আহলে রাসুল ও আহলে বাইতের সম্মান 

প্রিয় নবীজি (সা.)–এর প্রতি ভালোবাসা ইমানের শর্ত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কারও ইমান পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না আমি (নবী মুহাম্মদ সা.) তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় না হব।’ (বুখারি: ১৩ ও ১৪) 

নবী–রাসুলদের আল বা আহল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ইমান ও সৎ কর্ম। হজরত নুহ (আ.)–এর ঔরসজাত সন্তানও কর্মদোষে আল বা আহল হতে পারেনি। 

কোরআন করিমের বর্ণনা, ‘[নুহ (আ.)–এর অবিশ্বাসী পুত্র তাঁর জাহাজে আরোহণ না করে যখন পানিতে ডুবতে ছিল, তখন) নুহ (আ.) তাঁর রবকে আহ্বান করে বললেন, “নিশ্চয় সে আমার পুত্র, আমার আহল, আর আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য এবং আপনি সব বিচারকের শ্রেষ্ঠ বিচারক।” (আল্লাহ তাআলা) বললেন, “হে নুহ! নিশ্চয় সে তোমার আহল নয়। কারণ, তার কর্ম সঠিক নয়। সুতরাং তুমি আমার কাছে সে বিষয়ে আবেদন করবে না, যে বিষয়ে তুমি অবগত নও। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত না হও।”’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ৪৬)

আহলে বাইতকে তিনটি স্তরে পরিচিত করা যায়। কোরআনিক অর্থে, শাব্দিক অর্থে ও ব্যবহারিক অর্থে। 

কোরআনিক অর্থে প্রিয় নবীজি (সা.)–এর আহলে বাইতের সদস্য ছিলেন চারজন—হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত আলী (রা.), হজরত হাসান (রা.) ও হজরত হোসাইন (রা.)। মর্যাদার দিক থেকে তাঁরাই সবার ঊর্ধ্বে।

নবী–রাসুলদের আল বা আহল হওয়ার পূর্বশর্ত হলো ইমান ও সৎ কর্ম। হজরত নুহ (আ.)–এর ঔরসজাত সন্তানও কর্মদোষে আল বা আহল হতে পারেনি

শাব্দিক অর্থে নবী–পত্নীগণও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে এসেছে, হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর পত্নীদের উদ্দেশে ফেরেশতারা বলছেন, ‘তারা বলল, হে আহলে বাইত! তোমরা কি আল্লাহর কোনো কাজে বিস্ময়বোধ করছ? তোমাদের ওপর সর্বদা আল্লাহর বিশেষ রহমত ও তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে, নিশ্চয়ই তিনি মহা প্রশংসিত ও মহা মর্যাদাবান।’ (সুরা-১১ হুদ, আয়াত: ৭৩) 

সামাজিক অর্থে কোনো ব্যক্তির স্ত্রী-পুত্র, সন্তানসন্ততি, নিকটাত্মীয়-স্বজনসহ পরিবারের সব সদস্যকেই তার আহলের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। মুসা (আ.)–এর বোনের উক্তি কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অতঃপর সে বলল, আমি কি তোমাদেরকে এমন “আহলে বাইত”–এর সন্ধান দেব, যারা তোমাদের জন্য তাকে লালন–পালন করবে এবং তারা তার শুভার্থী হবে।’ (সুরা-২৮ কাসাস, আয়াত: ১২) 

এর আলোকে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর পরিবারের সব সদস্য, সব নিকটাত্মীয় ও সব আওলাদে রাসুল আহলে বাইতের তৃতীয় সারির সদস্য বলে গণ্য। তাঁরাও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ও সুপথের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

আহল অর্থ পরিবার-স্বজন, আল অর্থ অনুগামী-অনুসারী। আল ও আহল শব্দদ্বয় কখনো সমার্থক রূপে, কখনো ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। আমরা দরুদ শরিফে বলি, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আপনি পরিপূর্ণ রহমত ও বরকত দান করুন হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি ও তাঁর স্বজনদের প্রতি।’ হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সব খাঁটি বিশুদ্ধ বিশ্বাসী মুমিন আমার আল বা স্বজন।’ (মুসনাদে আহমাদ) 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আহলে বাইত! আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপত্রবিতা দূর করতে এবং পূর্ণরূপে পূতপবিত্র রাখতে।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৩৩) 

হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, ‘যখন আমার গৃহে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছিল, তখন আমার গৃহে সাতজন লোক ছিলেন। তাঁরা হলেন জিবরাইল (আ.), মিকাইল (আ.), নবীজি (সা.), আলী (রা.), হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)। আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতেমা, আলী, হাসান ও হোসাইনকে চাদরাবৃত করে বললেন, “হে আল্লাহ! এরাই আমার আহলে বাইত।” আমি রাসুল (সা.)–কে প্রশ্ন করলাম, আমি কি আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত নই? উত্তরে তিনি বললেন, “না, তুমি তাদের মধ্যে নও, তবে নিশ্চয় তুমি সঠিক পথে আছ, নিশ্চয় তুমি কল্যাণের মধ্যে রয়েছ, তুমি আমার স্ত্রীদের মধ্যে গণ্য।”’

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আহলে বাইত হলো নুহ (আ.)–এর কিশতির মতো, যে এতে আরোহণ করবে, সে মুক্তি পাবে আর যে এর থেকে দূরে সরে যাবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com