‘জগন্নাথ ভার্সিটিতে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করায় ছাত্রকে পুলিশে দিয়েছে প্রক্টরিয়াল বডি। চবিতে ঘটলে ছাত্রটি মানবিক দিক বিবেচনায় মাফ পেয়ে যেত।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেজ থেকে এমন একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। গত এক বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে যাবতীয় কর্মকাণ্ড বা ঘটনাবলির দিকে ফিরে তাকালে মনে হবে, এটি একটি ‘মানবিক’ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে এবং সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চালিকাশক্তির আসনে বসে আছেন একজন ‘মানবিক’ উপাচার্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক দিন পরপর একেকটি ঘটনা ঘটেই চলেছে। ছাত্রলীগের নিজেদের মধ্যে ‘ধারাবাহিক’ সংঘর্ষ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাদের মারধর, সাংবাদিকের ওপর হামলা, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, ছাত্রী নিপীড়ন, শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ—কোনটি ছেড়ে কোনটির কথা বলা যায়!
উপাচার্য শিরীণ আখতারের ‘অমৃতবচনের’ মতো নানা বক্তব্যও সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। নিজের অবস্থান কতটা নড়বড়ে হয়ে গেলে তিনি এমনটি বলে থাকেন—‘প্রধানমন্ত্রী যখন চাইবেন, আমি চলে যাব। এখন উনি চাইছেন না, আমি কী করব? তাই আমাকে থাকতেই হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যখন চাইছেন না আমি চলে যাই, তখন আপনারা আমাকে আরেকটু সহ্য করুন।’
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা ও তাঁর বাগ্দত্তাকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্যমতে, জড়িত ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ সময় তাঁরা মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বেশিরভাগ তদন্ত কমিটিই আলোর মুখ দেখে না। তদন্ত কমিটিতে থাকা শিক্ষকেরা বলে থাকেন, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু করার সাহস পান না তাঁরা।
তবে গত বছর জুলাই মাসে ছাত্রী নিপীড়নের প্রতিবাদে বড় আন্দোলন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়টি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ছিলেন ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতির ঘনিষ্ঠ। ফলে নিপীড়কদের বাঁচাতে তিনি ছিলেন তৎপর। বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে পড়ে থাকা এই ‘আদু ভাই’র অনুসারীরা নানা অপকর্ম করেও তাঁদের রেহাই পাওয়াটাই রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল। ফলে আন্দোলনের মুখে মাননীয় উপাচার্যের বোধোদয় হলো—‘এবার কিছু একটা করা উচিত।’
আন্দোলনের পাঁচ দিন পর যৌন নিপীড়কদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারের পর দুই ছাত্রকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদিও তাঁরা সবাই এখন জামিনে বেরিয়ে গেছেন। আশা করি, তাদের আর ‘শাস্তি’ পেতে হবে না!
জামিনে বের হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে তাঁরা ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ভয়ভীতিও দেখান এবং ক্যাম্পাসে চলাফেরার সময় ছাত্রীটির উদ্দেশে মন্তব্য ছুড়ে দেন। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ওই ছাত্রী তখন প্রক্টরের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দেন। ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেটির আর কোনো খবর নেই।
এর আগে দুই ছাত্রীকে হেনস্তার আরেক ঘটনার ১০ মাস পর ছাত্রলীগের চার কর্মীকে বহিষ্কার করেছিল ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ। এ এক অদ্ভুত বহিষ্কার! রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে বহিষ্কারের কোনো চিঠি পাননি বিভাগীয় প্রধান। এমনকি এ দুই ছাত্রকে যে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা-ও বিভাগকে জানানো হয়নি। ফলে ‘বহিষ্কৃত’ দুই ছাত্রকে দিব্যি পরীক্ষা দিতে দেখা যায়। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা এমন ‘মানবিকতাই’ বারবার পেয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে। তবে এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর তাঁদের পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল।
গত আগস্টে প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নয়জনের বহিষ্কার বাতিল ‘মানবিক কারণে’। মারামারি, কক্ষ ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় এই নেতা-কর্মীদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় রামদা উঁচিয়ে স্লোগান দেওয়ার ঘটনাও ছিল। যদিও বহিষ্কৃত আরও ছয়জন ঠিকই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান এবং সবাই আবাসিক হলেই অবস্থান করেন।
গত অক্টোবরেও এমন ‘মানবিকতা’ দেখায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৯ জুন ছাত্রলীগের ১০–১৫ নেতা-কর্মীর মারধরের শিকার হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিক। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের দুই নেতাকে ‘নামকাওয়াস্তে’ ছয় মাসের বহিষ্কারাদেশ দেয়। বহিষ্কার শুধু কাগজেই ছিল। ওই দুই নেতা ক্যাম্পাসেই ছিলেন। কয়েক মাস পর ‘মানবিক কারণে’ সেই বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়। কারণ, ভবিষ্যতে আর কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত না থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও এর আগে আরেকটি ঘটনায় একইভাবে ‘মানবিক কারণে’ ছাড় পেয়েছিলেন তাঁরা। তখনো এমন শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে চারুকলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে প্রকাশ্যে এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তা করেন ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা। আলোচিত সে ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হলেও কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি হয়নি। সেখানেও হয়তো কোনো ‘মানবিক’ বিষয় থাকতে পারে!
ভিসি শিরীণের মেয়াদকালে আরেকটি আলোচিত বিষয় হলো শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। বিষয়টি কতটা বেপরোয়াভাবে ঘটছে তা টাকা লেনদেন নিয়ে অডিও ফাঁসেই প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেখানে বেরিয়ে আসে ভিসির ব্যক্তিগত সহকারীর নামও। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নিতেই লেগে যায় দেড় বছরের বেশি সময়। শাস্তি বলতে শুধু বরখাস্ত আর পদাবনতি। যে সিন্ডিকেট এ শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে ভিসিই হলেন সর্বেসর্বা। ফলে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই; কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া না হওয়া নিয়েও ‘মানবিকতা’ দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
কতটা গোঁজামিল করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে এক সহকারী প্রক্টরের স্ত্রীকে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগের প্রচেষ্টায়। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডও তাঁকে নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে এ নিয়ে সমালোচনার পর সিন্ডিকেট সেই নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে মাননীয় উপাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠজন’ সহকারী প্রক্টরের স্ত্রী বলে কথা, এখন তাঁর ওপর এতটা ‘অমানবিকতা’ কী করে চলে!
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাঁকে, তা–ও কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া। এ এক অনন্য ‘মানবিকতা’! ‘জালিয়াতির’ পরও সহকারী প্রক্টরের স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের চেষ্টার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন আরেক শিক্ষক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। গোটা বিষয়টি একবার ভাবলে মনে হতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘মাৎসন্যায়কাল’ চলছে।
তবে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এই ডিসেম্বরে যা ঘটল, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রীতিমতো কলঙ্কজনকই বলতে হবে। দুইটি বিভাগ থেকে বারবার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলা হলেও উপাচার্য নিজের ক্ষমতাবলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন। কতটা ‘মানবিক’ হলে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগের এমন আয়োজন করেন তিনি। শুধু তাই নয়, শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদের মুখে সেই শিক্ষক নিয়োগের জন্য এক বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন নিজের বাসভবনেই।
গত সেপ্টেম্বর মাসে শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভ থেকে একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালান। উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তর, শিক্ষক ক্লাব, পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই জানায়, এক দল শিক্ষার্থী চাঁদা না পেয়ে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনার বিভিন্ন ফুটেজ, ভিডিও ও ঘটনাস্থল বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়। সেই হামলাকারীদের মধ্যে ১২ জনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাদেরসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও এক হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দিলেও মাত্র ১৪ জন ছাড়া কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, এটাও কি একধরনের ‘মানবিকতা’ নয়!
সেই ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে এত হইচই হলো, সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় উপাচার্য এত ক্ষুব্ধ হলেন; কিন্তু চিহ্নিত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হলো না। বরং তাঁরা ক্যাম্পাসে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশও সেসব আসামিকে দেখেও না দেখার ভান করে আছে যেন।
তবে এসব আসামি একটি ‘কাজের কাজ’ করেছেন বলা যায়, কয়দিন আগে ‘শিবির সন্দেহে’ এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে সেই ভাঙচুরের মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিদের তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
গত সেপ্টেম্বরে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনা বেশ সমালোচনার জন্ম দিলে ক্যাম্পাসের ‘আদুভাই’ নিয়ন্ত্রিত মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয় সংগঠনটির কেন্দ্র থেকে।
কারা মোশাররফকে পিটিয়েছে তা সবাই জানলেও পুলিশের কাছে মামলায় তাঁদের কারও নাম উল্লেখই করা হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও ছিল এমন—কারা মারধরে জড়িত, কীভাবে সে ঘটনা ঘটেছে তা–ও স্পষ্ট নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতি ‘মানবিকতা’।
তবে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হলেও ‘আদুভাই’ নেতাদের বেশিরভাগই এখনও আবাসিক হল আঁকড়ে আছেন। দখল করে আছেন একেকটি কক্ষ। হল প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের চেয়েও কতটা ‘মানবিক’ হলে তাঁরা শিক্ষার্থীদের দেখভালের জন্য বছরের পর বছর ধরে ক্যাম্পাসেই পড়ে থাকেন।
আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও মাননীয় উপাচার্যও কতটা ‘মানবিক’ হলে সেসব ‘আদু ভাইদের’ এভাবে আবাসিক হলে দিব্যি থাকার সুযোগ করে দেন! অথচ সাড়ে ছয় বছর ধরে ছাত্রদের কোনো হলেই কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেসব হল চলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণেই। কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক আর দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কয়েকটি কক্ষ ছাড়া এক হাজার ৩০ কক্ষের কার্যত অভিভাবক সেই ‘মানবিক’ ছাত্রলীগ নেতারাই।
এই ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেকটি ‘মানবিকতার’ বিষয় বেশ আলোচনা তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা। আর সেই টাকা তোলা হয়েছে উপাচার্যের নির্দেশেই।
একটি ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রায় আট হাজার মানুষকে দুপুরের খাবার খাইয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই দুর্মূল্যের দিতে এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে এক বেলা খাওয়ানো কতটা ‘মানবিক’ বিষয় হতে পারে, তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।
শিক্ষক সমিতির ধারাবাহিক প্রতিবাদ ও কর্মসূচিকে পাত্তা না দিয়ে ‘মানবিক’ ভিসির নেতৃত্বে এভাবেই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্বের নানা জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিং করা হয়ে থাকে। সেসবের কোনো কোনো তালিকায় হাজারটার মধ্যেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না থাকা নিয়ে আমাদের মধ্যে বেশ হা–হুতাশ দেখা যায়।
শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীর অনুপাত, গবেষণার মান ইত্যাদি নিয়ে সেসব র্যাঙ্কিং করা হয়। তবে র্যাঙ্কিংয়ের মধ্যে ‘মানবিক ক্যাম্পাসের’ শর্তটা যুক্ত থাকলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিঃসন্দেহে শীর্ষে থাকত।
রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: rafsangalib1990@gmail.com