টিম-নুর: পাঁচ বছর পর ফিরে দেখা

দল হিসেবে গণ অধিকার পরিষদের এখনো দুই বছর পূর্ণ হয়নি। তবে টিম-নুরের যাবতীয় তৎপরতার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছরই। এরই মধ্যে দলে ভাঙনের আলামত রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা পাঁচ দশক ধরে এ দেশের রাজনীতি ও বিভিন্ন দলে বেশ প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। তবে নবীন গণ অধিকার পরিষদের বেলায় অভূতপূর্ব এক ঘটনা ঘটেছে, পুরো দলটি গড়েছেন এই ক্যাম্পাসের একদল শিক্ষার্থী।

কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে শুরু। সেখান থেকে ২০২০ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ; তারপর ছাত্রত্ব শেষে যুব অধিকার পরিষদ; একই টিম ২০২১ সালের অক্টোবরে পত্তন করে পুরোদস্তুর একটা রাজনৈতিক দল।

দল হিসেবে এখনো গণ অধিকার পরিষদের দুই বছর পূর্ণ হয়নি। তবে এই টিমের যাবতীয় তৎপরতার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে এ বছর। এরই মধ্যে দলটিতে ভাঙনের আলামত দেখা যাচ্ছে। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিচ্ছেন তাঁরা। সেসব থেকে তহবিল ব্যবস্থাপনার সংকট এবং নানা সংস্থার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের বিষয়ও সামনে আসছে।

এসব দেখে-শুনে অবাক হওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রান্তিক সমাজে প্রশ্ন উঠেছে, রাশেদ, ফারুক, আতা, হাসানদের দলটিতে সাংগঠনিক এই সংকট তৈরি হলো কীভাবে? পাঁচ বছর আগে শুরু হওয়া তরুণদের এই উদ্যোগ থেকে সমাজ ও রাজনীতি শেষ পর্যন্ত কী পেল? সুষ্ঠু ভোটের আগামী স্বপ্নে তারা কি আদৌ কোনো ভরসা হয়ে উঠতে সক্ষম?

রেজা কিবরিয়া গত সোমবার তাঁর ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে দলের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে সদস্যসচিব নুরুল হককে দায়ী করেছেন। পাল্টা অভিযোগ নুরুলেরও। তাঁর ভাষ্য, টাকার লোভে বিভিন্ন সংস্থার ফাঁদে পড়েছেন রেজা কিবরিয়া।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরন বদল

আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ছাড়া গণ অধিকার পরিষদে অন্যান্য উদ্যোক্তার বয়স ত্রিশের কোঠায়; ২৮ থেকে ৩১ বছরের মধ্যে। দেশের কোনো দলে এত সমবয়সী নেতৃত্ব বিরল। তাঁদের অধিকাংশই স্বল্পবিত্ত পরিবারের সন্তান। সে কারণেই দেশজুড়ে নিচুতলার জনসমাজ তাঁদের দিকে আপনজনের মতো তাকায়। তাঁদের উত্থানের সময়টিতে বাংলাদেশে তীব্র রাজনৈতিক শূন্যতাও চলছিল। টিম-নুরের প্রতিবাদী ভূমিকা তাঁদের দিকে সামাজিক সহানুভূতির ঢেউ তৈরি করে। এখনো তাঁদের প্রতি কিছুটা মনোযোগে আছে। কিছুটা দুশ্চিন্তাও হয়তো আছে। গ্রামীণ এক চায়ের আড্ডায় গত মাসে কয়েকজন মানুষ এই লেখককে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ভাই, নুর কোন দিকে যাবে?

প্রশ্ন শুনে বোঝা গেল, নুরুল হক নুর ও গণ অধিকার পরিষদ যেমন জনসমাজের বিবেচনায় আছে, তেমনি তাদের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে অনুমান করতে পারছেন না তাঁরা।

টিম-নুর আহ্বায়ক পদে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াকে এনে বড় চমক দেখায়। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছেলেমেয়েরা যে অর্থনৈতিক পাটাতন থেকে এসেছেন, রেজা কিবরিয়া এসেছেন তার ঠিক উল্টো সামাজিক ঘরানা থেকে।

দল গঠনের আগে মরিয়া হয়ে দলপতি হিসেবে মুরব্বি কাউকে খুঁজছিলেন নুররা। আগ্রহ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে ঘিরে। ইতিমধ্যে একটি দলের প্রধান হিসেবে থাকা সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা হয়। প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং ভাসানী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলামকেও (বাবলু) পাওয়ার চেষ্টা ছিল। অসফল হয়ে রেজা কিবরিয়াকে বেছে নেওয়া হয়।

তাঁর উচ্চশিক্ষা, পারিবারিক ভাবমূর্তি এবং দেশ-বিদেশে পরিচিতি, সংযোগ এবং চাকরিকালীন অভিজ্ঞতায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন পরিষদের তরুণেরা। তারুণ্যের এই কাফেলায় যুক্ত হয়ে ড. রেজা কিবরিয়ার হাতও শক্তিশালী হওয়ার অনুমান ছিল। পারস্পরিক সেই নিরীক্ষা শেষ পর্যন্ত এ সপ্তাহে এসে থেমেছে। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। আহ্বায়কের সঙ্গে দলের অন্যদের সাংস্কৃতিকভাবে মিলছে না বলে শুরু থেকে শোনা যাচ্ছিল।

রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক হলেও বরাবরই গণমাধ্যমে সরব দেখা যেত নুরকে। এটা অস্বাভাবিক লাগত। সাংগঠনিকভাবে আহ্বায়ককে ছাড়িয়ে যায় সদস্যসচিব। দেশের অন্যান্য দলের এক ব্যক্তি নির্ভরতার সংস্কৃতি এভাবে দ্রুত গণ অধিকার পরিষদেরও নিয়তি হয়ে ওঠে।

সমাজের নানা নীতিনির্ধারণী ফোরামে টিম আকারে যাওয়ার বদলে দু-একজন নেতার এককভাবে যোগাযোগের প্রবণতা দেখা যায়। এতে রাশেদ, ফারুক, আতা, হাসানরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্নতায় ভুগেছেন। প্রবাসী অধিকার পরিষদ গঠনসহ নানা উপলক্ষে আন্তদলীয় সেসব টানাপোড়েনের বেশ কিছু সংবাদ পত্রপত্রিকায়ও আসে।

শিগগির কাউন্সিল

ছাত্র, যুব, শ্রমিকসহ গণ অধিকার পরিষদের পাঁচটি গণসংগঠন। তবে সদস্যভুক্তির পুরোনো জোয়ার অনেকখানি কমেছে। বাড়ছে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের অন্তর্ভুক্তি! অতি তরুণদের নেতৃত্বে বয়স্ক ব্যক্তিদের এই পথচলা সহজ করার চ্যালেঞ্জও দলটির সামনে রয়েছে। এমন চ্যালেঞ্জ সামাল দিতেই দলটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৩১ জন! সদস্যভুক্তি একসময় হু হু করে বাড়লেও এখন কেন সেই ঢেউ নেই, তার উত্তর পাওয়া কঠিন নয়। ২০১৮ সাল থেকে পরবর্তী দু-তিন বছর দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলো তুলনামূলক নিষ্ক্রিয় ছিল। সেই তুলনায় ছাত্র অধিকার পরিষদের সক্রিয়তা, মার খেয়েও দাঁড়িয়ে থাকার জিদ তাদের দিকে তরুণদের টেনেছিল। এখন বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যরা আগের চেয়ে সক্রিয়।

গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রায় সবারই ইতিমধ্যে ছাত্রত্ব শেষ। কেউ কেউ বিয়ে করেছেন, বাবা হয়েছেন। প্রশ্ন এসেছে আয়রোজগারের। একসময় তাঁরা বিসিএস চাকরিতে সমান সুযোগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন। সময় ও সমাজের দাবি মেটাতে গিয়ে চাকরি না-পাওয়া এসব মানুষ এখন রাজনীতিবিদ। নানা মহলের উৎসাহ তাঁদের দল গড়তে সাহস জুগিয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক কাজে অর্থ প্রয়োজন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন বা ডাকসু নির্বাচনের সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনেক তরুণ টিম-নুরকে সহায়তা করেছেন। সদস্য-শুভানুধ্যায়ীরা এখনো চাঁদা দেন। অনেক ‘শুভেচ্ছা’ জারি আছে। শুভানুধ্যায়ীদের কল্যাণে দলের প্রায় ২ হাজার ২৫০ বর্গফুটের কার্যালয়ও আছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক ভাষণের ভাইরাল ভিডিওর আয় থেকেও কোনো কোনো সংগঠকের জীবনযাপনে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। কয়েকজন কেন্দ্রীয় সংগঠক বলছেন, অর্থের জন্য গণসহায়তার ওপর এখন পুরো নির্ভর না করলেও চলছে তাঁদের। বড় সমাবেশ ডাকা হলে কর্মীদের অন্তত ফিরে যাওয়ার ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে।

রেজা কিবরিয়া গত সোমবার তাঁর ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে দলের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে সদস্যসচিবকে দায়ী করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘দলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় কোনো স্বচ্ছতা নেই। এ জন্য সদস্যসচিব দায়ী।’ নুরও একই দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘টাকার লোভে বিভিন্ন সংস্থার ফাঁদে পড়েছেন রেজা কিবরিয়া।’

১৮ জুন রেজা কিবরিয়ার বাসায় গণ অধিকার পরিষদের বৈঠকে পাল্টাপাল্টি অবস্থার সৃষ্টি হয়। বৈঠকে দল পরিচালনায় নুরের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজা কিবরিয়া। আর নুর ইনসাফ কমিটিতে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

গণ অধিকার পরিষদের কারও কারও হঠাৎ সৃষ্ট আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গুঞ্জন ছিল। আবার এমনও নজির আছে, অনেক সংগঠক হাতখরচ ও সাংসারিক দায় মিটিয়ে দলে ন্যূনতম অর্থ দেওয়ার অবস্থায় নেই। ফলে দলে প্রভাব হারাচ্ছেন তাঁরা। এর পরোক্ষ ফল হিসেবে সাংগঠনিক মেরুকরণ ক্রমে আরও এককেন্দ্রিক আদল নিতে পারে। ইতিমধ্যে সদস্যসচিবের বলয়টা অনেক বড় হয়ে গেছে। সামনে কাউন্সিল হলে বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে। দলের অভ্যন্তরীণ একটা সূত্র বলছে, দু-এক মাসের মধ্যে কাউন্সিল হবে।

নিবন্ধন নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচল

পুরো দেশের মতো সম্ভাব্য নির্বাচনী উত্তেজনায় ভুগছেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরাও। তাঁদের ভাবনা-দুর্ভাবনা দুই রকমের। প্রথমত, নির্বাচন কমিশন তাদেরÔদল হিসেবে নিবন্ধন দেবে কি না? দ্বিতীয়ত, বিশ্বাসযোগ্য পথে নির্বাচন হলে তাদের দল কীভাবে অংশ নেবে? দুই প্রশ্ন আলাদা হলেও দুটির উত্তর একসঙ্গে গেঁথে যায় কি না, সে বিষয়ে শঙ্কায় আছেন কর্মীরা।

পরিষদের নেতাদের দাবি, দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার সব শর্ত তাঁরা পূরণ করেছেন। একই দাবি গণসংহতি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টিরও। সম্প্রতি মোটরগাড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ জাসদ নামে একটা দলকে নিবন্ধন পেতে দেখে গণ অধিকার পরিষদের কর্মীরা বিস্ময় ও শঙ্কায় পড়েছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় গণ অধিকার পরিষদ। কিন্তু দাবি পূরণ না হলে কী করবে? আলাপচারিতায় দলের সবার কাছে এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। হয়তো নুরই কেবল সেই উত্তর জানেন। দলে তাঁর অবস্থান এমনই। পাঁচ বছর আগে কোটা আন্দোলনে অবশ্য টিমে যৌথ সিদ্ধান্তের সংস্কৃতি ছিল।

জাতীয় রাজনীতির টানাপোড়েনে

বিএনপির পাশাপাশি এ মুহূর্তে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় আরেক শক্তি গণতন্ত্র মঞ্চ। গণ অধিকার পরিষদ এতে থাকলেও পরে বেরিয়ে গেছে। এখন গণতন্ত্র মঞ্চের বাকিরা নিজ শক্তিতে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। গণ অধিকার পরিষদের অভিযোগ, গণতন্ত্র মঞ্চে তারা প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি। বাকিদের অনুযোগ ছিল, নুররা জোটের সমাবেশে পুরো সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে আসত না। জোটকে ব্যবহার করত মাত্র। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের সবাই নুরের বন্ধুভাবাপন্ন, নমনীয় ব্যবহারের প্রশংসা করতেন।

গণতন্ত্র মঞ্চ রাজনৈতিক চরিত্রে মধ্যপন্থী হলেও এর মধ্যে বামপন্থী বনাম অবামপন্থী ধারা ছিল। গণ অধিকার পরিষদের একাংশ কোনো অবস্থায় বামপন্থী নেতাদের পেছনে বড় শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে চায় না। এই দলে একধরনের স্পষ্ট বাম বিরোধিতা আছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা টিমের রাজনৈতিক বিকাশ এভাবেই হয়েছে। মার খাওয়ার দিনগুলোতে সমাজ ও রাজনীতির উদারনৈতিক ঘরানার মানুষ টিম-নুরকে আশ্রয়, অর্থ এবং আইনি সহায়তা দিয়েছে। তবে সাংগঠনিকভাবে তারা রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের মিশেলে আগ্রহীদের কাছে সহায়তা পেয়েছে বেশি। তাই শুরু থেকেই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীরা এই দল নিয়ে সতর্ক। আবার গণ অধিকার পরিষদের ভেতরেও অনেকে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনের চেয়ে তৃতীয় শক্তি হওয়া বেশি দরকারি মনে করেন।

আদর্শের জায়গাটা খোলা রইল

গণ অধিকার পরিষদের মিছিলে একসময় একটা স্লোগান খুব শোনা যেত, ‘দিল্লি না; ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা।’ দলের এক সংগঠক জানালেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের প্রতিবাদে মিছিল করে তাঁদের ৫৪ নেতা-কর্মী আটক হন। এ রকম বাধাবিপত্তির হিসাব-নিকাশে নিশ্চিতভাবে রাজনীতিও খানিক পাল্টায়। কিংবা পাল্টানোর চাপ তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে পরিষদকে পুরোনো সাংগঠনিক নকশা কিছুটা পাল্টাতে হয়েছে। এখন তাদের সামনে সময় এসেছে রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করার।

দলটির সুবিধা হচ্ছে, নেতা-কর্মীরা সুনির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শিক কাঠামোতে বাঁধা নেই। এত দিন জনপ্রিয় ইস্যুগুলোতে সাহসী সমাবেশ করে দলে-বলে বেড়েছেন তাঁরা। আদর্শের জায়গাটা খোলা চত্বর হিসেবে রাখা ছিল। গঠনতন্ত্রে দলের স্লোগান বেছে নেওয়া হয়, ‘জনতার অধিকার আমাদের অঙ্গীকার।’ স্লোগান হিসেবে এটা তেমন আঁটসাঁট নয়। এতে ব্যবহারিক রাজনীতিতে যেকোনো দিকে মোড় নেওয়ার সুযোগ থাকছে। এ রকম অনিশ্চয়তার মধ্যেও সরকারবিরোধী অনেক দল টিম-নুরকে দূরে সরিয়ে না রাখাকে সঠিক কৌশল ভাবছে।

বিএনপি অবশ্য বিস্মিত এ কারণে যে গণ অধিকার পরিষদের অনেক নেতা নিয়মিত উত্তেজক রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েও তাদের তুলনায় কম কোর্ট-কাছারিতে ঘুরেছেন। বিশেষ একটি ইসলামি দল ছাড়া অন্যান্য দলে তেমন স্বস্তি ছিল না। দৈনিক কালবেলা ৬ মার্চ প্রথম পাতায় এক প্রতিবেদনে (শিরোনাম:চার্জশিটে ভিপি নুর পলাতক) লিখেছিল, ‘গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে ২০টি মামলার একটিতে চার্জশিট হলো কেবল।’ ২০২১-এর এপ্রিলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে করা সেই মামলায়ও তাঁকে পলাতক দেখানো হয়! নুর অবশ্য ওই পত্রিকাকে বলেছিলেন, তিনি পলাতক নন।

নুর যে পলাতক নন, সেটা বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁর অংশগ্রহণ থেকেও স্পষ্ট। এ সময় বিদেশ সফরেও গেছেন তিনি। পরে গত ২৭ এপ্রিল শুনানির দিনই ওই মামলা থেকে নুর অব্যাহতি পান (আজকের পত্রিকা, ২৭ এপ্রিল)। বিষয়টা রাজনৈতিক মহলে বেশ মনোযোগ পায়। গণ অধিকার পরিষদের ভেতরকার সর্বশেষ বিবৃতি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেই মনোযোগ ভবিষ্যতে আরও তীক্ষ্ণ হবে বলেই মনে হয়।

  • আলতাফ পারভেজ লেখক ও গবেষক