টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) ও ইউএনডিপির তত্ত্বাবধানে তৈরি ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১’-এর মতে, জমির স্বল্পতা সত্ত্বেও সৌর বিদ্যুতায়নের মধ্যমানের কৌশলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। অন্যদিকে নদী অববাহিকা উন্নয়নের ৫ শতাংশ ভূমি, শিল্পাঞ্চলের রুফটপসহ অপরাপর অব্যবহৃত ভূমি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সৌর মডেলে এই সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছানো সম্ভব।
জ্বালানি আমদানির নির্ভরতা থেকে বেরোতে হলে সরকারকে ‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপ ২০২১-৪১’কে আলোতে আনতে হবে। এবং তা দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান পিএসএমপি-২০১৬-এর মতে, ২০২১ সালের মধ্যেই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মোট সক্ষমতার অন্তত ১০ শতাংশ হওয়ার কথা ছিল। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি-৭ মতে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১২ শতাংশ নবায়নযোগ্য করার শর্ত আছে। বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের প্রার্থী বিধায় নিম্নমধ্য আয়ের দেশের ব্যবহৃত বিদ্যুতের ১৭ শতাংশ নবায়নযোগ্য রাখার শর্তটাই মানা সুবিবেচনাপ্রসূত।
সৌরবিদ্যুতের প্রসঙ্গ উঠলেই জমির স্বল্পতার আলাপ উঠিয়ে আধুনিক বিশ্বের উদ্ভাবনী ইউজকেইসগুলোকে গুরুত্বহীন করা হয়। বাংলাদেশের সৌর দীপনক্ষমতা (সোলার ইর্যাডিয়েন্স সূচক) বৈশ্বিক গড় মানের চেয়ে বেশ ভালো (নেদারল্যান্ডসের প্রায় ১.৪৩ গুণ)। ইএসএমএপি অনুসারে, দেশের বাৎসরিক ফটোভোল্টায়িক সৌরশক্তিমান ১ হাজার ৪০০ কিলোওয়াট পাওয়ারের বেশি। ভাসানচর, চরফ্যাশন, ভোলা, মনপুরা, বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোতে খরুচে সঞ্চালনের বিকল্প হিসেবে সৌর-বায়ুবিদ্যুতের সমন্বয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কমিউনিটি গ্রিডের টেকসই ও সাশ্রয়ী মডেল দাঁড়া করানো সম্ভব। এ অঞ্চলে সৌর এবং বায়ুশক্তির পটেনশিয়াল দেশের অপরাপর অঞ্চলের চেয়ে ভালো প্রমাণিত। প্যারিসভিত্তিক নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা সংস্থা রেন-টুয়েন্টিওয়ানের নির্বাহী পরিচালক রানা আবিদের মতে, ‘স্থানীয়ভাবে বিতরণকৃত বিকেন্দ্রীভূত সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি জ্বালানিব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনের ঘন ঘন ঝুঁকি ও ধাক্কার বিপরীতে অনেক বেশি অনুকূল এবং স্থিতিশীল’। (www.ren21.net/why-is-renewable-energy-important/)
সৌরবিদ্যুতের জমি সমস্যার বিষয়টি সত্য, তবে বিকল্প সমাধান আছে বিধায় সেগুলোকে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা অনুপস্থিত। সৌরশক্তির স্টোরেজ সক্ষমতা বাড়াতে মানসম্পন্ন সাশ্রয়ী স্থানীয় ব্যাটারি উৎপাদন ও আমদানি নিশ্চিত করা চাই, দরকার উচ্চমান ও সাশ্রয়ী সোলার-প্যানেল, কনভারটার ও ডিসি সামগ্রীর নিশ্চয়তা। ভবিষ্যতে মাঝারি ও বৃহৎ পরিসরের বিদ্যুৎ স্টোরেজ (যেমন টেসলা স্টোরেজ সাউথ-অস্ট্রেলিয়া) নিয়েও ভাবতে হবে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিই একমাত্র সৌর-স্টোরেজ বিকল্প নয়, আছে ফ্লো-ব্যাটারি, আয়ন-সল্ট-ওয়াটার ব্যাটারি, গ্রাভিটি স্টোরেজ ইত্যাদি। আছে ইলেকট্রোলাইসিসভিত্তিক হাইড্রোজেন সঞ্চয় ও পরিবহন বিকল্প।
সরকার ভুল অদূরদর্শী এবং অটেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন মডেলে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অপচয় করেছে। সবুজ বিদ্যুৎ তেল-গ্যাস আমদানির বিকল্প বিধায়, এখানে সরকারকে মনোযোগ দিতেই হবে। কিন্তু দুর্নীতিপ্রবণ সবুজ বিদ্যুৎ মডেলও হয়ে উঠবে গলার কাঁটা। সবুজ বিদ্যুৎ মিক্সে সৌর-বায়ু বর্জ্য হাইড্রোজেন জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি কতটুকু থাকবে, তার আগাম রোডম্যাপ দরকার। ভবিষ্যৎ জ্বালানিনিরাপত্তার সমাধানে একদিকে মেধাবী ও দূরদর্শী, অন্যদিকে স্বচ্ছ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশগত দায়বদ্ধ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী ডেসা-ডেসকো-পল্লী বিদ্যুৎ এসব কোম্পানিকে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির অনুমতি ও অবকাঠামো সেবা দিতে হবে, বিপরীতে তারা কমিশন পাবে। ব্যক্তি নিজস্ব বিনিয়োগে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ স্টোর করবেন, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করবেন। এ জন্য বিতরণ ব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে হবে। দূরবর্তী রিমোট অঞ্চল ও দ্বীপ এলাকায় খরুচে সঞ্চালন প্রকল্পে বিদ্যুৎ না নিয়ে বরং সেখানে নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার ও প্রণোদনা দরকার। দরকার ব্যক্তি বিনিয়োগে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির উপযোগী কমিউনিটি গ্রিড। ক্ষুদ্র-মাঝারি সৌর বিনিয়োগের ব্যাংকঋণের মডেল দরকার, দরকার ব্যাটারি রিসাইকেল ব্যবস্থাকে পরিবেশবান্ধব করা। সবুজ বিদ্যুৎ বাড়লে, তেল-গ্যাসের চাহিদা কমে ডলার সাশ্রয়ও বাড়বে। ভূমির স্বল্পতার বাংলাদেশে মানসম্পন্ন স্টোরেজসহ শহুরে ও গ্রামীণ ‘সোলার হোমের’ ব্যাপক বিকাশ দরকার।
দেশে বেসরকারি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি, উৎপাদনসক্ষমতা মাত্র ১১৬ মেগাওয়াট। পাইপলাইনে থাকা ১৮টি বেসরকারি কেন্দ্র মিলে এই খাতে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা হবে ১ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জের ফাঁদ থেকে শিক্ষা না নিয়ে, সৌরবিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তিও হয়েছে ডলারে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারতের তুলনায় ১০-২০ গুণ বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি হয়েছে। এতে কুইক রেন্টালের মতো বোঝা হয়ে উঠছে সৌরবিদ্যুৎ (৮ নভেম্বর ২০২২, শেয়ারবিজ)।
২০২০ সেপ্টেম্বরে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) প্রকাশিত প্রতিবেদনমতে, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ক্রমেই কমছে। ভারতে ২০১৯-২০ সালে ২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নিলামে রেকর্ড কম দামে লাইসেন্স দিয়েছে, প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়ছে ২ টাকা ৭৩ পয়সা (২.৩৬ রুপি)। কাছাকাছি সময়ে দুবাইয়েও ২ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নিলামে প্রতি ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় স্থির হয়েছে ১ টাকা ৪২ পয়সা (১.৩৫ সেন্ট)।
বিপরীতে বাংলাদেশে সরকারি মালিকানাধীন দুটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদনে খরচ পড়ে ইউনিটপ্রতি ১৩-১৪ টাকা। নির্মাণাধীন ও পরিকল্পনাহীন সরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যয় হবে প্রতি ইউনিটে ১৩ থেকে ১৯ সেন্ট বা ১৪ থেকে ২০ টাকা। পিডিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এলওআই (লেটার অব ইনট্যান্ট) ইস্যু করা বেসরকারি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় ধরা হয়েছে ইউনিটপ্রতি ১১ থেকে ১৭ সেন্ট বা ১২ থেকে ১৭ টাকা। অর্থাৎ ভারতের ১০-১৫ গুণ বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ কিনে, দেশের সবুজ বিদ্যুৎ খাতকেও সম্ভাব্য লোকসানি খাতে রূপ দেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
সৌরবিদ্যুৎ ফিজিবল নয়, এমন অসত্য বয়ান তৈরি করে, কেউ কেউ সরকারকে হাইড্রোজেন জ্বালানির রোডম্যাপের কথা বলছে। বস্তুত হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদন একদিকে খুব বেশি খরুচে, অন্যদিকে এ জন্য দরকার নতুন উৎপাদন, ট্রান্সপোর্টেশন, বিতরণ, এমনকি ব্যবহারেরও সম্পূর্ণ নতুন অবকাঠামো। উপজাত হিসেবে উৎপন্ন তাপীয় শক্তির ব্যবহারের সমন্বিত ইকোসিস্টেমও দরকার। ইকোসিস্টেম তৈরি না করলে বাংলাদেশের দুর্নীতিপ্রবণ খরচের মডেলে হাইড্রোজেন হয়ে উঠবে অসম্ভব অবাস্তব। মূলত হাইড্রোজেন জ্বালানি বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানিসংকটের সমাধান নয়, হ্যাঁ এটা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।
বিশ্ব সৌর-বায়ুবিদ্যুতের পাশাপাশি হাইড্রোজেন জ্বালানিতে যাচ্ছে। মূলত, উদ্বৃত্ত অতিরিক্ত সবুজ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই হাইড্রোজেন তৈরি করা হচ্ছে, হবে। অর্থাৎ জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক গ্রিড চাহিদার অতিরিক্ত সৌরবিদ্যুৎ কিংবা বায়ুবিদ্যুৎ কিংবা বায়োমাসসহ অপরাপর নন-নিউক্লিয়ার সবুজ বিদ্যুৎ দিয়ে হাইড্রোজেন তৈরি হচ্ছে।
সরবরাহকৃত সবুজ বিদ্যুতের তুলনায় চাহিদা কম—এসব ক্ষেত্রে দেশগুলো তাদের ব্যবহারের বাইরের অতিরিক্ত সবুজ বিদ্যুৎ দিয়ে ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করে, সেটা স্টোর করে, দরকারে ভিন্ন জায়গায় পরিবহন করে। এ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত বিপুল তাপশক্তি অন্য কাজে ব্যবহার করে (জার্মানি)। দরকারমতো সময়ে ও স্থানে বিপরীত ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় পানির তৈরি মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। অর্থাৎ প্রযুক্তির কৌশলে বিদ্যুৎকেও দেশ থেকে মহাদেশে পরিবহন সম্ভব। কিন্তু যেখানে সবুজ বিদ্যুৎ নেই, সেখানে বিদেশ থেকে হাইড্রোজেন আমদানি করে—সঞ্চালন, বিতরণ ও ব্যবহার অবকাঠামো তৈরির পর সেটা ব্যবহার করাটা দুর্নীতির খোয়াব হতে পারে!
ইলেকট্রোলাইসিস পুরোনো প্রযুক্তি। কিন্তু এতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের তুলনায় অনেক বেশি খরচ হয় বলে প্রযুক্তিটি বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত হয়নি। তবে যেহেতু সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ ল্যান্ডফিল বা বায়োমাস জাত বিদ্যুৎ সস্তা হয়ে আসছে, তাই হাইড্রোজেন জ্বালানির ধারাও বিকশিত হচ্ছে।
হাইড্রোজেন জ্বালানির ‘এনার্জি ইকোসিস্টেম’ শুধু বিদ্যুতে সীমাবদ্ধ নয়। উপজাত তাপশক্তির ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য হাইড্রোজেনের সাপ্লাই চেইনগুলোকেও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যেমন নবায়নযোগ্য হাইড্রোজেন ও অ্যামোনিয়াশিল্প। ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিপুল পরিমাণ বায়ুবিদ্যুতের উদ্বৃত্ত আছে, পশ্চিম আফ্রিকা মধ্যপ্রাচ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সৌরবিদ্যুতের উদ্বৃত্ত রয়েছে। বায়োমাস পটেনশিয়ালও রয়েছে। উদ্বৃত্ত সবুজ বিদ্যুৎ দিয়েই আগামী দিনে হাইড্রোজেন জ্বালানির রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, যেহেতু বাংলাদেশের সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার, মোট জাতীয় উৎপাদনের মাত্র ৪ শতাংশ সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে হাইড্রোজেন জ্বালানি আমদানিভিত্তিক কোনো রোডম্যাপ আদৌ বাণিজ্যিকভাবে ফিজিবল? বর্তমান জ্বালানি ও বিদ্যুৎ-সংকটের সমাধান হাইড্রোজেন নয় বরং হাইড্রোজেন জ্বালানি বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচনের ভবিষ্যৎ ক্ষেত্র, যার ওপর আমাদের জ্ঞান গবেষণা ও বিনিয়োগ দরকার। সৌর-বায়ু বায়োমাস বিদ্যুতের ব্যবহার ও বিকাশ অবারিত করা গেলেই বাংলাদেশের হাইড্রোজেন রোডম্যাপে সংযুক্ত হওয়ার যৌক্তিকতা দাঁড়াবে।
ভারতের অরুণাচল থেকে জলবিদ্যুৎ ক্রয়, সবুজ বিদ্যুতের একটা সম্ভাব্য বিকল্প। কিন্তু ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের পানিসংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, ব্রহ্মপুত্রের জলবিদ্যুতে দেশের প্রধানতম স্বাদু পানির উৎস যমুনা নদীর পানি প্রত্যাহারের কৌশলগত সমস্যা এবং পানি পরিবেশ ও খাদ্যনিরাপত্তার ব্যাপকতর ঝুঁকি আছে।
অবাক করা বিষয়, বিশ্বের সর্বোচ্চ ঘনবসতির দেশে বর্জ্য ও বায়োমাস বিদ্যুৎ শতভাগ উপেক্ষিত। শুনতে অবাস্তব মনে হলেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পশ্চিম ইউরোপে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করে সেখান থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদন করে সেটা দেশে আনা যায় কি না, তা ভাবারও সময় আসন্ন। সময় হয়েছে, ভবিষ্যৎ প্রাথমিক জ্বালানি মিক্স হিসেবে হাইড্রোজেন পরিবহন ও বিতরণ মডেল নিয়েও ভাবার।
নাসার পুরোনো বায়ুবিদ্যুৎ সম্ভাব্যতা ম্যাপে তিন এলাকা—ফেনী থেকে নাফের বিস্তৃত সৈকত, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ে দেশের সর্বোচ্চ বায়ুবিদ্যুৎ পটেনশিয়াল দেখা গেছে। বিগত সময়ে ডাচরা বায়ুবিদ্যুতের ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। মুহুরী ও কুতুবদিয়ার ত্রুটিযুক্ত স্থাপনা ও দুর্নীতির পরে বায়ুবিদ্যুতের পাইলট সফল না হওয়া অগ্রহণযোগ্য। উপকূলীয় ও চরাঞ্চলে গড় বায়ুপ্রবাহ নিম্ন বায়ুপ্রবাহের উপযুক্ত টার্বাইনে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট। বায়ুবিদ্যুতেও দরকার সাশ্রয়ী ও বেসরকারি বিদ্যুৎ বিক্রির উপযোগী মডেল, কমিউনিটি ও ব্যক্তি মডেল। সবুজ বিদ্যুৎ সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে বিদ্যুৎ বিক্রি ও বিতরণে ব্যর্থ পেট্রোবিদ্যুৎ বিতরণের সরকারি মডেল ভাঙতে হবে।
সরকার ভুল অদূরদর্শী এবং অটেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন মডেলে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অপচয় করেছে। সবুজ বিদ্যুৎ তেল-গ্যাস আমদানির বিকল্প বিধায়, এখানে সরকারকে মনোযোগ দিতেই হবে। কিন্তু দুর্নীতিপ্রবণ সবুজ বিদ্যুৎ মডেলও হয়ে উঠবে গলার কাঁটা। সবুজ বিদ্যুৎ মিক্সে সৌর-বায়ু বর্জ্য হাইড্রোজেন জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি কতটুকু থাকবে, তার আগাম রোডম্যাপ দরকার। ভবিষ্যৎ জ্বালানিনিরাপত্তার সমাধানে একদিকে মেধাবী ও দূরদর্শী, অন্যদিকে স্বচ্ছ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশগত দায়বদ্ধ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দরকার।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তড়িৎ প্রকৌশলী, বুয়েট। টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ; বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর; অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা; বাংলাদেশের পানি, পরিবেশ ও বর্জ্য। faiz.taiyeb@gmail.com