ব্যাংক আমানতের সুরক্ষা নিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরবে যেভাবে

ইদানীং আর্থসামাজিক বাস্তবতায় ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত সুরক্ষিত আছে কি না, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ এবং ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে। আমানত সুরক্ষার প্রশ্নটি শুধু আমানতকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এ রকম প্রশ্ন এবং তার যথাযথ উত্তর আছে কি না, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ শুরু করে সংবাদমাধ্যমে রীতিমতো আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে টেলিভিশন টক শোগুলো বেশ সরগরম। বিষয়টি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিধায় সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকেও সময়–সময় ঘোষণা এসেছে। তারপরও জনমনে সন্দেহ এবং শঙ্কা কেটেছে কি না, তা অবশ্য পরিষ্কার নয়।

ব্যাংক আমানত হলো জনগণের উদ্বৃত্ত সম্পদ। মানুষ আয় করে প্রধানত ব্যয় নির্বাহের জন্য। মানুষের আয়ের প্রধান তাগিদ হচ্ছে ভোগ ব্যয় মেটানো। ভোগ ব্যয় দুই ধরনের হয়। প্রথমত, বর্তমান ভোগ ব্যয় এবং দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যৎ ভোগ ব্যয়। জনসাধারণের বর্তমান আয় তাঁদের বর্তমান ভোগ ব্যয়ের সমান হলে তাঁদের ভবিষ্যৎ ভোগ ব্যয় নির্বাহের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সঞ্চয় করতে পারেন না বিধায় উদ্বৃত্ত অর্থ কোথায় রাখবেন, সে প্রশ্ন অবান্তর।

বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় তিন–চতুর্থাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাবই নেই। অর্থাৎ এ দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করেন না। যাঁদের ব্যাংকে হিসাব আছে, তাঁদের সবাই যে নিয়মিত ব্যাংকিং করেন, বিষয়টি সে রকমও নয়। অনেক হিসাবধারী আছেন, যাঁরা কোনো এক বিশেষ উদ্দেশ্যে হিসাব খুলেছিলেন এবং হয় প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় অথবা অসামর্থ্যের কারণে পূর্বে খোলা হিসাব হয়তো হালনাগাদ করছেন না। উদাহরণস্বরূপ, ভর্তুকির নিমিত্তে কৃষকদের জন্য খোলা সঞ্চয়ী হিসাব, বৃত্তি ভোগের জন্য শিক্ষার্থীদের হিসাব, সরকারি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা গ্রহণের জন্য বয়স্ক মানুষ বা বিধবাদের ব্যাংক হিসাব আবার কখনো কোনো বিশেষ প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণের জন্য খোলা অনেক ব্যাংক হিসাবই পরবর্তী সময়ে সচল থাকে না অথবা নামমাত্র সচল থাকলেও সেগুলো ব্যাংকের কাছে লাভজনক হিসাব বলে প্রতীয়মান হয় না। অর্থাৎ নিয়মিত ব্যাংকিং করেন, এ রকম হিসাবধারীর সংখ্যা খুব বেশি হয়তো নয়। নিয়মিত হিসাব পরিচালনা করে, এ রকম জনগোষ্ঠী বিশেষ এবং নির্দিষ্ট। যেমন সরকারি–বেসরকারি চাকরিজীবী, যাঁদের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বেতন ও পেনশনের অর্থ লেনদেন হয়, আমদানি-রপ্তানিকার্যে নিয়োজিত ব্যবসায়ী, দেশীয় বণিক যাঁরা বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয়–বিক্রয় করেন এবং অপরাপর সম্পদশালী ব্যক্তিরা।

কিন্তু দেউলিয়াগ্রস্ত ব্যাংকের আমানতকারীরা সমুদয় আমানতের ওপর সুরক্ষা পাবেন না বিধায় আমানত কতটুকু সুরক্ষিত, জনমনে তা একটি মৌলিক প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। ঠিক ২০০০ সালের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের সঞ্চয় ও ব্যাংক আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময়ে আমানতের সর্বোচ্চ সুরক্ষার পরিমাণ যদি এক লাখ টাকা হয়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই আইনটি হালনাগাদ করে আমানতের সুরক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করে জনমনে স্বস্তির ব্যবস্থা করতে পারে।

বাংলাদেশের মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা বেশি হলেও সঞ্চয়ের সামর্থ্য বেশ অল্প। এ দেশের মানুষের গড়পড়তা সঞ্চয়ের হার প্রায় ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ প্রায় ২৬ টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেন এবং বাকি অর্থ বর্তমান ভোগ ব্যয়ের পেছনে খরচ করেন। সঞ্চয়ের হার প্রায় এক–চতুর্থাংশ হলেও এ দেশের মানুষের গড় আয় বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম। যেমন জাপানের মানুষের বাৎসরিক গড় আয় প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬০ লাখ আর বাংলাদেশে গড় মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার ডলার, অর্থাৎ ৩ লাখ টাকা। এখন একজন জাপানি গড়ে ১০ শতাংশ সঞ্চয় করলেও তাঁর সঞ্চয় দাঁড়ায় প্রায় ৬ লাখ টাকা, কিন্তু একজন বাংলাদেশি গড়ে ২৫ শতাংশ সঞ্চয় করলেও এর পরিমাণ হবে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা বেশি হলেও সঞ্চয়ের পরিমাণ কম থাকায় তাঁরা ব্যাংকে খুব বেশি সঞ্চয় গচ্ছিত রাখতে পারেন না। আবার জীবনযাত্রার মানের নানাবিধ ভবিষ্যৎ ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে এ দেশের মানুষ খুব দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় করতে পারেন না।

সে যা–ই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ছোট-বড় যেকোনো সঞ্চয় রক্ষার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংককে নিরাপদ গন্তব্য মনে করেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বেশ কয়েক ধরনের আমানত গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যথা বাণিজ্যিক ব্যাংক, সেভিংস অ্যান্ড লোন অ্যাসোসিয়েশন, সেভিংস ব্যাংক এবং ক্রেডিট ইউনিয়ন। আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বৈচিত্রায়নের অভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকই মূলত ‘একের ভেতর সব’ হিসেবে কাজ করে থাকে।

বর্তমান অর্থব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি বহুমাত্রিক হলেও তাত্ত্বিক দিক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল কাজ দুটি। যথা আমানত গ্রহণ ও তার সুরক্ষা এবং ঋণ প্রদান। তত্ত্বগত দিক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থবাজারের একটি প্রতিষ্ঠান। সে অর্থে তারা দীর্ঘমেয়াদি এবং মূলধন বাজারে ঋণ বা বিনিয়োগ করতে পারে না। ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবর্তিত ‘গ্রাম-লিচ-ব্লিলেলি আইন’-এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমারেখা তুলে দেওয়ার কথা বলা হলেও এর অব্যবহিত কিছুদিন পরই ২০০৮ সালে মার্কিন মুলুকের বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক লেহমান ব্রাদার্স দেউলিয়া হয়ে যায় এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, যার পোশাকি নাম ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস বা জিএফসি’। বিগত দশকে যুক্তরাষ্ট্রে লেহমান ব্রাদার্সের মতো আরও বেশ কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে তাদের ভুল বিনিয়োগ নীতির কারণে এবং এর জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমানতকারী তো বটেই, ব্যাংকব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত মালিক, কর্মচারী, সরকার ও সাধারণ জনগণও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উপরিউক্ত ব্যাংকিং–ব্যবস্থার উদাহরণ থেকে শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে।

প্রথমত, বাণিজ্যিক ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া নতুন কিছু নয়। অনেক কারণেই বাণিজ্যিক ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারে। খুব সহজ করে বলতে গেলে, বাণিজ্যিক ব্যাংক মূলত জনগণের আমানতের টাকায় ব্যবসা করে। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার দেয় ঋণের তুলনায় ব্যাংকের মূলধন তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নয় (বাসেল-৩ গাইডলাইন অনুযায়ী এখনো বাংলাদেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংক ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বাধ্যতামূলক মূলধনের জোগান দিতে পারেনি)। বোধগম্য যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ তহবিলের প্রধান উৎস হচ্ছে জনগণের গচ্ছিত আমানত। জনগণের নিকট থেকে সংগৃহীত আমানতের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক সুদ দিয়ে থাকে এবং ঋণের ওপর সুদ অর্জন করে থাকে। অর্জিত ও প্রদেয় সুদের পার্থক্য হলো ব্যাংকের নিট সুদ আয় বা ‘স্প্রেড’। যেমন বর্তমানে প্রচলিত ৯-৬ সুদহারে বাণিজ্যিক ব্যাংক মেয়াদি আমানতে ৬ শতাংশ সুদ দেয় এবং ঋণের ওপর ৯ শতাংশ সুদ ধার্য করে। এ ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টে ব্যাংকের নিট সুদ আয় ৩ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিট সুদ আয় ৩ শতাংশের অনেক কম।

বিষয়টি খোলাসা করে বললে এ রকম যে বাণিজ্যিক ব্যাংক চাইলেই গৃহীত সমুদয় আমানত ঋণ হিসেবে মঞ্জুর করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংক তথা নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাহিদামতে প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংককে বাধ্যতামূলকভাবে আমানতের ১৭ শতাংশ সুরক্ষা রিজার্ভ হিসাবে রেখে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক রিজার্ভ হার আমানতের ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। উভয় ধারার বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে ৪ শতাংশ নগদ সঞ্চিতি বা রিজার্ভ হাতে রাখে।

তাহলে হিসাব দাঁড়াল এ রকম, কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক ১ হাজার টাকা আমানত গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ ৮৩০ টাকা ঋণ দিতে পারে। ৮৩০ টাকা ঋণের ওপর ব্যাংকের সুদ আয় হবে ৯ শতাংশ হারে ৭৪ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু ব্যাংক পুরো ১ হাজার টাকার ওপর ৬ শতাংশ হারে সুদ দেবে ৬০ টাকা। অর্থাৎ নিট সুদ মাত্র ১৪ টাকা ৭০ পয়সা বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আবার কোনো কারণে প্রদত্ত ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে ব্যাংক প্রথমে সুদ মওকুফ করে, পরে দেনদরবার, আইন–আদালত ঘুরে আসল টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে সফল না হলে সেই ঋণ অবলোপন করতে হয়, যা ব্যাংকের মুনাফা থেকে কর্তন হয়।

এসব কারণে ব্যাংক ব্যবস্থাপকেরা অনেক ক্ষেত্রে ঋণবহির্ভূত অনেক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেন, যা ব্যাংকিং পরিভাষায় ‘অফ ব্যালেন্সশিট’ কার্যাবলি বলে পরিগণিত। মোদ্দাকথা, ব্যাংক তাদের পরিচলন খরচ উদ্ধার ও আয় বাড়ানোর জন্য একদিকে ‘অফ ব্যালেন্সশিট’ কার্যাবলি বাড়ানো এবং অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করে থাকে। ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের খবর জানাজানি হয়ে গেলে আমানতকারীদের মধ্যে চিন্তার অবকাশ তৈরি করে। ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের এরূপ একটি খবর যেমন খেলাপি ঋণের ক্রমবর্ধমান হার। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার প্রায় প্রতিবছরই বেড়ে চলেছে। এরূপ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ যা–ই হোক না কেন, তা আমানতকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে এ জন্য যে তাঁদের গচ্ছিত আমানত অরক্ষিত কি না।

এটাও ঠিক যে ব্যাংক আমানত গড় ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করা হয়। বিষয়টি এ রকম যে উল্লিখিত উদাহরণে ১ হাজার টাকা আমানতের বিপরীতে নগদ সঞ্চিতি মাত্র ৪ শতাংশ। প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রায় ১৩ শতাংশ অর্থ মূল্যবান সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করে থাকে, যা প্রায় সহজেই নগদায়ন সম্ভব। অর্থাৎ আজ আমানত রেখে কালকেই আমানতকারী সমুদয় টাকা তুলে নিতে চাইলে তাত্ত্বিক দিক থেকে ব্যাংক তা দিতে পারবে না। কারণ, আমানতের ৮৩ শতাংশ ব্যাংক ঋণ হিসেবে মঞ্জুর করেছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়; কারণ, সব আমানতকারী একসঙ্গে টাকা রাখেনও না আবার উত্তোলনও একসঙ্গে করেন না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অন্যদিকে প্রদত্ত ঋণের সবটুকু খেলাপি হয় না। প্রদত্ত ঋণও চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফেরত আসে। সুতরাং গড় ব্যবস্থাপনায় আমানতকারীদের একটি ‘প্রাকৃতিক সুরক্ষা’ আছে বৈকি।

অন্যদিকে দেশের ব্যাংকিং–ব্যবস্থার অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষার জন্যই মূলত বাধ্যতামূলক সঞ্চিতি বা রিজার্ভ রাখার বিধিবিধান আরোপ করে। প্রয়োজনের সময় তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য–সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং সুরক্ষা প্রদান করে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে আমানতকারীদের অভয় দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তা ফলপ্রসূ হয়েছে বা হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বরং আমানতবিমা শক্তিশালীকরণে পদক্ষেপ নিতে পারে।

এ দেশে ১৯৮৪ সালে প্রণীত ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স স্কিম বা ডিআইএস, যা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আমানত সুরক্ষা আইন-২০০০ হিসেবে বলবৎ রয়েছে। ওই আইনের ট্রাস্টি হচ্ছে স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংক। তফসিলি ব্যাংকগুলো প্রতিবছর তাদের গৃহীত আমানতের বিপরীতে ওই তহবিলে অগ্রিম প্রিমিয়াম জমা দেয়। তথ্যমতে ওই তহবিলের আকার কয়েক হাজার কোটি টাকা। প্রয়োজনে কোনো তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকেও অর্থ জোগান দিতে পারবে।

কিন্তু দেউলিয়াগ্রস্ত ব্যাংকের আমানতকারীরা সমুদয় আমানতের ওপর সুরক্ষা পাবেন না বিধায় আমানত কতটুকু সুরক্ষিত, জনমনে তা একটি মৌলিক প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। ঠিক ২০০০ সালের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের সঞ্চয় ও ব্যাংক আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময়ে আমানতের সর্বোচ্চ সুরক্ষার পরিমাণ যদি এক লাখ টাকা হয়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তা যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করা সময়ের দাবি। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই আইনটি হালনাগাদ করে আমানতের সুরক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি করে জনমনে স্বস্তির ব্যবস্থা করতে পারে।

  • ড. শহীদুল জাহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক