কয়েক সপ্তাহের চাপের পর অবশেষে জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও লিবারেল পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর এ পদত্যাগ এক দীর্ঘ রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি টানল।
২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর জাস্টিন ট্রুডো লিবারেল পার্টিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে বের করে এনেছিলেন। তবে ট্রুডো জানিয়েছেন, নতুন লিবারেল নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকবেন।
এখন প্রশ্ন হলো, লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে কে আসবেন? তাঁরা আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবেন? এরপর কী হতে পারে?
কানাডিয়ানদের উদ্দেশে সোমবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, দেশের গভর্নর জেনারেল তাঁর পার্লামেন্ট প্রোরোগ করার অনুরোধ মঞ্জুর করেছেন। প্রোরোগ মানে কার্যত পার্লামেন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা। এর ফলে সব কার্যক্রম, যেমন আলোচনা ও ভোট বন্ধ থাকে, তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয় না।
এটি সংসদীয় প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত অংশ। তবে কখনো কখনো এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের কালে সমস্যা সমাধানের জন্য সময় নিতে সরকারের একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সবশেষ ২০২০ সালের আগস্টে ট্রুডো একটি চ্যারিটির সঙ্গে তাঁর সরকারের চুক্তির নৈতিকতা নিয়ে বিতর্কের মুখে পার্লামেন্ট প্রোরোগ করেছিলেন।
এবারের প্রোরোগেশন ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্টকে স্থগিত রাখবে।
লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রোরোগেশন সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই নতুন নেতা নির্বাচন করার চেষ্টা করবে লিবারেল পার্টি। এখনো স্পষ্ট নয়, কীভাবে এই নেতা নির্বাচন করা হবে।
কানাডার ফেডারেল পার্টিগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ মাস ধরে চলে। এর মধ্যে নেতাদের আনুষ্ঠানিক সম্মেলনও করা হয়।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, নতুন নেতা ‘সারা দেশে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে’ নির্বাচিত হবেন।
এরপরই লিবারেল পার্টির সভাপতি সচিত মেহরা ঘোষণা করেন, দলের জাতীয় বোর্ডের বৈঠক এ সপ্তাহে ডাকা হবে। সেখানেই নেতা নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ট্রুডোর সরাসরি উত্তরসূরি কে হবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় উঠে এসেছে সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, পরিবহনমন্ত্রী অনিতা আনন্দ ও সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার মার্ক কার্নির নাম।
কানাডায় পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচন আগামী অক্টোবরের মধ্যে হতে হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগেই নির্বাচন ডাকা হতে পারে।
বর্তমানে জনমত জরিপে দ্বিগুণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এগিয়ে আছে আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। কয়েক মাস ধরে হাউস অব কমন্সে একের পর এক তারা অনাস্থা ভোট এনে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে।
অনাস্থা ভোটে ৩৩৮ জন সংসদ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন। লিবারেল সরকারের এই সংখ্যার চেয়ে ১৭ আসন কম আছে। ফলে তাদের অন্য দলের সদস্যদের সমর্থন দরকার।
এখন পর্যন্ত বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) প্রধান জগমিত সিং এবং তাঁর দলের সমর্থনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজের সরকার ধরে রাখতে পেরেছেন।
তবে সোমবার ট্রুডো তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর জগমিত সিং জানান, তিনি লিবারেল পার্টি ক্ষমতায় থাকার পক্ষে আর ভোট দেবেন না।
‘তাদের আরেকটি সুযোগ পাওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই,’ জগমিত সিং মন্তব্য করেন।
২৪ মার্চ পর্যন্ত লিবারেল পার্টির দায়িত্বে যিনিই থাকুন না কেন, তাঁদের হাতে কার্যক্রম চালানোর জন্য খুব বেশি সময় থাকবে না।
প্রোরোগেশন শেষ হলে প্রথম হবে আস্থা ভোট। যদি সরকার সেই আস্থা ভোটে হেরে যায়, তবে তাদের হয় পদত্যাগ করতে হবে, নয়তো সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন ঘোষণা করতে হবে।
জরিপ বলছে, যদি এখন কানাডার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে কনজারভেটিভ পার্টি বিশাল জয় পাবে।
পিয়েরে পয়লিয়েভ কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা। জনমত জরিপ যদি সঠিক ইঙ্গিত দেয়, তাহলে তিনিই খুব সম্ভব কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।
২০২২ সালে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নেওয়ার পর থেকে পয়লিয়েভ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। অনেকবার তিনি ট্রুডোকে আগাম নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পয়লিয়েভ নিজেকে ‘অ্যান্টি-এলিট’ ও ‘অ্যান্টি–ট্রুডো’ হিসেবে পরিচিত করেছেন। তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর, মাটির কাছাকাছি থাকা একজন নেতা হিসেবে দাবি করেন।
তবে বিতর্ক পয়লিয়েভকেও ছাড়েনি। গত এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টে ট্রুডোকে ‘পাগল’ ও ‘চরমপন্থী’ বলে আখ্যা দেওয়ার পর ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করায় তাঁকে পার্লামেন্ট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
হলি হনডেরিখ বিবিসি ওয়ার্ল্ডের সাংবাদিক
বিবিসি থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত