গাজায় ইসরায়েলের হামলার ফলে আন্তর্জাতিক আইন হুমকির মুখে পড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সমর্থনের কারণে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে, তা নিয়ে লিখেছেন জোনাথন কুক
আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখতে এবং গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধের চেষ্টা করতে গিয়ে বিশ্বের দুটি সর্বোচ্চ আদালত ইসরায়েলের অদম্য শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) পৃথক দুটি ঘোষণায় গাজায় ইসরায়েলকে ব্যাকফুটে যেতে বাধ্য করা উচিত ছিল। আইসিজের (বিশ্ব আদালত নামে পরিচিত) বিচারকদের একটি প্যানেল দাবি করেছিল যে ইসরায়েল অবিলম্বে দক্ষিণ গাজার রাফায় চলমান আক্রমণ বন্ধ করুক। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল আক্রমণ ও নৃশংসতার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
গত ২৩ মে গাজা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া শরণার্থী পরিবারগুলোর একটি কথিত ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। বিমান হামলার ফলে তাঁবুতে ঘেরা একটি এলাকায় আগুন ধরে যায়, কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাঁদের মধ্যে অনেকে জীবন্ত পুড়ে যান। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বোমা হামলায় একটি শিশুর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মাথা ধরে আছেন এক ব্যক্তি । আরও শতাধিক, যাঁদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু, ভয়াবহ দগ্ধসহ গুরুতর জখম হয়েছেন। ইসরায়েল সেখানকার প্রায় সব চিকিৎসা-সুবিধা ধ্বংস করেছে, যা রাফায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করতে পারত। সেই সঙ্গে ইসরায়েল বেদনানাশক ওষুধের মতো মৌলিক চিকিৎসা সরবরাহ প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করেছে, যা ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণা কমাতে পারত।
এ ঘটনাগুলো ঠিক সেটারই ফলাফল যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েক মাস আগে সতর্ক করেছিলেন, রাফায় ইসরায়েলি হামলা একটি ‘রেড লাইন’ তৈরি করবে। কিন্তু ইসরায়েল এটি অতিক্রম করার মুহূর্তে মার্কিন ‘রেড লাইন’ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। বাইডেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাফার ছবিগুলোকে ‘হৃদয়-বিধ্বংসী’ বলে একটি বিবৃতি দিয়ে তাঁদের দায় সেরেছেন।
২৩ মের হামলার পরও এ ধরনের ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হয়েছিল। ইসরায়েলি বাহিনী দুই দিন পর একই এলাকায় আবার হামলা চালায়। তারা ২১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
‘দাঁতওয়ালা একটি প্রক্রিয়া’
জানুয়ারিতে ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য কার্যকরভাবে বিচার করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব আদালত রাফায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি করেছিলেন। এই আদালতে একটি বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
আইসিজে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যায় ঝুঁকিপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে ইসরায়েলের বিরত থাকা নিয়ে জোর দিয়ে বলেছিলেন। আদালত দৃঢ়ভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রাফায় চলমান হামলা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে। ইসরায়েল সম্ভবত আদালতকে অস্বীকার করার সাহস করেছিল। কারণ, এটি নিশ্চিত ছিল যে এতে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন ছিল।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে গাজার ক্রমাগত খারাপ হওয়া বিপর্যয় বর্ণনা করার জন্য তাঁদের নেতিবাচক শব্দ শেষ হয়ে গেছে। তাঁরা এটিকে ‘পৃথিবীতে থাকা নরক’ বলে অভিহিত করেছেন। আইসিজের রায়ের কয়েক দিন আগে, অবশেষে তাঁর সমধর্মী কোর্ট, আইসিসির চাকা ঘুরতে শুরু করে।
আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং তিন হামাস নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইবেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা গাজায় বহু মাস ধরে ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছেন এবং দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছেন।
আইসিসি ইসরায়েলের জন্য আইসিজের চেয়ে আরও ‘বিপজ্জনক’ বিচারব্যবস্থা হতে পারে। ইসরায়েল নিশ্চিতভাবে গাজায় একটি গণহত্যা করেছে কি না, সে বিষয়ে আইসিজের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কয়েক বছর লাগতে পারে। অন্যদিকে আইসিসি কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
ওয়াশিংটন আইসিসিকে তার পক্ষে আরেকটি প্রাতিষ্ঠানিক হাতিয়ার হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নৃশংসতা বা গণহত্যা করলেও কোনো অন্যায় করতে পারে না, এমনটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আইসিসির প্রসিকিউটর স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি খুব ভালোভাবে বোঝেন যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চায় আইসিসি এবং আইসিজে গাজা গণহত্যা নিয়ে নিশ্চুপ থাকুক।
এ ছাড়া বিশ্ব আদালতের সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তব প্রয়োগের ব্যবস্থা নেই। কারণ, ইসরায়েলকে জবাবদিহি করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেবে। অন্যদিকে আইসিসির একটি রায় ১২০টির বেশি রাষ্ট্রের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করবে, যারা রোম সংবিধি মেনে এটা অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট সেই দেশগুলোর মাটিতে পা রাখলে তাঁদের গ্রেপ্তার করার সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে বিশ্বের অনেক অংশ তাঁদের উভয়ের জন্য সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অনুমান করার কোনো কারণ নেই যে শুধু নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের মধ্যেই আইসিসির তদন্ত শেষ হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইসিসি আরও অনেক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমন জারি করতে পারেন। এ কারণেই একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আইসিসি হচ্ছে দাঁতওয়ালা একটি ব্যবস্থা।’
‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আদালত
এসব কারণে ইসরায়েল এই আদালতকে (আইসিসি) ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিযুক্ত করে এবং তার কর্মকর্তাদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। দেশটি আদালতের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ওয়াশিংটনও তার শক্তি প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত ছিল।
সিনেট কমিটির শুনানিতে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের রিপাবলিকান প্রস্তাবকে সমর্থন করবেন কি না জানতে চাইলে বাইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমরা একটি উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া খুঁজতে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে কাজ করতে চাই।’ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনাধীন ব্যবস্থাগুলোর যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা প্রসিকিউটর করিম খান এবং তদন্তের সঙ্গে জড়িত অন্যদের লক্ষ্যবস্তু করবে।
নথিপত্র অনুসারে আইসিসির বিরুদ্ধে মার্কিন ব্যবস্থা সম্ভবত ২০২০ সালে জো বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মডেলে হবে। দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল ও আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের জন্য যথাক্রমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের বিরুদ্ধেই তদন্ত করার হুমকি দিয়েছিল আইসিসি। এরপর আইসিসির বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ স্তরে আর্থিক দুর্নীতি ও অপব্যবহার’ করার অভিযোগ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ অভিযোগগুলোর কোনো প্রমাণ যদিও কখনোই দেওয়া হয়নি।
সেই সময়ে প্রধান প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাঁর এবং আইসিসির অন্য বিচারকদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়েছিলেন। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত আইসিসির হাত থেকে আমাদের বন্ধু ও মিত্রদের রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।’
আইসিসির বিরুদ্ধে ‘গোপন যুদ্ধ’
ইসরায়েলি ওয়েবসাইট ৯৭২ (নাইন সেভেন্টি টু) ও ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, দৃশ্যমানভাবে মার্কিন সমর্থনে ইসরায়েল এক দশকের বেশি সময় ধরে আইসিসির বিরুদ্ধে একটি গোপন যুদ্ধ চালাচ্ছে।
২০১৫ সালে ফিলিস্তিন আইসিসির চুক্তিবদ্ধ অংশীদার হওয়ার পরে এই আক্রমণ শুরু হয়। করিম খানের পূর্বসূরি বেনসুদা গাজায় বারবার ইসরায়েলি আক্রমণ ও পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন নিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করার পরে তা তীব্র হয়। বেনসুদা নিজেকে এবং তাঁর পরিবারকে হুমকির সম্মুখীন হতে দেখেছেন। ইসরায়েলের মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ইয়োসি কোহেন ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টায় জড়িত ছিলেন।
নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কোহেন তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনার আমাদের সাহায্য করা ও আমাদের দিকটা দেখা উচিত। আপনার এমন কোনো কিছু করা উচিত হবে না, যার ফলে আপনার বা আপনার পরিবারের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করতে হতে পারে।’
এ ছাড়া ইসরায়েল এই আদালতের ওপর একটি অত্যাধুনিক গুপ্তচরবৃত্তি চালায় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ই-মেইল ও নথি পড়ার জন্য আদালতের ডেটাবেজ হ্যাক করছে। আদালতের কর্মীদের তারা গুপ্তচরবৃত্তির কাজে নিয়োগের চেষ্টা করেছে। আইসিসিতে সন্দেহ আছে যে ইসরায়েল সফল হয়েছে। খানের আমলেও আইসিসির নজরদারি অব্যাহত ছিল এবং এ কারণেই ইসরায়েল জানত যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসছে।
ইসরায়েল যেহেতু অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে প্রবেশের তত্ত্বাবধান করে, তাই এটি আইসিসি কর্মকর্তাদের সরাসরি যুদ্ধাপরাধের তদন্তে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি আইনি ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার চেষ্টা করেছে।
গার্ডিয়ান ও ৯৭২ ওয়েবসাইট সূত্র অনুসারে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপ এসেছিল। করিম খান বলেছেন, আদালতের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ একটি ফৌজদারি অপরাধ। এরই মধ্যে মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটরদের একটি দল খানকে একটি হুমকিমূলক চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘ইসরায়েলকে টার্গেট করলে আমরা আপনাকে টার্গেট করব।’
খান নিজেই বলেছেন, তিনি ভয় দেখানোর প্রচারণার মুখোমুখি হয়েছেন। প্রশ্ন হলো, এটি খান ও আইসিসির বিচারকদের কতটা প্রভাবিত করছে? তাঁরা তাঁদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়া এবং সেটা ত্বরান্বিত করতে কতটা বাধার মুখে পড়বেন?
আইনি ফাঁদ
ভয় দেখানো সত্ত্বেও আইনি ফাঁদ দ্রুত ইসরায়েলের ঘাড়ে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে গাজায় ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ড এবং স্কুল ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে বেসামরিক অবকাঠামো প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসের বিষয়টি উপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি তাণ্ডবে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু নিহত, পঙ্গু ও এতিম হয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধের কারণে আরও কয়েক হাজার মানুষ ধীরে ধীরে অনাহারে মারা যাচ্ছেন।
এসব নৃশংসতা ও গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বিশ্ব আদালত ও যুদ্ধাপরাধ আদালতের ওপর নৈতিক চাপ বাড়ছে। আইসিজে ও আইসিসি উভয়ই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে সচেতন। এ কারণে প্রত্যেক আদালত ইসরায়েলি নৃশংসতা মোকাবিলায় খুব ধীরে ও সতর্কতার সঙ্গে এগিয়েছেন। সিএনএনের ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরের সঙ্গে একটি একক সাক্ষাত্কারে করিম খান বলেন, একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন রাজনীতিবিদ তাঁকে ইসরায়েলি নেতাদের অভিযুক্ত করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
২০২৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসি কর্তৃক জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে যুক্তরাষ্ট্র জোরালোভাবে সমর্থন করেছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনকে অবিরাম অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পক্ষাপাতদুস্ট ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা আর কত দিন এ প্রশ্নকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারবে?
অস্বীকার করার উপায় নেই, গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের দ্বারা বিশ্বব্যাপী সংঘটিত যুদ্ধ ও দখলদারত্বের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে মার্কিন ও ব্রিটিশ সৈন্যদের দ্বারা ইরাকে নৃশংস দখলদারত্ব ও আফগানিস্তানের আরও দীর্ঘতর এবং সমানভাবে রক্তাক্ত দখলদারত্ব নিয়ে অনেক আইনি প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন একাধিকবার আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে এবং নিজেদের সুবিধামতো আইনের ব্যাখ্যা দিয়েছে। এটা এখন স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র গণহত্যা বন্ধে নয়, ইসরায়েলকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আইন ব্যবহার করতে চায়।
ওয়াশিংটন আইসিসিকে তার পক্ষে আরেকটি প্রাতিষ্ঠানিক হাতিয়ার হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নৃশংসতা বা গণহত্যা করলেও কোনো অন্যায় করতে পারে না, এমনটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আইসিসির প্রসিকিউটর স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি খুব ভালোভাবে বোঝেন যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চায় আইসিসি এবং আইসিজে গাজা গণহত্যা নিয়ে নিশ্চুপ থাকুক। আমানপুরকে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আন্তর্জাতিক আইন সমানভাবে প্রয়োগ না করি, তবে মানুষ হিসেবে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।’
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাজার মানুষ। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন তোয়াক্কা না করা কিংবা আইনকে নিজেদের মতো ব্যবহার করার এ প্রক্রিয়া এখানেই থেমে থাকবে না। এমনভাবে চললে শেষ পর্যন্ত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া
জোনাথন কুক সাংবাদিক ও লেখক। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে তিনি একাধিক বই লিখেছেন।
সংক্ষিপ্তকরণ ও অনুবাদ মনজুরুল ইসলাম