লোহিত সাগরে একটি কার্গো জাহাজে হুতির ড্রোন হামলা
লোহিত সাগরে একটি কার্গো জাহাজে হুতির ড্রোন হামলা

মতামত

হুতির ড্রোন হামলায় চুপ থেকে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন বাইডেন

১৬ ডিসেম্বর ইয়েমেনের হুতিরা একগুচ্ছ ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কার্নি সব ড্রোনই গুলি করে বিধ্বস্ত করে। খবরে প্রকাশ, ১৪টি ড্রোন দিয়ে এ হামলা চালানো হয়েছিল। সেন্টকম বা ইউনাইটেড স্টেটস সেন্ট্রাল কমান্ড এ হামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও তারা এ বিষয়ে কিছু বলেনি যে ড্রোনগুলোর লক্ষ্যবস্তু ইউএসএস কার্নি ছিল কি না।

হামলায় ব্যবহৃত ড্রোনগুলোর মডেল কী ছিল, সে বিষয়েও কিছু জানায়নি সেন্টকম। কিন্তু সেগুলো ইরানের শাহেদ-১৩৬ মডেলের ড্রোন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একই ধরনের ড্রোন রাশিয়াকে দিয়েছে ইরানিরা। এখন এই মডেলের ড্রোন রাশিয়াতেই তৈরি হচ্ছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে গেরান-২। রাশিয়ার তৈরি করা এই ড্রোনগুলো এক হাজার মাইল পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলো ৫০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে।

এদিকে ১৮ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান সি কিউ ব্রাউন ইসরায়েলে গিয়ে ইসরায়েলিদের বোঝাতে চেষ্টা করেছে, তারা যেন গাজা অভিযানের রাশ ব্যাপকভাবে টেনে ধরে। এর বড় কারণ হলো, ওয়াশিংটন চায় ইরানের সঙ্গে বড় পরিসরে যুদ্ধ এড়াতে।

হুতি বিদ্রোহী শাহেদ ড্রোনের মূল যে ধরন ব্যবহার করেছে, তাতে কোনো ক্যামেরা ছিল না। হয় স্থলভাগ থেকে পরিচালকেরা ড্রোনগুলোর গতিপথ ঠিক করেছেন অথবা আগে থেকে নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুর দিকে পরিচালিত করার জন্য জিপিএস প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে।

চলাচলের মধ্যে থাকে, এমন কোনো লক্ষ্যবস্তুর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কোনো কাজে আসে না। ধারণা করা যায় যে হুতিরা স্থল থেকেই ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুর দিকে পরিচালিত করেছে। এ ছাড়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট ব্যবহার করে লোহিত সাগরে জাহাজ আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে হুতিরা।

পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলো লোহিত সাগর রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সুয়েজ খাল দিয়ে তারা আর জাহাজ পাঠাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হুতিরা এ ধরনের ভয়াবহ হামলা করার পরও বাইডেন প্রশাসন অবিচলভাবে হুতির সামরিক স্থাপনা, কমান্ড সেন্টার কিংবা ড্রোন উৎক্ষেপণস্থলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

একমাত্র যে পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিয়েছে, সেটা হলো হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট তারা আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে কিংবা ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক নৌপথের নিরাপত্তাসংক্রান্ত যে বিধিবিধান, সেটা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা এ কাজ করতে পেরেছে।

হুতিরা এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ ও কনটেইনারবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু কয়েকটি জাহাজ এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলো মেরামতের জন্য পার্শ্ববর্তী কোনো বন্ধুদেশের বন্দরে ভেড়াতে হয়েছে।

যাহোক, হুতিরা তাদের অস্ত্রভান্ডারের মজুত নতুন করে বাড়িয়েছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতোই হুতিদেরও হাজারো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রেখেছে ইরান। ফলে হুতিদের ভান্ডারে থাকা ড্রোন শিগগিরই ফুরিয়ে যাবে, সেটা মনে করা ঠিক হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে যেন বড় পরিসরে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু হুতিদের এই হামলার গভীর প্রভাব রয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠী যে হামলা করছে তার প্রভাবও সুদূরপ্রসারী।

১৭ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের (দূতাবাসসহ) স্থাপনাগুলোতে ৯৮ বার (ইরাকে ৪৬ বার ও সিরিয়ায় ৫৬ বার) ড্রোন ও স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। কিন্তু এসব হামলায় প্রত্যুত্তরে খুব কমই পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু করার সামর্থ্য রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে এসব হুমকির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, ভবিষ্যতে তারা আরও ভয়াবহ হামলা চালাতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না, এই ভেবে তারা নিরাপদ বোধ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে সিরিয়া, ইরাক ও লোহিত সাগরে এ ধরনের আরও হামলা চালাতে উৎসাহিত করছে।

সেন্টকম এটা স্পষ্ট করেছে যে, এই হামলার পেছনে ইরান রয়েছে। তেহরান এ কাজে তাদের প্রক্সি যোদ্ধাদের অস্ত্রের জোগান দিয়ে চলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইরানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এ থেকে সরে আসার জন্য কড়া কোনো দাবি জানায়নি।

প্রকৃতপক্ষে, এসব হামলার ঘটনা যখন ঘটছে, তখন বাইডেন প্রশাসন ইরানের কয়েক বিলিয়ন ডলার ছাড় করে দিচ্ছে। বেয়াড়াপনার শাস্তি হিসেবে ইরানের অনেক সম্পত্তিতে লক্ষ্যবস্তু করার সুযোগ থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত সেটা করেনি।

এদিকে ১৮ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান সি কিউ ব্রাউন ইসরায়েলে গিয়ে ইসরায়েলিদের বোঝাতে চেষ্টা করেছে, তারা যেন গাজা অভিযানের রাশ ব্যাপকভাবে টেনে ধরে। এর বড় কারণ হলো, ওয়াশিংটন চায় ইরানের সঙ্গে বড় পরিসরে যুদ্ধ এড়াতে।

হুতির হামলা নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের বেশির ভাগ সমালোচক চুপ করে আছেন। এর কারণ হলো, এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু সে রকম কোনো বিপর্যয় হলে পুরো হাওয়াই বদলে যাবে।

  • স্টিফেন ব্রায়েন, সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি অ্যান্ড ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো
    এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত