অভিমত

পারিবারিক সহিংসতা শিশুর জীবনে যে প্রভাব ফেলে

পারিবারিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করা শিশু বড় হয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে সে অন্যের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ঝগড়া করে। এভাবে তার সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুর জীবনে পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব নিয়ে লিখেছেন নাজনীন আখতার  

স্কুলে পড়া অবস্থায় মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনার ইতি ঘটে। স্বামী এখন পোশাকে কারচুপির কাজ করেন। তিনি গৃহবধূ। একমাত্র সন্তানের বয়স ১৫ বছর। পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ক্লাসের সহপাঠীদের তুলনায় সে বেশ বড়। কেন বড়? সেই গল্পটা নিজেই বললেন ওই নারী। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাদে।

ওই নারী বলেন, তাঁর স্বামীর ‘মারধর করার’ অভ্যাস আছে। কোভিডের সময় তাঁরা আর্থিক সংকটে পড়েন। সংসারের জন্য টাকা চাইলেই স্বামী তাঁকে মারধর করতেন, ছেলেকেও পেটাতেন। কোভিডের পর স্কুল খুললেও স্বামী পড়ালেখার খরচ দিতে চাইতেন না। ঝগড়াঝাঁটি-মারধর নিয়মিত চলত।

ওই নারীর ভাষ্য, ‘আমাকে মারে দেখে ছেলে আর পড়তেই চাইত না। মন খারাপ করে বাসার বাইরে চলে যেত।’ বস্তির শিশু সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা বোঝানোর পর এ বছর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে দেন স্বামী। 

বাউনিয়াবাদ এলাকাটিতে নিম্ন আয়ের পরিবারের বসবাস। এলাকাটিতে গিয়ে দেখা যায়, মূল পাকা সড়ক ধরে দুই পাশে সারি সারি গলি। একেকটি গলির ব্লক ও লাইন নম্বর উল্লেখ করে ঠিকানা বোঝাতে হয়।

ওই নারী ১ নম্বর লাইন পোড়া বস্তিতে বাস করেন। বছর বিশেক আগে আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ায় লাইন নম্বরের সঙ্গে ‘পোড়া বস্তি’ শব্দটি মুখে মুখে জুড়ে গেছে। এলাকার বাসিন্দা ও শিশু অধিকারবিষয়ক সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সমাজকর্মী আলী হোসেন বলেন, আশির দশকে সরকারি খাসজমি একজন বিদেশি নারী লিজ নিয়ে বাউনিয়াবাদের ভাষানটেকের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করেন।

২ নম্বর লাইন পোড়া বস্তিতে সরকারি একটি প্রকল্পের ক্লাবঘরে বসে কথা হয়েছিল বাউনিয়াবাদের এ-ব্লকের ৭ ও ৮ নম্বর লাইন এবং পোড়া বস্তির ১ ও ২ নম্বর লাইনের বাসিন্দা চার কিশোরী, পাঁচ অভিভাবক, দুই তরুণ-তরুণী এবং দুই সমাজকর্মীর সঙ্গে। চার কিশোরী প্রগতি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও বাউনিয়াবাদ আইডিয়াল হাইস্কুলের ছাত্রী। তরুণী (২২) ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। আর তরুণ (২০) পড়া ছেড়ে দিয়ে গাড়িচালকের কাজ খুঁজছেন। অভিভাবকদের পাঁচজনই গৃহবধূ। তাঁরা পারিবারিক সহিংসতার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছিলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।

ভীতি ছড়ায় শিশুদের মধ্যে

পোড়া বস্তিতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া কিশোরী মেয়েটি বলছিল, ক্লাবঘরে ঢোকার আগেই এক স্ত্রীকে তাঁর স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হওয়ার দৃশ্য দেখেছে। স্বামী দুপুরের খাবার খেতে কাজ থেকে ফিরে এসে দেখে দুই শিশুসন্তানকে বোনের কাছে রেখে স্ত্রী প্রতিবেশীর বাসায় গল্প করছে। এ দেখে ‘মেজাজ’ ঠিক রাখতে পারেননি স্বামী। মেয়েটির ভাষায়, পাশেই ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ওই দম্পতির দুই শিশুসন্তান। এমন ভয়ের অভিজ্ঞতা তারও বহুবার হয়েছে।

তাকে সমর্থন দিল পাশে বসা ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী অন্য তিন কিশোরীও। তাদের ভাষ্য, পারিবারিক সহিংসতার এসব দৃশ্য দেখে দেখে তাদের মনে ভীতি জন্মেছে। বিশেষ করে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ১৬ বছর বয়সী কিশোরী জানাল, বিয়ে করলে স্বামী তাকেও মারতে পারে—এসব ভাবলেই ভয় হয়।

এই মেয়েটির বাসা এ ব্লকে রবিদাস পাড়ায়। তার নানি তিন কক্ষের একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সেটার একটি কক্ষে তারা মা-বাবা ও তিন ভাই-বোন মোট পাঁচজন থাকে।

সে বলল, ‘ঘরগুলো একটার সঙ্গে একটা লাগানো। ঝগড়াঝাঁটির সময় মারধর আর জোরে জোরে গালিগালাজ চলে। মনে হয় যেন নিজের ঘরেই ঘটনা ঘটছে।’ কিশোরীর দাবি, তার মা-বাবার মধ্যে এমন সহিংসতা হয় না।

চুপচাপ স্বভাবের কিশোরীও (১৩) বলে উঠল, ঝগড়াঝাঁটি মারধর দেখলে তার ভয় লাগে। কোনো পরিবারে বিবাদ শুরু হলে মা-বাবা বলেন, ‘ঘর থেকে বের হবি না।’

গবেষকদের মতে, পারিবারিক সহিংসতার শিকার ও সাক্ষী হওয়া শিশুদের জীবনভর এক সংকটের মধ্য দিয়ে চলতে হতে পারে। মায়ের সঙ্গে শিশুর আবেগীয় সম্পর্ক বেশি থাকায় মাকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখলে শিশুর মানসিক অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের মধ্যেও স্ত্রী বা অন্য কোনো নারীকে নির্যাতন করার প্রবণতা তৈরি হয়। তারা ভাবে, নারীদের নির্যাতন করা যায়। আর মেয়েদের মধ্যে নির্যাতন মেনে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। তারা ভাবে মার খেতে হয়, উপায় নেই।

মা-বাবার দ্বন্দ্বে শিশুর জীবনে ছন্দপতন

৭ ও ৮ নম্বর লাইনের রবিদাস পাড়ার পারিবারিক সহিংসতার শিকার এক নারীর দুই সন্তান নিয়ে লড়াই আর ‘পোড়া বস্তির’ এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা সেখানে মুখে মুখে ফিরছে। পরকীয়ার জের ধরে ওই নারীকে নির্যাতন করতেন স্বামী। রাস্তায় ফেলেও পেটাতে দেখেছেন অনেকে। গত বছর স্বামী প্রেমিকাকে বিয়ে করে ওই এলাকাতেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। কাপড় সেলাই করে দুই সন্তানকে নিয়ে অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন প্রথম স্ত্রী। ‘বাবাভক্ত’ চার বছরের ছোট মেয়েটি এর পর থেকেই অসুস্থ ছিল। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ১১ বছরের ছেলেটি স্কুলে যেতে চায় না। কারণ, সহপাঠীরা বাবার বিয়ের কথা তুলে তাকে বিদ্রূপ করে।

গত বছরের ২৮ আগস্ট এসএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণার দিন আত্মহত্যা করে পোড়া বস্তির ওই কিশোরী। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিল। তবে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলা অভিভাবকদের মতে, মা-বাবার বিচ্ছেদ ও মামার বাড়িতে একা বড় হওয়া নিয়ে বিষণ্নতা ছিল মেয়েটির।

পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা তাকে আরও হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। কয়েক বছর আগে মেয়েটির বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর তার পোশাক কারখানার কর্মী মা-ও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু ওই সংসারে তাঁর প্রথম সংসারের সন্তানকে নিয়ে যেতে নিষেধ ছিল। ফলে মেয়েটি বড় হয় মামার কাছে। মা নিয়মিত এসে তার খোঁজ করতেন, খরচ দিতেন। মেয়ে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, এই স্বপ্ন দেখতেন তিনি। হয়তো মায়ের কষ্টের কথা ভেবেই ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছিল মেয়েটি। ঘটনার দিন মায়ের আহাজারির কথা বলছিলেন অভিভাবকেরা।

শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা। তিনি বলেন, নারীর প্রতি প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীকে কম গুরুত্ব দেওয়া ও নির্যাতন করার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন ২৭ জানুয়ারি ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে জানায়, গত বছর ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ছাত্রী ৬০ শতাংশ। ছাত্রীদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনের কারণে প্রায় ৯ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে ৪ শতাংশের বেশি ছাত্রী।

ক্লাবঘরে এক অভিভাবক বলেন, সহিংসতা মেয়েদের অনেক মানসিক চাপে ফেলে। এর উদাহরণ তিনি নিজে। তাঁর বাবা সব সময়ই মাকে মারধর করতেন। একসময় মা ও তাঁর চার বোনকে ফেলে বাবা দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন। তিনি ভাবতেন, সংসারে বোধ হয় এমনই হয়। এটাই জীবন। ইচ্ছা করলেই যে পরিবারের সুস্থ একটি পরিবেশ রাখা যায়, এটা তাঁর ধারণার বাইরে ছিল।

শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা। তিনি বলেন, নারীর প্রতি প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীকে কম গুরুত্ব দেওয়া ও নির্যাতন করার ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।

তবে সহিংসতা ঘটত এমন পরিবারগুলোতে কাউন্সেলিং করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ওই বাবা-মাকে বোঝানো হয়েছে নির্যাতনের ঘটনা দেখে বড় হলে তাঁদের ছেলেশিশুটিও সহিংস আচরণ করবে অন্য নারীর সঙ্গে। তাঁদের মেয়েশিশুটি পুরুষ জাতির প্রতি ঘৃণা নিয়ে বড় হবে।

বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় নিম্নবিত্ত পরিবারের পারিবারিক সহিংসতার তথ্য বেশি পাওয়া যায়। কারণ, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদের এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ কম। তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেক শিশুকে অভিভাবকেরা কাউন্সিলিংয়ের জন্য নিয়ে আসেন। ওই সব শিশুরা প্রায়ই বাবা–মায়ের ঝগড়া এবং এর ফলে তাদের প্রতি বাবা–মায়ের মনোযোগ কম দেওয়ার অভিযোগ করে। রোকসানা সুলতানা বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত পরিবারে প্রবেশ করতে পারে। তাই মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারেও পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন।

ভুল পথে যাওয়া কিশোরী

ক্লাবঘরের আলোচনায় ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সমাজকর্মী মাসতুরাত আলম বলেন, পারিবারিক সহিংসতার কারণে অনেক মেয়ের পরিবার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একটা আকুলতা তৈরি হয়। ওই সময় তারা অনেক সময় চাকরি ও প্রেমের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। পোড়া বস্তির দিনমজুর ও ‘ছুটা বুয়া’ দম্পতির একটি মেয়ে (১৬) কোভিডের কারণে অনটনের সময় এক লোকের সঙ্গে কাজের খোঁজে বেরিয়ে যায়।

পরে ভারতে পাচার সন্দেহে তাঁদের আটকে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দারা পরিবারের লোকজনকে খবর দেন। মেয়েটিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। তবে কয়েক মাস পর মেয়েটি নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এখন সে মা-বাবাকে নিয়মিত টাকা পাঠায়। কয়েক মাস পরপর মা-বাবাকে দেখতে আসে।

মাসতুরাত জানান, মেয়েটির সঙ্গে পরে তাঁর কথা হয়েছিল। মেয়েটি কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাঁকে জানিয়েছিল, সে একটি যৌনপল্লিতে থাকে। অনটনের কারণে প্রতিদিন মা-বাবার মারপিট, কলহ দেখতে তার ভালো লাগত না। যেভাবেই হোক সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল।

সহিংসতা মেনে নেওয়ার প্রবণতা

চাইল্ড লেবার: অ্যাকশন-রিসার্চ-ইনোভেশন ইন সাউথ অ্যান্ড সাউথ-ইস্টার্ন এশিয়া (ক্ল্যারিসা) কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা প্রত্যক্ষ করা শিশুদের ওপর একটি গবেষণা করে। রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার গজমহল এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারের ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত গবেষণা চলে।

প্রকাশিতব্য ওই গবেষণায় উঠে এসেছে ছোট ছোট গল্প। এক কিশোরী বলেছে, তাকিয়ে তাকিয়ে মায়ের মার খেতে দেখা ছাড়া তাদের ভাই-বোনের কিছু করার থাকত না। আগে প্রতিবাদ করে অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনেছে। এখন সে পারতপক্ষে বাবার সঙ্গে কথা বলে না। সদ্য কৈশোর পেরোনো এক তরুণ জানান, বাসায় কলহ শুরু হলেই তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেন।

শিশুদের সাক্ষাৎকার নেওয়া বিআইজিডির গবেষণা সহযোগী তাসলিমা আক্তার বলেন, এলাকাটিতে বেশির ভাগ পরিবারে পারিবারিক সহিংসতা হয়। পরিবারগুলোর শিশুরা জানিয়েছে, বাবা ওদের সামনেই মাকে মারধর করে। মায়ের কান্নাকাটি দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়। মায়ের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে মার খায়। তাই এই ঝগড়াঝাঁটি, মারধর অনেক সময় মেনে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় তাদের মধ্যে। তিনি জানান, পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে মেয়েরা খোলামেলা কথা বললেও ছেলেরা বলেনি। মেয়েরা অধিকাংশ সময় বাসায় থাকে বলে তাদের সহিংসতা বেশি প্রত্যক্ষ করতে হয়।

শিশুর সার্বিক ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু-কিশোর এবং পারিবারিক মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পারিবারিক সহিংসতা শিশুর মনঃসামাজিক বিকাশ ও সার্বিক ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে।

একটি শিশুর জ্ঞানগত, সামাজিক ও আবেগীয় এবং নৈতিক—এই তিন ধরনের বিকাশ হয়। পারিবারিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করা শিশুর মধ্যে ধারণা জন্মে যে পুরুষ শক্তিশালী আর নারী দুর্বল। এটা তার জ্ঞানীয় বিকাশকে ব্যাহত করে। ওই শিশু বড় হয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সে অন্যের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, ঝগড়া করে। এভাবে তার সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশে বাধা পড়ে। পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় কোনো এক পক্ষ সত্য আড়াল করে। এটা দেখে বড় হওয়া শিশুটির নৈতিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়।

হেলাল উদ্দিন জানান, সহিংসতামুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে মা-বাবার মধ্যে সহনশীলতা তৈরি করতে হবে। সমস্যা সমাধানে কাউন্সেলিং নিতে আস্থা তৈরি করতে হবে মা-বাবার মধ্যে। ওই পরিবারের শিশুর আচরণ ও আবেগজনিত সমস্যা দেখা দিলে তাকে দ্রুত মনোচিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।