প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজের কর্মজীবন নিয়ে বিচার ও প্রশাসন: ভেতর থেকে দেখা নামে একটি বই লিখেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৯৮১ সালে শিক্ষানবিশ মুনসেফ (সহকারী জজ) পদে বিচার বিভাগে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসরে যান। ২০০৭ সালে যখন সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, তখন তিনি ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। কিছুদিন পরে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। তিনি এ বইয়ে সেই সময়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তাঁর বই থেকে চুম্বক অংশগুলো নিয়ে তিন পর্বের লেখার আজ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম পর্ব।
কাজী হাবিবুল আউয়াল পুরোনো এক ঘটনা ধরে বিষয়টির অবতারণা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘২০০৪ সালের মার্চ মাসে বিএনপি সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁকে ডেকে নিয়ে সংবিধানে কিছু সংশোধনী আনার কথা বলেছিলেন। যেমন বিভিন্ন অফিসে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো, সংসদে মহিলা সদস্যদের সংরক্ষিত ৪৫টি আসন আরও দশ বছর বৃদ্ধি এবং সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করাতে স্পিকার অপারগতা জানালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক শপথ পাঠ করানো। মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু হয় এবং বিলটির শিরোনাম রাখা হয় সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪।’
এরপর নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর বিলের খসড়া চূড়ান্ত করা হলো। এরপরের ঘটনা ২০০৬ সালের। কাজী হাবিবুল আউয়াল তখন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। তিনি এ নিয়ে লিখেছেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী খসড়া বিলটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকট গিয়েছিলেন। পরদিন কার্যালয়ে এসেই মন্ত্রী ইন্টারকমে সরাসরি আমাকে জরুরি সালাম দিলেন। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলাম। বললেন, আউয়াল সাহেব, আরও খানিকটা সংশোধন লাগবে। ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করতে হবে। তৎক্ষণাৎ মনে হয়েছিল এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এটা বুমেরাং হতে পারে।
আমি পদমর্যাদাগত বিভাজনের দূরত্ব ভুলে গিয়ে মাননীয় মন্ত্রীর দিকে মুখ তুলে বললাম, এটা কি ঠিক হবে, স্যার। মওদুদ আহমদ রাশভারী প্রকৃতির ছিলেন। পলিটিক্যাল মাস্টার ও সিভিল সার্ভেন্ট বিভাজনটা বজায় রাখতেন। তিনি বিরক্তভাব ব্যক্ত করে ইংরেজিতে বললেন, যার অর্থ, এটা আপনার কাজ নয়। আপনার কাজ আমরা যা বলব সেটা করা। আমি আমার ভুল বুঝে, সরি স্যার, বলে দ্রুত প্রস্থান করলাম। বুঝলাম আদার বেপারির জাহাজের খবর রাখতে নেই।’
এরপর কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘কিন্তু আমার অনুমান ভুল হয়নি। বিলটি আইনে রূপান্তরিত হওয়ামাত্রই প্রবল প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন যে মন্দ-উদ্দেশ্যজাত ছিল, তা সহজেই অনুমেয় হয়েছিল। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি জে আর মোদাচ্ছের হোসেন, আওয়ামীপন্থি বলে অনুমিত, দায়িত্বে বহাল থেকে যাবেন। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান, বিএনপিপন্থি বলে অনুমিত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন। সত্যিই বিষয়টি পরিশেষে বিএনপির জন্য কাল হয়েছিল। অপরিণামদর্শী এমন সিদ্ধান্তের কারণে সেই থেকে আজ অব্দি প্রায় ১৭ বছর বিএনপিকে কাফ্ফারা দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানালেন। কাজী হাবিবুল আউয়াল এ নিয়ে লিখেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অনুযায়ী পরবর্তী সম্ভাব্যদের কেউ কেউ গোঁফে তা দিতে থাকলেন। যদি কপাল খুলে যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের একজন, সেসময় কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের ডিজি, আমাকে একাধিকবার ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন তাঁর বিষয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না। আইনমন্ত্রী তাঁর সহপাঠী ছিলেন। সরাসরি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়তো তিনি সমীচীন মনে করছিলেন না।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘কিন্তু জরুরি অবস্থা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ, জরুরি অবস্থা দেশে ঘন ঘন হয় না। অতীতে ১৯৭৪ সালে একবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটি খুব কার্যকর জরুরি অবস্থা ছিল। এরপর দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা ১৯৮৮ সালে জেনারেল এরশাদের শাসনামলে। বিরোধীদের রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সেটা করা হয়েছিল। সেই জরুরি অবস্থা অকার্যকর হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু তাতে আন্দোলন আরও তীব্র হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না তিনি।
এরপরের ঘটনা নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখলেন, ‘আমার নিকট বন্ধু জেলা জজ ইকতেদার আহমদ সেসময় ঢাকার কোনো একটি কোর্ট অব সেটেলমেন্টের চেয়ারম্যান। সম্ভবত সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ে তাঁর সংযোগ ছিল। সে আমাকে সময় সময় অবহিত করছিল যে একটা বড় পরিবর্তন সহসাই হতে যাচ্ছে। ১০ জানুয়ারি তারিখে সে আমাকে জানাল যে সম্ভবত আগামীকালই তথা ১১ জানুয়ারি তারিখেই কিছু একটা হতে যাচ্ছে। সেনা হস্তক্ষেপের কথাই সে ইঙ্গিত করছিল। ১১ জানুয়ারি তারিখে ছুটিতে বাসায় ছিলাম। বেলা ৪ ঘটিকার সময় ল্যান্ড ফোন বেজে উঠল। বঙ্গভবন থেকে আইনসচিব মো. আলাউদ্দিন সরদার কথা বলবেন। অবিলম্বে আমাকে বঙ্গভবনে যেতে হবে। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মজিবুর রহমান তাঁর সরকারি পাজেরো নিয়ে উপস্থিত। আমি তাঁর গাড়িতে উঠে বঙ্গভবনে পৌঁছালাম।’
সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে ততক্ষণে সরকারে বড় রকম রদবদল হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন নতুন করে সেনা–সমর্থিত অসামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে।
ওই দিনের সামগ্রিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে দেখলাম সামরিক–অসামরিক ব্যক্তিতে কক্ষটি ঠাসা। মেজর জেনারেল আমিনুল করিম সে সময় রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব। তাঁকে প্রফুল্লচিত্ত বিজয়দীপ্ত মনে হচ্ছিল। উপস্থিত আরও অনেককে প্রফুল্ল আবার অনেককে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। দেখলাম মন্ত্রিপরিষদ সচিব সোলেমান চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুল করিম, সংস্থাপনসচিব মনিরুজ্জামান, পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, পুলিশের মহাপরিদর্শক খোদা বক্সসহ আরও পদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ ঠাসাঠাসি করে বসে আছেন। আইন উপদেষ্টা বিচারপতি ফজলুল হককে প্রফুল্ল চিত্তে কক্ষে ও ভবনের বারান্দায় বিচরণ করতে দেখতে পেলাম। প্রফুল্ল চিত্তে বিচরণের কারণ পরে জানতে পেরেছিলাম। বিচারপতি ফজলুল হক স্বীয় ব্যাখ্যায় ধরে নিয়েছিলেন বাই-ডিফল্ট তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। কারণ উপদেষ্টাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন জ্যেষ্ঠতম।
‘সামরিক সচিবের অফিস কক্ষে পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ও বিচরণ ছিল নজরকাড়া। মৃদু হাসিমাখা মুখে একজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে দেখা যাচ্ছিল। অপরিচিত হলেও কীভাবে যেন উনার সঙ্গে আমার করমর্দন ও সম্ভাষণ বিনিময় হলো। আড়ালে গেলে আমি আইনসচিবকে উনার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। আইনসচিব চোখ বড় বড় করে বললেন, আরে ভাই, উনিই তো আসল জন। উনি ঢাকার নবম ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মাসুদ (মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী)। উনিই তো মূল অনুঘটক। গণেশ পাল্টায়ে দিছেন।
‘অচিরেই বঙ্গভবনে আমার কাজ শুরু হলো। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। জরুরি অবস্থার ঘোষণা গেজেট করতে হবে। তাঁর আগে আইনসচিব ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা আমাকে দিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বাক্ষরিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার লিগেল ইনস্ট্রুমেন্ট সঠিক আছে কিনা। জরুরি অবস্থা ঘোষণার লিগেল ইনস্ট্রুমেন্ট পাঠ ও পরীক্ষা করে বললাম খসড়াটি সঠিকভাবে গঠিত হয়নি। আমি পুনরায় ডিকটেশন দিলে মধ্য পদবির দুজন সামরিক কর্মকর্তা সে অনুযায়ী ইনস্ট্রুমেন্টটি পুনর্গঠন করে নিয়ে আসেন। আমি পরামর্শ দিলাম মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর নিয়ে পূর্বের ইনস্ট্রুমেন্টটি বিনষ্ট করে ফেলতে। তা-ই করা হলো।
‘এরপর স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুল করিম জানালেন যে সান্ধ্য আইন বা কারফিউ জারি করা হয়েছে। জানতে চাইলেন সান্ধ্য আইন বিষয়ে কোনো আইনগত বিধান রয়েছে কিনা। আমি জানালাম ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারফিউ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। স্বরাষ্ট্রের যুগ্ম সচিব মজিবুর রহমান গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লাইব্রেরি থেকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের কপি সংবলিত একটি বই নিয়ে এলেন। সেখানে খুলে বিধানটি দেখানো হলো। সে অনুযায়ী সান্ধ্য আইন জারির একটি লিখিত ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরি করে দেওয়া হলো।
‘বঙ্গভবনে ঘন ঘন চা-নাশতা পরিবেশন করা হচ্ছিল। কারও হাতেই নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব ছিল বলে মনে হচ্ছিল না। এর মধ্যে একপর্যায়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সস্ত্রীক সামরিক সচিবের কক্ষের সম্মুখস্থ বারান্দা দিয়ে পরিপাটি পোশাকে ধীর পদক্ষেপে তাঁর অফিস কক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে দেখলাম। জানলাম তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন। ভাষণ রেকর্ড করে সম্প্রচার করা হবে। সরে এলাম।’
সেদিন সরকার পরিবর্তন নিয়ে আইনি জটিলতাও ছিল। কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘রাত অনুমান ৮-০০ ঘটিকা। কেউ একজন প্রস্তাব করলেন বিষয়টিতে আইনগত জটিলতা রয়েছে। সামরিক আইন বিষয়ে প্রাক্তন আইনসচিব বিচারপতি আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। উনার মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিচারপতি কুদ্দুস চৌধুরী এলেন। তাকে অবহিত করা হলো যে সেনা হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পরিত্যাগ করে উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন। নতুন কাউকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। সেনাবাহিনী নতুন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। জানতে চাওয়া হলো ব্যবস্থাটি সংবিধানসম্মত হয়েছে কিনা। একটু দম নিয়ে ভেবে তাঁর মতামত বললেন। ব্যবস্থাটি অবশ্যই সংবিধানসম্মত হয়নি।
তবুও ঘটনা যখন ঘটিয়ে ফেলা হয়েছে, তখন সামাল দিতে হবে। সেনা কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, বন্দুক থেকে গুলি যখন ছুড়েই দিয়েছেন মাজা সোজা করে এগিয়ে যেতে হবে। উদ্ভূত রাজনৈতিক অবস্থাটি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। তাই জাতীয় স্বার্থে সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। এ ধরনের অবস্থা কালে-ভদ্রে হতে পারে। তবে, দ্রুত সাংবিধানিক শাসন পুনর্বহালের চেষ্টা আন্তরিকভাবে করতে হবে। কথাগুলো বলে বিচারপতি কুদ্দুস চৌধুরী বিদায় নিলেন।’
জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও তা কার্যকর করতে হলে এর অধীনে বিস্তৃত আইন ও বিধিবিধান তৈরি করতে হয়। জরুরি অবস্থা–সম্পর্কিত সব বিষয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধিভুক্ত।
কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘কিন্তু জরুরি অবস্থা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ, জরুরি অবস্থা দেশে ঘন ঘন হয় না। অতীতে ১৯৭৪ সালে একবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটি খুব কার্যকর জরুরি অবস্থা ছিল। এরপর দ্বিতীয়বার জরুরি অবস্থা ১৯৮৮ সালে জেনারেল এরশাদের শাসনামলে। বিরোধীদের রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সেটা করা হয়েছিল। সেই জরুরি অবস্থা অকার্যকর হয়েছিল। ফলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং আইন ও বিধি-বিধান করে উহাকে কার্যকর করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাৎক্ষণিক ইনস্টিটিউশনাল মেমোরি ছিল না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা অন্ধকারে হাতড়াচ্ছিলেন। আইনসচিব স্বরাষ্ট্রসচিব কর্তৃক অনুরুদ্ধ হয়ে আমাকে জানালেন, সেনা কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আমি যেন তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করি।
‘সেদিনই দুজন পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা অফিসে এসে আমার সঙ্গে দেখা করলেন। একজন ছিলেন ডিজিএফআইয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এটিএম আমিন (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল)। অপরজন ছিলেন সেনা অপারেশনের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল)। আলাপচারিতায় বললাম সেনা–সমর্থিত অসামরিক সরকার বলে কিছু সংবিধানে নেই। সংবিধানের আলোকে সবকিছু সামাল দেওয়া যাবে না। যেহেতু সংবিধান বহাল রাখা হয়েছে, আবার সেনা–সমর্থিত সরকারব্যবস্থাও প্রবর্তন করা হয়েছে, তাই মিলিয়ে ঝিলিয়ে আইনকানুন, বিধি-বিধান করতে হবে। সেদিন প্রাথমিক আলোচনা করে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে বললাম, আমরা আইনগত সব সহায়তা দিতে চেষ্টা করব। আশ্বস্ত হয়ে উনারা আবারও আসবেন বলে চলে গেলেন।’
(আগামীকাল পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব)