মতামত

আমলা তোষণে আইন, হোক না তা অসাংবিধানিক

সম্প্রতি একটি আলোচিত আইনের অতি সমালোচিত ধারাকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট
সম্প্রতি একটি আলোচিত আইনের অতি সমালোচিত ধারাকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট

একটা আইন প্রাথমিকভাবে তৈরি হয় কোথায়? কারা সেই আইনের খসড়া তৈরি করেন? খসড়া তৈরির পর সেই আইন কোথায় যায়? সংসদে আইনটি পাস হয় কী করে? একটা আইনের আইন হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রাথমিক ন্যূনতম শর্তই–বা কী? কখন একটি আইন বা তার কিছু অংশ বাতিল বলে গণ্য হয়? এই বাতিল কি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয় নাকি আদালতের মাধ্যমে বাতিল বলে ঘোষিত হয়ে আসতে হয়? এই মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে আলোচনায় সুবিধা হয়।

আইন তৈরি হয় কী করে?

প্রায় সব বিল উত্থাপন করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। খুব অল্পসংখ্যক বেসরকারি সদস্যের বিল সংসদীয় বিধিবিধান অনুযায়ী সংসদের কোনো সদস্য দ্বারা উত্থাপন করা হয়। সাধারণত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নীতিনির্দেশনা–সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি করে এবং একটি প্রাথমিক বিলের খসড়া তৈরি করে সারাংশসহ বিলের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদনের পর যে মন্ত্রণালয় এ বিল উত্থাপন করেছে, সেই মন্ত্রণালয়কে বিলের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং পরিষদ তা বিবেচনা করে দেখে। তারপর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে হয় একটা চূড়ান্ত খসড়া বিল তৈরি করে নয়তো খসড়া বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখে। তারপর চূড়ান্ত খসড়া বিল অথবা খতিয়ে দেখা বিল উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয় এবং অনুমোদনপ্রাপ্তির পর এটাকে সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো হয়।

কোনো অর্থ বিল (কর ধার্যের প্রস্তাব, সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় অথবা অন্যান্য আর্থিক বিষয়) রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা যায় না। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুপারিশের পর স্পিকার বিলটিকে সংসদে উপস্থাপনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেন। বিলটি সংসদে উপস্থাপনের আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের ওই বিলের কপি প্রদান করেন। বিল উপস্থাপনকে প্রথম পাঠ বলা হয়। তারপর এ বিলটির ওপর বিশদ আলোচনার জন্য আরেকটি তারিখ ঠিক করা হয়, যাকে বিলের দ্বিতীয় পাঠ বলে অভিহিত করা হয়। এ পর্যায়ে বিলের ওপর আলোচনা হতে পারে অথবা এটি স্থায়ী কমিটি অথবা বাছাই কমিটির কাছে পাঠানো অথবা জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রচার করা যেতে পারে। কমিটি রিপোর্টসহ বিলটিকে সংসদে পাঠাবে। এ রকম রিপোর্টসহ বিলটি বিবেচনার জন্য রাখা হয়। বিলটি গৃহীত হলে স্পিকার ভোটের জন্য সংসদে পেশ করেন।

সরকারি চাকরি আইন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন কিংবা দুদক আইন একটি বিষয়কে স্পষ্ট করে। সরকার চাইলে যে কোনো আইন যেকোনো ধারা রেখেই পাস করতে পারে। এমনকি সেটি যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই।আদালত কোনো আইনকে কিংবা এর কোনো ধারাকে যদি অসাংবিধানিক ঘোষণাও করেন সরকার উচ্চ আদালতে আপিল করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে পারে তার ইচ্ছামতো যেকোনো সময়ের জন্য।

বিলটিতে যদি কোনো সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয় এবং ভোটে দেওয়া হয় তখন সংশোধিত বিলটি সংসদে বিবেচনার জন্য পেশ করা হয়। দ্বিতীয় পাঠের পর যদি কোনো বিল পাস হয় তাহলে একে তৃতীয় পাঠ বলা হয়। কোনো বিল পাস হতে হলে উপস্থিত সংসদ সদস্যদের অধিকাংশের ভোটের প্রয়োজন। বিল পাস হওয়ার পর স্পিকার এতে স্বাক্ষর করেন। এরপর বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বিলটি জাতীয় সংসদের একটি আইন হিসেবে সরকারি গেজেটে ছাপা হয়। অর্থাৎ একটি আইন খসড়া থেকে চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং দফায় দফায় সংসদে পেশ করা হয়। এমনকি শেষমেশ এটি স্পিকার এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও যায়। সুতরাং বিলের প্রতিটি ধারা–উপধারা পুঙ্খানুপুঙ্খ চুলচেরা বিচার–বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে পাস হয়।

সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইনের পরিণতি

এ তো গেল আইন তৈরির প্রক্রিয়া। কিন্তু দেশে যেকোনো আইন প্রণয়নের অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হচ্ছে সেটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন অর্থাৎ সংবিধানের সঙ্গে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক হবে না। সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদ বলছে, ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।’ কিন্তু কোনো আইন কিংবা আইনের কোনো ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও সেটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাতিল হয় না। এর জন্য রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে উচ্চ আদালতে রিট করতে হয় কিংবা আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করতে পারেন এবং সেটার নিষ্পত্তির মাধ্যমেই ওই আইন বা আইনের অংশ বাতিল করা যায়।

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮

সম্প্রতি একটি আলোচিত আইনের অতি সমালোচিত ধারাকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই এর একটি ধারা তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করে। ধারাটি হলো: ৪১(১) ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’

আইনবিশেষজ্ঞ কিংবা আইনজীবী হওয়ারও দরকার নেই, একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক যিনি আমাদের সংবিধানের খুব মৌলিক বিষয়ের ধারণা রাখেন, তিনি জানেন, ওই আইনের আলোচিত ধারাটি আমাদের সংবিধানে নিশ্চিত করা মৌলিক অধিকারের (অনুচ্ছেদ ২৭: সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী) সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকলে আইনের পরিণতি কী হবে, সেটা বলা আছে অনুচ্ছেদ ২৬(২)–এ, ‘রাষ্ট্র এই ভাগের কোনো বিধানের সহিত অসমঞ্জস কোনো আইন প্রণয়ন করিবেন না এবং অনুরূপ কোনো আইন প্রণীত হইলে তাহা এই ভাগের কোনো বিধানের সহিত যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইয়া যাইবে।’ ফলে হাইকোর্ট খুব যৌক্তিকভাবেই সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারা বাতিল ঘোষণা করেছেন।

শাসনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারা কি ইচ্ছা করেই রাখা হয়?

কলামের শুরুতে একটা আইন প্রণয়নের পদ্ধতি নিয়ে এত কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এতগুলো ধাপ পেরিয়ে যে আইন প্রণীত হয়, সেটিতে সংবিধানের একেবারে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক ধারা কি ভুলক্রমেও থাকার কথা? প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ সরকার যা করেছে, সেটা একেবারে পরিকল্পনা করেই করেছে। তবে নাগরিকদের এটা জানার অধিকার আছে, আইন প্রণয়নের এই পুরো প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে সংসদের অধিবেশনে এবং স্থায়ী কমিটিতে কেউ কি এই ধারার বিরোধিতা করেছিলেন?

আইনটি প্রণীত হয় ২০১৮ সালে। সে সময় আমি সংসদে না থাকলেও একদলীয় সংসদের যে চরিত্র আজকে আমি দেখি, সেটা সে সময় বেশি ছাড়া কম ছিল না। সুতরাং সংসদের কার্যপ্রণালি পরীক্ষা না করেও খুব সহজেই অনুমান করা যায়, এই ধারাসহ আইনটি পাস করতে সরকারকে কোনো তরফ থেকেই কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সংসদে যে চর্চা আমি গত কয়েক বছরে দেখেছি, তাতে এটি স্পষ্ট সংসদে প্রথমবার একটি বিল উত্থাপিত হওয়ার পর সংসদে কখনো প্রাথমিক আলোচনা হয় না। সেটি সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয় আইনটি উত্থাপনকারী মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। আমি নিজে যেহেতু একটি স্থায়ী কমিটিতে আছি, তাই জানি স্থায়ী কমিটিতে সরকার দলে থাকা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের বাইরে ভিন্ন কোনো মত গ্রহণের নজির নেই। সুতরাং সরকারি চাকুরি আইন ২০১৮–এর ৪১(১) ধারাসহ পাস করতে সরকারকে কোনো বেগ পেতে হয়েছে বলে মনে হয় না।

সাংঘর্ষিক ধারা রাখতে সরকারের আপিল

হাইকোর্টের রায়ের পর বিষয়টি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কারণ, ৪১(১) ধারা যে সংবিধানের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক, সেটা বোঝার জন্য সংবিধানবিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কিন্তু না, বিষয়টি শেষ হল না। শেষ হলো না, কারণ সরকার চাইছে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার পরও সরকারি চাকরিজীবী আমলাদের বিশেষ সুবিধা দিতে। আর তাই হাইকোর্টের রায়ের পরপরই রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল আগের এক মামলার রায়ের নজির টেনে আমাদের জানালেন যেহেতু সাধারণ জনগণের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীর একটা পার্থক্য আছে, তারা প্রত্যেকে আলাদা একেকটা ক্লাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই তাদের জন্য আইনের ভিন্নতা থাকতে পারে। এবং সে কারণেই তিনি আপিল করবেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্যই সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। সংবিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এই বক্তব্যের অজুহাতে রাষ্ট্রের আপিল করার সিদ্ধান্ত মনে করিয়ে দেয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত কি বৈধ, না অবৈধ?

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের রায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ২০০৯ সালের আইনের ১১টি ধারা ও উপধারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের লঙ্ঘন এবং তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এটি ক্ষমতার পৃথক্‌করণ নীতিরও পরিপন্থী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্ম-কমিশনের সব সদস্যরা প্রশাসনিক নির্বাহী। একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁরা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না।

এ রায়ের পর সরকার আপিল করে এবং আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেন রায়ের ওপরে। সেই স্থগিতাদেশের বলেই এখনো এই আদালতগুলো চলতে পারছেন। এতে খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রশ্ন আছে। প্রথমটি হলো দেশের হাইকোর্টের এ রকম সুস্পষ্ট রায়ের বিরুদ্ধে সরকার কেন আপিল করল? বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা কি সরকার জানে না? দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, আপিল করার পর সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই আপিলের শুনানি এখনো কেন শুরু হয়নি? এই শুরু না হওয়াটা কি প্রমাণ করে না স্থগিতাদেশ অনন্তকাল ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবে সরকার এবং সেটা দিয়েই এই নির্বাহী বিভাগের পরিচালনায় মোবাইল কোর্ট চলতেই থাকবে? বাস্তবে হয়েছেও তাই।

মোবাইল কোর্ট নিয়ে সরকারের ইচ্ছে খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে যত আইন তৈরি হচ্ছে সেগুলো দেখলে। রাষ্ট্রের উচ্চ আদালত যে মোবাইল কোর্টকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন, সেই মোবাইল কোর্ট সাম্প্রতিক সময়ে পাস হওয়া ফৌজদারি অপরাধ থাকা প্রায় সব আইনে রাখছে সরকার। আমি নিজে সংসদে এমন প্রতিটি আইনের ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করে, প্রশ্ন করে কোনো জবাব পাইনি।

একযাত্রায় পৃথক ফল

একই যাত্রায় পৃথক ফল হয়েছিল দুদক আইনে। সরকারি চাকরি আইন ৪১(১) ধারার মতো একই ধরনের বিশেষ সুবিধা দিয়ে আনা বৈষম্যমূলক বিধান রেখে ২০১৩ সালে দুদক আইনের ৩২(ক) ধারা প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ নিয়ে রিট হলে আইনটি বৈষম্যমূলক ঘোষণা করে হাইকোর্ট বাতিল করেছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হয়নি বলে শুনানিতে বলেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

সরকারি চাকরি আইন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন কিংবা দুদক আইন একটি বিষয়কে স্পষ্ট করে। সরকার চাইলে যে কোনো আইন যেকোনো ধারা রেখেই পাস করতে পারে। এমনকি সেটি যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও হয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই।আদালত কোনো আইনকে কিংবা এর কোনো ধারাকে যদি অসাংবিধানিক ঘোষণাও করেন সরকার উচ্চ আদালতে আপিল করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে পারে তার ইচ্ছামতো যেকোনো সময়ের জন্য। শুধু এখানেই শেষ না, আপিল নিষ্পত্তি না করার সুযোগ নিয়ে সরকার চাইলে নতুন নতুন আইনে যুক্ত করতে পারে সেই অসাংবিধানিক ধারা। গত কয়েক বছর আমলা তোষণের যে পথে হাঁটছে সরকার তাতে আইনে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখার বিষয়টা অনুমিতই ছিল। কিন্তু সেই সুবিধা দিতে গিয়ে যে সরকার রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন করতেও মুহূর্তমাত্র দ্বিধা করবে না, সেটি বিপজ্জনক।

রুমিন ফারহানা বিএনপির সংসদ সদস্য ও হুইপ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী