রমজানের প্রস্তুতির জানান দেয় শবে বরাত

ছবি: সংগৃহীত

‘শবে বরাত’ বা ‘শবে বারাআত’ কথাটি ফারসি। ‘শব’ অর্থ রাত, ‘বারাআত’ মানে মুক্তি বা নিষ্কৃতি। শবে বরাত হলো মুক্তির রাত। যেহেতু এ রাতের ইবাদতের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করা যায়, তাই এই নাম। শবে বরাতের আরবি হলো লাইলাতুল বারাআত, যাকে হাদিস শরিফে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান, অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যরজনী’ বলা হয়েছে।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন জিন ও ইনসান বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ৫৬) রমজান মাস ইবাদতের সর্বোত্তম সময়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। তিনি শাবান মাসে সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদত করতেন।

যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ কাজ। আমাদের কর্তব্য হলো সর্বদা অন্তরকে পরিষ্কার ও পবিত্র রাখা এবং হিংসা–বিদ্বেষ থেকে মুক্ত রাখা। মন্দ ধারণা কবিরা গুনাহ। দোষ অনুসন্ধান করা হারাম

শবে বরাত তথা নিসফ শাবান, অর্থাৎ মধ্যশাবান হলো রমজানের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্ব। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্যতারিখ আসবে, তখন তোমরা রাতে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো।

কারণ, এ রাতে সূর্যাস্তের পরেই আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, “ক্ষমাপ্রার্থী কেউ আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। রিজিকপ্রার্থী কেউ আছ কি? আমি তাকে রিজিক দেব। বিপদগ্রস্ত কেউ আছ কি? আমি তাকে বিপদ–মুক্ত করে দেব।”’ আল্লাহ এভাবে সকাল পর্যন্ত বলতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৪৪, হাদিস: ১৩৮৮; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অর্ধশাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করেন। অতঃপর শিরককারী ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৬৬৪২) এই হাদিস হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। (মুসনাদে বাজজার: ২০৪৫)

হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো ইন্তেকাল করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল।

যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়িশা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন?” আমি উত্তরে বললাম, “না, ইয়া রাসুলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি ইন্তেকাল করেছেন কি না।” নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি কি জানো এটা কোন রাত?” আমি বললাম, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।”

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন, “এটা হলো অর্ধশাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।”’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২-৩৮৩)

যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ কাজ। আমাদের কর্তব্য হলো সর্বদা অন্তরকে পরিষ্কার ও পবিত্র রাখা এবং হিংসা–বিদ্বেষ থেকে মুক্ত রাখা। মন্দ ধারণা কবিরা গুনাহ। দোষ অনুসন্ধান করা হারাম। (সুরা-১০৪ হুমাজাহ, আয়াত: ১; লাতাইফুল মাআরিফ, ইবনে রজব, পৃষ্ঠা: ১৫৫-১৫৬)

শবে বরাতে ও শাবান মাসের বাকি দিনগুলোতে দিবারাত্র নফল ইবাদতে মশগুল হওয়া রমজানের প্রস্তুতির অংশ। শেষ দুই দিন ব্যতীত পুরো শাবান মাসেই রোজা রাখা মুস্তাহাব। বিশেষত প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের রোজা রাখা সুন্নত।

সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা খাস সুন্নত। হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনটি আমল জীবনে কখনো ছাড়েননি—তাহাজ্জুদের নামাজ, আইয়ামে বিদের রোজা ও রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ। (মুসনাদে আহমাদ)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • smusmangonee@gmail.com