গতকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অধিকৃত ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়
গতকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অধিকৃত ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়

ইসরায়েল কি জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে?

গাজায় নির্বিচার হত্যাকাণ্ড শুরুর পাঁচ মাস পর অবশেষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অধিকৃত ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উঠেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রস্তাবে তিন দফা ভেটো দিয়েছে।

সম্ভবত, ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তীব্র প্রতিক্রিয়া, নির্বাচনী বছরে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাতকঠিন সমর্থনের কারণে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ইত্যাদি কারণে ওয়াশিংটন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, কিংবা ভেটোও প্রয়োগ করেনি।

রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘকে বলেছেন, প্রস্তাবের সব বিষয়ে তাঁরা একমত নন। তাঁর এ বক্তব্যে প্রায় ৩২ হাজার বেসরকারি ফিলিস্তিনি নাগরিক হত্যা নিয়ে মার্কিন সরকারের যে নৈতিক অস্পষ্টতা, তা প্রকাশ্যে আসে। তারা হয়তো এখন ভাবছে গণখুনের প্রতিটি ঘটনায় ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর চেয়ে এই অবস্থান শ্রেয়তর।

যদিও গাজার মানুষের যে ভোগান্তি এবং এই ভোগান্তির যে ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্‌যাপনের কিছু নেই।

তারপরও এই সিদ্ধান্তের কিছু প্রভাব আছে। হয়তো অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নৈমিত্তিক যে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসে সাময়িক বিরতি আসবে। প্রিয়জনের জন্য শোক করার সুযোগ পাবে গাজাবাসী, ক্ষত প্রশমনের দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক প্রক্রিয়াও শুরু হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব সম্প্রতি রাফা সীমান্তে যান। তিনি গাজায় ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোয় যে প্রতিবন্ধকতা তা অপসারণের আহ্বান জানান। প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ইসরায়েল। আশা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতিতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসহায়তা গাজার বিপর্যস্ত হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাবে। দুর্ভিক্ষ—যা ইসরায়েলের সৃষ্টি—তা এখন গাজায় হানা দিয়েছে।

সবার চোখ এখন ইসরায়েল ও তার পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নিবদ্ধ। তেল আবিব কি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে, নাকি গুন্ডা রাষ্ট্র হিসেবে যে পরিচিতি তারা পেয়েছে, সেই পরিচিতিই অক্ষুণ্ন রাখবে? তারা কি এই আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাবে? সামনের দিনগুলো পুরো অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গাজা উপত্যকায় শিশুরা মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে। উপরন্তু হাজার হাজার শিশু এই অপবিত্র যুদ্ধে অনাথ হয়েছে। চোখের সামনে গণহত্যা যারা ঘটতে দেখেছে, সেই শিশুদের জন্য বিশেষ চিকিৎসাসেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ মুহূর্ত থেকে এ ব্যাপারে কাজ শুরু করতে হবে।  

গাজার মানুষের কাছে দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পাশাপাশি প্রতিটি পক্ষের উচিত হবে সহিংসতা স্থায়ীভাবে বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। মনে রাখতে হবে, এর আগেও নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ইসরায়েল ও হামাস সম্মত হয়েছিল। কিন্তু দ্রুতই দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা ভেঙে যায়।

যুদ্ধবিরতির নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়া প্রয়োজন। যদিও সমাধানের কথা এ মুহূর্তে তোলা অযৌক্তিক। কিন্তু পরিস্থিতি থিতিয়ে এলে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে মূল্য চুকাতে হবে।

ফিলিস্তিনিদের জীবনের দাম আছে। গাজার অনাথ শিশু, গোটা একটি প্রজন্ম, বিশ্বের দিকে ন্যায়বিচারের আশায় তাকিয়ে আছে।

সবার চোখ এখন ইসরায়েল ও তার পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নিবদ্ধ। তেল আবিব কি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে, নাকি গুন্ডা রাষ্ট্র হিসেবে যে পরিচিতি তারা পেয়েছে, সেই পরিচিতিই অক্ষুণ্ন রাখবে? তারা কি এই আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাবে? সামনের দিনগুলো পুরো অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।

সম্পাদকীয়টি পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত। ইংরেজি থেকে অনূদিত।