সিরিয়ার মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হামার প্রাণকেন্দ্রে বিরাট গর্বভরে প্রেসিডেন্ট (?) বাশার আল–আসাদের বাবা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের বিশাল মূর্তি দাঁড়িয়ে ছিল।
সেই মূর্তিকে গত শুক্রবার বিদ্রোহীরা টেনে নামাল। এরপর তারা একনায়কত্বের দর্প গুঁড়িয়ে দিয়ে মূর্তির মুণ্ডুটি ছিঁড়ে নিয়ে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে শহর ঘোরাল।
টেলিভিশনে যখন সেই দৃশ্য দেখছিলাম, তখন মনে পড়ছিল, আজ থেকে ৪০০ বছর আগে শেক্সপিয়ারের লেখা ‘সনেট-৫৫’-এর দুটি লাইন, ‘হোয়েন ওয়েস্টফুল ওয়ার শ্যাল স্ট্যাচুস ওভারটার্ন/ অ্যান্ড ব্রোয়েলস রুট আউট দ্য ওয়ার্ক অব ম্যসোনারি’ (যখন বিধ্বংসী যুদ্ধ মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করবে আর দাঙ্গা ইট-কাঠের কারুকার্যময় ভাস্কর্যকে গুঁড়িয়ে দেবে)।
হ্যাঁ, শত শত বছর ধরে যুদ্ধ সব গুঁড়িয়ে দিয়ে আসছে। যুদ্ধে বিজিতের ভাবমূর্তির সঙ্গে তার দম্ভ তুলে ধরা অতিকায় মূর্তিও আক্ষরিক অর্থে উপড়ে ফেলা হয়।
এই রীতি অতি প্রাচীন। শাসক যদি হীরক রাজা হয়ে ওঠে, তখন তার অতিকায় মূর্তি স্থাপনের খায়েশ জাগে।
আর শেষ পর্যন্ত সেই মূর্তিকে জনতা, নয়তো কোনো না কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে টেনে নামাতে হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানির হিটলারের মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
রোমানিয়ার বিপ্লবে ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট স্বৈরশাসক নিকোলাই চশেস্কুর মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত আধিপত্যের অবসানের চিহ্ন হিসেবে বিভিন্ন দেশে লেনিন ও স্তালিনের মূর্তি টেনে নামানো হয়েছিল।
২০০৩ সালে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের বিশাল মূর্তি টেনে নামানো হয়েছিল।
২০১১ সালে লিবিয়ায় ৪২ বছরের স্বৈরশাসনের সমাপ্তির প্রতীক হিসেবে ত্রিপোলিতে মুয়াম্মার গাদ্দাফির মূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জিম্বাবুয়েতে তিন দশকের বেশি সময় গদি আঁকড়ে থাকা রবার্ট মুগাবের মূর্তিগুলো ২০১৭ সালে টেনে নামানো হয়েছিল।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের মার্কিন দালাল সরকারের প্রধান আশরাফ গনিকে আমরা পালিয়ে যেতে দেখেছি।
এরপর শ্রীলঙ্কায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশেও কিছুদিন আগে আমরা এই দৃশ্য দেখেছি।
জোর করে বড় হতে গিয়ে বড় বড় মূর্তি স্থাপন করলে সে মূর্তি যে শেষ পর্যন্ত রাস্তাঘাটে অবমাননাকরভাবে গড়াগড়ি খায়, তা সত্যিকারের বড় নেতারা বুঝতে পারেন।
যেমন পেরেছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। তাঁকে বড় করতে গিয়ে যেন কিউবার কোথাও কোনো মূর্তি বসানো না হয়, তা তিনি মৃত্যুর আগে অসিয়ত করে গেছেন।
এই জিনিস রাশিয়ার মেনে নেওয়ার কথা নয়।
রাশিয়া জানে, সিরিয়ার মধ্য দিয়ে পাইপলাইন যদি যায়, তাহলে তার বড় ‘কাস্টমার’ ইউরোপ হাতছাড়া হয়ে যাবে।
এ কারণে রাশিয়া বাশার আল–আসাদকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছিল। বিনিময়ে বাশার কাতার-টু–ইউরোপ পাইপলাইন বসানোর অনুমতি দেননি।
অন্যদিকে শিয়া ইরান শিয়া আসাদ পরিবারকে ভূরাজনৈতিক কারণ ছাড়াও মতাদর্শিক কারণে এত দিন সহযোগিতা করে গেছে।
কিন্তু আচমকা সব উল্টেপাল্টে গেছে। রাশিয়া একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত, অন্যদিকে ইরানও ইসরায়েলকে সামাল দিতে গিয়ে, তথা হিজবুল্লাহকে সাহায্য করতে গিয়ে হয়রান হয়েছে। এ সুযোগে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা উল্কার বেগে আক্রমণ চালিয়েছে।
এই ঝটিকা আক্রমণে বাশার আল–আসাদ দেখেছেন, তাঁর পাশে কেউ নেই। রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক—এই তিন ‘মিত্র’ কার্যত ময়দান থেকে নাই হয়ে গেছে।
ফলে যা হওয়ার, তা–ই হয়েছে। বিদ্রোহীরা একের পর এক শহর ডিঙিয়ে রাজধানী দামেস্কে ঢুকেছে। প্রাণভয়ে বাশার উড়াল দিয়েছেন। কোথায় গেছেন, এখনো জানা যাচ্ছে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য ভিডিও চিত্র ভেসে বেড়াচ্ছে।
একটিতে দেখলাম, একটি ডাইনিং টেবিলে বিরাট থালায় রাখা খাবার খাচ্ছে কয়েকজন। খাবার টেবিলে বাশারের একটি আবক্ষ মূর্তি। সেই মূর্তির মাথার ওপর একজন এক পাটি জুতা রেখেছেন।
বাংলাদেশের কেউ একজন সেই ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সিরিয়ার গণভবন’।
এভাবে সিরিয়ায় এমন ‘ভূমিকম্প’ কেমন করে হলো? কেন রাশিয়া-ইরান আসাদের পাশে দাঁড়াতে পারল না? এখন সেখানে কী হবে? সরকার চালাবে কারা? বিদ্রোহীরা কি আসাদ–সমর্থকদের ওপর গণনিধন চালাবে? এখন সিরিয়ার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত, নাকি উৎফুল্ল? আশপাশের দেশগুলোয় এ ঘটনার কী প্রভাব পড়বে?
এসব প্রশ্ন এখন বিশ্ব–বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব প্রশ্নের সব কটির জবাব এখনই ঠিকমতো পাওয়া যাবে না।
তবে আক্রমণকারী বিদ্রোহী কারা ও এখন সিরিয়ায় তাদের উপস্থিতি কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা বিশ্লেষণ করলে এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
সিরিয়া পরিস্থিতি বুঝতে হলে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের যে মুজাহিদ গ্রুপটির নেতৃত্বে এই বিপ্লব হলো, তার নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির ইতিহাস জানা দরকার।
এই লোক একসময় আল-কায়েদার সহযোগী গোষ্ঠী আল–নুসরা ফ্রন্টের নেতা ছিলেন। আল–নুসরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিল। মাঝপথে আল–কায়েদার সঙ্গে আল–নুসরার আদর্শিক কোন্দল লেগে যায়।
আল-কায়েদা সিরিয়ায় কেন্দ্রভিত্তিক একটি ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তবে আল-জোলানি ও তাঁর অনুগামীরা মনে করেছিলেন, সিরিয়ার পরিস্থিতির জন্য স্বাধীনভাবে লড়াই করার জন্য আল-কায়েদার অধীন থাকা ঠিক হবে না।
তাঁরা নিজেদের স্বতন্ত্র সংগঠন গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আল–নুসরা ফ্রন্ট আল-কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আল–নুসরা যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় ছিল, সে কারণে সেই তালিকা থেকে বাঁচতে আল–নুসরা ফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে আলাদা হয়ে যায়।
এইচটিএস আল–কায়েদার মতো সিরিয়ার বাইরে যেতে চায়নি। তারা শুধু সিরিয়াতে নিজেদের স্থানীয় রাজনীতি করতে এবং জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে চেষ্টা করেছে।
আবু মোহাম্মাদ আল–জোলানি যে সিরিয়ার জনগণের মধ্যে এইচটিএসের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পেরেছেন, তা দামেস্ক পতনের অনেক আগেই স্পষ্ট হয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালানোর সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেন দখল করতে রুশ বাহিনীকে বেগ পেতে হবে না। কারণ, ইউক্রেনের মানুষ রুশ ভাবাদর্শে বিশ্বাসী।
পুতিন ও পুতিনের লোকজন বলেছিলেন, ইউক্রেনবাসী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না, তারা রুশ সেনাদের সাদরে গ্রহণ করবে এবং ইউক্রেনের পতন ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
ইউক্রেনবাসী ইউরোপীয় ভাবাদর্শে অভ্যস্ত হওয়ায় রাশিয়াকে তারা প্রতিরোধ করেছে এবং এখনো ইউক্রেন রাশিয়ার অধরা থেকে গেছে।
কিন্তু এইচটিএসের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে আলেপ্পো থেকে হোমস, এমনকি দামেস্ক পর্যন্ত কোনো বড় প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি।
কারণ, সিরিয়ার সাধারণ বাসিন্দাদের বেশির ভাগই ভাবাদর্শগত দিক থেকে এইচটিএসের কাছাকাছি এবং বাশার ও তাঁর মতানুসারীদের বিরোধী।
এইচটিএস সালাফি মতাদর্শের সুন্নি মুসলমান। সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিরা আদর্শিকভাবে তাদের ঘনিষ্ঠ মনে করে।
ফলে যখনই আলেপ্পোর পতন ঘটেছে, তখনই আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে স্থানীয় মানুষকে বিদ্রোহীদের স্বাগত জানিয়ে রাস্তায় নেমে উল্লাস করতে দেখেছি। একই ঘটনা দেখেছি হোমসে এবং সর্বশেষ দামেস্কে।
সবচেয়ে বড় চিন্তার যে বিষয় ছিল, সেটি হলো, বিদ্রোহীরা আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ব্যাপকভাবে প্রতিশোধ নেবে কি না এবং সেখানে আরেকটি গণহত্যা হবে কি না।
আপাতত স্বস্তির বিষয়, বিদ্রোহীরা এ ক্ষেত্রে খুবই বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। বিরোধী গোষ্ঠী বলছে, তারা প্রতিশোধ নেবে না।
এইচটিএসের নেতা আবু মোহাম্মাদ আল–জোলানি একটি বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, দামেস্কে বিরোধী বাহিনীকে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করতে দেওয়া হবে না।
এসব প্রতিষ্ঠান ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ মোহাম্মদ গাজি আল-জালালির তত্ত্বাবধানে থাকবে, যতক্ষণ না সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।
সিরিয়ার নেতৃত্ব কে নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে জোলানির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা অন্ধকার অতীতের পৃষ্ঠা উল্টে নতুন ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছি। ...মুক্ত সিরিয়া সব ভ্রাতৃপ্রতিম ও মিত্রদেশের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান ও স্বার্থের ভিত্তিতে সম্পর্ক গভীর করতে চায়। আমরা অঞ্চল এবং বিশ্বে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালনের লক্ষ্য রাখব।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা সামাজিক ঐক্যকে শক্তিশালী করার এবং সিরিয়ার সমাজের সব উপাদানের জন্য ন্যায্যতা ও মর্যাদার নীতিগুলো নিশ্চিত করার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’
বিজয়ের উল্লাস করতে গিয়ে কেউ যেন ফাঁকা গুলিও না ছোড়ে, সে বিষয়ে ওই বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে ‘আহমেদ আল শাহ্রা’ নামে সই করা হয়েছে। এটি আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির মা–বাবার দেওয়া নাম।
আল-কায়েদার নেতা হিসেবে জোলানি নামটি যেহেতু উচ্চারিত হতো, এই নাম শুনলেই যে কারও যেহেতু আল–কায়েদার কথা মনে পড়বে এবং যেহেতু জোলানি আল–কায়েদার সঙ্গে তাঁর অতীত সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান, সম্ভবত সে কারণে তিনি আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি নামটি বাদ দিয়ে মা–বাবার দেওয়া আহমেদ আল শাহ্রা নামে সব বিবৃতিতে সই করছেন।
এইচটিএসের প্রধান বলেছেন, আসাদের অত্যাচারে যেসব সিরীয় নাগরিক দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা যে ধর্মের বা যে সম্প্রদায়ের হোক, তাঁরা দেশে ফিরে আসতে পারবেন। তাঁদের নিজেদের ভিটেবাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
আসাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পরও মোহাম্মদ গাজি আল-জালালিকে দায়িত্বে রাখার মধ্য দিয়ে বিদ্রোহীরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
মোহাম্মদ গাজি আল-জালালি জানিয়েছেন, তিনি দামেস্কে তাঁর বাসভবনে অবস্থান করছেন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ ঘোষণা সিরিয়ার জনগণের মধ্যে ঐক্য ও ন্যায্যতার প্রতি বিরোধী গোষ্ঠীর প্রতিশ্রুতি এবং ভবিষ্যতের একটি স্থিতিশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তাদের দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করছে।
এ ঘটনা ইরানের জন্য এটি একটি বিশাল আঘাত। এখন তাদের লেভান্ট বা শাম অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের পথ আর থাকবে না।
এখন ইরান লেবাননে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিজবুল্লাহর কাছে স্থলপথে পৌঁছানোর সুযোগ পাবে না।
এতে হামাসের মতো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আসাদের সরকার নিজেদের প্রতিরোধের অক্ষের (অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স) অংশ হিসেবে উপস্থাপন করত।
এতে সিরিয়ার দিক থেকে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো সমর্থন পেত। এখন আর তা তারা পাবে না।
ফলে এ ঘটনায় প্রবলভাবে খুশি ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল। ইসরায়েল প্রথম থেকেই সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা দিয়ে আসছিল। এখন তারা সিরিয়ার এই স্বাধীনতা থেকে ফায়দা তুলবে।
এ ঘটনায় তুরস্কের লাভ ও উদ্বেগ—দুটিই আছে। তুরস্ক মনে করে, বিদ্রোহীরা একটি স্থিতিশীল সিরিয়া গড়তে পারলে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া ৩৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
এতে তুরস্কের কাঁধ থেকে অনেক বড় বোঝা নেমে যাবে।
আর তার উদ্বেগের বিষয় হলো, এতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এডিএফ) লাভবান হবে।
তুরস্ক এসডিএফকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে। এখন এসডিএফ তুরস্কে থাকা কুর্দিদের এরদোয়ানের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারে বলে আঙ্কারা চিন্তায় পড়ে যাবে।
তবে সব মিলিয়ে দামেস্ক যেভাবে রক্তপাতহীনভাবে আসাদের স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হয়েছে, তা একটি নতুন দৃষ্টান্ত।
এটি পুরো অঞ্চলের এবং এর বাইরের দেশগুলোর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসবে। কারণ, দেশটি আর গৃহযুদ্ধের গভীরে ডুবে যাবে না।
তবে সিরিয়ার এ পরিবর্তন হয়তো শুধু সিরিয়া নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও কৌশলগত মানচিত্রকেই নতুনভাবে চিত্রিত করতে পারে।
কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে এখনো অনেক দেশেই নানা আদলে স্বৈরশাসন জারি আছে। সেখানেও এ বিদ্রোহের বাতাস সত্যিকারের ‘আরব বসন্ত’ ডেকে আনতে পারে।
সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক
sarfuddin2003@gmail.com