অভিমত

ব্লিঙ্কেনের সফর কি উত্তেজনার পারদ কমাবে 

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এতে ছেদ দুই পক্ষেরই ক্ষতি। তা ছাড়া সারা বিশ্বের ভালোমন্দও তাদের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখাই বাঞ্ছনীয়।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের (ডানে) সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের করমর্দন। তাঁদের হাসিমুখ দেখে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ কিঞ্চিৎ হলেও কমতে শুরু করেছে
ছবি: রয়টার্স

দুই মাস আগেই ঠিক করা ছিল, চীন সফরে যাবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বেলুন-সংকট ও বিবিধ সমস্যার কারণে তা পেছাতে হয়েছিল। এই সফর আদৌ হবে কি না, এমন একটা আশঙ্কাও ছিল। এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন তাঁর চীনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে, যাকে উভয় পক্ষই অর্থপূর্ণ বলেছে। সফরের একদম শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এসে হাত মেলান ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে। তাঁদের দুজনের হাসিমুখ দেখে মনে হলো, এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ কিঞ্চিৎ হলেও কমতে শুরু করেছে।

ডিকাপ্লিং বনাম ডিরিস্কিং 

সাম্প্রতিক সময়ে কূটনৈতিক পরিভাষায় দুটি নতুন শব্দ বেশ শোনা যাচ্ছে—ডিকাপ্লিং ও ডিরিস্কিং। প্রথমটির অর্থ সম্পর্কচ্ছেদ, দ্বিতীয়টির অর্থ ঝুঁকি কমানো। চীন-মার্কিন সম্পর্ক প্রসঙ্গেই শব্দ দুটির বেশ নাড়াচাড়া হচ্ছে। চীনের সঙ্গে বিচ্ছেদের কথাটা প্রথম তুলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি চীনের ব্যাপারে কতটা কঠোর, তা প্রমাণের জন্য ওই ‘ডিকাপ্লিং’-এর কথা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলেছিলেন। ‘আমার জায়গায় জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে তিনি চীনের কাছে দেশ বন্ধক রাখবেন’—এমন বাগাড়ম্বরও করেছিলেন।

চীন বিরোধিতা যুক্তরাষ্ট্রে শুধু রাজনীতি নয়, এটি দেশটির সাম্প্রতিক নীতিও বটে। একটা সময় চীনকে কাছে টানতে কম চেষ্টা করেনি তারা। মস্কোর বিরুদ্ধে ঠান্ডা লড়াইয়ের অংশ হিসেবে চীনকে নিজের পাশে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এশিয়ার এই বৃহৎ শক্তিকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রেখেছে। কিন্তু একসময়ের দুর্বল ও দরিদ্র চীন যে এত দ্রুত গায়ে-গতরে এমন তেজি হয়ে উঠবে, ওয়াশিংটন ভাবতে পারেনি। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অর্থনীতি, সামরিক শক্তিতেও দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সমতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন চীন আর মিত্র নয়, শত্রু।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটা অনিবার্য উপাদান হচ্ছে, কাউকে না কাউকে তারা শত্রু বানিয়ে হাওয়ায় অস্ত্র ঘোরাবে। প্রতিরক্ষা খাতে যে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢালা হয়, তা জায়েজ করতে এটা প্রয়োজন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর অর্ধশতাব্দী ধরে যে ঠান্ডা লড়াই জিইয়ে ছিল, তাতে এক নম্বর শত্রু ছিল মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন কতটা হুমকি, তা বোঝাতে সামরিক শক্তিকে বহুগুণ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হতো। শত্রু যত ভয়ানক, অস্ত্র খাতে তত বাজেট বরাদ্দ। তাতে দেশের কারও কোনো লাভ হোক বা না হোক, ‘সামরিক শিল্প খাতের’ যে পোয়াবারো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সোভিয়েত ইউনিয়ন শেষ হলে নতুন শত্রু হয়ে যায় ইসলামি সন্ত্রাস। আফগানিস্তানের গুহায় বসে যারা সামরিক হামলার পরিকল্পনা আঁটে, তারা যে কতটা ভয়াবহ, সে কথা আমাদের অহোরাত্রি শুনতে হয়েছে। সেই আল-কায়েদা গেছে। এবার শূন্যস্থান পূরণ করতে নতুন শত্রুর আমদানি হয়েছে, এই শত্রু হচ্ছে চীন।

নয়া জুজু চীন

মার্কিন নাগরিকদের জুজুর ভয় দেখাতে একসময় ‘ওই যে রুশেরা আসছে’ বলে ভয় দেখানো হতো। এখন বলা হচ্ছে ‘চীনারা আসছে’। গত বছর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং যুক্তরাজ্যের এমআই৫ এক যৌথ প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বের এক নম্বর নিরাপত্তা হুমকি হচ্ছে চীন। শুধু সামরিক নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চীন দীর্ঘমেয়াদি হুমকি। চার তারকা এক মার্কিন জেনারেল তো বলেই বসলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, তাতে সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্র যদি হয় রুগ্‌ণ এক বৃদ্ধ, তো চীন অতি স্বাস্থ্যবান এক তরুণ, সে টগবগ করে ছুটছে। এই তরুণকে ঠেকাতে প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাতে নতুন নীতিমালা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, সর্বোপরি অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে নতুন উদ্যোগ। সে পথে না গিয়ে ওয়াশিংটন সহজ পথ বেছে নিয়েছে, আর তা হচ্ছে অস্ত্র প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি একের পর এক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা।

এ কথা ঠিক, ট্রাম্পের মতো সম্পর্কচ্ছেদের কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেন কখনো বলেননি। তবে চীনকে ঠেকাতে তাঁর অবস্থান কম কঠোর নয়। দুই দেশের মধ্যে অবনতিশীল সম্পর্কের প্রধান একটি কারণ তাইওয়ান। দ্বীপটিকে চীন নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রও নীতিগতভাবে তা মেনে গত অর্ধশতক ধরে ‘এক চীন’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। পাশাপাশি তাইওয়ানকে কীভাবে চীন থেকে আলাদা রাখা যায়, সেই চেষ্টারও কমতি নেই। এই দুমুখো নীতির একটি গালভরা নামও রয়েছে, ‘ক্রিয়েটিভ অ্যাম্বিগুইটি’ বা সৃজনশীল দ্ব্যর্থতা। এই দ্বৈতনীতির অংশ হিসেবেই তাইওয়ানের প্রতি সামরিক সমর্থনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফুটে কিছু বলেনি। বাইডেনই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি সেই ধোঁয়াশা কাটিয়ে বলে বসলেন, যুদ্ধ বাধলে তাঁরা তাইওয়ানের পাশে থাকবেন।

যুদ্ধ বাধতে পারে, এই আশঙ্কা মাথায় রেখে চীনের ওপর সামরিক চাপ বাড়িয়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা দেশটির আশপাশে নতুন নতুন সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে চীনকে ঘিরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। চীনকে ঠেকানোর উদ্দেশ্যেই তারা জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে নতুন সামরিক জোট গড়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নৌবহরের উপস্থিতিও বহুগুণ বেড়ে গেছে। নৌশক্তির বিচারে চীন এই মুহূর্তে পৃথিবীর এক নম্বর দেশ। ফলে এক নম্বর আর দুই নম্বর শক্তির মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের বিপদ বাধা শুধু সময়ের ব্যাপার।

শুধু সামরিক নয়, প্রযুক্তিগতভাবে চীনকে দাবিয়ে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বড় লক্ষ্য। চীন যাতে সর্বাধুনিক মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য বাইডেন প্রশাসন ও মার্কিন কংগ্রেস একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। জাপান ও একাধিক ইউরোপীয় দেশের ওপরও যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে, যাতে তারা চীনে নয়া প্রযুক্তিভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি না করে।

চীন যে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু, সে কথা প্রমাণের চেষ্টারও অন্ত নেই। মাস দুয়েক আগে চীন থেকে আসা একটি ‘বেলুন’ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল। দাবি করা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নজরদারির জন্য এটি পাঠানো হয়েছে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস থেকে হুংকার উঠল, বাইডেনের অযোগ্যতায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিপন্ন। মার্কিন সিনেটে সর্বসম্মতভাবে কঠোর এক প্রস্তাবও পাস হয়ে গেল। বাইডেন প্রশাসন দুর্বল নয়, সেটা প্রমাণ করতে সেই চীনা বেলুন ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আটলান্টিকে ডোবানো হলো। অথচ সব পক্ষই মানে, আকাশে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এখন এত উপগ্রহ রয়েছে যে বেলুন পাঠিয়ে নজরদারির প্রয়োজন নেই।

প্রয়োজনটা সামরিক নয়, রাজনৈতিক। অতএব বেলুন ফুটাতে কামান দাগা হলো।

চীনকে ঠেকাতে যে ‘সংযমন, বেষ্টন ও দমন’ নীতি যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করছে, তা আমাদের পঞ্চাশের দশকের ঠান্ডা যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। কন্টেনমেন্ট বা সংযমন নীতির কথা একসময় মস্কোকে মাথায় রেখেই বলা হতো। এখন বলা হচ্ছে চীনকে নিয়ে।

নির্বাচন সামনে রেখে চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখি বাইডেনের জন্য ভালো হওয়ার কথা নয়। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বেইজিংয়ে এসে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে হাতে হাত মেলাচ্ছেন, রিপাবলিকানদের কেউ কেউ তাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ শামিল বলছেন। একজন মার্কিন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই পক্ষ একে অন্যের সঙ্গে কথা বলাটাও মস্ত বড় সাহসের ব্যাপার। 

‘সম্পর্কচ্ছেদ’ সহজ নয়

চীনকে ঠেকাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ‘সম্পর্কচ্ছেদের’ যে কথা বলা হচ্ছে, তা মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর ভাষায় মিথ বা কল্পকাহিনি মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে এতটা জড়িয়ে গেছে যে তাতে কোনো ছেদ পড়লে ভালোর চেয়ে মন্দই হবে। কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে চীন থেকে পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে চতুর্দিকে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। অন্য কথায় চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিপদগ্রস্ত হলে এসব দেশের অর্থনীতিই বিপদে পড়ে।

ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকায় সিঙ্গাপুরের সাবেক বিদেশ সচিব বিলাহারি কৌশিকান মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বায়নের কারণে চীন ও পশ্চিমা দেশগুলো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। নিজেদের ক্ষতি না করে এই সম্পর্কচ্ছেদ এখন আর সম্ভব নয়। এর একটা ভালো উদাহরণ ‘চিপ’ নির্মাণ শিল্প। কম্পিউটার থেকে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র—সব জায়গাতেই এখন চাই চিপ। যুক্তরাষ্ট্র চায়, চীন যেন পশ্চিমা প্রযুক্তিনির্ভর চিপ আমদানি করতে না পারে। অথচ বাস্তবতা হলো, এসব পশ্চিমা চিপের ৪০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় চীনে। সেখানে রপ্তানি করা না গেলে এই চিপ ব্যবহার করবে কে? ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে উদ্ধৃত করে কৌশিকান বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে অনেক দেশই রপ্তানির বিশেষ ছাড়পত্র সংগ্রহ করে থাকে। গত বছর যতগুলো প্রতিষ্ঠান এই ছাড়পত্রের আবেদন করেছে, তাদের অধিকাংশই তা সংগ্রহে সক্ষম হয়।

‘কৌশলগত’ আরেক বিপদও রয়েছে। সংযমন নীতির একটা প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, চীনের বৈশ্বিক প্রাধান্য হ্রাস করা। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় জেমস ক্রাবট্রি মনে করিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ চীনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলে উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকতে পারে।

সমঝোতার লক্ষণ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র একে অন্যের ওপর কমবেশি নির্ভরশীল—এ কথা মুখে না বললেও এই বাস্তবতা দুই পক্ষই জানে। চীন কর্তৃত্ববাদী দেশ। বাণিজ্যিক লড়াইয়ের ফলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে তা শক্ত হাতে সামলানোর ক্ষমতা সি চিন পিংয়ের রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা ভিন্ন। করোনা সংক্রমণকালে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সব দোষ পড়েছিল বাইডেন প্রশাসনের ওপর। এই মুহূর্তে বাইডেন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো কারণে তাঁর এই কাজে বিঘ্ন ঘটুক, তিনি তা চাইবেন না। সম্ভবত এ কারণেই চীনের সঙ্গে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের চীন সফর সেই উদ্যোগেরই একটি অংশ।

অবশ্য সর্বশেষ আবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে স্বৈরশাসক বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফর শেষ হতে না হতে এমন মন্তব্য আবার কিছুটা চিন্তা বৃদ্ধি করে বৈকি। তবে তিনি যা-ই বলুন, দুই দেশই ব্লিঙ্কেনের সফরকে অর্থবহ বলে মনে করছে।

দুই পক্ষই বলেছে, চীন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা অর্থবহ হয়েছে। বড় কোনো সাফল্য হয়তো আসেনি। কিন্তু দুই পক্ষ যে আবার কথা বলা শুরু করেছে, সেটা সুলক্ষণ। শঙ্কা ছিল, প্রেসিডেন্ট সি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন কি না। সাক্ষাতের আগমুহূর্তেও এ নিয়ে চীনের কর্মকর্তারা মুখ খোলেননি। অবশেষে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তা ‘গঠনমূলক’ ও ‘অর্থবহ’ হয়েছে বলা হচ্ছে। 

প্রেসিডেন্ট সি এমন কথাও বলেছেন, ‘আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ওপর সারা বিশ্বের ভালো-মন্দ নির্ভর করছে। এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা তাই দুই দেশেরই ঐতিহাসিক দায়িত্ব। তাঁর কথায় সায় দিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘আমরা “ডিকাপ্লিং” চাই না, আমরা চাই “ডিরিস্কিং”।

নির্বাচন সামনে রেখে চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখি বাইডেনের জন্য ভালো হওয়ার কথা নয়। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বেইজিংয়ে এসে সি চিন পিংয়ের সঙ্গে হাতে হাত মেলাচ্ছেন, রিপাবলিকানদের কেউ কেউ তাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ শামিল বলছেন। একজন মার্কিন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই পক্ষ একে অন্যের সঙ্গে কথা বলাটাও মস্ত বড় সাহসের ব্যাপার। 

রাজনীতি উপেক্ষা করে দুই পক্ষ যে কথা বলার মতো সাহস দেখাতে পেরেছে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। দুই মাতাল হাতি লড়াইয়ে নামলে উলুখাগড়ার বিপদ বাড়ে। আমরা সেই উলুখাগড়ার দলে। এই দুই দেশের সামনে অনেক বড় কাজ বাকি, যার একটি ইউক্রেন যুদ্ধ থামানো। যেকোনো যাত্রা শুরু হয় এক কদম পা ফেলে। এই আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশ সেই প্রথম কদম ফেলল, এমন একটি ক্ষীণ আশা আমাদের অনেকের মনেই জাগছে।

  • হাসান ফেরদৌস লেখক ও প্রাবন্ধিক