শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশটির শাসনভার দুই প্রধান দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) ও ফ্রিডম পার্টির ঘরানার বাইরে এল। এই দুই দল নানান উপদলে ভাগ হয়ে আছে। কিন্তু তাদের কোনো উপদলের কেউ অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের সামনে শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। নির্বাচনে অনূঢ়ার বিজয় শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে কী বার্তা দিচ্ছে তা নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ
অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া মানেই শ্রীলঙ্কার বহু যুগের দ্বিদলীয় ব্যবস্থা ভেঙে পড়া। তবে তাঁর দল জনতা বিমুক্তি পেরামানুকার (জেভিপি) উত্থান আশপাশের দেশগুলোর জন্য আরও কোনো বার্তা এনেছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখার মতো বিষয়। বিশেষ করে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শ্রীলঙ্কার নির্বাচনী ফল নিঃসন্দেহে নয়াদিল্লির জন্য অস্বস্তিকর এক খবর।
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট অসীম ক্ষমতাশালী পদ। দেশটির প্রশাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্য এটা। সে রকম পদের গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে দেশছাড়া করেছিলেন দেশটির মানুষ, ২০২২ সালে। এবারের নির্বাচন অবিশ্বাস্য সেই গণ-অভ্যুত্থানের বিলম্বিত ফল।
নির্বাচনে রাজাপক্ষে পরিবারের প্রার্থী ছিলেন গোতাবায়ার ভাতিজা নমাল রাজাপক্ষে। অভ্যুত্থানে অপসারিত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বড় ছেলে তিনি। ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ৪২ হাজার। আর জেভিপির অনূঢ়া পেয়েছেন ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার ভোট। প্রদত্ত ভোটের হিসাবে ফল দাঁড়াল ৪২ ভাগ বনাম ৩ ভাগ।
শ্রীলঙ্কার সমাজে গণ-অভ্যুত্থানের গভীরতা বোঝা যায় ভোটের এই অবিশ্বাস্য ব্যবধানে। গোতাবায়া ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজাপক্ষেরা রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট করে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছিলেন। সেই রনিল নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ২৩ লাখ (১৭ শতাংশ)। সেদিক থেকেও ব্যবধান অনেক।
■ ছোট দেশ হলেও শ্রীলঙ্কা জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে তীব্রভাবে বিভক্ত। উত্তর-পূর্বের হিন্দু ও মুসলমান তামিলদের সঙ্গে দক্ষিণের সিংহলি-বৌদ্ধদের অনেক রাজনৈতিক প্রশ্নেই ব্যাপক ভিন্নমত আছে।
■ গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে লঙ্কার মানুষ কেবল নতুন নেতৃত্বই খুঁজে নেননি—এত দিনকার রাজনৈতিক অঙ্কও বদলে দিয়েছেন। অনূঢ়া প্রথম ভাষণে এটাকে তাঁর দেশের ‘রেনেসাঁ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
■ অনূঢ়ার বিজয় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়েও কৌতূহল বাড়িয়েছে। সবাই এখন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
এই নির্বাচনী ফলের আরও দিক আছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশটির শাসনভার দুই প্রধান দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) ও ফ্রিডম পার্টির ঘরানার বাইরে এল। এই দুই দল নানান উপদলে ভাগ হয়ে আছে। কিন্তু তাদের কোনো উপদলের কেউ অনূঢ়ার সামনে শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পুরোনো ইউএনপির প্রধান উপদলের নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ভোট পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ, অনূঢ়ার চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ কম। সব মিলে বলা যায়, গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে লঙ্কার মানুষ কেবল নতুন নেতৃত্বই খুঁজে নেননি—এত দিনকার রাজনৈতিক অঙ্কও বদলে দিয়েছেন। অনূঢ়া প্রথম ভাষণে এটাকে তাঁর দেশের ‘রেনেসাঁ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইউএনপি ও ফ্রিডম পার্টি থেকে তৈরি হওয়া রাজনীতিবিদেরা, যাঁরা মূলত রয়েল কলেজ বা সেন্ট টমাস কলেজের ছাত্র—দেশটিকে স্বস্তি দিতে পারেননি কখনো। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া হওয়া এক অর্থে সেখানকার কুলীন রাজনীতিরই দায়। অনেকে দিশানায়েকের উত্থানকে রয়েল কলেজ আর টমাস কলেজের ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক চৌহদ্দি থেকে শ্রীলঙ্কার মুক্তি হিসেবেও দেখছেন।
সর্বশেষ নির্বাচনী ফলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভ্যন্তরীণ তাৎপর্যও আছে। ছোট দেশ হলেও শ্রীলঙ্কা জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে তীব্রভাবে বিভক্ত। উত্তর-পূর্বের হিন্দু ও মুসলমান তামিলদের সঙ্গে দক্ষিণের সিংহলি-বৌদ্ধদের অনেক রাজনৈতিক প্রশ্নেই ব্যাপক ভিন্নমত আছে।
এবারও দেখা গেল, তামিল এলাকায় বেশি ভোট পড়েছে অনূঢ়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাক্সে। তামিলরা প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেছেন সাজিথ প্রেমাদাসাকে। তাঁদের এ রকম পছন্দের পরও অনূঢ়া যে বিপুল ব্যবধানে জিতলেন, তার মানে হলো সিংহলি-বৌদ্ধরা তাঁকে বড় সংখ্যায় নেতা মেনে নিলেন। এই সিংহলি-বৌদ্ধরা এত দিন রাজাপক্ষেদের পেছনে ছিলেন। অর্থাৎ গণ-অভ্যুত্থান দেশটির জাতি ও ধর্মীয় সমীকরণ থেকে মানুষকে এখনো পুরোপুরি ‘নাগরিকতা’র বোঝাপড়ায় উন্নীত করতে পেরেছে বলে মনে হয় না।
ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়ার সামনে দেশটির ভেতরকার জাতিগত ও ধর্মীয় পছন্দের নীরব ভৌগোলিক বিভেদ রেখা অতিক্রমের চ্যালেঞ্জ থাকলই।
প্রশ্ন উঠতে পারে, হিন্দু ও মুসলমানরা জেভিপি ও অনূঢ়াকে পছন্দ করলেন না কেন? এর উত্তর রয়েছে জেভিপির অতীতে। দলটির জন্ম বামপন্থী তরুণদের হাতে। কিন্তু ক্রমে এর মধ্যে সিংহলি জাতিবাদের একটা প্রভাব প্রবল হয়ে উঠেছিল। তামিলদের প্রতি ভারতীয় খোলামেলা সমর্থন এবং দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ সিংহলি সমাজে যেসব পরিবর্তন আনে, জেভিপিতেও তার ছাপ পড়ে।
সিংহলি প্রধান সশস্ত্র বাহিনী তামিল এলাকায় যখন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তখন জেভিপি তার বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ায়নি। এসব ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার কারণেই জেভিপিকে নিয়ে তামিলদের ভীতি রয়ে গেছে এখনো। জেভিপি নেতা থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া অনূঢ়ার দেশটির উত্তরাংশের মন জয় করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এর জন্য এখন নিজ দলের অতীতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।
জেভিপিকে নিয়ে দেশটির শিল্পপতি-ব্যবসায়ী সমাজের ওপরতলায়ও বেশ ভীতি আছে। বিশেষ করে তাদের অর্থনৈতিক নীতি কী হবে, সে নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে এখনো।
দলটি ঐতিহাসিকভাবে পুঁজিতান্ত্রিক ধ্যানধারণার বিরোধী। কিউবার অর্থনৈতিক চর্চা নিয়ে জেভিপির অনুরাগ আছে। আবার দেশের মধ্যেও ‘আইএমএফ হাতগুটাও’ স্লোগান বেশ জোরালো। আইএমএফ–বিরোধিতা গ্রামীণ সিংহলিদের কাছে ‘ভূমিপুত্র’ অনূঢ়ার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে বলে অনেকে বলছেন। এই মানুষেরা অর্থনৈতিক স্বরাজের স্বপ্ন দেখেন বহুকাল ধরে। যদিও শ্রীলঙ্কা এ মুহূর্তে আইএমএফের ‘সহায়তা’র ওপর ভরসা রেখেই চলছে এবং এই সংস্থার ‘পরামর্শ’ মেনে ‘কাজ’ করে।
আসন্ন দিনগুলোতে অনূঢ়ার অর্থনৈতিক নীতির দিকে দেশ-বিদেশের সবাই বিশেষভাবে নজর রাখবেন। বিশেষ করে আইএমএফের ‘প্রেসক্রিপশনে’ রনিলের আমলে শুরু হওয়া ‘সংস্কার’ কর্মসূচিগুলো নিয়ে জেভিপি কী করে, সেটা দেখার বিষয় হয়ে আছে।
জেভিপির অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ আছে। জেভিপি ক্ষমতায় এলে আদানিদের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে। আদানিরা বায়ুবিদ্যুতের যেসব প্রকল্প রনিলের আমলে বাস্তবায়নের অধিকার পেয়েছিল, সেসব নিয়ে দেশে জনক্ষোভ আছে। ভোটে তার প্রভাব কাজ করেছে। কিন্তু আদানি ও ভারতের দিক থেকে এটা ৪৪০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। তা বাতিল হলে দুই দেশের সম্পর্কে বেশ চাপ তৈরি করতে বাধ্য। ভারতের কাছে শ্রীলঙ্কার প্রচুর ঋণও আছে। অনূঢ়ার জন্য এটা স্পর্শকাতর এক বিষয় হয়ে থাকবে।
নির্বাচনের পর অনূঢ়াকে অভিনন্দন জানানো প্রথম কূটনীতিক ছিলেন কলম্বোর ভারতীয় দূত সন্তোষ ঝা। তবে ভারত প্রশ্নেও অনূঢ়াকে দলীয় অতীতের সঙ্গে বেশ লড়তে হবে।
জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেউইরাই প্রথম শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। দলটিতে রোহানা এখনো রূপকথার নায়কের মতো আবেগমথিত চরিত্র হয়ে আছেন। দলে নতুন সদস্যদের জন্য রোহানা যে ‘পন্থি-পহা’ (পাঁচ শিক্ষা) শেখাতেন, তার পঞ্চমটি ছিল ভারতীয় সম্প্রসারণবাদসম্পর্কিত।
তবে তামিলনাড়ুসংলগ্ন উভয় দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া ৪০-৫০ মাইলের জলধারা দিয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষণীয় অনেক কিছু বয়ে গেছে। যার ফল হিসেবেই বোধ হয় গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আভাস পেয়েই অনূঢ়া নয়াদিল্লিতে পাঁচ দিনের সফরে এসে এস জয়শঙ্কর ও অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা করে গেলেন। অনেকেরই হয়তো তখন মনে পড়ছিল, কলম্বোতে ১৯৮৮-৯০–এ জেভিপি যখন ভারতবিরোধী সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানোর তুমুল চেষ্টায় লিপ্ত, তখন সেখানে ভারতীয় দূতাবাসে রাজনৈতিক সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন তামিল ব্রাহ্মণ জয়শঙ্করই।
নির্বাচনে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র রনিলকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী ছিল বলেই মনে হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার নতুন এই ‘অক্ষশক্তি’র দ্বিতীয় পছন্দ ছিলেন সাজিথ প্রেমাদাসা। সেই তুলনায় গণচীন অনূঢ়াকে নিয়ে উৎসাহী ছিল। তবে এখন কলম্বোয় ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে জেভিপির নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলার। এই তিন দেশের স্থানীয় ‘কর্মকর্তা’রা বহু দশক ইউএনপি ও ফ্রিডম পার্টির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই যাবতীয় স্বার্থ উদ্ধার করতেন। অনূঢ়ার বিজয় সেই সিলসিলা আমূল বদলে দিয়েছে।
অনূঢ়ার আমলে জেভিপির সঙ্গে চীনের পার্টির সম্পর্ক বেশ পূর্ণতা পায়। তারা অতীতে তাদের সম্মেলনে শ্রীলঙ্কা থেকে যেসব দলকে দাওয়াত দিত, এখন আর তাদের ডাকছে না।
আইএমএফ ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য গড়ার বাইরেও চীনকে জেভিপির বাড়তি দরকার সশস্ত্র বাহিনীকে নমনীয় রাখতে। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে চীনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ। কিন্তু এই বাহিনীর সঙ্গে জেভিপি তাদের ইতিহাসে অন্তত দুবার (১৯৭১ ও ১৯৮৮) গুরুতর সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনীর ভাড়াটে গ্রুপগুলো বহু জেভিপি সদস্যকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল। এ মুহূর্তে অনূঢ়া ও জেভিপির প্রতি জনসমর্থনের ঢেউ বইছে। সশস্ত্র বাহিনী তাই পুরোনো বৈরিতা ভুলে থাকবে। তবে সামনের দিনগুলোতে জেভিপি-সেনা সম্পর্ক নাজুক এক বিষয় হিসেবেই থাকবে।
অনূঢ়ার বিজয় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়েও কৌতূহল বাড়িয়েছে। সবাই এখন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের শেষ পর্ব ছিল অনেকটা শ্রীলঙ্কার আদলে। এখানেও অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন সমাজ দ্বিদলীয় ব্যবস্থার কোনো বিকল্প খোঁজে কি না, সেটা দেখতে কৌতূহলী অনেকে। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশের সমাজের মূলধারায় ভারতের এতদিনকার প্রতিবেশীনীতি নিয়ে গুরুতর প্রতিক্রিয়া আছে। সেটা ভোটের গণিতে বেশ বিবেচনাযোগ্য। শ্রীলঙ্কার মতো এখানেও আদানিদের বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন ছিল এবং আছে।
বাংলাদেশে জেভিপির মতো পরিশ্রমী সংগঠকদের কোনো মধ্যপন্থী তৃতীয় শক্তি নেই। এটা বাংলাদেশের জন্য এক শূন্যতার দিক। শ্রীলঙ্কার শ্রমজীবী-পেশাজীবী সমাজের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে ৫৩ বছর ধরে কাজ করছে জেভিপি। এবারই তারা প্রথম সফলতা পেল। বরাবরই তারা ‘সিস্টেম বদলে’র কথা বলত। আর সেই কাজে সিংহলি পরিবর্তনবাদী তারুণ্যের বড় এক অংশ জীবন দিয়েছে বিগত দিনগুলোতে। ইতিহাসে অন্তত দুবার তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। দুবারই ভস্ম থেকে দলটি আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।
অদম্য ‘কমরেড অনূঢ়া’র কলম্বো জয় হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ব্যক্তিগত বিজয় নয়। জেভিপি মানে প্রগতিবাদী তারুণ্যের এক অভিযাত্রা। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে অভ্যুত্থান-পরবর্তী উগ্রবাদী ভাঙচুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দাঙ্গার আগে-পরে যেসব সাংস্কৃতিক উপাদান সামনে আসছে, তা জেভিপি ধাঁচের কোনো সম্ভাবনার কথা বলে না। তবে এ–ও সত্য, বাংলাদেশের রাজপথে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় জুলাইয়ের রং ছিল লাল। জেভিপি কলম্বোকে লাল রঙে মুড়ে দিতে অভ্যুত্থানের পর মাটি কামড়ে দুই বছর সময় নিয়েছিল। রনিলের প্রতিবিপ্লবের তাড়া খেয়ে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল তারা।
বাংলাদেশের পরিবর্তনবাদীরা প্রাসাদ-দখল-মডেল গ্রহণ করলেও সাংগঠনিক পদ্ধতিতে কোন পথে হাঁটবে, সেটা অস্পষ্ট। আপাতত শ্রীলঙ্কার নির্বাচনী বার্তা বলছে, কলম্বোর কুলীনরা সিংহলি পেশাজীবী-কৃষিজীবী মৈত্রীর কাছে পিছু হঠল। আবার জেভিপিও তামিল নিচুতলাকে কাছে টানতে পারেনি। গণতান্ত্রিক লঙ্কা অনূঢ়ার হাত ধরে এমন এক বহুমুখী শ্রেণি-লড়াইয়ে ঢুকল, যেখানে নিশ্চিতভাবেই ‘অতীত মরে যাচ্ছে—কিন্তু নতুনের জন্মযন্ত্রণা শেষ হয়নি।’
●আলতাফ পারভেজ লেখক ও গবেষক