বাংলা পাঠ্যপুস্তক: এলেম আমি কোথা থেকে

বিগত সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও নতুন কারিকুলাম চালু নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন ও কারিকুলাম সংস্কার নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলা পাঠ্যপুস্তকের যাত্রা কীভাবে, সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ভূমিকা কী, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কখন ও কীভাবে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন শুরু হলো, তা নিয়ে পর্যালোচনামূলক এ লেখা লিখেছেন রাখাল রাহা 

এ দেশে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে গুরু বা ওস্তাদদের কারও কারও কাছে হাতে লেখা একধরনের পুস্তক থাকত, যাকে ঠিক পাঠ্যপুস্তক বলা চলে না। ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ বইকেই অনেকে ছাপার হরফে প্রকাশিত প্রথম বাংলা পাঠ্যপুস্তক বলে মনে করেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক বলতে যা বোঝায়, এটা তা ছিল না। 

প্রকৃতপ্রস্তাবে শ্রীরামপুর মিশন থেকে ১৮১৬ সালে প্রকাশিত লিপিধারাই হচ্ছে ছাপার হরফে প্রকাশিত প্রথম বাংলা পাঠ্যপুস্তক। সে হিসাবে বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনার ২০০ বছর পার হয়ে গেছে অগোচরেই। লিপিধারা প্রকাশের পর ঊনবিংশ শতাব্দীজুড়ে প্রাথমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়েছে ৫০০-এর মতো বলে ধারণা করা হয়। 

শিশুশিক্ষার বইয়ের যাত্রা শুরু যেভাবে

১৮১৭ সালে কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর পরের বছরই কলিকাতা স্কুল সোসাইটিও প্রতিষ্ঠিত হয়। কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি ও শ্রীরামপুর মিশনের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে অনেকেই পাঠ্যপুস্তক রচনায় এগিয়ে আসেন। ১৮১৮ সালে কলিকাতা স্কুল বুক সোসাইটি থেকে স্টুয়ার্টের লেখা বর্ণমালা বইটি প্রকাশিত হয়। ১৮৩৫ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঈশ্বরচন্দ্র বসু লিখেছিলেন শব্দসার। সে বছরই শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে লেখা হয় বঙ্গ বর্ণমালা। 

এরপর ১৮৩৯ সালে হিন্দু কলেজ কর্তৃপক্ষ পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করলে তার পাঠ্য হিসেবে পরের বছরই তিন খণ্ডের একটি সিরিজ লেখা হয়, যার নাম ছিল শিশুসেবধি-১, শিশুসেবধি-২শিশুসেবধি-৩। প্রথম দুই খণ্ডের লেখক ছিলেন রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ। তবে তৃতীয় খণ্ডটির লেখকের নাম জানা যায়নি। 

একইভাবে ১৮৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববোধিনী পাঠশালার জন্য লেখা হয়েছিল দুই খণ্ডের নতুন বর্ণমালা সিরিজ। ধারণা করা হয়, খণ্ড দুটি অক্ষয়কুমার দত্ত লিখেছিলেন। ১৮৪১ সালে ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয় জ্ঞানারুণোদয়। এরপর ১৯৪৬ সালে স্কুল বুক সোসাইটি নতুনভাবে বের করে বর্ণমালার দুটি খণ্ড।

মদনমোহন তর্কালঙ্কারের বিখ্যাত শিশুশিক্ষা সিরিজের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৪৯ সালে এবং এর পরের বছর ১৮৫০ সালেই সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। এই সিরিজ রচনার মধ্য দিয়ে বলা যায়, প্রাথমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়।

এর ঠিক ৫ বছর পরে ১৮৫৫ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিখলেন বর্ণপরিচয়-এর প্রথম ভাগ এবং এরপর দ্বিতীয় ভাগ। শিশুশিক্ষাবর্ণপরিচয় সিরিজের গুণগত মান ও সাফল্যের ফলে প্রাথমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনায় একধরনের জোয়ার তৈরি হয়। তবে এ দুটি সিরিজের কাছাকাছি মান ও সাফল্য আর কোনো পাঠ্যপুস্তক অদ্যাবধি পেয়েছে বলে মনে হয় না। 

শিশুশিক্ষাবর্ণপরিচয় সিরিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছে একটি সংকলিত পাঠ্যপুস্তক, যার নাম শিশুবোধক। ধারণা করা হয়, ১৮৩০ সালের দিকে বিশ্বনাথ তর্কবাগীশ এটি সংকলন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষক সাতকড়ি দত্তের লেখা প্রথম পাঠ, দ্বিতীয় পাঠতৃতীয় পাঠ সিরিজটিও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। আনুমানিক ১৮৬২ সালে সিরিজটি প্রকাশিত হয়। 

জনপ্রিয় এসব বাংলা পাঠ্যপুস্তক কিন্তু সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বের হয়নি। এগুলো ছিল সাধারণ মানুষকে মূলত ভাষাশিক্ষা প্রদানের আকাঙ্ক্ষায় ব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণাজাত। আর এগুলো তখনকার বিভিন্ন ধরনের স্কুল, পাঠশালা, টোল ও মাদ্রাসায় পড়ানো হতো। অন্যদিকে মিশনারি ও স্কুল বুক সোসাইটির পাঠ্যপুস্তকগুলো তাদের নিজ নিজ স্কুলেই মূলত ব্যবহৃত হতো। কিন্তু শিশুশিক্ষাবর্ণপরিচয় সিরিজের ব্যাপক সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর ব্যবহার একেবারেই সীমিত হয়ে পড়ে।

শিশুশিক্ষাবর্ণপরিচয় সিরিজ প্রকাশের প্রায় দুই যুগ পর ১৮৭৭ সালে রামসুন্দর বসাক ঢাকা থেকে বাল্যশিক্ষা প্রকাশ করেন। পূর্ববঙ্গের ইন্সপেক্টর অব স্কুলস ও ঢাকা স্কুল কমিটি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বইটি ছাপা হয়। পরে এটি উভয় বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এ ছাড়া রামগতি ন্যায়রত্নের শিশুপাঠ আনুমানিক ১৮৭২–৭৩ সালের দিকে প্রকাশিত হয় এবং ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত এর ৬টি সংস্করণ হয়। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও পাঠ্যপুস্তক লিখেছিলেন। তাঁর বইয়ের নাম ছিল বর্ণবোধ। তবে বিশাল জনপ্রিয়তা দিয়েও তাঁর বই তেমন চলেনি। এর আগে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও পাঠ্যপুস্তক লিখেছিলেন। সেটিও খুব বেশি চলেছিল—এমন জানা যায় না।

এর অর্থ হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকের জগৎ সম্পূর্ণ পৃথক এবং সেই জগতের নাড়িনক্ষত্র না জেনেই শিশুশিক্ষার্থীরা বুঝিয়ে দিতে পারে তার পছন্দ-অপছন্দ এবং পরোক্ষভাবে এর মান কেমন, সেটাও।

শিশুশিক্ষাবর্ণপরিচয়-এর পর প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যাপক আলোচিত ও জনপ্রিয় পাঠ্যপুস্তক হচ্ছে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের হাসিখুশি ১ হাসিখুশি ২হাসিখুশি ১ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৯৭ সালে এবং হাসিখুশি ২ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৪ সালে। এরপর ১৯৩০ সালে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজ পাঠ ১-২ যথেষ্ট আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়েছিল। 

কিন্তু শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়, হাসিখুশিসহজ পাঠ—জনপ্রিয় এই সিরিজগুলোর লেখক একজনও মুসলমান না হওয়ায় এবং এগুলোয় যথেষ্ট পরিমাণ ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সংস্কৃতি অনুপস্থিত থাকায় অনেক মুসলমান লেখক তখন পাঠ্যপুস্তক রচনায় এগিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যে মীর মশাররফ হোসেন অন্যতম। তবে তাঁর রচিত মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা তেমন চলেনি। পরবর্তী পর্যায়ে কাজী নজরুল ইসলামও পাঠ্যপুস্তক লিখেছিলেন। সেগুলোও খুব বেশি আলোচিত ও পঠিত হয়নি। 

দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনার শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তির নিজস্ব জানা-বোঝা ও কাণ্ডজ্ঞানভিত্তিক পাঠ্যপুস্তকগুলোই সমাজ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে শিশুশিক্ষা, বর্ণপরিচয়, হাসিখুশিসহজ পাঠ—এই চার সিরিজের গুণগত উৎকর্ষ ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণে গত শতকের চল্লিশের দশক পর্যন্ত সরকার বা প্রতিষ্ঠান আর কোনো পাঠ্যপুস্তক রচনা বা সংকলনের প্রয়োজন মনে করেনি।

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রাথমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। পশ্চিম বাংলায় ওই চার সিরিজ, যত দূর জানা যায়, সত্তরের দশক পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রাখে। আশির দশকের শুরুতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম পরিমার্জনের পর পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয়-শিক্ষা অধিকার কিশলয় সিরিজ প্রকাশ করে।

অর্থাৎ রাষ্ট্র প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব আংশিক বা সম্পূর্ণ গ্রহণের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তক রচনা আবার শুরু হয়। কিশলয়-এর পাশাপাশি বাংলা পাঠ্যপুস্তকের ধ্রুপদি চারটি সিরিজ, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠ, পশ্চিম বাংলায় বিগত শতাব্দীর শেষ দশক পর্যন্তও পড়ানো হতো। এখনো হয়তো তা কোনোভাবে থেকে থাকতে পারে।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব বাংলার চিত্র পশ্চিম বাংলার চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক ছিল। এখানে পাকিস্তান জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে
প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন শুরু হয়। ১৯৪৭ সালেই পাঠ্যপুস্তক তৈরির উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ববঙ্গ স্কুল টেক্সটবুক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৫৪ সালে স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড প্রথমে কচিকথা সিরিজ প্রকাশ করে। ১৯৫৬, ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালে স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড পুনর্গঠিত হয়। এ সময় লেখা হয় সবুজ সাথী সিরিজ।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সবুজ সাথী সিরিজ কিঞ্চিৎ পরিমার্জনাসহ ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের পাঠ্য ছিল। এরপর নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী ১৯৭৭ সাল থেকে আমার বই সিরিজ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৩ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালে প্রাথমিক স্তরের জন্য আবশ্যকীয় শিখনক্রম প্রকাশ করা হয়। এই শিখনক্রম বা কারিকুলাম অনুযায়ী আমার বই সিরিজ নতুন করে লেখা হয় এবং ১৯৯১ সাল থেকে পাঠ্য হয়। 

এরপর ২০০১ সালে কারিকুলাম পরিমার্জন ও নবায়নের মাধ্যমে ২০০২ সালে আমার বাংলা বই সিরিজ প্রকাশিত হয়। প্রকৃত অর্থে গত শতকের ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে রাষ্ট্র নিজে পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্যোগ নেওয়ার পর ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষাভাবনা ও পাঠ্যপুস্তক রচনার ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ছেদ পড়ে। 

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আশির দশক থেকে ব্যাপকতা লাভ করে। নব্বইয়ের দশকে এই উদ্যোগ উভয় বাংলায়, বিশেষত বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক রচনা আবার শুরু হয়। আশি ও নব্বইয়ের দশকেই বিভিন্ন এনজিও তাদের শিক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করে। তারাও তাদের স্কুলগুলোর জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে। এই পাঠ্যপুস্তকগুলো নতুন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের ফল।

সুতরাং গত দুই শতাব্দীব্যাপী ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে প্রাথমিক স্তরের বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনা প্রায় সমান্তরালভাবে চললেও
এর নানা বাঁকবদল ও উত্থান-পতন রয়েছে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক নানা বিষয় ও মাত্রা প্রভাব ফেলেছে পাঠ্যপুস্তকের ভাষা, বিষয় ও রচনাপদ্ধতির ওপর।

লেখক যখন নিজ উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তক লেখেন, তখন তিনি যতটা স্বাধীনভাবে বিষয়জ্ঞান, ভাষাজ্ঞান, কাণ্ডজ্ঞান ও প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে টেক্সট পরিকল্পনা ও নির্মাণ করতে পারেন এবং সর্বোপরি নিজেকে নিযুক্ত রাখতে পারেন, তা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে নানা কারণে সম্ভব হয় না। আবার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা, নির্ধারিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কাঠামোর মধ্যে, কখনো কখনো দলগতভাবে টেক্সট নির্মাণ করা যায়, তা ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা যায় না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যক্তির প্রবণতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থ প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে বিষয়, শিক্ষা, শিক্ষার্থী ইত্যাদি উপেক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য, এমনকি অঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্দেশ্যও প্রকট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। 

ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রকৃতিগত এসব পার্থক্যের কারণে উভয় উদ্যোগে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের মানেরও পার্থক্য হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্র ও তার নানা পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান যেসব দেশে ভালোভাবে দাঁড়ায়নি, সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে পাঠ্যপুস্তক রচনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এটা শিক্ষার মানের উন্নয়নের চেয়ে অবনমন ঘটাতে পারে। এ বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক রচনায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের ইতিহাস ও গতিপ্রকৃতি অনুসন্ধান এবং উভয় ধরনের পাঠ্যপুস্তকের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এখন অতি জরুরি।

রাখাল রাহা লেখক ও গবেষক