নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সব সময় তাঁর দলকে ‘পরিবর্তিত লেবার পার্টি’ হিসেবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে আসছেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সব সময় তাঁর দলকে ‘পরিবর্তিত লেবার পার্টি’ হিসেবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে আসছেন।

মতামত

স্টারমার ডানে ঝুঁকে জিতেছেন, লেবারের বামেরা কী করবেন

লেবার পার্টি যখন মধ্যপন্থা অনুসরণ করে কোনো সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে, তখন দলের মধ্যে থাকা বাম ঘরানার কিছু লোকের মধ্যে সব সময় একধরনের মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। তাঁরা রক্ষণশীলদের নিষ্পেষিত হওয়াকে স্বাগত জানাতে থাকেন। 

মধ্যপন্থীরা মাঝেমধ্যে ভুলে যান, লেবার দলের বামরা একটি নির্দিষ্ট তীব্রতায় টোরিদের ঘৃণা করে। 

লেবার পার্টির ভেতরকার বামপন্থী আশাবাদীরা প্রায়ই আশা করেন, লেবারদের বিজয় নতুন সমাজতান্ত্রিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে; অন্তত তাঁদের কিছুটা হলেও মানসিক স্বস্তি দেবে। 

 ১৯৯৭ সালে যখন টনি ব্লেয়ার ভূমিধস জয় পান, তখন ডায়ান অ্যাবট (যুক্তরাজ্যের বামপন্থী ধারার এমপি) সাউথ ব্যাংকে লেবার পার্টির উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর জীবনীকার রবিন বুন্স এবং সামারা লিন্টনকে বলেছিলেন, ‘এটি ছিল আমার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অনুভূতি...মনে হচ্ছিল, আমি এই দিনের জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করেছি।’ 

তবে বামপন্থীদের একটি অংশের এই ধরনের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি আরেকটি অংশের নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। 

নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সব সময় তাঁর দলকে ‘পরিবর্তিত লেবার পার্টি’ হিসেবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে আসছেন। অন্য অনেকে এটিকে ‘শুদ্ধ লেবার পার্টি’ বলে থাকেন। কারণ, দলটি তার বেশির ভাগ বাম ঘরানার নীতি বাদ দেওয়ার পর সরকারি ব্যয় সীমিত করা ও ঐতিহ্যগত দেশপ্রেমকে থিম হিসেবে নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে পার্লামেন্টে আসনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করেছে। 

নতুন পার্লামেন্টে বিপুলসংখ্যক এমপিসজ্জিত লেবার পার্টিতে কয়েক ডজন এমপিকে বামপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অবশ্য বামপন্থী তকমাটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা এখন একটু কঠিন হতে পারে। কারণ, আগে যে সংখ্যক নেতাকে বামপন্থী বলে ধরে নেওয়া যেত, এখন হয়তো সংখ্যাটা সে জায়গায় না–ও থাকতে পারে। 

লেবার পার্টি অনেক বেশি সংখ্যক আসন পেলেও আশ্চর্যজনকভাবে জাতীয় পর্যায়ে তাদের ভোটপ্রাপ্তি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এবারের ভোটে তারা পেয়েছে এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি (৩৪ শতাংশ), যা কিনা ২০১৭ সালে করবিনের নেতৃত্বে দলটির পাওয়া ভোটের চেয়ে অনেক কম এবং ২০১৯ সালে পরাজিত হওয়ার বছরে পাওয়া ভোটের চেয়ে খুব একটা বেশি নয়। 

ব্রিটিশ রাজনীতির অদ্ভুত নতুন পরিসরে স্টারমার যে কঠোর বাস্তববাদকে গ্রহণ করেছেন এবং সংস্কারের মাধ্যমে যে ডানপন্থী ফ্যান্টাসির দিকে তিনি ঝুঁকেছেন, তাতে প্রশ্ন উঠছে, লেবার দলের বাম এবং সাধারণভাবে বামদের কি এখন কোনো ভবিষ্যৎ আছে? 

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নির্বাচনের ফলের দিকে নজর দেওয়া। নির্বাচনের ফলাফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে লেবার পার্টির সমর্থনে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে গেছে। স্টারমারের নেতৃত্বে দলটি ডানে ঝুঁকে বিপুল জয় পেলেও বামপন্থীদের প্রতি ভোটারদের আস্থা এখনো আশাবহ পর্যায়ে আছে। 

লক্ষণীয়ভাবে লেবার এমপিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বামপন্থী আছেন। তাঁদের মধ্যে জন ম্যাকডোনেলের মতো প্রবীণ রাজনীতিক থেকে শুরু করে অলিভিয়া ব্লেক, রিচার্ড বার্গন ও জারাহ সুলতানার মতো তরুণ রাজনীতিক আছেন। তাঁদের মধ্যে জারাহ সুলতানাকে লেবার পার্টির নেতৃত্বের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। 

এই নির্বাচনে যেখানে লেবার সমর্থকদের মধ্যে টোরিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ বাইরে অন্য কিছুতে দেখা যাচ্ছিল না, সেখানে কিছু জায়গায় বামরা ভোটারদের সঙ্গে জোরালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন। 

লেবার পার্টির বড় পৃষ্ঠপোষকতা থেকে সরে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইজলিংটন নর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বড় ব্যবধান নিয়ে জিতেছেন জেরেমি করবিন। তিনি বেশির ভাগ জরিপ প্রতিষ্ঠানকে, এমনকি নিজের প্রচারকর্মীদের অবাক করে দিয়ে সেখানে সাত হাজারের বেশি ভোটে জিতে এসেছেন। 

ইজলিংটন নর্থের মতো ব্রিটেনের অন্য শহরকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে গাজা পরিস্থিতি, জলবায়ু সংকট, আবাসনসংকট এবং আর্থিক সুবিধা ব্যবস্থার নিষ্ঠুরতা—ইত্যাদি ইস্যুতে (অন্তত বামদের দৃষ্টিতে) স্টারমার কম নজর দিয়েছিলেন এবং সে কারণে লেবার পার্টির সমর্থন কমেছে। 

লেবার পার্টি অনেক বেশি সংখ্যক আসন পেলেও আশ্চর্যজনকভাবে জাতীয় পর্যায়ে তাদের ভোটপ্রাপ্তি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এবারের ভোটে তারা পেয়েছে এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি (৩৪ শতাংশ), যা কিনা ২০১৭ সালে করবিনের নেতৃত্বে দলটির পাওয়া ভোটের চেয়ে অনেক কম এবং ২০১৯ সালে পরাজিত হওয়ার বছরে পাওয়া ভোটের চেয়ে খুব একটা বেশি নয়। 

এ অবস্থায় এড মিলিব্যান্ড ও অাঙ্গেলা রেনারের মতো বাম দিকে ঝোঁক থাকা নেতাদের লেবার নেতৃত্বকে বোঝাতে হবে, বাম ঘরানার নীতিকে দল থেকে বিদায় করা হলে তা দলের জন্য ভালো হবে না। 

লেবার নেতৃত্ব কৌশলগত কারণে বাম নীতিগুলো সরিয়ে ডানপন্থার দিকে ঝুঁকলে তা দীর্ঘ মেয়াদে লেবার দলের একনিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যেও বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে। সেটি বামঘেঁষা উদারপন্থীদের পাশাপাশি মধ্যপন্থীদেরও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

অ্যান্ডি বেকেট দ্য গার্ডিয়ান–এর নিয়মিত কলাম লেখক


দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত