেন।
রোগবালাই, অবহেলা ও অযত্ন
আমাদের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এখন পর্যন্ত সাদা মাছি, কালো মাথার ক্যাটারপিলার আর নারকেলের মাকড়ের আক্রমণকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন। দেশে প্রথম নারকেলের মাকড় শনাক্ত হয় ২০০৪ সালে। সম্প্রতি মাকড়ের আক্রমণ মারাত্মকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে।
এ পোকা খালি চোখে দেখা যায় না। ক্রমাগত রস শোষণ করার ফলে আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে বাদামি রঙের হয়। এর কারণে খোসা বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া নারকেল বিকৃত ও আকারে ছোট হয় এবং শাঁসের পরিমাণ কমে যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ২০১৯ সালের মে মাসে যশোরে সাদা মাছি পোকার আক্রমণ শনাক্ত করেন। এই পোকা একধরনের মধুর মতো রস নিঃসরণ করে। এর ফলে নারকেলের পাতায় কালো রঙের স্যুটি মোল্ড ছত্রাক জন্মায়। এর আক্রমণে নারকেলগাছের পাতা কালো হয়ে যায় এবং ঝলসে যায়। এ ছাড়া গাছের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
অনেক সময় ডাবেও এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এ পোকার আক্রমণে গাছ মারা না গেলেও গাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। কুমিল্লা অঞ্চলে পল্লীবিদ্যুৎ সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার পরিমলেন্দু দাশ জানান, নারকেলগাছের পাতা কালো হওয়া রোগ এখন সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লার বুড়িচংয়ের ইন্দ্রবতী এলাকায় এই রোগের দাপটে মানুষ দিশাহারা।
কালো মাথা ক্যাটারপিলার দেশের সবচেয়ে ‘বনেদি’ পোকা। এরা নারকেলগাছের নিচের দিকে অবস্থান করে পাতার অংশ খেয়ে শেষ করে দেয়। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পাতা আগুনে ঝলসে গেছে। এর আক্রমণে গাছের পাতার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। অনেক সময় ডাবেও এই পোকা আক্রমণ করে। গত বছর (২০২৩) সেপ্টেম্বরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের এলাকায় এই পোকার আক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পোকামাকড় ছাড়াও কাঠবিড়ালি আর ইঁদুরের আক্রমণের কথা অনেকে বলেছেন। কুমিল্লা এবং বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে আগে কাঠবিড়ালির ‘যন্ত্রণা’ তেমন ছিল না। জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদী কোনো কোনো অঞ্চলকে কাঠবিড়ালি মুক্ত রেখে ছিল। এখন প্রায় সব নদীতে সেতু হয়ে যাওয়ার কারণে সেই এলাকা কাঠবিড়ালিদের ‘মুক্তাঙ্গনে’ পরিণত হয়েছে। কাঠবিড়ালি নারকেলের ফুলের পরাগায়ণে সহযোগিতা করলেও গুটি ডাবের অনেক ক্ষতি করে। ইঁদুরও এ রকম ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। এ জন্য গুটি ডাব রক্ষার জন্য কেরালা তামিলনাড়ুর নারকেলচাষিরা এক টুকরা টিন দিয়ে গাছের শরীর মুড়িয়ে দেন।
কীটতত্ত্ববিদ নন, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস, এমন অনেক চাষি মনে করেন, মাঠের জমিতে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এখন গাছে বাসা বাঁধছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একদল গবেষক বিষয়টি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, প্রায় ৬১টি বিভিন্ন প্রজাতির পোকা গাছে ‘চড়ে বসেছে’।
নারিকেল ছাড়াও কলা ও পেয়ারাগাছে পোকা আস্তানা গাড়ছে। গবেষকেরা কৃষকদের ইমিডা ক্লোরোফিড-জাতীয় ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। নারিকেলগাছ লম্বা হওয়ায় ফুট পাম্পের মাধ্যমে সব গাছে একসঙ্গে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা ‘আইপিএম’-এর কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা
পাকিস্তান আমলে শ্রীলঙ্কার থেকে উপহার হিসেবে এসেছিল উন্নত মানের নারিকেল বীজ। সেসব বীজের বেশির ভাগই ক্ষমতাধরদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বনানীতে মোনায়েম খানের (তদানীন্তন গভর্নর) ব্যক্তিগত বাড়ির চারপাশে এর কতগুলো লাগানো হয়েছিল।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশে নারকেল চারা লাগানো হয়। একসঙ্গে দুই হাজারের বেশি নারকেলচারা এর আগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আর কোথাও লাগানো হয়নি। এসব নারকেলগাছের ৮০ শতাংশ এখনো ফল দিচ্ছে। সঠিক জায়গায় চারা লাগালে আর রক্ষণাবেক্ষণ করলে যে কাজ হয়, এটা তার একটা উদাহরণ।
নারিকেলের উন্নয়নে কাজ করছে ‘এশিয়ান প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি’। এর প্রধান কার্যালয় ইন্দোনেশিয়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের নারিকেল নিয়ে সংস্থাটি কাজ করছে। সংস্থাটি এক জরিপ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে ৪০ কোটি নারকেলগাছ লাগানো সম্ভব। কিন্তু উন্নত জাতের নারকেলচারার সন্ধান মেলেনি। কয়েক বছর আগে ভারত থেকে একটি জাত আনা হলেও হাইব্রিড হওয়ায় তার চারা করা সম্ভব হয়নি।
এরপর ভিয়েতনাম থেকে নতুন প্রজাতির (খাটো জাত) নারকেল বীজ আনা হয়। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনামের খাটো জাত ‘ম্যাজিক’ দেখাতে পারেনি। বাগানকৃষিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারে ভূষিত নাটোরের সেলিম রেজা তাঁর ১০৭টি ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেলগাছ কেটে ফেলেছেন। হতাশায় ভুগছেন আরও অনেকে।
এ প্রসঙ্গে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক অবশ্য সংবাদমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছেন, সঠিক পরিচর্যা না করায় ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেলগাছে ফল আসেনি। তিনি যা-ই বলুন, তিন বছর ধরে এই নারকেলচারা আর কেউ কিনছে না। এর ফলে বিক্রিও বন্ধ রাখা হয়েছে।
সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী
সব সমস্যার কিছু না কিছু সমাধান আছে। বিদেশি জাতের চারা আমদানি করে বাংলাদেশের নারকেল-সংকটের সমাধানের সিদ্ধান্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ দেশে ভালো জাত নেই, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। ফলন, আকার আর স্বাদের দিক থেকে একসময় শ্রেষ্ঠ ছিল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকার ডাব-নারকেল। সেখানকার নারকেল নিয়ে আমাদের গবেষণা বড়ই সীমিত।
বারির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন অনেক আগেই বলেছিলেন, ‘বিদেশি জাতগুলো থেকে যেভাবে ফলন পাওয়ার কথা, সে রকম হচ্ছে না। ভিয়েতনাম থেকে দুটি জাত আনা হলেও পাঁচ-ছয় ধরনের গাছ হচ্ছে। আবার খাটো জাত হলেও অনেক স্থানে লম্বা হয়েছে। এসব জাতের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আগে গবেষণা করে তারপর তা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক গোপাল দাস তাঁদের জরিপে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কতগুলো সুপারিশ করেছিলেন। এতে বলা হয়েছিল, উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ অঙ্গের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন কোনো পোকার আগমন বন্ধ করার জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা।
ফল গাছের পাশাপাশি পোকা কয়েকটি মাঠ ফসলেও পাওয়া গেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। সে জন্য এখন থেকেই মাঠ ফসলের ওপর নিবিড় মনিটরিং ব্যবস্থা শুরু করা প্রয়োজন, যাতে শুরুতেই এ পোকার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়। নারকেলচাষিদের পাশাপাশি সম্প্রসারণ কর্মীদের জন্য মাঠ পর্যায়ে কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা সঠিক ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ পোকা দমন করতে পারে ।
তবে সবার আগে আমাদের সমস্যাটা বুঝতে হবে। ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কায় নারকেলের উৎপাদন ১৫ শতাংশ কমে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ঘুম হারাম হয়ে যায়। তিনি ছুটে যান মানুষের কাছে, বিজ্ঞানীদের কাছে । ইন্টারনেটের কল্যাণে মন্ত্রী অরুণদিকা ফার্নান্দোর সে ছবি আমরা দেখেছি।
শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের কর্তারাও তৎপর হতে পারেন। নিয়ত ঠিক রেখে কাজ শুরু করতে পারেন। আমদানি করা ডাব বা নারকেল দিয়ে আমাদের ইফতার করতে হলে তা হবে বড় লজ্জার।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক-গবেষক