প্রয়োজনে ভিক্ষা করতে চাই এবং সেটা গুলশান-বনানীতে

সরকার কি চাইলেই কোনো এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করতে পারে? ভিক্ষাবৃত্তি কি বাংলাদেশে কোনো অন্যায় বা অপরাধ?
ফাইল ছবি

কলামটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল সেই তরুণদের কথা, যারা ‘উন্নয়নের বাংলাদেশ’ থেকে যেকোনো মূল্যে, ‘প্রাণ হাতে নিয়ে’ উত্তাল সমুদ্র, বিরান মরুভূমি, শ্বাপদসংকুল বনভূমি পাড়ি দিয়ে কোনোরকমে ঢুকে পড়তে চায় ইউরোপের কোনো একটি দেশে। আমরা অনেকেই সম্ভবত জানি, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা তৃতীয় আর ইউরোপে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পৃথিবীতেই প্রথম। এ তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে থাকা অন্য দেশগুলো হচ্ছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, তিউনিসিয়া, মিসর। কেন মনে পড়ল সরকারের বয়ান মতে এসব ‘লোভী’ তরুণের কথা, সে আলোচনায় আসছি কলামের শেষের অংশে।

কাউকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ঢাকা শহরে ভিক্ষা করার জন্য সবচেয়ে আদর্শ এলাকা কোনটা? এর জবাবে খুব সহজেই প্রায় সবাই বলে দেবেন গুলশান-বনানী এলাকা। বহু সনাতন এবং বহু ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ ধনীর বসবাস এ এলাকায়। অবশ্য এটা ঠিক, ধনীমাত্রই দানের স্বভাব থাকবে, এটা না-ও হতে পারে। কিন্তু পরিমাণে যা পাওয়া যেতে পারে, সেটা অনেক এলাকার চেয়ে বেশি হওয়ারই কথা।

প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের সূত্রে জানতে পারলাম, গুলশান-বনানী এলাকাটিকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভিক্ষুকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তথাকথিত পুনর্বাসনকেন্দ্রে। সে অভিযানের পরিস্থিতি নিয়েই প্রথম আলো প্রকাশ করেছিল ‘কর্মকর্তাদের ১০০০ টাকা ঘুষ সাধলেন ভিক্ষুক’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন। ঢাকার আর কোনো এলাকা নয়, কেন এই এলাকা এবং এর পেছনের উদ্দেশ্য ও মনস্তত্ত্বই-বা কী—এসব আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে।

সব আলোচনার আগে প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি চাইলেই কোনো এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করতে পারে? ভিক্ষাবৃত্তি কি বাংলাদেশে কোনো অন্যায় বা অপরাধ? এর উত্তর হচ্ছে, বাংলাদেশের একটি আইন আছে, যেটি এটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে। আইনটি হলো, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১।

এই আইনের সংজ্ঞা অংশের ২(১৪) এ বলা হয়েছে, ‘“ভবঘুরে” অর্থ এমন কোন ব্যক্তি যাহার বসবাসের বা রাত্রি যাপন করিবার মত সুনির্দিষ্ট কোন স্থান বা জায়গা নাই অথবা যিনি কোন উদ্দেশ্য ব্যতীত অযথা রাস্তায় ঘোরাফিরা করিয়া জনসাধারণকে বিরক্ত করেন অথবা যিনি নিজে বা কাহারো প্ররোচনায় ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হন; তবে কোন ব্যক্তি দাতব্য, ধর্মীয় বা জনহিতকর, কোন কাজের উদ্দেশ্যে অর্থ, খাদ্য বা অন্য কোন প্রকার দান সংগ্রহ করিলে এবং উক্ত উদ্দেশ্যে বা কাজে তাহা ব্যবহার করিলে তিনি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন না।’

এখানে খুবই লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ‘ভিক্ষা’ করলে সেটাকে এ আইনের অধীন ছাড় দেওয়া হয়েছে; সমস্যা হচ্ছে কোনো ব্যক্তি তার নিজের প্রয়োজনে ভিক্ষা করলে। এমন ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে, সেটা বলা আছে আইনের নিম্নোক্ত ধারায়—
৯। (১) পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নে নহে এমন কর্মকর্তা অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা, কোন ব্যক্তিকে ভবঘূরে বলিয়া গণ্য করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ রহিয়াছে মর্মে নিশ্চিত হইলে, তিনি উক্ত ব্যক্তিকে যে কোন স্থান হইতে যে কোন সময় আটক করিতে পারিবেন।

আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারলাম, এ আইনের শিরোনামে ‘ভিক্ষুক’ কথাটি না থাকলেও ‘ভবঘুরে’ শব্দের অধীন ভিক্ষুককে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এবং এটাই এ আইনে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার ক্ষমতা আপাতদৃষ্টে দিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে। আপাতদৃষ্টে কথাটা এ কারণেই বলা যে ভিক্ষাবৃত্তিকে কোনোভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ করা কি যাবে? কোনো রাষ্ট্র কি এমন আইন তৈরি ও প্রয়োগ করতে পারে?

বাংলাদেশের আইন ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার ক্ষেত্রে এক বাজে চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছে। সরাসরি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার কথা আইনে না বলে সেটাকে ভিন্ন সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে ইচ্ছাধীন বিষয় বানানো হয়েছে। কিন্তু ভারতে ১৯৫৯ সাল থেকেই ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে স্পষ্ট আইন ছিল। ভারতের কমপক্ষে ২০টি রাজ্যে স্বতন্ত্র আইন তৈরি করা কিংবা অন্য রাজ্যের আইন গ্রহণ করার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিকে সরাসরি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা আছে।

দিল্লিতে এই আইন প্রয়োগ করা নিয়ে বিতর্ক বছর তিনেক আগে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায় এবং সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন ভিক্ষাবৃত্তি কোনোভাবেই অপরাধ নয় এবং সেটা বন্ধ করতে জরিমানা কিংবা শাস্তি দেওয়ার মতো কোনো শাস্তি রেখে কোনো আইন প্রয়োগ করা যাবে না।

২০১৪ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ভিক্ষারত এক নারীকে জরিমানা করা হয় এবং সেই জরিমানা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে পাঁচ দিনের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত এ সিদ্ধান্তকে বাতিল করেন এবং ওই নারীকে ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেন। তাঁরা বিবেচনার সময় নিয়েছিলেন এ সত্য যে এই নারী একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে ভিক্ষা করছেন তিনি কোন সংগঠিত অপরাধ নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে ভিক্ষা করেননি।

ভিক্ষাবৃত্তি-সম্পর্কিত আরেকটি আলোচনা উদার গণতান্ত্রিক পশ্চিমা দেশগুলোয় হয়েছে। কোনো ব্যক্তি তার চলার পথে বা যেকোনো জায়গায় কোনো ভিক্ষুকের সম্মুখীন হবে না কিংবা কোনো ভিক্ষুক তার কাছে ভিক্ষা চাইবে না—এটা ব্যক্তির মানবাধিকার কি না? নানা রকম তর্কবিতর্কের পর এ সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে, এটা ব্যক্তির মানবাধিকার নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তিকে ভিক্ষুকদের ভিক্ষা চাওয়াজনিত ‘বিড়ম্বনা’ থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়। অর্থাৎ সারকথা হলো ভিক্ষা করা যাবে।

বাংলাদেশ এখন প্রবেশ করছে ভিক্ষা করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়টায়। অর্থনীতির পরিস্থিতি যেমন দেখা যাচ্ছে, যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশে একটা দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা বারবার বলছেন, তখন সামনে আরও অনেক বেশি মানুষকে ভিক্ষা করতে নামতে হবেই। হতে পারে, আমি এমন কোনো পরিস্থিতিতে কখনো পড়লাম, যখন আমার খেয়েপরে থাকাই অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

এটা ঠিক, একটা ক্ষেত্রে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে অনেক অপরাধ সিন্ডিকেটের কথা আমরা জানি, যারা বিভিন্ন রকম মানুষকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করে। শুধু সেটাই নয়, অনেক শিশুকে ধরে নিয়ে পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। অপরাধ সিন্ডিকেটের অংশ সেসব ভিক্ষুক তাদের উপার্জনের অতি সামান্য অংশ পায়, প্রধান অংশ চলে যায় সেই সিন্ডিকেটের হাতে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভিক্ষার ক্ষেত্রেও নানা রকম ভয়ংকর বেআইনি কাজ আছে।

পত্রিকার প্রতিবেদনে জানতে পেরেছিলাম, মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য নারী ভিক্ষুকেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করার জন্য এমন শিশু ভাড়া দেওয়া হয়। শিশু যেন খুব বেশি জ্বালাতন করতে না পারে, তাই তাদের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। নিশ্চয়ই এ রকম আরও ভয়ংকর কতগুলো অপরাধ ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত আছে। প্রচলিত পেনাল কোডের অধীনই এসব অপরাধের বিচার করা সম্ভব। আর কোথাও যদি খামতি থেকে থাকে, তাহলে উল্লিখিত অপরাধের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট আইন করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার, বাংলাদেশের আইনে প্ররোচনায় ভিক্ষার কথা বলা আছে, কিন্তু অপরাধ সিন্ডিকেট কর্তৃক ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করার কথাটি পর্যন্ত লেখা নেই। অর্থাৎ মূল বিষয়টিই বাদ গেছে।

কলমের শুরুতে বলছিলাম বাংলাদেশের তরুণদের প্রাণ হাতে করে ইউরোপে ঢুকে পড়ার কথা। সরকারের জন্য এটা খুব বিব্রতকর বিষয়ই বটে। একসময় তো বাংলাদেশ গরিব ছিল, তাই মানা গেল তখন মানুষ এ রকম ঝুঁকি নিয়েছে। ‘একসময়’ কথাটি বললাম এ কারণে, এখনকার বাংলাদেশকে তো আর সরকার গরিব বলতে চায় না; এটা তাদের কাছে ‘উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ’। এটা তাদের কাছে আকাশ থেকে দেখা ইউরোপ-আমেরিকার কোনো শহরের মতো দেখা রাজধানী ঢাকার বাংলাদেশ। তাহলে এ দেশের তরুণেরা কেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষকবলিত দেশের তরুণদের সঙ্গে প্রাণ হাতে করে সমানতালে ইউরোপে পাড়ি জমাতে চায়? সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের বয়ানের গালে তীব্র চপেটাঘাত করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছা এসব তরুণ কিংবা মাঝপথে নৌকাডুবিতে সলিলসমাধি হওয়া তরুণদের লাশ।

ঠিক এই তরুণদের মতোই সরকারের তথাকথিত উন্নয়নকে ভীষণভাবে চ্যালেঞ্জ করে ভিক্ষুকেরা। যে দেশে যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয়ের বয়ানের প্রচার চলতে থাকে ক্রমাগত, সে দেশেই কেন এত ভিক্ষুক? কেন ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে উত্তরোত্তর? সরকার না মানলেও জবাবটা জানি আমরা। করোনার সময় দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ চলে গিয়েছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। এরপর দেশের রিজার্ভ সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে দেশ এক চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। একদিকে মূল্যস্ফীতি যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, অন্যদিকে কর্মহীন হয়ে পড়ছে অসংখ্য মানুষ। এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকাবাসী অন্তত দেখছে ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে খুব দ্রুত হারে। বাড়ারই কথা।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরে যাওয়ার তরুণেরা সরকারের উন্নয়নের বয়ানকে প্রচণ্ডভাবে তাচ্ছিল্য করলেও তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স আবার সরকারের জন্য উন্নয়নের বড়াই করায় খুব সহায়ক হয়। এ ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেল অথবা হুন্ডিতে পাঠানো তাদের উপার্জন এ দেশ থেকে টাকা পাচারকারী সরকারের অলিগার্কিদের জন্য এক বড় আশীর্বাদ। বলা বাহুল্য, ভিক্ষুকদের এই মূল্যটুকু নেই সরকারের কাছে।
এখন অনেক ভিক্ষুক যদি ঢাকায় ভিক্ষা করতে থাকে এবং সেটা যদি হয় গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায়, তাহলে দুটি সমস্যা তৈরি হয় সরকারের জন্য।

প্রথমটি হচ্ছে, সরকারের তথাকথিত উন্নয়নের সুফল হাতে গোনা যেসব মানুষের কাছে গেছে, তাঁরা বাস করেন ওই অঞ্চলে। তাঁদের চলার পথে গাড়ির কাচে হালকা টোকা দিয়ে ভিক্ষা চেয়ে কেউ তাঁদের ‘স্বর্গবাস’কে বাধাগ্রস্ত করুক, সেটা তাঁদের কারও কারও ভালো লাগে না নিশ্চয়ই। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, বিদেশি দূতাবাসের কর্মী এবং নানা কারণে দেশে আসা বিদেশিদের একটি বিরাট অংশ ওই এলাকায় থাকে। দেশের বাইরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বয়ান সরকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে, সেটার আসল চেহারাও খুব নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়ে যায় তাদের সামনে। তাই ওই এলাকা থেকে ভিক্ষুকদের তুলে নিয়ে যেতে তো হবেই।

বাংলাদেশ এখন প্রবেশ করছে ভিক্ষা করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সময়টায়। অর্থনীতির পরিস্থিতি যেমন দেখা যাচ্ছে, যখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশে একটা দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কথা বারবার বলছেন, তখন সামনে আরও অনেক বেশি মানুষকে ভিক্ষা করতে নামতে হবেই। হতে পারে, আমি এমন কোনো পরিস্থিতিতে কখনো পড়লাম, যখন আমার খেয়েপরে থাকাই অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। সেদিন আমি চুরি-ছিনতাই করা কিংবা মাদক কারবারি হওয়ার মতো কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার চেয়েও লক্ষ গুণ বেশি পছন্দ করব ভিক্ষা করাকে। এবং কে না জানে, ভিক্ষা করার জন্য ঢাকা শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলশান-বনানী।

গুলশান-বনানীসহ দেশের যেকোনো এলাকায় ভিক্ষা করার অধিকার চাই আমি এবং চাই মানবাধিকার ও সংবিধানবিরোধী ‘ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন, ২০১১’-এর অধীন কোনোভাবেই যেন অভাবগ্রস্ত হয়ে স্বেচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেওয়া মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা না হয়। থাকতেই হবে এ ধরনের ভিক্ষা করার পূর্ণ অধিকার।

  • জাহেদ উর রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক