আল্লাহ ন্যায়বিচারক। তিনি ইনসাফ করেন। জুলুম পছন্দ করেন না। জুলুম হলো যার যা প্রাপ্য, তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। কারও অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন হলো জুলুম।
পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৭ ও ১৪০; সুরা শুরা, আয়াত: ৪০)। ‘আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা নহল, আয়াত: ২৩। ‘আল্লাহ অহংকারী দাম্ভিক সকলকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬; সুরা লুকমান, আয়াত: ১৮; সুরা হাদিদ, আয়াত: ২৩)। ‘আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯০; সুরা আরাফ, আয়াত: ৫৫)
জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন হলো বান্দার হক নষ্ট করা, যা সাধারণত আল্লাহ ততক্ষণ ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি মাফ না করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল (জাহান্নাম) কেমন।’ (সুরা শুআরা, আয়াত: ২২৭) ‘জালিমদের কর্মকাল সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কোরো না। তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফারিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের অন্তর দিশাহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জালিমরা বলবে, “হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (ইনসাফ করব) এবং রাসুলদের অনুসরণ করব।” তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালিমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৪২-৪৫)
জুলুমের কারণে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে, শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। পরিণতিতে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা আজাব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম: ২৬১৩)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৫৭)। মজলুমের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রু ও অভিশাপ জালিমের পতনের কারণ হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হজরত মুআজ (রা.)–কে ইয়েমেনে শাসক হিসেবে পাঠান, তখন তাঁকে বলেন, ‘তুমি মজলুমের বদদোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থেকো; কেননা মহান আল্লাহ ও মজলুমের মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি: ১৪৯৬ ও ২৪৪৮)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না—এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া; দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া; তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাঁদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তাঁর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। আল্লাহ তাআলা মজলুমকে বলেন, “আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্বে হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।”’ (তিরমিজি: ৩৫৯৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা জালিমকে কিছু সময় অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন, তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি পাঠ করেন, “তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য।”’ (সুরা হুদ, আয়াত: ১০২)। (বুখারি ও মুসলিম)
জুলুমে সহযোগিতা করা, জালিমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাও সমান অপরাধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা সৎ কর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অন্যকে সহযোগিতা করবে। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করবে না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ২)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com