মতামত

চীনের অতি উৎপাদন বিশ্বে উত্তেজনা বাড়াবে

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর বাড়ানোর হুমকি শিগগিরই আন্তর্জাতিক খবরে বড় শিরোনাম হতে পারে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে চীনের অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা বা ওভার ক্যাপাসিটিও একটি দীর্ঘমেয়াদি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বড় জায়গা দখল করবে। উন্নত এবং উদীয়মান দেশগুলো সম্প্রতি চীনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রণোদনা দিয়েছে। ফলে আগামী কয়েক বছরে চীনের অতি উৎপাদনের এই সমস্যা কোন দিকে গড়াবে, তা ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে, বৈশ্বিক ভূরাজনীতির ওপর এই সংকট বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। 

যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওভার ক্যাপাসিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে শুল্ক আরোপ করার এক মাস পর গত ২৯ অক্টোবর ইউরোপও চীনের উৎপাদিত বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভিএস) ওপর শুল্ক বসায়। এই পদক্ষেপগুলো ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলেও, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের দায়ের করা অভিযোগ (যেখানে চীন তুরস্কের ইভিএস শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে) অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। এই মামলা চীনের ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, চীন উদীয়মান বাজারগুলোকে উন্নত অর্থনীতির পথ অনুসরণ করা থেকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেও তা এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। 

এদিকে বিদেশের মাটিতে চীনের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের ভূমিকা বদলে যাচ্ছে। 

চীনের সাম্প্রতিক প্রণোদনা পরিকল্পনা দেখাচ্ছে, সরকার দেশের দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা স্বীকার করলেও অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য তারা চেষ্টা করছে না। এর ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ আবার বাড়তে পারে। কারণ, ট্রাম্প চীনা পণ্যে ৬০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর কথা আগাম ঘোষণা করে বসে আছেন। চীনের অতিরিক্ত উৎপাদনের প্রভাব অন্য বড় অর্থনীতিতে বেশি পড়বে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, চীনের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক বিরোধ বাড়ছে। ইইউ যেসব চীনা বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে শুল্ক বসিয়েছে, সেটিকে ‘সবে শুরু’ বলা যেতে পারে। সদস্যদেশগুলোর মধ্যে এই শুল্ক নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও ভবিষ্যতে আরও বড় পদক্ষেপ দেখা যেতে পারে। 

উন্নত দেশগুলোর দিকে থেকে চাপ আসার কারণে বাধ্য হয়ে চীনের রপ্তানিকারকেরা এখন তাদের পণ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পাঠাচ্ছে। কারণ, ২০২৩ সালে চীনের রপ্তানির ৫০ শতাংশের বেশি এই দেশগুলোর কাছে গেছে। সামনে চীনের রপ্তানি আরও বাড়বে। ফলে বড় বড় দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যঘাটতি বাড়বে। এই দেশগুলো চীনের সস্তা পণ্য ও বিনিয়োগ থেকে লাভ পাচ্ছে। কিন্তু তারা চীনের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। এ কারণে তাদের নিজস্ব শিল্পের উন্নতিসাধন কঠিন হয়ে পড়ছে। 

ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক আরোপ করার এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর ফলে চীনের রপ্তানি আরও বেশি করে উদীয়মান বাজার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে চলে যাবে। এটি চীনের ওপর বিশ্ববাণিজ্যব্যবস্থার নির্ভরশীলতা বাড়াবে। 

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে সমস্যা তুলে ধরেছে। তারা শুল্ক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মাধ্যমে চীনা শিল্পের এই সমস্যার মোকাবিলা শুরু করেছে। আশার বিষয় হলো চীনা কোম্পানিগুলো তাদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা কমিয়েছে। কারণ, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম এবং অতিরিক্ত পণ্য রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

তবে এই সমস্যা সমাধানে আরও কঠোর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এবং নতুন নীতি দরকার। জি-৭ দেশগুলোর একযোগে কাজ করার গতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চীন থেকে পণ্য আমদানিতে নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং শ্রমবিষয়ক পর্যালোচনা বাড়বে। 

চীন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এটি তার বাণিজ্যিক অংশীদারেরা স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এই পরিকল্পনা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। 

ব্রেন্ডান কেলি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চীনা অর্থনীতিবিষয়ক সাবেক পরিচালক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ