ধর্ম

ফিতরা কাকে কী পরিমাণ দেবেন

রমজান, রোজা ও ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়াজিব ইবাদত সদকাতুল ফিতর। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে দিতে হয়। যিনি ঈদের দিন সকালবেলায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। একে অন্যের ফিতরা আদায় করতে পারেন।

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর প্রদান করতাম ‘এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম প্রায়) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪) তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু, যেমন: এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ।’ (বুখারি)

যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাঁদের জন্য ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল ইবাদত। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ছোট–বড়, মুক্ত ক্রীতদাস সকলের পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য, অর্থাৎ এক সা পনির বা এক সা যব বা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ।

আমরা এভাবেই আদায় করছিলাম। একবার হজরত মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) হজ বা ওমরাহ উপলক্ষে মদিনায় এলেন, তিনি জনগণের উদ্দেশে মিম্বরে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি আলোচনা করলেন সে বিষয়, যে বিষয়ে মানুষ প্রশ্ন করেছে। তিনি বললেন, ‘আমি দেখছি শামের দুই মুদ (নিসফ সা বা পৌনে দুই কেজি) আটা সমান হয় (মূল্যমান হিসেবে) এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খেজুরের। অতঃপর মানুষ (সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়িগণ) এই মত গ্রহণ করলেন। (মুসলিম)

আটা বা গমও এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) দেওয়া উত্তম। হজরত হাসান বসরী (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত আলী (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ যখন তোমাদের প্রাচুর্য দিয়েছেন তোমরাও উদার হও, গমও এক সা দাও।’ (নাসায়ি)

যেসব খাদ্যবস্তু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সহজে সংরক্ষণযোগ্য, সহজে বিনিময়যোগ্য ও বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকে; সেসব খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। মুজতাহিদ ফকিহগণ বলেন যেখানে যা প্রধান খাদ্য, তা দ্বারা ফিতরা আদায় করা শ্রেয়।

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)–এর মতে অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম। ইমাম শাফিঈ (রহ.)–এর মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা উত্তম। অন্য সব ইমামের মতও অনুরূপ।

ফিতরা তাঁদের দেওয়া যায়, জাকাত যে আটটি খাতে প্রদান করা যায়। কোরআন করিমের বর্ণনা, ‘মূলত সদাকাত হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলাম সুরক্ষার জন্য), বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথসন্তানদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৬০)

নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য, পণ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও ফিতরা আদায় করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু, যেমন পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার ইত্যাদি কিনেও দেওয়া যায়। পিতা-মাতা ও ঊর্ধ্বতন এবং ছেলেমেয়ে ও অধস্তন এবং স্ত্রীকে ওয়াজিব ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com