যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সম্প্রতি ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনে এসে বাইডেন প্রশাসনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কৌশল ব্যাখ্যা করে একটি বক্তব্য দিয়েছেন।
সুলিভানের বক্তৃতায় বেশ কিছু বিষয় ছিল, যা অর্থনীতিবিদেরা ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন। তবে তাঁর বক্তৃতায় কিছু উদ্বেগের বিষয়ও ছিল। বাইডেনের অর্থনৈতিক নীতিকৌশলের সবচেয়ে ইতিবাচক দিকটি হলো জাতীয় প্রতিরক্ষার ভিত্তি হিসেবে অর্থনৈতিক শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া।
জ্যাক সুলিভান বলেছেন, মিত্রদের সঙ্গে, বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারি আমেরিকার অর্থনৈতিক সুরক্ষার অন্যতম ভিত্তি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, চীন যে কায়দায় বাণিজ্য চর্চা করছে, তা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ থাকলেও, সে উদ্বেগ পশ্চিমকে চীন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিকে নেবে না।
সুলিভান তাঁর বক্তৃতায় উঁচু বেড়ায় ঘেরা একটি ছোট্ট উঠানের ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে চীন থেকে আমদানি করা নিরাপত্তা প্রযুক্তির ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন এবং আমরা আমেরিকান নাগরিকেরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি সরবরাহ করার সব ব্যবস্থা থেকে চীনের অপসারণ দেখতে চাই।
ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকানোয় সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র জোট গঠন করেছে এবং চীনের অর্থনৈতিক জবরদস্তি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন তার অংশীদারদের সমবেত করেছে। কিন্তু ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এবং সাম্প্রতিক সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশীদারকে অসন্তুষ্ট করেছে।
সুলিভানের ভাষায়, চীনকে প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে বাদ দেওয়াই হলো ‘উঁচু বেড়া’। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির কেবল ছোট একটি অংশ (যেটিকে ছোট্ট উঠান বলা যেতে পারে) প্রভাবিত হবে। ফলে নিরাপত্তা প্রযুক্তির বাইরেও চীনের সঙ্গে কার্বন হ্রাস এবং উন্নয়ন সহায়তার মতো বৈশ্বিক যোগাযোগের অন্যান্য খাতে অর্থনৈতিক লেনদেন এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
বাইডেনের নীতিকৌশলের যে বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগের, তা হলো ‘আমেরিকান পণ্য কিনুন’ শীর্ষক বিধানে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য ভর্তুকি এবং সংরক্ষণবাদ নিশ্চিতের ওপর মাত্রাতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। বাইরের বৃহৎ বাণিজ্য শক্তি মোকাবিলা ইস্যুতে ভর্তুকির ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় সবার সায় থাকলেও বাইডেনের সংরক্ষণবাদ দিন শেষে ভুল প্রমাণিত হবে।
বাইডেন প্রশাসন দুই পাখি মারতে এক ঢিল ছুড়ছে। এখানে তাঁর ঢিল হলো শিল্পনীতি। আর ‘পাখি’ দুটির একটি হলো জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত করা এবং অপরটি হলো পণ্য উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থানের ধারা ফিরিয়ে আনা। তবে এই দুটো নিশানায় ঢিল ছোড়ার মাধ্যমে উভয় নিশানাকেই কিছুটা হলেও খাটো করা হচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনায় ‘আমেরিকান পণ্য কিনুন’ শীর্ষক বিধানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে আগের চেয়ে ব্যয়সাপেক্ষ করে তুলছে। এর একটি বড় উদাহরণ হলো, জ্বালানি–রূপান্তর।
বাইডেন প্রশাসন সঠিকভাবেই বিশ্বাস করে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে ইলেকট্রিক গাড়ি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আমেরিকার দীর্ঘ মেয়াদের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি। কিন্তু ‘আমেরিকান পণ্য কিনুন’ শীর্ষক প্রবিধান অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকট্রিক গাড়ি, ব্যাটারি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির দাম অনেক বাড়িয়ে দেবে, যা তার জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়াকে অবনমিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় নিশানা অর্থাৎ উৎপাদনভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রসঙ্গে বলা যায়, এই ধরনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই পরোক্ষ। মূলধনের মজুত যত বেশি বাড়ানো যাবে, তত বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে—এই আশায় বাইডেন প্রশাসন প্রত্যক্ষভাবে ভর্তুকি দিয়ে এবং আমদানি সংরক্ষণ তথা আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূলধনের মজুত বাড়াতে পরোক্ষ ভর্তুকি দেওয়ার কথা ভাবছে। ধারণা করা হয়, প্রস্তাবিত অবকাঠামো নির্মাণ খাত এবং ইলেকট্রিক যানবাহন খাতে বিনিয়োগ আসলেই সেখানে দৃশ্যমানভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপগুলোকে মার্কিন মিত্ররা কীভাবে দেখছে, সেটিও একটি সমস্যা। বাইডেন এশিয়া এবং ইউরোপের অংশীদারদের সঙ্গে নিরাপত্তা জোট পুনর্গঠনে দুর্দান্ত ভূমিকা রেখেছেন।
ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকানোয় সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র জোট গঠন করেছে এবং চীনের অর্থনৈতিক জবরদস্তি মোকাবিলায় ওয়াশিংটন তার অংশীদারদের সমবেত করেছে। কিন্তু ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এবং সাম্প্রতিক সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অংশীদারকে অসন্তুষ্ট করেছে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ডেভিড ডলার ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনের জন এল থর্নটন চায়না সেন্টারের একজন সিনিয়র ফেলো