ইসলামের উদ্দেশ্য ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি

ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি ইসলামের উদ্দেশ্য। ইসলামি জীবনাদর্শ বিশ্বের সব মানুষের জন্য। ইসলামের লক্ষ্য হলো মানবসমাজে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মানবাধিকার সংরক্ষণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, তারা ইবাদত করুক এই (কাবা) গৃহের মালিকের, যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দেন এবং শঙ্কা হতে নিরাপত্তা দেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ৩-৪) ‘শপথ ত্বীনের! শপথ জয়তুনের! শপথ এই নিরাপদ নগরীর।’ (সুরা-৯৫ ত্বীন, আয়াত: ১-৩)

মানুষের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর হেফাজত করার নাম ইসলাম। ইমান বা বিশ্বাস ইসলামি আদর্শ ও জীবনব্যবস্থার ভিত্তি।

মানুষের কাছে সত্য ও মিথ্যার, ন্যায় ও অন্যায়ের, হিদায়াত ও গোমরাহির বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা ছিল নবী-রাসুলদের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দ্বীন সম্পর্কে জোরজবরদস্তি নেই, সত্যের পথ ভ্রান্ত হতে সুস্পষ্ট হয়েছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে, আল্লাহে ইমান আনবে, সে এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৬)

অশান্তি সৃষ্টি করা ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিয়ো না, তাঁকে ভয় ও আশার সহিত ডাকবে। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী’

বিশ্বময় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম মানবভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সে সমগ্র মানবজাতিকে একই পরিবারভুক্ত মনে করে। ইসলামের কথা হচ্ছে, সব মানুষই এক আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি এবং তিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। ইসলামের শিক্ষা হলো সব মানুষের উৎপত্তি বাবা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (অা.) থেকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা বলো, আমরা আল্লাহতে ইমান রাখি এবং যা আমাদের প্রতি, ইব্রাহিম (আ.), ইসমাইল (আ.), ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.) ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তাঁদের প্রতিপালকের নিকট থেকে মুসা (আ.), ঈসা (আ.) ও অন্যান্য নবীকে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না এবং আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৩৬)

‘মানুষ ছিল একই উম্মত, পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করে। তোমার প্রতিপালকের পূর্বঘোষণা না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায়, তার মীমাংসা তো হয়েই যেত।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ১৯)

ইসলাম সবার সঙ্গে ন্যায়পরায়ণতা, সুবিচার ও সুন্দর আচরণ করার শিক্ষা দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানবভ্রাতৃত্বের নীতিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার মধ্যে সহযোগিতামূলক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হলে যুদ্ধের আশঙ্কা কমে যায়। মানবভ্রাতৃত্বের পাশাপাশি ইসলাম বিশ্বাসের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি স্থাপন করতে চায়।

অশান্তি সৃষ্টি করা ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিয়ো না, তাঁকে ভয় ও আশার সহিত ডাকবে। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৬) ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না।’ (সুরা-২ আল-বাকারা, আয়াত: ১১)

যারাই অশান্তি সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকার, প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এই কাজে সহযোগিতা করা সব সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। এই বিষয়ে আল্লাহ কোরআন মাজিদে দোয়া শিখিয়েছেন, ‘হে আমার রব! আপনি এই নগরকে নিরাপদ করুন; আর এর অধিবাসীদের ফলফলাদি ও উৎপাদিত সামগ্রী দ্বারা জীবিকা দান করুন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৬)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

  • যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

  • smusmangonee@gmail.com