অভিমত

ট্রাম্প শুধু নিজে বিপদে পড়েননি, সংকটে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রকেও

রাষ্ট্রের গোপন নথি নিজের কাছে রাখার অভিযোগে আদালতে অভিযুক্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, তাঁকে শাস্তি দিতে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে বিভক্তি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা অনেকের।

ফ্লোরিডার ফেডারেল আদালতে গতকাল হাজির হওয়ার কথা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এর আগে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আদালতের বাইরে বিক্ষোভ
ছবি: এএফপি

অবশেষে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পচা শামুকেই পা কাটল। তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি ফেডারেল আদালতে অভিযুক্ত হলেন। গত ছয় বছরে তিনি এত অপরাধ করেছেন যে তার হিসাব দিতে সাত খণ্ড কিতাব লিখতে হবে। চার বছরের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে তিনি মিথ্যা বলেছেন ৩০ হাজার ৫৭৩ বার। প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট তাঁর প্রতিটি মিথ্যা বা অর্ধমিথ্যার হিসাব রেখেছে। তিনি নানা অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, জরিমানাও দিয়েছেন। তবে কৃতকর্মের জন্য কখনো তাঁকে কারাগারে যেতে হয়নি।

এবার মনে হয় বিপদ ভালোভাবেই ট্রাম্পের ঘাড়ে চেপে বসছে। মার্কিন বিচার বিভাগের বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ যদি সফল হন, তাহলে তাঁকে বাকি জীবন কারাগারের ঘানি টেনে কাটাতে হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোপনীয় তথ্য বেআইনিভাবেভাবে লুকিয়ে রাখা ও তার অপব্যবহারের অভিযোগে বহুল আলোচিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি ফৌজদারি অভিযোগ দাখিল করেছেন জ্যাক স্মিথ। সাত মাস ধরে তদন্তের পর বিপুল তথ্য–প্রমাণসহ তিনি যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না—ট্রাম্প আইন অমান্য করেছেন। তবে এ কথা মানতেই হবে, এই অভিযোগপত্রে ট্রাম্পের অপরাধের চেয়ে তাঁর নির্বুদ্ধিতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উন্মোচিত হয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো একদমই সোজাসাপটা। ক্ষমতা ত্যাগের পর ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে বক্সে ভরে রাষ্ট্রের গোপন নথিপত্র এনে রেখেছিলেন ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবনে।

এসব নথির কোনোটা তাঁর গোসলখানায়, কোনোটা শোবার ঘরে, কোনোটা দরজা খোলা গুদামঘরে রেখেছিলেন। মার্কিন আইন অনুসারে, হোয়াইট হাউসের সব সরকারি নথির দেখভালের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় মোহাফেজখানার। প্রেসিডেন্ট বা প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি তাঁদের নিজের প্রয়োজনে এসব নথির কুটোটিও সরাতে পারেন না। গোপনীয় বা জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত নথিপত্র হলে তো কথাই নেই। নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও সেসব পড়ে দেখারও সুযোগ নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে যেসব নথি নিয়ে এসেছেন, সেগুলোর মধ্যে অতিগোপনীয় নথি রয়েছে বলে জানার পর সেসব ফেরত চেয়ে রাষ্ট্রীয় মোহাফেজখানা দফায় দফায় তাঁর কাছে ধরনা দিয়েছে। তাতে কাজ হয়নি। তখন বাধ্য হয়ে আদালত থেকে যথাযথ সমন নিয়ে মার-আ-লাগোতে তল্লাশি চালিয়ে সেসব উদ্ধার করা হয়।

এখন এসব নথি হাতানোর অভিযোগে ট্রাম্পকে একাধিক আইনে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শুধু গুপ্তচর আইনের অধীনেই গোপন নথি বেহাত করার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে ৩১ দফা অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রমাণিত হলে প্রতি দফার জন্য কম করে হলেও তাঁকে ১০ বছর জেলের ভাত খেতে হবে। এই মামলার শুনানিতে অংশ নিতে গতকাল মঙ্গলবার ফ্লোরিডা গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু কেন

হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে গোপন নথি যথাযথভাবে রাখেননি—এই অভিযোগে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকেরা ‘লক হার আপ’ বা ‘ওকে জেলে ঢোকাও’ আওয়াজ তুলেছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে ট্রাম্প নিজেও সে কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিকে তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন; কিন্তু বাস্তবে করলেন ঠিক উল্টো কাজ।

ঠিক কী কারণে ট্রাম্প এসব নথি ওয়াশিংটন থেকে ফ্লোরিডায় টেনে এনেছেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ‘এসব আমার,’—ঠিক বাচ্চারা যেমন অন্যের খেলনা জোর করে দখলের বায়না ধরে, ট্রাম্প অনেকটা সেই রকম সব নথি ধরে রাখার চেষ্টা করলেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁর ব্যবহার হয়তো পাঁচ বছরের শিশুর মতো। কিন্তু তাঁর চরিত্র আসলে একজন ‘গডফাদার’-এর মতো। অপরাধ করাটা তাঁর মজ্জাগত। ডানে-বাঁয়ে না তাকিয়ে মিথ্যা বলতে তাঁর বাধে না। তিনি ধরেই নেন, নথি হোক, ট্যাক্স ফাঁকি হোক অথবা কোনো নারীর স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেওয়া হোক—সব কিছুতেই তাঁর জন্মগত অধিকার রয়েছে। দোষ করেও নির্ঘাত পার পেয়ে যাবেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রে একজন আইনজীবীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নথিবোঝাই বক্সগুলো দেখিয়ে ট্রাম্প তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমাদের কাছে আর কোনো নথি নেই, এফবিআইকে সে কথা বললে কেমন হয়?’ সেই একই আইনজীবীকে তিনি পরামর্শ দেন, ‘এক কাজ করো, যেসব নথি গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে, সেগুলো তুমি ওদের না দিয়ে আলাদা করে তুলে রাখো।’

অনেকেই বলেছেন, ‘ইগো’ বা ব্যক্তিগত অহংবোধ থেকেই এমন বোকার মতো কাজ করেছেন ট্রাম্প। দেশি-বিদেশি অতিথিদের গর্ব করে দেখাবেন, তাঁর কাছে কত কী গোপনীয় ও মূল্যবান জিনিস রয়েছে। এসব মূল্যবান জিনিসের মধ্যে একটি হলো বাস্কেটবল খেলোয়াড় শাকিল ও’নিলের এক জোড়া জুতা ও উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং–উনের কাছ থেকে পাওয়া একখানা ‘প্রেমপত্র’। নিউইয়র্ক টাইমস–এর ম্যাগি হ্যাবারম্যান এমন ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।

অন্য আরেকটি ব্যাখ্যাও সম্ভব। সাবেক কয়েক মার্কিন প্রেসিডেন্টই ক্ষমতা ছাড়ার পর নিজ নিজ নামে ‘প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। রোনাল্ড রিগ্যানের নামে গ্রন্থাগার আছে, জর্জ বুশের নামে গ্রন্থাগার আছে, এমনকি ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামার নামেও গ্রন্থাগার রয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই হোয়াইট হাউসে তাঁদের সময় শেষ হলে বক্সে ভরে নথিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ নিজ নিজ লাইব্রেরিতে রাখবেন বলে নিয়ে গেছেন। তবে সেসব নথির অধিকাংশই তাঁদের ব্যক্তিগত, অথবা রাষ্ট্রের গোপনীয় নয় এমন নথির কপি। বুশ বা ওবামা যেসব নথি নিয়েছেন, সেসবের হিসাব দিয়েই তবে মালিকানা পেয়েছেন। মোহাফেজখানা কর্তৃপক্ষই এমন তথ্য জানিয়েছে।

এখানেই ট্রাম্পের অহংবোধে লেগেছে। তাঁর নামে কোনো গ্রন্থাগার নেই, করার কোনো পরিকল্পনাও নেই। ট্রাম্প ও গ্রন্থাগার কথাটা ঠিক একসঙ্গে যায় না, তিনি নিজেও সে কথা বোঝেন। তাই বলে হোয়াইট হাউস থেকে ‘নিজের’ নথিপত্র তিনি নিয়ে যাবেন না? থাকল না হয় সেগুলো গোসলখানা বা গোয়ালঘরে, নিজের নিয়ন্ত্রণে তো থাকল।

ট্রাম্প নথি নিয়ে এই ঝামেলাকে ‘বক্স হোক্স’ বা বক্স ধোঁকা নামে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ এ আর এমন কি হয়েছে, যার জন্য বিচার বিভাগ এমন তুলকালাম কাণ্ড করবে। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলে গেছেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি।’ অনুগত সমর্থকেরা তাঁর মুখে সে কথা শুনে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে মাথা নেড়েছে।

সমস্যা হচ্ছে, ট্রাম্পের নিয়ে যাওয়া এসব নথির ভেতরে এমন সব গোপনীয় গোয়েন্দা নথি রয়েছে, যা শুধু হাতেগোনা কয়েকজন দেখার অধিকার রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারে বা বিদেশি মিত্রদের ভান্ডারে কার কী অস্ত্র রয়েছে, তার খবর ফাঁস হলে লাভ যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের।

এসব তথ্য বেহাতে পড়লে দেশের নিরাপত্তা বিপদগ্রস্ত হতে পারে, গোয়েন্দা তথ্য কীভাবে সংগৃহীত হয়, তা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। ঠিক সে জন্যই সব গোপন নথি রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মকানুন কড়া।

সংকটে রিপাবলিকান নেতৃত্ব

রিপাবলিকান দলের সমর্থকদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। এই দলের তিন-চতুর্থাংশ সদস্য মনে করেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পই জিতেছেন, বাইডেন নয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী। তাঁর প্রার্থিতা সমর্থন করেন, এমন রিপাবলিকান ভোটারের সংখ্যা ৫৪ শতাংশ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি স্যান্টিসের প্রার্থিতার প্রতি সমর্থন রয়েছে বড়জোর ২৪ শতাংশ রিপাবলিকানের। আরও আধা ডজন প্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কারোরই দলীয় সমর্থন ৫ শতাংশের বেশি নয়।

এ অবস্থায় সমর্থকেরা ক্ষিপ্ত হবেন—এই ভয়ে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখ খুলতে নারাজ। এমনকি ৬ জানুয়ারির ‘অভ্যুত্থানচেষ্টায়’ও তাঁরা কোনো অপরাধ দেখেন না। একজন কংগ্রেস সদস্য তো বলেই বসেছেন, কোনো দাঙ্গাবাজ নয়, সেদিন যারা ক্যাপিটল হিলে এসেছিল, তারা অনেকটা ‘পর্যটকের’ মতো সুশীল ও শান্তিপ্রিয়।

ট্রাম্প গোয়েন্দা নথি নিয়ে যে ভুল করেছেন, সেটি জানার পরেও মিনমিনে গলায় তাঁকেই তাঁরা সমর্থন করছেন। এ জন্য তাঁরা একটি সহজ ফর্মুলা বের করেছেন। ট্রাম্প আইনসম্মত ছিলেন, সে কথা বলার বদলে তাঁরা পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন—ওবামা আমলে হিলারি ক্লিনটন সরকারি গোপন নথি নিয়ে ‘নয়ছয়’ করেছিলেন। কিন্তু এফবিআই কখনো অভিযোগপত্র দাখিল করেনি।

বাইডেনের এক ছেলের বিরুদ্ধে বাবার নাম ভাঙিয়ে বিদেশিদের কাছ থেকে বিস্তর অর্থ কামানোর অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রিপাবলিকান নেতাদের মতে, এসবই এফবিআইয়ের দুমুখো নীতির প্রমাণ।

নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের শায়েস্তা করতে বাইডেন প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও এফবিআইকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। এর একটি গালভরা নামও তাঁরা দিয়েছেন—উইপোনাইজেশন বা অস্ত্রায়ন। কোনো কোনো সদস্য টেবিল চাপড়ে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে কংগ্রেসে এফবিআইয়ের তহবিল বরাদ্দ তাঁরা আটকে দেবেন।

এই নিয়মের ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। নিউজার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি যেমনটি বলেছেন, ‘যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মোটেও হেলাফেলা নয়। আরকানসাসের সাবেক গভর্নর আসা হাচিনসন্স বলেছেন, ট্রাম্পকে কিছুতেই প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্য বলা যায় না।

আমেরিকার গভীর অসুখ

২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন, ওই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। শুধু কারচুপি নয়, পুকুরচুরি হয়েছে। লাখ লাখ ভোট কম্পিউটারের কারসাজিতে তাঁর বদলে বাইডেনের বক্সে চলে গেছে। সাধারণ সমর্থকেরা তো বটেই, দলের অনেক নেতাও তাঁর সে দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে কোরাস গাইছেন।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের সঙ্গে এখন যুক্ত হলো আইন ও বিচারব্যবস্থার অস্ত্রায়ন। অর্থাৎ এদেশে নির্বাচনব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ, বিচারব্যবস্থাও পক্ষপাতদুষ্ট। যেকোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ দুটি হচ্ছে প্রধান স্তম্ভ। দেশের মানুষ যদি এমন ধারণা পোষণ করেন, ভোট দিলেও তাঁদের ভোট সঠিকভাবে গোনা হবে না অথবা আইন ও বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ নয়, তারা লোক বুঝে ব্যবস্থা নেয়—তাহলে বুঝতে হবে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে বড় রকমের সংকটে রয়েছে।

ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, আমেরিকা ‘গোল্লায় গেছে’। এখানে আইনও নেই, বিচারও নেই। সেই একই কথা বলছেন তাঁর দলের একাধিক নেতাও। কেউ কেউ এই অনাচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করার আভাস দিয়েছেন। ট্রাম্প অভিযুক্ত হওয়ার পর রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ড্রু বিগস এক টুইটে বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি। এখন চাই চোখের বদলে চোখ।’

অন্য কথায়, শুধু ট্রাম্প নয়, যুক্তরাষ্ট্রে পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। যাঁরা অন্যকে কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, তাঁদের এখন প্রমাণ করতে হবে, এখানে আইন সবার জন্য সমান। দেশের সবচেয়ে শক্তিধর মানুষও অপরাধ করলে শাস্তি পেতে পারেন। এর ব্যতিক্রম হলে দেশের অর্ধেক মানুষ বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসনে আস্থা হারাবেন।

অন্যদিকে ট্রাম্প দণ্ডিত হলে দেশের বাকি অংশের মানুষ বলবেন, তাঁর প্রতি ভয়াবহ অন্যায়–অবিচার হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই প্রতিপক্ষের প্রতিটি ব্যাপারে সন্দিহান। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার শেষে ট্রাম্পকে যদি কারাগারে যেতে হয়, তারপরও তাঁরা বলবেন, প্রশাসন আইন ও বিচারব্যবস্থাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে ট্রাম্পকে শাস্তি দিয়েছে।

ট্রাম্পের চার বছরের শাসনকালে এই দেশে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের এই বিচারপ্রক্রিয়ার ফলে সে বিভক্তি আরও গভীর ও তমসাময় হবে। খুব সহজে যে এই রাহুমুক্তি ঘটবে, তা মনে হয় না।

  • হাসান ফেরদৌস লেখক ও প্রাবন্ধিক