দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি, তবু আমরা আশাবাদী সব দলের অংশগ্রহণে যথাসময়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পাবে সে বিষয়টি সহজে অনুমেয়।
কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতের কী কী উন্নয়ন প্রয়োজন এবং কীভাবে তা সম্পাদন করা যায়, তা যদি নির্বাচনী ইশতেহারে সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হয়, তাহলে যে দল ক্ষমতায় আসীন হয়, তারা ইশতেহারে উল্লেখিত প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করতে পারে না।
আর কিছুটা পারলেও জনগণের সামগ্রিক কল্যাণে তা তেমন ভূমিকা রাখে না। স্বাস্থ্য খাত বেশ জটিল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই এটিকে সামগ্রিকভাবে বোঝা বেশ কঠিন।
আবার কোনো সরকার তার মেয়াদের প্রথম বছরে যদি স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার শুরু করতে না পারে, পরবর্তী সময়ে তা আর করতে পারে না কিংবা করলেও সরকারের চলমান মেয়াদে তা শেষ করতে পারে না। জাতিগতভাবে আমাদের নানা বিভাজন নীতি এবং হিংসাত্মক ও রেষারেষির রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু আছে। ফলে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে অসমাপ্ত কাজ অনেক ক্ষেত্রেই আর সম্পন্ন হয় না।
এতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী বিষয় থাকা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করছি।
করোনার টিকাদানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তিগত হেলথ অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থার প্রচলন করা যেতে পারে। এটি করা হলে ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত সব তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে যা ইউনিক আইডির মাধ্যমে ব্যক্তি এবং সেবাদানকারীর প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকের যুগোপযোগী কাঠামোগত পরিবর্তনসহ বর্তমান কর্মরত সিএইচসিপির সঙ্গে একজন প্যারামেডিক এবং একজন নার্স বা মিডওয়াইফ চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োজিত করে এটিকে আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালী করা যেতে পারে যাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এটিকে ফার্স্ট কন্ট্রাক্ট পয়েন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে আকৃষ্ট হয়।
ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ সেবা একীভূত করে পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিদ্যমান জনবলের সঙ্গে দুজন এমবিবিএস ডাক্তার (একজন মহিলা এবং একজন পুরুষ) এবং কমপক্ষে একজন নার্স ও একজন মিডওয়াইফ চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োজিত করে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ভিত মজবুত করা যেতে পারে।
এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে সাধারণ সেবা, শিশুসেবা এবং গর্ভকালীন সেবার মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ধাপের রেফারেল পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।
পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইমার্জেন্সি সেবাসহ সব সেবার সহজপ্রাপ্যতা এবং গুণগত মান উন্নয়নে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োজিত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্রিটিক্যাল জনবলের (যেমন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) দীর্ঘদিনের শূন্য পদে চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োজিত করা যেতে পারে।
উপযুক্ত জনবলসহ ডেডিকেটেড ও আধুনিক মেডিকেল স্টোর প্রতিষ্ঠা করা এবং ডিজিটাল টেকনোলজির মাধ্যমে মেডিসিন ডিসপেন্সিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা যেতে পারে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডায়াগনস্টিক সেবা কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে।
এসব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি কার্যকর রেফারেল পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে শহর এলাকায় সরকারিভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো নেটওয়ার্ক গড়ে না তোলায় শহুরে মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য মূলত প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার কিংবা ওষুধের দোকানের ওপর নির্ভরশীল।
তাই একদিকে যেমন অনেকেই গুণগত মানের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বহু মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কিংবা সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি হাসপাতালে গিয়ে ভিড় করছে। ফলে অতিরিক্ত রোগীর চাপে এ সব হাসপাতালের সেবার গুণগত মান ব্যাহত হচ্ছে।
তাই ক্রমবর্ধমান শহুরে মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রিভেন্টিভ, প্রোমোটিভ এবং কিউরেটিভ সেবা সংবলিত স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবারকল্যাণ সেবাব্যবস্থার প্রচলন করা প্রয়োজন যা সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এ ক্ষেত্রে ইউনিসেফের অর্থায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘আলো ক্লিনিক’ মডেলের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, শহুরে মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এ মডেলটি সুইডিশ দূতাবাসের অর্থায়নে ‘ইউনিসেফ’ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি করে এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি করে মোট ছয়টি ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন করছে যা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরসহ নীতিনির্ধারণী মহলের নজর কেড়েছে।
সরকারি হাসপাতালে বর্তমান প্রচলিত ‘ইমপ্লিসিট বেনিফিট প্যাকেজ’ কে ‘এক্সপ্লিসিট বেনিফিট প্যাকেজ’-এ রূপান্তর করে প্রতিটি পরিবারের জন্য বছরে ন্যূনতম এক লাখ টাকার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করা যেতে পারে।
এতে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতে ক্ষমতায়ন করবে যা সেবাদানকারীসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের রেডিনেস বাড়াতে তাড়িত করবে। তা ছাড়া মানুষ কত টাকার সেবা পেল, তা জানার পাশাপাশি রাষ্ট্র কত টাকার স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, তা-ও জানা সম্ভব হবে। ফলে সরকার স্বাস্থ্য খাতে টাকা খরচে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
বর্তমানে রাষ্ট্র স্বাস্থ্য খাতে কত অর্থ খরচ করছে তা জানে, কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে কী পরিমাণ মূল্যের সেবা উৎপাদন করছে, তা রাষ্ট্রের জানা নেই। এ পদ্ধতিতে জনগণ নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে সেবা নিতে উৎসাহিত হবে।
কেননা নির্দিষ্ট সেবাকেন্দ্র বাইপাস করে উচ্চতর সেবাকেন্দ্রে সেবা নিতে গেলে স্বাস্থ্য কার্ডের প্রদত্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাকে নির্ধারিত মূল্যে সেবা কিনতে হবে। তবে এ পদ্ধতি চালু করতে হলে সরকারি হাসপাতালের রেডিনেস বাড়াতে হবে।
তাই এ ক্ষেত্রেও ক্রিটিক্যাল জনবলের (যেমন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক) দীর্ঘদিনের শূন্য পদে চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োজিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি হাসপাতালকে রোগীর সংখ্যা, কোয়ালিটি স্কোর এবং রোগীর সন্তুষ্টি স্কোরের ভিত্তিতে পারফরম্যান্স অনুযায়ী তিনটি দলে (সাধারণ, মধ্যম, উঁচু) ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রদত্ত বাজেটের এক আইটেমের উদ্বৃত্ত অর্থ অন্য আইটেমে খরচের জন্য সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালকে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য এবং রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী বেনিফিট প্যাকেজে উল্লেখিত সেবা সময়মতো প্রদানের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বছরে ১০ লাখ টাকা এবং জেলা হাসপাতালকে শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী বছরে ২০ থেকে ৪০ লাখ টাকার একটি থোক বরাদ্দ দিতে হবে।
তা ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জেলা হাসপাতালকে কমিউনিটি রিসোর্স মবিলাইজেশনে উৎসাহিত করা যেতে পারে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালকে শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী বছরে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ দিতে হবে।
ক্যানসার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি রোগসহ জটিল অসুস্থতার ব্যাপক চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি সুরক্ষা ফান্ড গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সরকারি অনুদানের পাশাপাশি বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থায়ন কৌশল অবলম্বন এবং উন্নয়ন অংশীজনসহ বিভিন্ন ফিলানথ্রোপিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে ফান্ড গ্রহণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এ ফান্ড থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বছরে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে।
মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য খাতের জনবলের দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ জন্য মিড্ এবং জুনিয়র সারির চিকিৎসকদের উন্নত বিশ্বে ৬-১২ মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক, মিডওয়াইফসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর থাইল্যান্ডের মতো প্রতি তিন বছর পরপর বিএমডিসির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং প্র্যাকটিসের সনদ দেওয়ার বিধান চালু করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য খাতকে সর্বদা বিভিন্ন রকম ‘জরুরি অবস্থার’ মুখোমুখি হতে হয়। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি; কখনো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা ডায়রিয়ার মতো স্থানীয় মহামারি; বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস নানা প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি; আবার কখনো বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজার মতো বিল্ডিং ধসে পড়া, লঞ্চডুবি কিংবা বাস-রেল দুর্ঘটনার ফলে সৃষ্ট জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়।
এসব জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য একটি জরুরি তহবিল গঠন করা অপরিহার্য।
ওপরে বর্ণিত কার্যক্রম সম্পাদন এবং স্বাস্থ্য খাতের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা অথোরিটি গঠনের ব্যবস্থাসহ একটি জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা অপরিহার্য।
মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য স্বাস্থ্য খাতের জনবলের দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। এ জন্য মিড্ এবং জুনিয়র সারির চিকিৎসকদের উন্নত বিশ্বে ৬-১২ মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।
পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক, মিডওয়াইফসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর থাইল্যান্ডের মতো প্রতি তিন বছর পরপর বিএমডিসির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং প্র্যাকটিসের সনদ দেওয়ার বিধান চালু করা যেতে পারে।
বর্তমানে দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন কিংবা রেজিস্ট্রেশন নবায়নের জন্য কোনো পরীক্ষা পদ্ধতি চালু নেই।
আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো এসব পরামর্শের আলোকে স্বাস্থ্য খাত উন্নয়ন বিষয়ে নিজ দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করবে।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক