চীনের সামগ্রিক অর্থনীতির স্বাস্থ্য মোটেই ভালো নয়
চীনের সামগ্রিক অর্থনীতির স্বাস্থ্য মোটেই ভালো নয়

চীনের অর্থনীতি কি নিস্তেজ হওয়ার পথে

চীন সরকার তার জিরো কোভিড ব্যবস্থা শিথিল করার পর প্রায় এক বছর পার হয়ে গেছে। এই ব্যবস্থার কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ পিছিয়ে পড়েছিল। তবে জিরো কোভিড ব্যবস্থার যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর নীতিনির্ধারকেরা ও পণ্ডিতেরা আশা করেছিলেন, চীন দ্রুত তার আগেকার অর্থনৈতিক ধারায় ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু এখনো চীনের অর্থনৈতিক প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়নি। তার বদলে গত বছরের অর্থনৈতিক সূচকগুলো চীনের জন্য হতাশাজনক ছবি এঁকেছে।

২০২১ সালে চীনের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ডসহ বড় বড় আবাসন কোম্পানি পতনের মুখে পড়ে। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যদিও চীন সরকার গুয়াংজু এবং সাংহাই এলাকায় কোম্পানিগুলোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখনো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি।

চীনের স্থানীয় সরকারগুলোর ঋণের অঙ্ক ছোট থেকে বড় হতে হতে এখন তা গোটা চীনের সামগ্রিক আর্থিক স্বাস্থ্যকে খারাপ করে তুলেছে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা মুডিস গত ডিসেম্বরে চীনের ঋণমান সূচক নামিয়ে দিয়েছে।

গত ২০২৩ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে চীনা ভোক্তাদের মূল্যসূচকে পতনের ধারা অব্যাহত ছিল। এটি অভ্যন্তরীণ চাহিদার অভাবকেই নির্দেশ করছে। এই সমস্যাগুলো বেকারত্বের উচ্চতর হার, সরকারি চাকরির পদের সংখ্যা বাড়াতে না পারা, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন হ্রাস, ইত্যাদির মতো সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

চীনে জনমত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যেও এই চ্যালেঞ্জগুলো দেশটির জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে। শীর্ষস্থানীয় নেতারা বারবার বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করার পরও তারা সরকারি নীতিনির্ধারকদের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। সরকার অবশ্য উদ্দীপনামূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে সেই ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো সরকারের নীতি অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বেসরকারি খাত পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

চীনা অর্থনীতির ওপর আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি চীনের পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, চীনের শেয়ারবাজারের লেনদেন এখন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে খারাপ করছে। সিকি শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো চীনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মানে দাঁড়ায়, বিদেশি বিনিয়োগ এখন চীন থেকে ক্রমেই সরে যাচ্ছে।

সম্প্রতি চেউংকং গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস বেসরকারি খাতের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ওই সমীক্ষায় তারা চীনের সামগ্রিক ব্যবসায় পরিবেশ এবং তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাপক হতাশা দেখতে পেরেছে। ব্যবসায়ী নেতারা সরকারি বিবৃতিকে ফাঁকা বুলি হিসেবে দেখছেন এবং তাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে উদ্যোক্তাদের গ্রেপ্তার করা ও অর্থ, প্রযুক্তি, প্রাইভেট টিউটোরিয়াল ও আবাসন খাতের ওপরে সরকারি দমন–পীড়ন চালানোর কথা ভুলে যাননি।

চীনা অর্থনীতির ওপর আত্মবিশ্বাসের এই ঘাটতি চীনের পুঁজিবাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, চীনের শেয়ারবাজারের লেনদেন এখন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে খারাপ করছে। সিকি শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো চীনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মানে দাঁড়ায়, বিদেশি বিনিয়োগ এখন চীন থেকে ক্রমেই সরে যাচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের মোট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশ বেশি বেসরকারি খাতে থেকে আসে এবং এই খাতই উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সেই খাত এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্নাতক শেষ করে অনেক যুবক চাকরি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন

পিকিং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ঝাং ডান্ভান মনে করেন, চীনে এখন যুব বেকারত্বের হার ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।

স্থানীয় সরকারগুলোও তাদের ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং আবাসন–সংকটের কারণে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। উহান প্রদেশে প্রবীণেরা তাঁদের চিকিৎসা-বিমার সুবিধা কমানোর প্রতিবাদ করছেন। এসব সংকট চীনকে ভেতরে-ভেতরে অস্থির করে তুলেছে, যা ক্রমে অনুভূত হতে শুরু করেছে।

● ক্যাথরিন তাই সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের এশিয়ার উপপরিচালক

● রেনি লুও সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের একজন গবেষণা সহকারী

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট। ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত অনুবাদ