অভিমত

মায়ের দুধ, নদীর মাছ—কোথায় নেই মাইক্রোপ্লাস্টিক

প্লাস্টিক একদম সস্তা পণ্য নয়। এর প্রভাবও ভয়াবহ। বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক যে জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে, সেটা হয়তো বাস্তবতা। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে এই বাস্তবতা বদলে দেওয়ার সুযোগ ও সময় এসেছে। সেটা কীভাবে হতে পারে, তা নিয়ে লিখেছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

মানবশিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ খাদ্য তার মায়ের দুধ। সেটাও এখন আর নিরাপদ নেই, সেখানেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এমনকি মানুষের রক্ত ও প্লাসেন্টাতেও পাওয়া গেছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব। তার মানে যে শিশু আজ ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, সেও কি মায়ের পেট থেকেই প্লাস্টিক সঙ্গে করে নিয়ে আসছে? প্লাস্টিক দূষণ যদি চলতেই থাকে, তাহলে সবার সন্তানই সমান ঝুঁকিতে থাকবে।

প্লাস্টিককে বলা হয় ‘নেসেসারি এভিল’। বর্তমানে আমরা যে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, সেখানে আমাদের নিত্যব্যবহার্য অনেক কিছুই প্লাস্টিকের তৈরি। চাইলেই এগুলো আমরা রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারব না। তবে এই পরিবর্তন করতে চাওয়াটা আমাদের আগেই শুরু করা উচিত ছিল। অনেক আগেই এটার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো আমাদের সামনে এসেছে।

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, জাতিসংঘ এ বিষয়ে আলাদা আইন তৈরির চেষ্টা করেছে। সেই আইন তৈরির ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা রয়েছে। এর কারণ, প্লাস্টিক মূলত জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর পণ্য। ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটা কায়েমি স্বার্থ এ ক্ষেত্রে কার্যকর।

প্লাস্টিক রিসাইকেল

সমস্যা সমাধানে সরকারের চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতটা জানা প্রয়োজন। ২০২০ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ কেজি। তবে ২০০৫ সালে এটা ছিল মাত্র ৩ কেজি। বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু গড় প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ যেখানে ৫০ কেজি, সেখানে আমরা ব্যবহার করছি ৯ কেজি। তারপরও বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১০ নম্বরে। আমরা মাথাপিছু ৯ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও করতে পারছি না।

ঢাকা শহরে আমরা যে পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করি তার ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ রিসাইকেল করা হয় বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এই দাবি নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এর কারণ, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী মাত্র ১০ শতাংশ প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হয়।

প্রশ্ন হলো, এই যে প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের দাবি করা হচ্ছে, এটার কেমিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করা হয়? সেটা মনিটরিং করছেন কারা? যে রিসাইকেলড প্লাস্টিকটা আসছে, সেটার কেমিক্যাল কম্পজিশনটা কী?

কোনো কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, রিসাইকেল করা প্লাস্টিকের কেমিক্যাল আরও বেশি ভয়ানক হতে পারে। আবার এই রিসাইক্লিংয়ের সার্টিফিকেট কে দিচ্ছে? পরিবেশ অধিদপ্তর কী দিচ্ছে? বিএসটিআইয়ের কোনো স্ট্যান্ডার্ড কি এখানে অনুসরণ করা হচ্ছে?

কোথায় যায় প্লাস্টিক বর্জ্য

আমাদের মিউনিসিপ্যাল বর্জ্যের মধ্যে ১০ শতাংশই প্লাস্টিক। এই ১০ শতাংশের মধ্যে আবার ৪৮ শতাংশ যায় ভাগাড়ে। বাংলাদেশের ভাগাড়গুলোয় ময়লা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ১৫ শতাংশ প্লাস্টিক যায় নদী ও খালগুলোয়। আর ৩ শতাংশ যায় এমন জায়গায়, যেখানে আমাদের কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুয়ায়ী, বাংলাদেশে ১ হাজার ২১২টা হটস্পটে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হয়। ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) হিসাবে, প্রতি মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের জলাভূমিতে ৭ হাজার ৯২৮ বিলিয়ন প্লাস্টিক মাইক্রোবেডস জমা হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রতিবছর ১২ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বিভিন্ন সমুদ্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের তথ্য অনুসারে, প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রতিবছর ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এখনই যদি প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে ২০৫০ সালে সাগরে যত মাছ থাকবে, তারা চেয়ে বেশি থাকবে প্লাস্টিক। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সাল নাগাদ প্লাস্টিক খাতে কার্বন বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৯ শতাংশ।

জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির (ইউএনইপি) হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বে পঞ্চম। এই বর্জ্যের উৎস গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা হয়ে এগুলো সাগরে যায়।

‘প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা’

বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে লবণ, পানি, চিনি ও মাছের মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রায়ই বিদেশি পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়, মৃত পাখি পড়ে আছে, তার পেটের ভেতরে নানা ধরনের প্লাস্টিকে ঠাসা। এখন আমার-আপনার পেটের ভেতরও প্লাস্টিক প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এ রকম এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয় ‘প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা’ তৈরি করেছে।

এই নীতিমালার অষ্টম সংস্করণে বলা হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের ২ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্লাস্টিক পণ্যের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ হচ্ছে আমদানিনির্ভর এবং ৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ দেশীয়ভাবে উৎপাদিত।

কোনো ধরনের আলোচনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ছাড়া এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিককে গুরুতর সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করে খসড়ায় শিল্প মন্ত্রণালয় প্লাস্টিক খাতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছে।

এই প্রবৃদ্ধিতে কোনো সমস্যা নেই, যদি, এসব প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথ হয়, রিসাইকেলযোগ্য উপাদান কী পরিমাণে আছে, সেটা উল্লেখ থাকে, ভার্জিন (নতুন) প্লাস্টিক বেশি ব্যবহৃত না হয় এবং কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত প্লাস্টিকপণ্য সংগ্রহ করে আবার রিসাইকেল করে।

অন্য দেশের অভিজ্ঞতা

বিশ্বব্যাপী ১২৭টি দেশে কোনো না কোনোভাবে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তানজানিয়া, রুয়ান্ডার মতো দেশে শতভাগ পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইরে থেকে পলিথিন ব্যাগ নিয়ে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। রুয়ান্ডাতে বলা হয়, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু পলিথিন বর্জ্যের ক্ষতি তো ১০০ বছরেও কাটানো সম্ভব নয়।

বিশ্বের ২৭টা দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য বেশ কয়েক ধরনের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৬৩টি দেশ কোনো না কোনোভাবে ইপিআরের কথা বলছে, সেখানে ‘ডিপোজিট রিফান্ডের’ উল্লেখ আছে। এটা হলো এমন, গ্রাহক যখন একটা কোমল পানীয়র বোতল কিনবেন, তখন তাঁর কাছ থেকে ১০-২০ টাকা অতিরিক্ত জমা রাখা হবে। পরে বোতলটি ফেরত দিলে গ্রাহক তাঁর জমার টাকা ফেরত পাবেন। এরপর উৎপাদক সেখান থেকে ব্যবহৃত বোতল সংগ্রহ করবে।

প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধের বিষয়ে কিছু সফলতার গল্পও রয়েছে। আয়ারল্যান্ডে প্লাস্টিক ব্যাগের মূল্য বাড়ানোর ফলে এর ব্যবহার ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ওয়েলসে গ্রাহকদের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। সেখানে তখন ৩৪ শতাংশ গ্রাহক ব্যাগ বহন করেন।

জার্মানি ও নরওয়েতে যথাক্রমে ২০০৩ ও ২০১৪ সালে ‘ডিপোজিট রিটার্ন স্কিম’ চালু করা হয়েছে। তারা দেখেছে, এতে ভোক্তা পর্যায় থেকে প্লাস্টিক বোতল ফেরত আনা সম্ভব। জার্মানিতে ৯৯ শতাংশ এবং নরওয়েতে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত ফেরত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সুতরাং নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেও ভোক্তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করা যায়।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাদা আইন

২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারগুলো প্রায় পলিথিনমুক্ত ছিল। তার একটা বড় কারণ ছিল সরকার তখন নিয়মিত মার্কেট মনিটর করত। কিন্তু এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। সরকার জুট প্যাকেজিং বাধ্যতামূলক ও ১৪টি পণ্যে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার না করার কথা বললেও কি পলিথিন ছাড়া চাল, আটা-ময়দার প্যাকেট খুব একটা দেখা যায় না। তার অর্থ হলো সরকারের এই নির্দেশনাও কার্যকর নয়।

বাংলাদেশে বহু প্রতিষ্ঠান আছে, আইনও আছে। তবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাদা কোনো আইন নেই। বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের প্রবণতা বেড়েছে, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেশির ভাগ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে উৎপাদককে। আমাদের আইনে এটা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন কৌশল চূড়ান্ত হয়নি।

এ ছাড়া অন্য যে মডেল নিয়ে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা হলো ভোক্তাদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনা। এটার দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে উৎপাদককে। তারা প্লাস্টিকের বিকল্প সরবরাহ ও সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং নিশ্চিত করবে, নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর প্লাস্টিকের পণ্য যাতে আর বাজারে প্রবেশ করতে না পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অনুচ্ছেদ ৬ (ক) ধারাটির সংযোজন করা হয় পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার জন্য। বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধও করে। যেটা আমরা আগে বাস্তবায়নও করেছিলাম, বিশ্ব এখন সেটা বাস্তবায়ন করছে। আমরা তাহলে আবার কেন সেটা করতে পারব না?

 কীভাবে হবে সমাধান

প্লাস্টিকের ক্ষেত্রে আমরা কেন যেন রিসাইক্লিংটাকে খুব পছন্দ করি। অবশ্য এর কিছু বাস্তবতাও আছে। ধরা যাক, আজকে থেকে আমরা আর প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করলাম না। কিন্তু যে পরিমাণ প্লাস্টিক এখনো বাজারে রয়েছে, সেগুলোর কী হবে?

সেগুলোকে কোনো না কোনোভাবে তো ধ্বংস করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীদের বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাক্লিংয়ের দায়িত্বও নিতে হবে। তাদের প্রত্যেকের প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে একটি করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেখানে তাদের অর্থায়ন করতে হবে। পাশাপাশি তারা সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে আমাদের ইতিমধ্যে আইন তৈরি, গেজেট নোটিফিকেশন ও বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটা বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক আমাদের একটা কর্মপরিকল্পনা দিয়েছে। সরকার এ বিষয়ে একটা মিটিংও করেছে। আমাদের পরিবেশ আইন, স্থানীয় সরকার আইন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজটা ভালোভাবে শুরু করা সম্ভব।

আমরা খুব একটা ভাবি না যে, দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতের বাজেট কত? এটার জন্য কী পরিমাণ বাজেট প্রয়োজন আর কতটা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে? অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ খুবই অপর্যাপ্ত।

প্লাস্টিক দূষণ রোধে কোম্পানিগুলোরও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বই নয়, তা যেন একটা মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা যেন এ বিষয়ে ‘কৃত্রিম’ সমাধানের দিকে পা না বাড়াই। ধরেন, আপনার বাথটাব পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে আর আপনি পাম্প দিয়ে ওই পানি সরাচ্ছেন। এটা কি সঠিক সমাধান? নাকি যেখান থেকে পানি আসছে, সেই কলটা বন্ধ করা সঠিক সমাধান। সহজেই বোঝা যায়, কলটা বন্ধ করা হলো সঠিক সমাধান।

প্লাস্টিক একদম সস্তা পণ্য নয়। এর পরিবেশগত প্রভাব ভয়াবহ। একজন মা যখন সন্তানকে বুকের দুধ পান করান, নদীর মাছ খাওয়ান তখন এসবের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকও খাওয়াচ্ছেন। প্লাস্টিক সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান আসতে পারে, আসলে খুব ভালো। না আসা পর্যন্ত আমরা যেন কোনো কৃত্রিম সমাধানের দিকে চলে না যাই।

শেষ কথা

বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক যে জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে গেছে, সেটা হয় তো বাস্তবতা। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে এই বাস্তবতা বদলে দেওয়ার সুযোগ ও সময় এসেছে। আমরা যদি প্লাস্টিকের পরিবর্তে দেশীয় পণ্য-পাট, কাপড়, কাগজ এগুলো ব্যবহার করি তাহলে স্থানীয় শিল্পের প্রসার ঘটবে। কোম্পানিগুলো যদি প্লাস্টিকের বিকল্প উৎপাদন শুরু করে, তাহলে সেটা অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে। এভাবেই আমরা প্লাস্টিকমুক্ত দেশ ও পৃথিবী চাই।

  • সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান  প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)