ইসলামাবাদে পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ। ৪ অক্টোবর
ইসলামাবাদে পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ। ৪ অক্টোবর

রাজনীতি পাশ কাটিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না

আবারও ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের অনেক জায়গায় রাস্তায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মানুষজন রাস্তাঘাটে নেমেছেন, যোগাযোগ ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ সংবাদমাধ্যমে এসব নিয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

এই গল্পের দুটি পক্ষ আছে। এক পক্ষ মনে করে যে তারা জনগণের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে জিতেছে; আরেক পক্ষ মনে করে যে তারা হারতেই পারে না। কারণ, তারা সব সময় জিতে আসছে। দুই পক্ষ এক গজ–কচ্ছপের লড়াইয়ে মেতেছে। কেউ হার মানবে না।

তেহরিক–ই–ইনসাফ মানে পিটিআইয়ের তরুণেরা মনে করেন তাঁরা প্রথমবারের মতো জনগণের শক্তি আবিষ্কার করেছেন। মনে করেন যে রাস্তায় নেমে ইতিহাস তাঁরা পরিবর্তন করতে পারেন। নেতাদের চেয়ে এই তরুণ সমর্থকেরাই দলটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং সমৃদ্ধ করছেন। কিন্তু তাঁরা নেতৃত্ব ছাড়াই রাস্তায় নেমেছেন বলে মনে হচ্ছে। নিজেদের প্রতি তাঁদের বিশ্বাস আছে। আর তাঁরা যে নেতাকে অভিষিক্ত করেছেন, তাঁর জন্য দ্বিতীয় স্তরের নেতৃত্বের প্রয়োজন হয় না।

প্রত্যেক বিবাদী বিচারক জনগণকে উৎসাহিত করেন। জনগণের উচ্ছ্বাস সেই বিচারকদের অনুপ্রেরণা জোগায়। এটা কেবল পিটিআই সম্পর্কে নয়, বালুচদের সম্পর্কেও সত্য। কিন্তু পটপরিবর্তনের নায়কেরা তা যেন বুঝতে পারছেন না।

এই দলের দ্বিতীয় স্তরের নেতাদের মনে হয় বলিউডি সিনেমার নায়কের বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো। তাঁদের একমাত্র কাজ নায়কের সঙ্গে থেকে একটু আবেগপ্রবণ সংলাপ দেওয়া। তবে আসল কথা হলো, ইমরান খান এবং জনগণের মধ্যের স্থায়ী সম্পর্ক। রোববারের বিক্ষোভে মানুষ রাস্তায় নেমে এ কথাই স্পষ্ট করেছেন। অন্য প্রান্তে রয়েছে পিপলস পার্টি (পিপিপি) আর মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাদের কোনো তালমিল নেই। তারা জনগণ এবং আধুনিক যোগাযোগ কৌশলগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। ফলে তারা এখন জনগণের চেয়ে প্রতিষ্ঠানের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

এরা বহু দশক ধরে সংগ্রাম করে আরেকটি লড়াইয়ের দম আর নেই, এমনও হতে পারে। দীর্ঘ লড়াই যেকোনো দলকে দুর্বল করে দেয়। শুধু পিপিপির কথাই ভাবুন। দলটি থেকে জুলফিকার আলী ভুট্টো ও তাঁর কন্যাকে হারিয়েছে। এখন বিলাওয়াল ভুট্টো বা জারদারি অপেক্ষায় আছেন কে তাঁদের ‘রাজা’ বানিয়ে দেবে। তাঁদের কেউ বেনজিরের মতো জনতার নেতা হতে পারেননি। জনগণের কাছে যাওয়ার বদলে তাঁদের সাংবিধানিক আদালতে যে আস্থা, একে আর কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

অন্যদিকে পিওএমএল-এন রাজনীতির প্রতি উদাসীনতাকেও নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজধানী উজাড় হয়ে যাক, তারা নিজেদের শাসিত জায়গায় বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না। ইসলামাবাদ লকডাউন মুডে চলে যাওয়ায় পরও তাদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা গেল না। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হলো। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো পাত্তা নেই। তিনি অবশ্য পাকিস্তানি ক্রিকেটেরও দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন।

সরকার কি নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল নাকি তাদের দূরে রাখা হয়েছিল? অনেক গুজব আছে, আছে অনেক রকম ব্যাখ্যা। বদনাম হতে হতে তারা এখন ক্লান্ত। কেউ কেউ তো বলেন যে দলটি তার ওপর চাপানো মন্ত্রিসভা নিয়ে খুশি নয়।

অবশ্য দোষ রাজনৈতিক দলগুলোর একার নয়। যাঁরা ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে পারেন, তাঁরা এখন আর নিজেদের প্রয়াস লুকিয়ে রাখারও প্রয়োজন বোধ করেন না। এ কথা এখন যে কেউ বুঝতে পারেন। নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য তাঁদের এখন অনেক রকম কষ্ট করতে হয়। কিন্তু তাতেও মনে হয়, হয়ে উঠছে না। এখন সংসদে কোন দলের কত সংসদ সদস্য থাকবেন, তা ম্যানেজ করতে আদালতে বিচারকদের ম্যানেজ করতে হয়।

বিচারকেরাও একেবারে ফাঁকা ময়দান পাচ্ছেন না। অর্থনীতি এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কথা মনে রাখতে হবে। প্রত্যেক বিবাদী বিচারক জনগণকে উৎসাহিত করেন। জনগণের উচ্ছ্বাস সেই বিচারকদের অনুপ্রেরণা জোগায়। এটা কেবল পিটিআই সম্পর্কে নয়, বালুচদের সম্পর্কেও সত্য। কিন্তু পটপরিবর্তনের নায়কেরা তা যেন বুঝতে পারছেন না। সাংবিধানিক সংশোধনীর জন্য চাপ দিয়ে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন।

কিন্তু শেষ কথা একটাই, জনগণের মত ছাড়া কোনো পরিবর্তন টেকে না।

  •  আরিফা নূর সাংবাদিক

    ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত