জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জ

বেশ কয়েক বছর ধরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত একটি বহুল আলোচিত বিষয়। এই খাতের বর্তমান পরিস্থিতি, সংকট ও চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কিছু পরামর্শ ও প্রস্তাবনা নিয়ে লিখেছেন ম তামিম

বাংলাদেশে প্রাথমিক জ্বালানি ব্যবহারের দুটি দিক। এর মধ্যে বড় দিকটি হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন। আরেকটি দিক হলো পরিবহন খাত। বিমান, জাহাজ, বাস-ট্রাকসহ যানবাহনগুলোয় যে তরল জ্বালানি ব্যবহার হয়, তার বড় একটি অংশই হলো ডিজেল। এ দুটি দিক ছাড়া কয়েক মাসের জন্য সেচকাজে আমাদের প্রচুর পরিমাণে ডিজেল লাগে।

যে প্রবৃদ্ধি আমাদের পরিবহন খাতে হয়েছে, তা পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের ফলে। সেখানে বছরে ৪০ লাখ টন ডিজেল ব্যবহৃত হয়। এখানে আমাদের এ মুহূর্তে খুব একটা কিছু করার নেই। কারণ, ঢাকার বাইরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছাড়া বাকি সব গাড়িই তেলভিত্তিক। এগুলো ইলেকট্রিক গাড়িতে প্রতিস্থাপন হওয়ার বিষয়টি আরও অনেক সময়সাপেক্ষ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান চিত্র

বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করছি নিজস্ব গ্যাস। এ ছাড়া খুব সামান্য পরিমাণ নিজস্ব কয়লা এবং আমদানি করা গ্যাস, কয়লা ও তেল। আমাদের ছোট একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আছে। এটি সারা বছর ১০০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এ মুহূর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সোলার ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াটের মতো। এগুলো দিনের বেলায় চার থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। একটি ৬০ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প আছে, তবে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো উদ্বোধন করা হয়নি।

আমাদের জ্বালানিতে গ্যাসের একটি সংকট দেখা যাচ্ছে। গরমকালে গ্যাস থেকে ৬–৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। শীতকালে চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন কিছুটা কম। যদি সব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হয়, তাহলে ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগবে। কিন্তু ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলে আমরা ৭-৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু গড়ে আমরা ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছি। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট। এর বড় একটি অংশ এখন এলএনজি থেকেও আসছে। কোনো কারণে যদি এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকে, তখন বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ হয়ে যায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো।

তেল দিয়ে এখন দুই হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। গরমকালে সেটি বেড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট হয়। কয়লা থেকেও আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। তবে কয়লার অভাবে সব সময় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরো উদ্যমে চলে না। যান্ত্রিক কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশ কয়েকবার বন্ধ ছিল। এটি খুব কম সময় পূর্ণ ক্ষমতায় চলেছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রও কয়লার অভাবে অনেক সময় বন্ধ থাকে। সব মিলিয়ে আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় সাত হাজার মেগাওয়াটের মতো।

এ হলো মোটাদাগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিত্র। এ মুহূর্তে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে ‘জেনারেশন পাওয়ার’ দরকার, সে ক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। কিন্তু জ্বালানির অভাবে পূর্ণ ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। এমনকি শীতকালেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এখনো আমাদের তেলভিত্তিক বিদ্যুতের ক্ষমতা ৫ হাজার মেগাওয়াট, ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক, ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো কয়লাভিত্তিক। এই যে ক্ষমতাগুলো তৈরি করা হয়েছে, তা ২০১৬ সালের যে পরিকল্পনা ছিল, তার সঙ্গে অনেকাংশেই সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে তেল ছাড়া।

২০১৬ সালের বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুতের বিষয়টি উল্লেখই ছিল না। পরবর্তী সময়ে সরকার আলাদাভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ছোটখাটো লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করেছে। অষ্টম মহাপরিকল্পনায় সরকার বলছে, ২০২৫ সাল নাগাদ ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে নবায়নযোগ্য থেকে। অন্যান্য পরিকল্পনায় দেখা যাচ্ছে, ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

সমস্যা যখন আমদানিনির্ভরতা

বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে আমাদের এ মুহূর্তে কোনো সমস্যা নেই। মূল সমস্যা হচ্ছে, জ্বালানি সরবরাহ। এ ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়েছি। ২০১৬ ও এর আগে ২০১০ সালের পরিকল্পনায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, আমাদের পরিকল্পনাটা অনেক বেশি আমদানিনির্ভর। এখন আমাদের মোট ব্যবহৃত জ্বালানির ৬৬ শতাংশই আমদানি করা। আমরা যদি নিজস্ব জ্বালানির সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করি, ২০৩০ সাল নাগাদ সেটি ৯০ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।

আমরা বলেছিলাম, বছরে শুধু ২০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি লাগবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। যে হারে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটছিল, তাতে এ জ্বালানি আমদানিতে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে করোনা মহামারির ধাক্কায় কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জীবাশ্ম জ্বালানির দাম অনেক কমে গেল। উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেক জ্বালানি কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেল। এরপর যখন আবার চাহিদা বাড়তে থাকল, তখন দেখা গেল জ্বালানি সরবরাহে আগের মতো কোম্পানি নেই। এ কারণে জ্বালানির মূল্য হঠাৎ বেড়ে গেল।

এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করল। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হলো। তখন এশিয়ার যে বাজার থেকে আমরা জ্বালানি কিনতাম, ইউরোপ তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিয়ে সেই মার্কেটে চলে এল। এর ফলে জ্বালানির দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ২০২৩–এর মাঝামাঝি পর্যন্ত এ পরিস্থিতি ছিল।

আমাদের আশা ছিল অর্থনীতি ভালো হবে। কিন্তু সেখানে একটি বড় ধরনের ধস নেমেছে। ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। মূলত এ কারণে আজকে আমাদের জ্বালানির সংকট। সরকারের পরিকল্পনাই ছিল আমদানিনির্ভরতা। স্বাভাবিকভাবেই ডলার না থাকলে, সেটা কঠিন। এখন অনেকেই বলছেন, এই অতিরিক্ত আমদানির চাপই অর্থনীতিতে ধসের সৃষ্টি করেছে। সেটির সঙ্গে আমি অবশ্য একমত নই। অর্থনীতির দুর্দশার কারণগুলো অন্য জায়গায়। এর একটি হলো ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ দুর্নীতি-অনিয়ম। এখানে অবশ্যই সরকারের ব্যর্থতা আছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম এখন কমে এসেছে। যুদ্ধের আগে যে দাম ছিল, সে পর্যায়ে চলে এসেছে। সুতরাং দাম প্রধান বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে ডলার–সংকট। এখন জ্বালানির মজুত রক্ষায় আমাদের লোডশেডিং একটি উপায়। শীতকালে সেটি খুব বেশি প্রভাব না ফেললেও গ্রীষ্মকালে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হবে। সরকার ডলার–সংকট মিটিয়ে জ্বালানি আমদানি করতে না পারলে ব্যাপকভাবে লোডশেডিং হতে বাধ্য।

পেট্রোবাংলার অক্ষমতা ও ব্যর্থতা

২০২১ সাল থেকে আমাদের নিজস্ব গ্যাস সরবরাহ ৩০০-৪০০ ঘনফুট কমে গেছে। এটি ধীরে ধীরে আরও কমছে। এখন বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ কমাতে গেলে সাশ্রয়ী মূল্যে নিজস্ব জ্বালানি সরবরাহ বাড়াতে হবে। এর জন্য বিনিয়োগ ও সময় দুই-ই দরকার। সরকার আমদানির ব্যবস্থা করছে। নতুন করে আবার এলএনজি আমদানির চিন্তা করছে। প্রতিবছর ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টনের এলএনজি আমদানির জন্য ১৫ বছর মেয়াদি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে বড় একটি চুক্তিও করা হয়েছে।

আমদানি হয়তো আগে-পরে লাগবে, কিন্তু এ মুহূর্তের সংকট মোকাবিলা করতে হলে নিজস্ব উৎসের জ্বালানি লাগবে।

দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের বর্তমান গ্যাসের যে মজুত আছে, এর বড় অংশ থেকে পেট্রোবাংলা যথেষ্ট পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন করতে পারছে না। শেভরন এক টিসিএফ অনুৎপাদিত মজুত থেকে ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। পেট্রোবাংলার অধীনে সাত টিসিএফ অনুৎপাদিত গ্যাস মজুত আছে। কিন্তু তারা মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। এখানে দক্ষতা, জ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাব দেখা যায়।

২০০৮-০৯ সালে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনায় এলএনজির কোনো উল্লেখই ছিল না। পেট্রোবাংলা তখনই প্রাক্কলন করেছিল, ২০২৩-২৪ সালে এসে নিজস্ব উৎস থেকে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হবে। এর জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও অনুসন্ধানই ছিল তাদের মূল কৌশল।

২০১০ সালের দিকে এসে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহের কথা বলা হয়। তখন দেখা গেল, প্রাক্কলিত যে ঘাটতি ছিল, তা নিজস্ব উৎপাদন থেকে সরবরাহের বদলে পুরোটাই তারা এলএনজি থেকে সরবরাহ করবে। এভাবে পরিকল্পনা সরে আসার পেছনে ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি’ কাজ করেছে বলে আমার ধারণা।

জ্বালানি বিভাগ জ্বালানি সরবরাহ কীভাবে করবে, তা নিয়ে সব সময় দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকেছে। বিকল্প উৎস হিসেবে আমি এলএনজি আমদানির বিরোধী নই। কিন্তু সমান্তরালভাবে দেশীয় উৎপাদন কেন বৃদ্ধি করা হলো না, সেটি খুবই রহস্যজনক।

নিজস্ব উৎপাদন বাড়ালেও কিন্তু এলএনজি লাগবে। সরকারকে বোঝানোর ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার নেতৃত্ব এখানে ব্যর্থ হয়েছে। মাটির নিচে গ্যাসের কেমন মজুত আছে, তা কীভাবে উত্তোলন করতে হবে, কীভাবে বিনিয়োগ করতে হবে, সে ধরনের জ্ঞানসম্পন্ন বা টেকনিক্যাল নেতৃত্বের অভাব আছে। তারা সরকারকে একই সঙ্গে ঝুঁকি ও আশা দেখিয়ে বড় কোনো বরাদ্দও নিতে পারেনি। আর আমদানির ক্ষেত্রে দালালি, কমিশন বাণিজ্য এসব তো আছেই।

বিপিসির লাভ ও অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি

গত আগস্টে তেলের দাম বাড়ানোর পর থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ছয় হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এখন বিপিসি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে অস্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠান। সরকারকে তারা কত ট্যাক্স দিচ্ছে, তা স্পষ্ট করে বলে না। জ্বালানির আন্তর্জাতিক গড় দরের চেয়ে বেশি মূল্য দেশের নাগরিকদের থেকে নেওয়া হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির ওপর সবচেয়ে প্রভাব বিস্তার করে তেলের দাম। তেলের দাম বাড়ানো হলে সরাসরি নিত্যপণ্যের ওপর ধাক্কা পড়ে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কয়েক গুণ পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। ২০২২ সালের ৫ আগস্ট হুট করে তেলের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে স্মরণকালে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। সরকার চাইলে এ মূল্যবৃদ্ধি আরেকটু সহনীয় করতে পারত। এখানে যে প্রভাব পড়েছে, তা আরও কমানো যেত, যদি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা করা হতো। এতে মূল্যস্ফীতিতে এত চাপ পড়ত না।

এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমে এসেছে। এখন আমরা যদি পেট্রলের দাম কমাই, তাহলে ভোক্তা লাভবান হবে। কিন্তু ডিজেলের দাম কমালে ভোক্তা খুব বেশি লাভবান হবে না। ডিজেল কিছু বাড়িতে বিদ্যুতের জ্বালানি হিসেবে এবং মূলত বাস-ট্রাকে ব্যবহার করা হয়। এখন ডিজেলের মূল্য কমালেও বাস-ট্রাকের ভাড়া তো কমানো হবে না। এর ফলে বড় পরিবহনের মালিকেরা আরও বেশি লাভবান হবেন। সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না। ডিজেল থেকে সরকার রাজস্ব আয় করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সমন্বয় করে পেট্রলের দাম কমানো উচিত। এলপিজির দাম যেভাবে নিয়মিতভাবে নির্ধারণ বা সমন্বয় করা হয়, পেট্রলের ক্ষেত্রেও সেটি সম্ভব।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু প্রস্তাবনা

গ্যাসের পর সবচেয়ে কম খরচ হচ্ছে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সার্বক্ষণিক চালুর দিকে সরকারের মনোযোগ দিতে হবে। চুক্তি শেষ হয়ে গেলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাদ দিতে হবে। সরকারের ইচ্ছায় কয়েক দফায় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরপরও যদি তারা থাকতে চায়, তাহলে ক্যাপাসিটি চার্জ ছাড়া ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ নীতিতে থাকতে পারে। দোকানপাট-মার্কেট রাত আটটার ভেতরে বন্ধ করার নীতি আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অফিসের সময় সকালে আরও কয়েক ঘণ্টা এগিয়ে আনা যায়। ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দিয়ে এর আগের চেষ্টায় সফল হওয়া যায়নি। সে ক্ষেত্রে গরম ও শীতকালে ভিন্ন অফিস সময় প্রবর্তন করা যেতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদের চাহিদার প্রাক্কলনটি সঠিকভাবে করতে হবে। আগামী পাঁচ-দশ বছরে কত বিদ্যুৎ লাগবে, তা যথাযথভাবে বের করতে হবে এবং সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নিউক্লিয়ার ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সমন্বয়ের মাধ্যমে ‘গ্রিন এনার্জি’র দিকে যেতে হবে। আমাদের গ্রিডেরও উন্নতি করতে হবে। একটি স্মার্ট গ্রিড গড়ে তুলতে হবে।

  • ম তামিম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন, পেট্রোলিয়াম প্রকৌশল
    বিভাগের অধ্যাপক