প্রিয় মৃত্তিকাতে শুরু জীবন-সভ্যতা; মৃত্তিকাতেই মিশে যাওয়া। যেখানে মাটি নেই, সেখানে জীবন নেই, সভ্যতা নেই, জীবনের কোলাহল নেই। মৃত্তিকা স্রষ্টার এক অমূল্য নিয়ামত। আজ বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঘোষিত ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২’–এর প্রধান প্রতিপাদ্য ‘মাটি: যেখানে খাদ্য উৎপাদন শুরু’। সূর্যের অসীম শক্তি আবদ্ধ করে সব প্রাণীকুলের খাদ্য শৃঙ্খলের শুরুটা এই মাটি থেকেই। ২০১৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ’ হিসেবে পালন করার পর থেকে আগামীর খাদ্যনিরাপত্তায় মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ পালিত হচ্ছে। এই মহান দিবসে প্রিয় মৃত্তিকার সুখ-দুঃখ, ঝুঁকি-সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন দেশে সভা-সেমিনার হচ্ছে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০১৫ সাল থেকে এই দিনটিতে আগামীর খাদ্যনিরাপত্তায় দক্ষ মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার কথা আলোচিত হচ্ছে। জনসংখ্যা অধ্যুষিত স্বল্প আয়তনের বাংলাদেশের জন্য দিবসটি অনেক গুরুত্ব বহন করে।
গাঙ্গেয় বদ্বীপের সোনা ফলা মাটি নিয়ে আমরা কবিতা লিখি, গীত রচনা করি, বক্তৃতা-বিবৃতিতে ঢেলে দিই মৃত্তিকাপ্রেমের মিছে আবেগ। অথচ বাস্তবে আমরা তোয়াক্কা করি না মৃত্তিকার স্বাস্থ্য, শুনতে চাই না মৃত্তিকার নীরব কান্না-অনুযোগ। যে মৃত্তিকার গর্ভে অঙ্কুরিত হয় জীবনের কুঁড়ি, সেই মৃত্তিকার দুঃখ-সুখের খবর রাখে না কেউ। মৃত্তিকা সব সয়ে যাওয়া এক দুঃখিনী মা; সীমাহীন চাপে ক্লিষ্ট এক বঙ্গজননী। ভূরাজনৈতিক নৈরাজ্য, দুর্যোগ-মহামারি, প্রতিহিংসার অনল, শিল্পায়নের পীড়ন আর পুঁজিবাদের তাণ্ডব—সবই সইতে হয় সংশপ্তক মাটিকে। আমরা উপলব্ধি করি না মাটিরও জীবন আছে; মাটি ধারণ করে, লালন করে জীবন ও সভ্যতা।
বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসে গত কয় বছর রাজধানীসহ জেলায় জেলায় র্যালি হচ্ছে, সভা-সেমিনার হচ্ছে, পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে ক্রোড়পত্র। এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য, মৃত্তিকা ব্যবহারে গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও মানুষের আচরণের পরিবর্তন। যদিও এসব আনুষ্ঠানিকতা আমাদের আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না। মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের ভাবনা অনেকটা দায়সারা গোছের। মাটির প্রতি সভ্যতা খুবই নিষ্ঠুর ও অবিবেচক। যে মাটি খাদ্য উৎপাদনের প্রধান আধার, শিল্পের কাঁচামালের প্রধান উৎস, ভৌত-রাসায়নিক ও অণু জৈবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার জটিল সিস্টেম, সেই মাটি নিয়ে সভ্য সমাজ চরম নির্লিপ্ত। সভ্যতার এই আচরণে মাটি হাসে, মাটি কাঁদে—অভিমানে-ক্রোধে কখনো বজ্রকঠিন হয়। আমরা শুনি না মাটির কান্না। মাটিকে পীড়ন করি, দহন করি, ব্যবচ্ছেদ করি অধিক ফসলের আশায়; মণি-মুক্তা-খনিজের আশায়। মাটিকে রঞ্জিত করি, দূষিত করি, কলুষিত করি সভ্যতার বর্জ্য আর প্রযুক্তির রং দিয়ে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে ঝাঁঝরা করে দিই মাটির বুক, ভঙ্গুর করে দিই মাটির ভৌত কাঠামো।
প্রিয় মৃত্তিকার কান্না আমাদের স্পর্শ করে না। নানা আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার নানা অঙ্গীকার উচ্চারিত হলেও দৃশ্যমান হয় না মৃত্তিকা সম্পদ রক্ষার কোনো কার্যকর আইন, নীতি ও কৌশল। মহান জাতীয় সংসদে নানা রঙের আইন-অধ্যাদেশ দ্রুততার সঙ্গে পাস হলেও কৃষকের কলিজার টুকরা তিন ফসলি জমি রক্ষার ভূমি ব্যবহার আইনটি গত ২০ বছর ধরে ‘খসড়া আইন’ হিসেবেই ফাইলে বন্দী থেকে যায়।
আমাদের আবাদি জমি কমে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ধোয়া তুলে, সমৃদ্ধ আগামীর কথা বলে তিন ফসলি কৃষিজমি চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছে শিল্পপতির উদরে। ক্রমবর্ধমান বঙ্গসন্তানের অন্ন জোগাতে মাটি আজ ক্লান্ত। নিখুঁত ও দক্ষ নীতি-কৌশল নিয়ে না এগোলে চরম সংকটে পড়তে পারে মৃত্তিকাকেন্দ্রিক বাংলার কৃষি অর্থনীতি, জীবন ও জীবিকায়ন।
কেউ খোঁজ রাখে না প্রযুক্তি আর উন্নয়নের বাংলাদেশে কেমন আছে প্রিয় মৃত্তিকা। বহুজাতিক কোম্পানির বর্ণিল মোড়কের আড়ালে বাণিজ্যিক পরিকল্পনার ‘স্লো পয়জনিং’–এ প্রতিনিয়ত নীল হয়ে যায় প্রিয় ধরিত্রী। প্রিয় সুশীল, মৃত্তিকার ডায়াগনস্টিক প্রতিবেদন দেখেছেন কখনো? প্রিয় ধরিত্রীর হার্ট, কিডনি কেমন আছে, সুগার লেভেল কেমন জানতে চেয়েছেন? ধমনিতে কী কোথায় বিপজ্জনক ব্লক আছে? মৃত্তিকার অম্লত্ব, অণুজীব, লবণাক্ততার কী অবস্থা? মৃত্তিকাতে ভারী ধাতু, কীটনাশক, নিউক্লিয়ার বর্জ্যের মাত্রা কি সহনীয়? মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের সম্মানিত বিজ্ঞানীরা সারা বাংলার আনাচকানাচে ঘুরে মৃত্তিকার নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করছেন। মানচিত্রে উপস্থাপিত মৃত্তিকাস্থিত জৈব পদার্থ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভারী ধাতু, লবণাক্ততা, অম্লত্ব, ক্ষয় ও অন্যান্য অণুপুষ্টি উপাদানের ক্রম ক্ষয়িষ্ণু ও নৈরাশ্যকর চিত্র দেখে আঁতকে ওঠে মন। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব পায় না এসব প্রতিবেদন ও প্রেসক্রিপশন।
বাংলাদেশে বর্তমানে ফসলি জমি প্রায় ৭ দশমিক ২৯ মিলিয়ন হেক্টর। পৃথিবীর মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১০ শতাংশ জায়গায় ফসল আবাদ হলেও বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার দক্ষতা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। নিবিড় চাষাবাদের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে একেবারে প্রথম সারিতে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও নগরায়ণের জন্য মাটির ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। আমাদের আবাদি জমি কমে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ধোয়া তুলে, সমৃদ্ধ আগামীর কথা বলে তিন ফসলি কৃষিজমি চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছে শিল্পপতির উদরে। ক্রমবর্ধমান বঙ্গসন্তানের অন্ন জোগাতে মাটি আজ ক্লান্ত। নিখুঁত ও দক্ষ নীতি-কৌশল নিয়ে না এগোলে চরম সংকটে পড়তে পারে মৃত্তিকাকেন্দ্রিক বাংলার কৃষি অর্থনীতি, জীবন ও জীবিকায়ন।
কাল একই কক্ষপথে চলে না চিরদিন। কালের কক্ষপথ কখনো মিলে যায় মহাকালে—প্রতিশোধের আগুন আছড়ে পড়ে বিবেকহীন সম্প্রদায় ও সভ্যতার ওপর, তখন আর শোধরানোর সময় থাকে না। দেখুন না উন্নয়ন পুঁজিবাদের বিলাসিতার কার্বন কেমন করে পুড়িয়ে মারতে চাইছে পুরো সভ্যতাকেই। পালানোর পথ আজ রুদ্ধ। জলবায়ু সম্মেলন হয়ে গেল মিসরের শারম আল শেখ–এ গত মাসে। ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া হয়ে নানা পদক্ষেপের অঙ্গীকার করছে উন্নত বিশ্ব।
উন্নয়নের মহরতে মানুষ যখন লাগামহীন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার আর বন উজাড় শুরু করল, তখন পরিবেশবাদী, গবেষকেরা সতর্ক করেছিলেন এর পরিণাম নিয়ে। আজ বায়ুমণ্ডল আর সইতে পারছে না কার্বনের বোঝা। বায়ুমণ্ডলে কার্বনের মাত্রা যখন সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া শুরু করল, তখন শুরু হলো প্রলয়। আজ ভোগবাদী পৃথিবীর ঘুম হারাম বাঁচার আকুতি নিয়ে। আজ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল নিয়ে শুরু হয়েছে নানা কর্মযজ্ঞ। ভোগবাদী বিশ্বের নিরবচ্ছিন্ন সমৃদ্ধির স্বপ্ন আজ বিপন্ন। কী নিখুঁত প্রতিশোধ প্রকৃতির, তাই না?
মৃত্তিকা যদি প্রতিশোধ নিতে চায়, পালাবেন কোথায় প্রিয় সুশীল? মাটির প্রাণ হরণ করলে মাটিও বিদ্রোহী হবে বাঁচার জন্য। মাটির প্রাণ কী জানেন? মাটির প্রাণও সেই কার্বন। পুঁজিবাদী পৃথিবীর ঘুম হারাম করা ক্রমবর্ধমান কার্বন ডাই–অক্সাইড শুষে নেওয়ার প্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে মৃত্তিকা, কৃষি ও বনায়নের। মৃত্তিকাতে কার্বনের পরিমাণ বাড়ানোর মূল্যমান ‘কার্বন ক্রেডিট’ এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন পরিভাষা। বৈশ্বিক কার্বন ক্রেডিট মার্কেটের ভলিউম এখন বছরে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলার মৃত্তিকার ‘কার্বন ক্রেডিট ভ্যালু’ কত, কেউ কি হিসাব করেছেন? নিবিড় চাষাবাদের ফলে মৃত্তিকা কার্বন হ্রাস পাচ্ছে অব্যাহতভাবে। জৈব পদার্থের আশঙ্কাজনক মাত্রাতেও থেমে নেই নিষ্ঠুর পীড়ন। পুষ্টি ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ‘টপ সয়েল’ আমাদের অমূল্য সম্পদ। নগরায়ণের আগ্রাসনে এই অমূল্য টপ সয়েল চলে যায় ইটভাটার চিতানলে। দরিদ্র কৃষককে দুটো কাঁচা পয়সার প্রলোভন দেখিয়ে ইটভাটার মালিক বস্ত্রহরণ করে ফসলি জমির। ইটভাটার দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় পুষ্টিসমৃদ্ধ উর্বর টপ সয়েল। নির্জীব মাটি অভিশাপ দিয়ে যায় সভ্যতাকে, মানুষকে, মানুষের নির্লিপ্ততাকে। মৃত্তিকা কার্বন সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এখনই।
মৃত্তিকার ক্লান্ত ললাটে যাঁদের নিবিড় স্পর্শ মৃত্তিকাকে কেরে তোলে আরও উর্বর, আরও সুফলা, তাঁরা মৃত্তিকার ভাষা বোঝা মৃত্তিকাবিজ্ঞানী মহান কৃষক। কৃষকের হাত এক অত্যাধুনিক সেন্সর, তাঁর তীক্ষ্ণ দুই চোখ হাই মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। মাটি ছুঁয়ে, মাটি দেখে কৃষক বলে দিতে পারেন মাটির স্বাস্থ্যের কী অবস্থা। মাটির ডাক্তার, মাটির সেবিকা, মাটির বান্ধব এই কৃষক। সবাই যেখানে পীড়ন করে, ধ্বংস করে, কলুষিত করে প্রিয় মৃত্তিকাকে, সেখানে বাংলার কৃষক তাঁর আদর-সোহাগে বাঁচিয়ে তুলে ক্ষয়িষ্ণু মাটিকে। এই মাটিই তাঁদের মা-জননী, মাটিই তাঁদের স্বপ্ন-সাধ। ছোট্ট একটুকরো জমি থেকে অধিক ফসল ফলাতে তাঁরা ঢেলে দেন জীবনের নির্যাস, শরীরের নোনাজল, ভক্তি আর ভালোবাসা। অথচ মৃত্তিকার মতো তাঁরাও আজ বড্ড অবহেলিত, রুগ্ণ, ক্লান্ত, অবসন্ন। যান্ত্রিক সভ্যতা, পুঁজিবাদের মরীচিকা আর উন্নয়নের শকট মৃত্তিকার প্রতি যেমন নির্দয়, তেমনই নিষ্ঠুর সংশপ্তক কৃষকের প্রতি। মৃত্তিকাসেবী বাংলার কৃষক এখন জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এক উদ্ভ্রান্ত ফেরিওয়ালা। তাঁরা মৃত্তিকার কোলে জীবনভর থাকলে চাইলেও থাকতে দেয় না পুঁজিবাদের তুমুল ঝড়। কৃষি–বাণিজ্যে ক্রমাগত বঞ্চনা সইতে সইতে ‘ল্যান্ড হিরো’ বাংলার কৃষক তাঁর পিতা-পিতামহের পেশা ছেড়ে হয়ে যায় নির্মাণশ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মী, ভ্যানচালক অথবা রেলস্টেশনের কুলি-মজুর। শুধু মৃত্তিকা দিবস পালন করলে হবে না, আগামীর দক্ষ মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে ফসলের মাঠে রাখতেই হবে অভিজ্ঞ মৃত্তিকা ব্যবস্থাপক বাংলার কৃষককে।
‘ল্যান্ড কেয়ার অস্ট্রেলিয়া’ মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি শক্তিশালী অলাভজনক সংগঠন। সরকার, করপোরেট পার্টনার, কৃষক, পেশাজীবী, ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সারা বছর। দান-অনুদানের অর্থের সঙ্গে দেশপ্রেম মিশিয়ে সব শ্রেণিপেশার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ছে মৃত্তিকাকে বাঁচানোর জন্য। ‘গ্লোবাল ল্যান্ড কেয়ার’, ল্যান্ড কেয়ার ইউরোপসহ অনেক সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে মৃত্তিকা, পানি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য। আমাদের মৃত্তিকা নিয়ে, কৃষি নিয়ে, পানি নিয়ে কোনো সামাজিক আন্দোলন নেই, প্রেশার গ্রুপ নেই, পলিসি ফোরাম নেই। সময় এসেছে মৃত্তিকার জন্য একযোগে কাজ করার।
ক্লাইমেটের বারোটা বাজিয়ে এখন ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’ নিয়ে এখন সরব হয়েছে বিশ্বসভ্যতা। কার্বনের ঝাঁকিতে গ্লোবাল সিস্টেম এখন এলোমেলো, হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার ছিন্ন–বিচ্ছিন্ন। প্রিয় সুশীল, মৃত্তিকার বারোটা বাজার আগেই ‘সয়েল জাস্টিস’ নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দিবস পালনের দায়সারা আনুষ্ঠানিকতা আর কেতাবি অঙ্গীকার থেকে বেরিয়ে সরকার, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, মিডিয়া কর্মী, ব্যবসায়ী, কৃষক, ছাত্র-ছাত্রী—সবাইকে কার্যকর অবদান রাখতে হবে ‘সয়েল কনজারভেশন ব্রিগেডে’। মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার প্রধান কারিগর কৃষকের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, তাঁদের মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। শক্ত আইন প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে অমূল্য মৃত্তিকা সম্পদ রক্ষায়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো একটা তারুণ্যের গণজাগরণ আমাদের প্রিয় মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য খুব প্রয়োজন। মনে রাখবেন, মৃত্তিকার ক্রোধানলে পড়লে জালিম, মজলুম, আর সুবিধাবাদী দর্শক কেউই বাঁচতে পারবেন না।
তাই আমাদের চিরন্তন স্লোগান হোক ‘মাটি বাঁচাও, কৃষি বাঁচাও, বাঁচাও সোনার দেশ’। আসুন, আমরা প্রিয় মৃত্তিকা ছুঁয়ে গেয়ে উঠি ‘মোরা মৃত্তিকা ভালোবাসি, মাটির আঁচলে সোনাঝরা রোদে ফসলের সঙ্গে হাসি’।
রওশন জামাল পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া
roushonjamal@yahoo.com