গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বে বিক্ষোভ বেড়ে চলেছে
গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বে বিক্ষোভ বেড়ে চলেছে

কাঠগড়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে পশ্চিমারাও

ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকা মামলা করার পর (আজ বৃহস্পতিবার) মামলাটির শুনানি হচ্ছে।

এ অবস্থায় ইসরায়েল পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি এই মামলার ইস্যুতে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধে দ্রুত আদেশ দেওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিজেকে অনুরোধ করেছে, যাতে সেখানে এখনই গণহত্যা বন্ধ করা যায়।

এ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ২৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। হাজার হাজার মানুষ এখনো ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েক লাখ মানুষ গুরুতর জখম হয়েছে।

প্রায় তিন মাস ধরে চলা বোমাবর্ষণে গাজার বেশির ভাগ ভবন ভেঙেচুরে গেছে। সেখানে খাবার ও চিকিৎসাকর্মীদের ঢুকতে না দেওয়ায় মানুষ না খেয়ে ও চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পেশ করা ৮৪ পৃষ্ঠার যে অভিযোগনামা পেশ করা হয়েছে, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, গাজায় হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদ লঙ্ঘন করেছে।

ওই সনদে গণহত্যার সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছিল: কোনো দেশের বা কোনো জাতির বা কোনো বর্ণের বা কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকজনকে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করাকে গণহত্যা হিসেবে গণ্য করা হবে।

ইসরায়েল পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সমর্থন আশা করছে। কারণ, আইসিজের রায়ের বিষয়ে ইসরায়েলের মতো তাদের মধ্যেও ভয় কাজ করছে। এই দেশগুলো একেবারের খোলাখুলিভাবে ইসরায়েলকে গাজা হামলায় মদদ দিয়েছে এবং তাদের পাঠানো অস্ত্র ব্যবহার করেই গাজার বাসিন্দাদের গণহারে হত্যা করা হচ্ছে।

পশ্চিমারা ইতিমধ্যে ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই দিতে শুরু করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই মামলার অভিযোগকে বাইডেন প্রশাসনের নেতৃত্বে পশ্চিমারা ‘ভিত্তিহীন, সম্পূর্ণ মনগড়া ও বাস্তবতাবিবর্জিত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

তাদের এসব কথাবার্তা পশ্চিমা শ্রোতাদের কাছে খুবই হাস্যকর মনে হবে, যদি তাদের গাজার প্রকৃত খবর জানানো হয়। কিন্তু ইসরায়েল সাংবাদিকদের গাজায় ঢোকার ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের রিপোর্টিং বন্ধ করতে সেখানে ইতিমধ্যে রেকর্ড সংখ্যক সাংবাদিককে তারা হত্যা করেছে।

ভার্জিনিয়াভিত্তিক অ্যাক্সিওস ওয়েবসাইট সম্প্রতি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নথি ফাঁস করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল আশা করছে আইসিজের বিচারকদের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এই মামলার রায় তাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হবে। ফাঁস হওয়া নথির তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে—এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া থেকে বিচারকদের বিরত রাখাই ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য।

ইসরায়েলকে গাজায় হামলা বন্ধ করতে হেগের আদালত যাতে আদেশ দিয়ে না বসে, সে জন্য আদালতের ওপর খুব বেশি চাপ দেওয়া তার জন্য দরকার হয়ে পড়েছে।

অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের কর্মকর্তারা আইসিজের আদালতে যুক্তি তুলে ধরবেন: গাজায় চলমান অভিযানে যেসব হতাহতের ঘটনা ঘটছে, তাকে গণহত্যা বলা যাবে না। তাঁরা বলবেন, গাজায় ‘পরিকল্পিতভাবে মানুষের বসবাস-অযোগ্য এবং জনপদ নিশ্চিহ্ন হওয়ার মতো পরিবেশ’ তৈরি করা হচ্ছে না।

ইসরায়েল আইসিজের আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করবে, ইসরায়েল গাজায় অধিক পরিমাণে মানবিক সহায়তা পাঠানোর এবং বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা যে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, তার মুখে ইসরায়েলের যুক্তি উবে গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা যে ৮৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ জমা দিয়েছে, তার নয়টি পৃষ্ঠাজুড়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলের শীর্ষ নেতাদের ঘোষণা উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসরায়েলের সমরমন্ত্রী বেনি গানৎসের উপদেষ্টা গিওরা ইলান্দের বক্তব্য সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। গিওরা বলেছিলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো ‘গাজাকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী করা।’

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘গাজায় সর্বোচ্চ ধ্বংস নিশ্চিত করাই’ তাঁদের লক্ষ্য। দক্ষিণ আফ্রিকা যত তথ্য প্রমাণ পেশ করেছে, তাতে গাজার গণহত্যাকে আইসিজের পক্ষে খারিজ করে দেওয়া সহজ হবে না।

● জনাথন কুক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতবিষয়ক লেখক ও সাংবাদিক

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত