মতামত

ডলার পাচার ও বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজদের বিদেশ ‘দখলের অভিযান’

ডলার-সংকটে যখন আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমে গেছে, যখন আমদানি পণ্য জাহাজ থেকে খালাস আটকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, তখন একের পর এক বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজদের বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। দেশের বাইরে সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন, তা বৈধভাবে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এর অর্থ হলো, প্রবাসী শ্রমিক, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের রক্ত পানি করা শ্রমের বিনিয়মে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দুর্নীতিবাজদের বিদেশে সম্পদ ক্রয়ের কাজে অবৈধভাবে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।

দেশে ক্রমাগত অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুণ্ঠন হচ্ছে বলেই দেশের বাইরে ডলার পাচার হচ্ছে। আর ডলার পাচার হচ্ছে বলেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অস্বাভাবিক হারে কমছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-সংকট হচ্ছে বলে জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্য ও কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমিয়ে দিতে হয়েছে যা রপ্তানি খাতসহ দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি করছে। দুর্নীতিবাজ অর্থ পাচারকারীরা এভাবে দেশের কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে বিদেশে নিজ পরিবারের ভবিষ্যৎ নির্বিঘ্ন করছে।

বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিক-ব্যাংকারদের দেশের বাইরে সম্পত্তি ক্রয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আলোচিত ছিল কানাডা কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম বা দ্বিতীয় নিবাস। সাম্প্রতিক কালে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের মতো দেশের নাম। এসব দেশের অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, ব্যাংকার, আমলা, ব্যবসায়ীদের সম্পত্তি ক্রয়ের এত খবর পাওয়া যাচ্ছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই পরিহাস করে এগুলোকে বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজদের আমেরিকা, লন্ডন কিংবা দুবাই ‘দখলের অভিযান’ বলে পরিহাস করেছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি ৪ এডিএস) সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে ৪৫৯ বাংলাদেশি দুবাইয়ে ৯৭২টি সম্পত্তি কিনেছেন। কাগজে-কলমে এর মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা হলেও প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি। (দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির হাজার প্রোপার্টি, বণিক বার্তা, ১০ জানুয়ারি ২০২৩) ২০২০ সালের পর দুবাইয়ে বাংলাদেশি ধনী ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিবিদ-ব্যাংকার ও ঠিকাদারদের আবাসন সম্পত্তি ক্রয়ের প্রবণতা আরও বেড়েছে।

দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে, আমদানি-রপ্তানি মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমে এবং ব্যাংক থেকে ঋণের নামে যে হাজার হাজার কোটি টাকার লুণ্ঠন হয়েছে, তারই একটা অংশ যে বিদেশের অভিজাত এলাকায় আবাসিক সম্পদ কেনার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, তা স্পষ্ট বোঝা যায় এসব সম্পত্তি ক্রয়কারীদের তালিকা দেখলে। এই তালিকায় থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার।

দুবাইয়ের সরকারি নথিপত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে ১২ কোটি ২৩ লাখ দিরহাম বা ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বাড়ি ফ্ল্যাট কিনেছেন। (দুবাইয়ে দেড় বছরে ৩৪৬ কোটি টাকার ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি ২০২৩)

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার বা ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি ক্রয়ের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। এরপর পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রোপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। (সূত্র: সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান বাড়ি কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রথম আলো, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩)

লন্ডনের অভিজাত এলাকা ‘প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে’ আবাসন সম্পত্তি কেনার শীর্ষ তালিকায়ও বাংলাদেশি ধনীদের নাম দেখা গেছে। ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট ও প্রোপার্টি ব্যবস্থাপনা সংস্থা নাইট ফ্রাঙ্ক ও যুক্তরাজ্য সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা তালিকা থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের তালিকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান ছিল নবম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ধনীরা এমনকি জাপানি ধনীদের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন। বাংলাদেশি ধনীরা এ সময় প্রাইম সেন্ট্রাল লন্ডনে ৯৮টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড বা দেড় হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি কিনেছেন। শুধু ৯ মাস নয়, ২০১০ সালের পর থেকেই ব্রিটেনে বাংলাদেশি ধনীদের আবাসন খাতে সম্পত্তি কেনার হার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১০ সালের জানুয়ারিতেও যুক্তরাজ্যের আবাসন খাতে বাংলাদেশের ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধিত সম্পত্তির সংখ্যা ছিল ১৫। ছয় বছরের মাথায় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২-তে। এর পাঁচ বছর পর ২০২১ সালের আগস্টে এ সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০৭।

দেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে, আমদানি-রপ্তানি মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমে এবং ব্যাংক থেকে ঋণের নামে যে হাজার হাজার কোটি টাকার লুণ্ঠন হয়েছে, তারই একটা অংশ যে বিদেশের অভিজাত এলাকায় আবাসিক সম্পদ কেনার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, তা স্পষ্ট বোঝা যায় এসব সম্পত্তি ক্রয়কারীদের তালিকা দেখলে। এই তালিকায় থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার। এদের কেউ রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কেউ চেয়ারম্যান, এমনকি মাঝারি স্তরের কর্মকর্তা। আছে শতাধিক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, সাবেক ও বর্তমান হাইপ্রোফাইল রাজনীতিবিদ ও আমলা। (সূত্র: লন্ডনের অভিজাত এলাকায় প্রপার্টির শীর্ষ বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশিরাও, বণিক বার্তা, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩)

এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ধরন বিকশিত হয়েছে, তার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও বিদেশে পাচার করে সম্পত্তি ক্রয়ের এসব ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। বিদেশে অবৈধভাবে সম্পত্তি ক্রয়ের এসব ঘটনা মূল দুর্নীতি নয়, এগুলো হলো মূল দুর্নীতির সিম্পটম বা লক্ষণ। দেশের মধ্যে জবাবদিহিবিহীন একচেটিয়া শাসনব্যবস্থায় যত বেশি উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তত বেশি দুর্নীতি হয়েছে, তত বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এককেন্দ্রিক ক্ষমতার রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। আমদানির সময় পণ্যের মূল্য বেশি এবং রপ্তানির সময় মূল্য কম দেখানোর ঘটনা ঘটেছে নিয়মিত। এভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি, ব্যাংক থেকে লোপাট করা ঋণের অর্থ ও আমদানি-রপ্তানিতে মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের চাপ তৈরি হয়েছে। আর তারই লক্ষণ হিসেবে বিদেশের অভিজাত এলাকায় সম্পত্তি ক্রয়ের ঘটনাগুলো ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি ও পাচারের আভাস পাওয়া গেলেও এগুলো দুর্নীতির বিরাট হিমশৈলের দৃশ্যমান ক্ষুদ্র অংশ কেবল।

দুর্নীতির মাত্রা ও পাচারের প্রকৃত অর্থের পরিমাণ যে আরও অনেক বেশি, তা বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন থেকে। সংস্থাটির ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, স্রেফ বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো এবং রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৮২৭ কোটি ডলার বা ৮২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (১ ডলার সমান ১০০ টাকা ধরে) পাচার হয়। ২০১৪ সালের হিসাব বাদে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে আমদানি-রপ্তানির মূল্যের তারতম্যের মাধ্যমে মোট পাচারের অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার বা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। (ট্রেড-রিলেটেড ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোস ইন ১৩৪ ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ২০০৯-২০১৮, গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি, পৃষ্ঠা ৫৬)
এ বিষয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারেরই গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, হুন্ডির মাধ্যমে শুধু এক বছরে পাচার হয়েছে ৭৮০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। (সূত্র: হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বণিক বার্তা) এ ছাড়া অর্থ পাচার প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে সংস্থাটি তদন্ত করে ৫ বছরে ১ হাজার ২৪টি অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেক ঘটনায় দেশের বাইরে অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে। (সূত্র: পাঁচ বছরে প্রমাণ মিলেছে অর্থ পাচারের ১০২৪ ঘটনা, ৮ জুন ২০২১, প্রথম আলো) ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বিএফআইইউ জানিয়েছে, কোনো কোনো আমদানি পণ্যে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং বা দাম বেশি দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। (সূত্র: আমদানি পণ্যের দর বেশি দেখিয়ে অর্থ পাচার, ১ নভেম্বর ২০২২, সমকাল)

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা হয় ‘দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ (সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত সংশোধিত)-এর মাধ্যমে। এই আইন অনুসারে বাংলাদেশিরা চাইলেই দেশের বাইরে অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন না। এমনকি চিকিৎসা বা পড়াশোনার জন্য অর্থ বিদেশে নিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এই আইনের ধারা ৫(১) (ই) অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের দেশের বাইরে সম্পত্তি ক্রয় করার কোনো সুযোগ নেই। আর বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যক্তিকে বিদেশে সম্পত্তি ক্রয় করার বিশেষ অনুমতি দিয়েছে, এ রকম কোনো নজির নেই। ফলে বাংলাদেশের আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-রাজনীতিক-আমলা-ব্যাংকারদের বিদেশে সম্পত্তি ক্রয় করার প্রতিটি ঘটনাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই সব পাচারকারীকে আইনের আওতায় আনা এবং পাচারের অর্থ ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। পাচারকারীদের বিচার করার বদলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার অনৈতিক সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যদিও তা কোনো কাজে লাগেনি। (এখনো কেউ পাচারের টাকা ফেরতের সুযোগ নেননি, ২২ আগস্ট ২০২২, প্রথম আলো)

সরকারের পক্ষ থেকে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করা হচ্ছে অথচ রিজার্ভ-সংকটের পেছনে অন্যতম দায়ী এই পুঁজি পাচারের ঘটনা ঘটে চলেছে যুদ্ধ শুরুর বহু আগে থেকে। দেশের শাসনব্যবস্থায় ন্যূনতম জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিকতার চর্চা থাকলে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর ও ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যঘাটতির একটি দেশ থেকে পুঁজি পাচারের এসব ঘটনা এত অবলীলায় ঘটে যেতে পারত না। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে গণতান্ত্রিক জবাবদিহির বিকল্প নয়, বরং টেকসই ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিকতার চর্চা অপরিহার্য, তা যত দ্রুত সংশ্লিষ্ট সবার কাছে স্পষ্ট হবে, তত দ্রুত আমরা এই সংকট থেকে মুক্তি পাব।

  • কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক, প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ’।
    ই-মেইল: kallol_mustafa@yahoo.com