গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সব কিছু হারিয়ে এক ফিলিস্তিনি নারীর আহাজারি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সব কিছু হারিয়ে এক ফিলিস্তিনি নারীর আহাজারি

মতামত

...এ কারণে ইসরায়েলকে এখনই যুদ্ধ থামাতে হবে

ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শর বেশি ড্রোন, রকেট ও ক্রুজ মিসাইল দিয়ে হামলা চালানোর পর ইরান ও ইসরায়েল উভয়ই ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে একেবারে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি হয়েছে। 

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মিত্রদের সহায়তায় এসব রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই আকাশে থাকা অবস্থায় ধ্বংস করে দিতে পেরেছে। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাদের দুর্দান্ত সক্ষমতা দেখিয়েছে। অবশ্য তার জন্য তাদের মার্কিন সহায়তার দরকার হয়েছিল। যদিও ইসরায়েল নিজেকে রক্ষায় সামরিকভাবে স্বনির্ভর মনে করে, তবে বাস্তবতা হলো, পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। 

বর্তমানে ইসরায়েল সাতটি দিক থেকে হুমকি মোকাবিলা করছে বলে আইডিএফ স্বীকার করে থাকে। ফলে ইরান, ইরানের হয়ে লড়াই করা প্রক্সি গ্রুপগুলো এবং তাদের পেছনে থাকা রুশ পৃষ্ঠপোষকদের হুমকি সামাল দিতে ইসরায়েলকে যে একটি জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, তা তাকে মেনে নিতে হবে।

ইরানের এই হামলা ইসরায়েলকে অন্তত এটুকু মনে করিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েল যে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, সেই হামাস বাইরের দুনিয়ায় একেবারে বন্ধুহীন নয়। 

ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ সাত মাসে গড়িয়েছে। সামরিক-কৌশলগত অর্থে ইসরায়েল সফলতাও পাচ্ছে। হামাসের সামরিক ঘাঁটি তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। হামাসের ২৪টি ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৯টির অস্তিত্বই এখন আর নেই। এটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এই অর্জনের মূল্য হিসেবে ফিলিস্তিনের বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। সুতরাং, এ কথা বলা যেতে পারে, ইসরায়েল সামরিকভাবে সফল হলেও রাজনৈতিকভাবে তার হার হয়েছে। 

বিখ্যাত সমরতত্ত্ববিদ জেনারেল ক্লসেভিৎসের একটি বিখ্যাত উক্তি হলো, ‘যুদ্ধ এড়ানোর বিকল্প সব পন্থা কাজে না দিলেই কেবল যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।’ ইসরায়েল এই নীতি অনুসরণ করছে বলে মনে হচ্ছে না। 

ইসরায়েল যা করছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ আমেরিকান গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপ সমর্থন করছেন না। এর চেয়ে খারাপ বিষয় হলো, পরবর্তী প্রজন্ম ইসরায়েল সম্পর্কে কী ধারণা নিয়ে বড় হবে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ কারণে ইসরায়েলকে এখনই যুদ্ধ থামাতে হবে। 

হ্যাঁ, এটি ঠিক, হামাস ইসরায়েলকে এই যুদ্ধে নামতে বাধ্য করেছে। এটি ঠিক, গাজার বেসামরিক বসতিস্থলের নিচে শত শত মাইলের সুড়ঙ্গ বানিয়ে হামাস ইসরায়েলের সামরিক শক্তিকে নজিরবিহীন ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিল। 

তবে ইসরায়েলের উচিত ছিল বিশ্ববাসীর সহমর্মিতা না হারিয়ে হামাসকে সামরিকভাবে পরাস্ত করা। ইসরায়েল যদি গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো অব্যাহত রাখত এবং পাশাপাশি বেসামরিক লোকের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর দিকে নজর দিত ও মানবিক বিপর্যয় না ঘটাত, তাহলে তারা সামরিক এবং নীতিগতভাবে বিজয়ী হতে পারত।

এই ভয়ানক মাত্রার বেসামরিক প্রাণহানি এড়িয়ে হয়তো ইসরায়েলের পক্ষে হামাসের সামরিক শক্তিকে শেষ করে দেওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু গাজায় অভিযান শুরুর পর যদি গাজার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের করিডর খুলে দিয়ে বেছে বেছে বেসামরিক লোককে নিরাপদে বেরিয়ে যেতে দেওয়া হতো, তাহলেও একটি ভালো বিকল্পের উদাহরণ সৃষ্টি করা যেত। 

এই অভিযানের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের আবাসন, খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার সরবরাহ নিশ্চিত করা ইসরায়েলের জন্য অপরিহার্য ছিল। এমনকি হামাস সেই মানবিক সহায়তাদানে বাধা দিতে গেলে ইসরায়েলের নৈতিকভাবে উচিত ছিল ত্রাণ বিতরণ নির্বিঘ্ন করা। এটি ইসরায়েলের জন্য কেবল একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতার বিষয় ছিল না।

আন্তর্জাতিক বিশ্ব যাতে মনে করতে না পারে যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের বিষয়ে উদাসীন, সে কারণে কৌশলগত দিক থেকেও এটি করা ইসরায়েলের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। 

কিন্তু ইসরায়েল যা করছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ আমেরিকান গাজায় ইসরায়েলি কার্যকলাপ সমর্থন করছেন না। এর চেয়ে খারাপ বিষয় হলো, পরবর্তী প্রজন্ম ইসরায়েল সম্পর্কে কী ধারণা নিয়ে বড় হবে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ কারণে ইসরায়েলকে এখনই যুদ্ধ থামাতে হবে। 

ডেনিস রস দ্য ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির একজন ফেলো

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত