স্বাস্থ্য গঠন ও সুরক্ষায় ব্যক্তি এবং পরিবারের পাশাপাশি সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে স্বাস্থ্য গঠন বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব যেমন তলানিতে, তেমনি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সবার শেষে। এ সবকিছুর পেছনে রয়েছে জীবনবোধ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব। এসব কারণে কীভাবে জনস্বাস্থ্য অরক্ষিত এবং স্বাস্থ্যসেবা ‘শিকলবন্দী’ হয়ে পড়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ আব্দুল হামিদ
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় নানা অনাচারে জনস্বাস্থ্য পুরোপুরি অরক্ষিত। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিয়তই নিজের এবং অন্যের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছি। অন্য কথায়, আমরা সবাই নিজের এবং অন্যের স্বাস্থ্যের ‘হন্তারক’।
আমাদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে স্বাস্থ্য গঠন বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব যেমন তলানিতে, তেমনি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সবার শেষে। তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডেই স্বাস্থ্যকে ভুক্তভোগী হতে দেখা যায়। এ সবকিছুর পেছনে রয়েছে জীবনবোধ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব।
‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’—এ কথা আমরা যেমন জাতিগতভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছি, তেমনি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি—কে স্বাস্থ্য গঠন বা সুরক্ষা করে? কোথায় স্বাস্থ্য গঠন হয়? কীভাবে স্বাস্থ্য গঠন হয়?
আমরা আরও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল আমাদের স্বাস্থ্য গঠন করে না, বরং তা স্বাস্থ্য পুনর্গঠন এবং মেরামতে সহযোগিতা করে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল আসলে মোটর গ্যারেজের মতো কাজ করে। মোটর গ্যারেজে যেমন অচল, ভাঙা কিংবা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি মেরামতের জন্য নেওয়া হয়, তেমনি আমরা অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনায় আহত হলে আমাদের স্বাস্থ্য পুনর্গঠন এবং মেরামতের জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে যেতে হয় বা নেওয়া হয়।
মোটর গ্যারেজে নিশ্চয় আমরা কেউ ভালো গাড়ি মেরামতের জন্য নিয়ে যাই না, বরং নিয়মিত পরিচর্যা অর্থাৎ প্রতিরোধমূলক সেবা গ্রহণ করে গাড়িকে গ্যারেজে যেন কম নিতে হয়, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকি। কিন্তু প্রহসনের বিষয় হলো, স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের অসচেতনতা, অবহেলা এবং খামখেয়ালিপনার ফলে স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করে হাসপাতাল নামক গ্যারেজে ভর্তি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছি।
স্বাস্থ্য গঠন ও সুরক্ষায় ব্যক্তি এবং পরিবারের পাশাপাশি সমাজ এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা আমরা দিনের ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহের ৭ দিন এবং বছরের ৩৬৫ দিন বাড়ি, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বাজার, বিনোদনকেন্দ্রসহ যেসব পরিমণ্ডলে অবস্থান করি, সেসব পরিমণ্ডল স্বাস্থ্যকর না হলে আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর নিজ বাড়ি ছাড়া সব পরিমণ্ডল স্বাস্থ্যকর রাখার দায়িত্ব সমাজ এবং রাষ্ট্রের। তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রের সব নীতি ও কর্মকাণ্ডে স্বাস্থ্যকে গুরুত্বের তালিকায় এক নম্বর রাখতে হয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রই বিরাজমান।
এসব দৃশ্যমান ‘শিকলের’ পাশাপাশি অযৌক্তিক অডিট আপত্তিসহ অসংখ্য অদৃশ্য ‘শিকল’ রয়েছে, যা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। সব ধরনের শিকল থেকে সরকারি হাসপাতালগুলোকে মুক্ত করা অপরিহার্য। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি পারবেন এসব শিকল ভেঙে সরকারি হাসপাতালের স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে?
স্বাস্থ্য গঠন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রধান উপাদান হলো নিয়মিতভাবে পরিমাণমাফিক ভেজালহীন এবং দূষণমুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। কিন্তু কখনো আমাদের অসচেতনতা বা অজ্ঞতা, কখনো অতি চালাকিপনা বা অতি মুনাফার লোভ, আবার কখনো অবহেলা বা অগ্রাহ্যতার ফলে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকে খাদ্য উৎপাদন এবং তা সংরক্ষণ, পরিবহন, বিপণনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া ভেজাল বা দূষণমুক্ত রাখা যাচ্ছে না।
গ্রাম এবং শহরের হাটবাজার কিংবা দোকানে চিপস, চকলেট, চানাচুর, বিস্কুট, জেলি, পাউরুটিসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্য ভেজালে ঠাসা এবং এমন সব উপাদান দিয়ে তৈরি, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর ভেজাল এবং দূষণযুক্ত খাবার আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রতিনিয়ত অরক্ষিত করে তুলছে। পাশাপাশি অতি মাত্রায় বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ এবং প্লাস্টিক দূষণ আমাদের স্বাস্থ্যকে আরও বেশি অরক্ষিত করে তুলছে। ফলে ঘরে ঘরে ক্যানসার এবং জনে জনে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষণীয়।
বাংলাদেশের মতো এত রোগাক্রান্ত এবং স্বাস্থ্যহীন মানুষ পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রোগাক্রান্তের ধরন এবং স্বাস্থ্যহীন মানুষের সংখ্যার বিচারে হয়তো বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হবে! অন্যদিকে পারস্পরিক রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্ষোভ-বঞ্চনা, হানাহানি, অনিয়ম, দুর্নীতি, বিচারহীনতা এবং অস্থিরতার জাঁতাকলে এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ।
পাশাপাশি রয়েছে পৃথিবীর সকল প্রকার ক্ষতিকর মাদকের ব্যাপক উপস্থিতি। যুব সমাজের একটি বড় অংশ আজ মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে, যাদের বেশির ভাগ মানসিক ভারসাম্যহীন ও রোগাক্রান্ত। ফলে এদের বেশির ভাগের আয়ুষ্কাল ৪০ বছরও পেরোবে না। এমন সবকিছুর প্রভাবে হাসপাতালে সর্বত্র রোগীর উপচে পড়া ভিড়। দেশের বেশির ভাগ মানুষ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ‘অসুস্থ’, যা সক্ষম এবং ‘স্মার্ট’ জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার পথে প্রধান অন্তরায়।
পরিস্থিতি যখন এ রকম, তখন দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল অতি মুনাফালোভী। এগুলো দালাল চক্রনির্ভর একটি গভীর ফাঁদ, যেখানে কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ও অর্থের বলি হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ জনগণের সম্বল সরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ এবং মন্ত্রণালয়ের বাইরের ছোট–বড় নানা শক্ত শিকলে বন্দী। এগুলোর মধ্যে যেমন আইন ও নিয়মকানুনের শিকল রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিকলও।
বর্তমান সিলিংভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য খাত ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে হাসপাতালে রিসোর্স সংকট প্রকটতর। নির্বিঘ্নে সেবা প্রদান করতে উপযুক্ত লোকবল, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী থেকেও হাসপাতালকে বেশি প্রস্তুত রাখা অপরিহার্য। এর জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট মাত্রায় প্রশাসনিক এবং অর্থ ব্যবহারের ক্ষমতা অর্পণ করা প্রয়োজন।
কিন্তু সরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রুলের আওতায় পরিচালিত হওয়ায় প্রচলিত নিয়মে তাকে অন্যান্য দপ্তরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তার তুলনায় বেশি ক্ষমতা দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা সঠিকভাবে হাসপাতাল পরিচালনার পথে একটা বড় বাধা।
অন্যদিকে হাসপাতালে প্রদত্ত বরাদ্দ প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিকভাবে খরচে নানা বাধা রয়েছে। যেমন হাসপাতালের ওষুধ ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়, তা ওষুধ, ছোটখাটো যন্ত্রপাতি, মেডিকেল সাপ্লাইজ (গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা), কেমিক্যাল-রিজেন্টসহ ১০টি আইটেম নির্ধারিত হারে খরচ করার বিধান আছে। এই বরাদ্দের কোনো আইটেমে অর্থ বেঁচে থাকলে বা খরচের দরকার না হলে প্রয়োজনীয় অন্য আইটেমে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে এতে কেন্দ্রীয় অনুমোদনের দরকার হয়, যা পাওয়া সহজ নয়।
তাই অনেক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এসব ঝুটঝামেলায় যেতে চায় না। আবার এই বরাদ্দের কোনো লাইন আইটেমে (যেমন বেতন-ভাতা খাতে) অর্থ বেঁচে থাকলে বা খরচের দরকার না হলে প্রয়োজনীয় অন্য খাতে (যেমন ওষুধ ও সার্জিক্যাল সরঞ্জামাদি ক্রয় খাতে) ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে হাসপাতালের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অর্থ ফেরত দিতে হয়।
হাসপাতালের ওষুধ ও সার্জিক্যাল সরঞ্জামাদি ক্রয়ের খাতে যে বরাদ্দ থাকে, সেই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ ওষুধ ক্রয় বাবদ খরচ করার বিধান আছে এবং বাকি ২৫ শতাংশ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয়ের বিধান আছে। এই অর্থের ৭৫ শতাংশ ব্যয় করতে হয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে ওষুধ ক্রয় বাবদ। কিন্তু ইডিসিএল হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী সব ওষুধ সময়মতো সরবরাহ করতে পারে না।
আবার ইডিসিএল সময়মতো এনওসি প্রদান না করার ফলে হাসপাতাল উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ওষুধ কিনতে ব্যর্থ হয়। তাই একদিকে হাসপাতালে ওষুধের ঘাটতি থাকে, অন্যদিকে ইডিসিএল ওষুধ সরবরাহ কিংবা এনওসি প্রদান না করায় বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যায়। তা ছাড়া যে ওষুধ চাওয়া হয়, তা না দিয়ে অন্য ওষুধ গছিয়ে দেওয়ারও অহরহ নজির আছে।
আবার ইডিসিএল কর্তৃক সরবরাহকৃত ওষুধের দাম এবং গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বর্তমান প্রকিউরমেন্ট আইন এবং বিধিমালাও স্বাস্থ্য খাতের ক্রয়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি উপযোগী নয়।
অন্যদিকে ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ওষুধ ও সার্জিক্যাল সরঞ্জামাদি ক্রয়ের খাতে ১০ শতাংশও বরাদ্দ থাকে। কিন্তু দরপত্র আহ্বানের সময় যে ‘এসআর’ রেট অনুসরণ করতে হয়, তা সর্বশেষ তৈরি হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১২ সালের তুলনায় প্রতিটি জিনিসের দাম এখন তিন-চার গুণ বেশি।
২০১২ সালের দামে বর্তমানে কোনো মানসম্মত জিনিস কেনা সম্ভব নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও এই অর্থ খরচ করতে চায় না। কেউ সাহস নিয়ে খরচ করলে ঠিকাদার যে মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করেন, তা বেশি দিন ব্যবহার উপযোগী থাকে না। ফলে অডিট আপত্তিতে পড়তে হয়। আবার তা মেরামত করার জন্য ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপের (নিমিউ) যে এনওসি প্রয়োজন, তা সময়মতো না পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো মেরামত করা হয় না।
আবার হাসপাতালের অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামতের দায়িত্ব সরাসরি এই দপ্তরের ওপর অর্পিত। কিন্তু তাদের সক্ষমতা না থাকায় যন্ত্রপাতি একবার নষ্ট হওয়া মানে তা চিরতরে বিকল হয়ে যাওয়া। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ির ক্ষেত্রেও একই চিত্র বিরাজমান। ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অর্গানাইজেশন (টিইএমও) নামক সরকারি যে দপ্তরের হাসপাতালে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য গাড়ি মেরামত করার দায়িত্ব অর্পিত, তাদের সক্ষমতার অভাব তারা সময়মতো মেরামত করতে পারে না।
হাসপাতালের ভবন ও ইউটিলিটি সেবা মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুটি সরকারি দপ্তরের ওপর। ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে যে সরকারি প্রাইমারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল আছে, সেটার দায়িত্ব বর্তায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওপর। আর জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি পর্যায়ের সব হাসপাতালের দায়িত্ব বর্তায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওপর। গবেষণার তথ্যমতে, কোনোটা থেকেই সময়মতো এবং কার্যকরী সেবা পাওয়া যায় না। তবে উপজেলা পর্যায়ে দপ্তর না থাকা এবং নিজস্ব জনবলের ঘাটতি থাকায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি প্রকট।
এসব দৃশ্যমান ‘শিকলের’ পাশাপাশি অযৌক্তিক অডিট আপত্তিসহ অসংখ্য অদৃশ্য ‘শিকল’ রয়েছে, যা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। সব ধরনের শিকল থেকে সরকারি হাসপাতালগুলোকে মুক্ত করা অপরিহার্য। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি পারবেন এসব শিকল ভেঙে সরকারি হাসপাতালের স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম উন্নত করতে?
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।