প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন হলো সংবিধান। ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। গত ৫০ বছরে এ সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন শুধু ‘তাত্ত্বিক’ বিষয় নয়, সব সময় এর একটি প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য থাকে। সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সংকট, যেকোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা, সামরিক শাসন, সরকারগুলোর কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা—এসব কিছুই সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধন নিয়ে আট পর্বের এই লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রতি রোববার প্রকাশিত হচ্ছে। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে সংবিধান কার্যকর হলে গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সরকার ঘোষণা দেয়। সেই সময় রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য থাকলেও আরও চারটি দল বেশ সক্রিয় ছিল।
এই দলগুলো হলো কমিউনিস্ট পার্টি (মণি সিংহ), ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ভাসানী) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এর মধ্যে প্রথম দুটি দল আওয়ামী লীগের প্রতি বেশ নমনীয় ছিল।
অপরদিকে শেষ দুটি দল ছিল আওয়ামী লীগের কট্টর বিরোধী। নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী বেশ কিছু উগ্র বামপন্থী দল ও গ্রুপের তৎপরতা ছিল। তবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় সে সময় প্রকাশ্যে এ ধরনের কোনো দলের কর্মকাণ্ড ছিল না।
নতুন সংবিধানের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ’৭৩ সালের শুরুর দিক থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা বেশ জোরদার হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনগণ ছিল কিছুটা বিক্ষুব্ধ। নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের সব ধরনের পূর্বশর্ত ও পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদের প্রতি আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল বেশ কঠোর।
এর ফলে অনেক জায়গায় ভোট নিয়ে নানা প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনার কথা জানা যায়। এ ধরনের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ বিপুলা পৃথিবীতে লিখেছেন, ‘আমার কলকাতা যাওয়ার আগে, ৭ মার্চ, দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
আমাদের ভোটকেন্দ্র ক্যাম্পাসের সন্নিহিত এলাকায়। দুই গাড়ি করে আমরা একসঙ্গে ভোট দিতে গেলাম—উপাচার্য ইন্নাছ আলী, রেজিস্ট্রার মুহম্মদ খলিলুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী আর আমি। স্বাধীন দেশে এই প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছি—মনের মধ্যে প্রচণ্ড উৎসাহ। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সে–উৎসাহ দপ করে নিভে গেল। জানলাম, আমাদের ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে।’
এই নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে ভোট গণনায় বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল (তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণার ঘটনাটি ছিল বহুল আলোচিত)। সরকার সমর্থক সংবাদপত্রগুলোর হিসাবেও বিরোধী দলগুলো কমপক্ষে ৩০টি আসন পাবে—এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল ২৯৯টি (একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত ছিল) আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ২৯২টি আসনে জয়লাভ করেছেন। বিরোধী দলগুলো দুটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন বাকি পাঁচটি আসন। নির্বাচনের এই ফলাফলে জনমনে যেমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল, তেমনি সরকারি দলের প্রতি বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা ও অবিশ্বাসের জন্ম নিয়েছিল।
সংসদীয় রাজনীতিতে এ নির্বাচনের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ পলিটিকস: প্রবলেমস অ্যান্ড ইস্যুজ বইয়ে রওনক জাহান লিখেছেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের প্রতি অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের একটি নির্বাচনী কৌশল অনুসরণ করেছিল। প্রতিটি সংসদীয় আসনে জয়লাভে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের এই নীতি বিরোধী দলগুলোকে দৃশ্যমানভাবে সংসদ থেকে অপসারণ করেছিল। একটি অপরিপক্ব সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদে বিরোধীদের প্রান্তিক প্রতিনিধিত্বের কোনো কার্যকর প্রভাব ছিল না। এটা এ ব্যবস্থায় বিরোধীদের অংশীদারত্বকে হ্রাস করেছিল।
’৭৩ সালের নির্বাচনের পরও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি, রাজনীতিতেও কোনো স্থিতিশীলতা আসেনি।’ ৭২ সালের শেষের দিকে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে আসা বিক্ষুব্ধ নেতা–কর্মীদের উদ্যোগে জন্ম নিয়েছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। নবগঠিত জাসদ তখন ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ কথা বলে তরুণ ও ছাত্রদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল।
পাশাপাশি সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী অন্য বামপন্থী দলগুলোর তৎপরতাও বাড়ছিল। এদিকে চোরাচালান, কালোবাজারি, মজুতদারি, খাদ্যসংকট ইত্যাদির কারণে জনগণের মধ্যেও ছিল অসন্তোষ।
সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। এ সময় নানা কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে সরকারের অসহিষ্ণুতার প্রকাশ ঘটতে থাকে। এ রকম এক প্রেক্ষাপটে সংবিধান প্রণয়নের এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই সরকার তা সংশোধন করা শুরু করে।
সংবিধানের প্রথম সংশোধনী বিল পাস হয় ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই। এর দুই দিন পরই রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেছিলেন। সংসদে বিলটি এনেছিলেন সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর। সংসদে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে মাত্র তিনজন সদস্য এতে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
এই সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ বা গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ বা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করেছে, এদের বিচারের জন্য কোনো আইন ছিল না। আবার প্রচলিত আইনেও এদের বিচার করা সম্ভব ছিল না। সংবিধানের এই সংশোধনীর ফলে এসব অপরাধের বিচারের জন্য আইন তৈরি এবং তা কার্যকর করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। লক্ষণীয় যে এ আইন সংবিধানের মৌলিক অধিকারবিষয়ক কিছু অংশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অপরাধীরা সেই সুযোগ নিয়ে বিচার এড়িয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা ছিল বলেই ওই সংশোধনী আনতে হয়েছিল।
প্রথম সংশোধনী পাস হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এ সংশোধনীর ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল), আইন ১৯৭৩ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের অধীনেই ৩৭ বছর পর ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সে বছরের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে এবং এখনো তা চলমান রয়েছে।
সংবিধানের এ সংশোধনী ছিল সদ্য স্বাধীন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ সংশোধনী নিয়ে সংসদের ভেতরে–বাইরে তেমন কোনো সমালোচনা হয়নি। প্রথম সংশোধনীর বিধান সংবিধানের একটি স্থায়ী বিধান। এর ফলে যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে ওই সব অপরাধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার সুযোগ রয়েছে।
সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর দুই মাস পর ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় সংশোধনী বিল পাস করা হয়। এই বিলটিও উত্থাপন করেছিলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর। বিলটি পাসের সময় বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র কয়েকজন সদস্য সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়, পরে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ করা গেছে।
দ্বিতীয় সংশোধনীতে সংবিধানে চার ধরনের বিধান সংযোজন করা হয়। এগুলো হলো: ১. জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান; ২. সংসদকে নিবর্তনমূলক বা বিনা বিচারে আটকসংক্রান্ত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া; ৩. মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী আইন পাসের বিধান আনা এবং ৪. সংসদের দুটি অধিবেশনের মাঝে বিরতির পরিমাণ বাড়ানো।
’৭২ সালের সংবিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য ছিল, নিবর্তনমূলক আটকাদেশ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও মৌলিক অধিকার স্থগিতকরণ–সংক্রান্ত বিধানের অনুপস্থিতি। সংবিধান প্রণয়নের সময় এ বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার কারণ ছিল এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের অতীত অভিজ্ঞতা। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা ও জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিধান ছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আমলে ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালের সংবিধানে এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ অঞ্চলের মানুষ যখনই তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে, সংবিধানের ওই নিবর্তনমূলক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসকেরা তা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। শুরুর দিকে বাংলাদেশ সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু সংবিধান প্রণয়নের মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সংশোধনী এনে ক্ষমতাসীন সরকার দেশকে সেই পুরোনো ধারাতেই ফিরিয়ে নেয়।
দ্বিতীয় সংশোধনী বিল পাসের আগে ও পরে সংসদের ভেতরে–বাইরে তা নিয়ে বিরোধীরা সোচ্চার ছিল। সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে জাসদের পত্রিকা গণকণ্ঠ–এ সম্পাদকীয় লেখা হয়। ন্যাপ (ভাসানী) এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কথা বলেছিল। এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে সংসদে বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে মওদুদ আহমদ তাঁর বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল বইয়ে লিখেছেন, ‘সংসদে বিরোধী দলের অবস্থান নগণ্য থাকায় খুব অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য বিতর্ক ছাড়াই সংশোধনী বিল পাস হয়ে যায়।
আতাউর রহমান খানসহ অন্যান্য বিরোধী নেতা জনমত যাচাইয়ের জন্য এই বিল জনসমক্ষে উপস্থাপিত করার দাবি জানালে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়।…আতাউর রহমান খান এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন যে ২৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ এ ধরনের আইনের বিরোধিতা করে আসছে। কারণ, এগুলো সব সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশেও এই আইন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।
তিনি অভিযোগ করেন যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষমতাসংবলিত বিধান প্রণয়ন আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও দুর্বলতাই প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে এবং এমতাবস্থায় জনগণের অনুমোদন ছাড়া সংবিধান সংশোধনের কোন অধিকার তাদের নেই।…’
’৭২–এর সংবিধানে গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকারের যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল, সংবিধান প্রণয়নের এক বছর যেতে না যেতেই দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তা থেকে সরে আসে। ’৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে সংবিধান সংশোধনের কয়েক মাস পরে ’৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান রেখে বিশেষ ক্ষমতা আইন পাস করা হয়। সে বছরই ২৮ ডিসেম্বর মৌলিক অধিকার স্থগিত করে দেশে প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী সংসদে পাস হয়। সে সময়ের আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলটি সংসদে এনেছিলেন। একটি বাস্তব সমস্যার সমাধানে এই সংশোধনী হয়, যার প্রেক্ষাপট ছিল বেশ ব্যতিক্রমী ও অভিনব।
১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা দিল্লি চুক্তি নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এই চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল এবং অপদখলীয় জমি বিনিময়ের কথা ছিল।
এর ফলে বাংলাদেশের সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের চুক্তি করার ক্ষমতা সংবিধান সরকারকে দিয়েছে কি না, তখন এই প্রশ্ন সামনে চলে আসে। চুক্তিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়। আদালত কিছু পর্যবেক্ষণসহ রিটটি খারিজ করে দেন।
এ রকম অবস্থায় আদালতের পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে সরকার বাংলাদেশের সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত তৃতীয় সংশোধনীটি সংসদে পাস করে। এই সংশোধনী আনার প্রায় ৪০ বছর পর ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ছিটমহলগুলো বিনিময় হয়।
সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী বিল নিয়ে সংসদের তৎকালীন বিরোধীদলীয় সদস্যরা ছিলেন সমালোচনায় মুখর। তাঁরা এই সংশোধনী ও সীমান্ত চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এটা নিয়ে গণভোটেরও দাবি করেছিলেন কেউ কেউ। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি খুব বেশি দিন প্রাসঙ্গিক থাকেনি।
তথ্যসূত্র
১. আনিসুজ্জামান, বিপুলা পৃথিবী, প্রথমা
২. রওনক জাহান, বাংলাদেশ পলিটিকস: প্রবলেমস অ্যান্ড ইস্যুজ, ইউপিএল
৩. মওদুদ আহমদ, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, ইউপিএল