অবশ্যই যাঁরা বর্তমানে গ্রেপ্তার এবং আটকের সম্মুখীন হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
অবশ্যই যাঁরা বর্তমানে গ্রেপ্তার এবং আটকের সম্মুখীন হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

ডেভিড বার্গম্যানের কলাম

নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক কীভাবে থামানো যায়

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার বহুভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিকল্পিত এবং ব্যাপকভাবে চর্চিত উপায়গুলোর একটি ছিল রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক ও কারাদণ্ড দেওয়া। এমনকি কথিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ না থাকলেও এমন হতো। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত হয়তো জামিনও পেতেন। কিন্তু আদালত সেই জামিন মঞ্জুর করতে প্রায়ই কেটে যেত অনেক মাস সময়।

বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের শাসনামলে হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই দমনমূলক জালে আটকা পড়েছেন। আর তা সম্ভব হয়েছিল পুলিশ ও বিচার বিভাগের কর্মকাণ্ডের ফলে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এমন অপব্যবহারের মাত্রা অনেক কম। তবু এ রকম সব মামলার খবর পাওয়া অব্যাহত আছে, যেখানে মানুষকে গ্রেপ্তার এবং আটক করা হয়েছে অভিযোগকৃত অপরাধে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ এমনকি যুক্তিসংগত সন্দেহ ছাড়াই। এগুলোর বেশির ভাগই ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত শতাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত।

অবশ্যই যাঁরা বর্তমানে গ্রেপ্তার এবং আটকের সম্মুখীন হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রেপ্তার ন্যায়সংগত হবে। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোককে ভিত্তিহীনভাবে এসব দায়ে জড়িত করা হচ্ছে, এমন উদ্বেগের কারণ আছে বলে মনে হয়। এ ধরনের গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া বিপন্ন হবে।

আইনের ত্রুটি এবং এর প্রয়োগ এ প্রক্রিয়ায় কীভাবে অবদান রাখে, সেসব সমস্যা সমাধানে সরকার ও বিচার বিভাগ এখন কোন পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে পারে এবং হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দিকে পুনরায় মনোযোগ দিতে পারে, এ নিবন্ধ সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

গ্রেপ্তারকারীর আইনি ভিত্তি

প্রথমে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারের বিষয়টি দেখা যাক।

যৌক্তিকতা ছাড়াই পুলিশ এত লোককে গ্রেপ্তার করতে পারে কীভাবে? এর একটি মূল কারণ হলো, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৫৪ ধারা (ধারা ৪ এর সঙ্গে) এমন নির্বিচার গ্রেপ্তার সংঘটিত হওয়ার আইনি ভিত্তি প্রদান করে। বিধিটির খসড়া করা হয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে। ১২০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু বিধান দুটি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।

১৫৪ ধারার অধীনে জনসাধারণের যে কেউ (বা প্রকৃতপক্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তা) বাংলাদেশের যেকোনো থানায় গিয়ে কোনো ‘আমলযোগ্য’ অপরাধের বিষয়ে ‘তথ্য’ প্রদান করতে পারেন। এর সঙ্গে দিতে হবে তথ্য প্রদানকারী সেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে যাঁদের দাবি করেন, তাঁদের নাম। ‘আমলযোগ্য’ অপরাধ বেশি গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। এগুলো ফৌজদারি কার্যবিধির তফসিলভুক্ত। এর মধ্যে হত্যা মামলাও রয়েছে।

তারপর পুলিশকে অবশ্যই প্রাপ্ত ‘তথ্য’ একটি ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্টে (এফআইআর) নথিভুক্ত করতে হবে। এটি ‘পুলিশ মামলা’ হিসেবে পরিচিত। একজন পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব হলো তথ্যদাতা যা বলেন, তা লিখে রাখা।

যাহোক, অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে কি না বা তথ্যদাতা যাঁদের নাম দিয়েছেন, তাঁরা সেই অপরাধে জড়িত ছিলেন কি না, তথ্যদাতার এমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। এফআইআর রেকর্ড করার সময় একইভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘তথ্যের’ যথার্থতা পরীক্ষা করার বা সহায়ক প্রমাণ চাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

একবার পুলিশ কোনো এফআইআর যথাযথভাবে নথিভুক্ত করলে আর প্রাসঙ্গিক অপরাধটি ‘আমলযোগ্য’ বিধায় ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪(১)(চ) পুলিশকে এফআইআরে নামযুক্ত যেকোনো ব্যক্তিকে আর কোনো যাচাই-ছাড়াই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেয়। এর মানে হলো, এফআইআরে নাম থাকা যে কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। তা সে অপরাধের সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার যুক্তিসংগত সন্দেহের প্রমাণ থাকুক বা না থাকুক।

ধারা ১৫৪ কাজ করে গ্রেপ্তারকারীর সনদ হিসেবে। অভিযোগ ভিত্তিহীন হলেও তা আমলযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কোনো ধরনের সুরক্ষা প্রদান করে না। যদিও পুলিশ এফআইআরে উল্লিখিত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য নয়, তবে তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং তা করেও।

ডজন ডজন বা কয়েক শ লোকের নাম এফআইআরে তালিকাভুক্ত করা হয়। একে অনেকে ‘পাইকারি এফআইআর’ বলে থাকেন। কারণ, পুলিশ কোনো তদন্ত না করেই যেকোনো সময় এ রকম এফআইআর-ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। বিশেষ করে এসব কারণে ধারাটি অপব্যবহারের সুযোগ অনেক বেশি।

আইনি পরিবর্তন

ধারা ১৫৪-এর লাগামছাড়া অপব্যবহার কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কৃতিত্ব অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া উচিত।

১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর পুলিশকে নির্দেশ পাঠায় ‘যথাযথ প্রমাণ ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গ্রেপ্তার’ না করতে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে নির্দেশ আসে, ‘যদি তদন্ত করে কোনো কর্মকর্তা/ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া না যায়, তাহলে তাঁদের নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এই নির্দেশনা থেকে এর উদ্দেশ্যের সততা ও সমস্যাটির বোঝাপড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবু এই নির্দেশনা সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান করেনি।

প্রথমত, নির্দেশনাটি পাঠানোর পরও এমন খবর পাওয়া গেছে যে পুলিশ ‘পাইকারি এফআইআরের’ ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা অব্যাহত রেখেছে, যেখানে দৃশ্যপট অনুযায়ী পুলিশের কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট অপরাধে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ বা যুক্তিসংগত সন্দেহ আছে বলে বিশ্বাস করার কারণ নেই। আর বাস্তবে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে যে নির্দেশনাই আসুক না কেন, যদি তা কঠোরভাবে মেনে চলা না হয় এবং নজরদারি নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে একবার এফআইআরে কারও নাম এলে সংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে ওই ব্যক্তি যতই সম্পর্কহীন হন, তিনি গ্রেপ্তারের ভয়ে দিন কাটাবেন, তাঁর জীবনযাত্রা ও চলাফেরা হয়ে যাবে সীমাবদ্ধ।

সমস্যাটি খোদ আইনেরই। আইনটি এমনভাবে পরিবর্তন করা উচিত, যাতে পুলিশ শুধু সেই ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তার করতে পারে, যাঁর ব্যাপারে ‘সন্দেহ করার যুক্তিসংগত কারণ’ আছে যে তিনি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তা করার আগে সেই কারণগুলো স্পষ্ট করে লিখিতভাবে উল্লেখ করে তাতে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্বারা স্বাক্ষরিত হওয়া উচিত।

২৪ ঘণ্টার পুলিশি আটক

তাহলে সেই মানুষগুলোর প্রসঙ্গে আসা যাক, যাঁদের বিরুদ্ধে (আমরা ধরে নিচ্ছি) অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁরা এখন পুলিশের কাছে আটক অবস্থায় আছেন আর ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৬৭ অনুযায়ী পুলিশ তাঁদের ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখতে পারে।

আশা করা হয় যে এই ২৪ ঘণ্টা সময়কালে পুলিশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত করবে এবং ব্যক্তিটিকে গ্রেপ্তার ও আরও সময় আটক রাখার পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কি না, তা চিহ্নিত করবে। আর যদি প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

আদতেই ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৬৭ পুলিশকে ঠিক এই কাজগুলোই করার সুযোগ দেয়। কারণ, ধারাটি বলছে যে কেবল তখনই পুলিশ আটকের মেয়াদ বর্ধিত করার আবেদন করতে পারে, যখন ‘বিশ্বাস করার কারণ আছে যে অভিযোগ বা তথ্য সুপ্রতিষ্ঠিত’।

যখন পুলিশ আসামির অপরাধী হওয়ার কোনো প্রমাণ দিতে পারে না বা খুবই সীমিত প্রমাণ উপস্থাপন করে, তখনো ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রায়ই এই পর্যায়ে জামিন প্রত্যাখ্যান করেন। এটা যতটা না আইনের অপ্রতুলতা, তার চেয়ে বেশি প্রয়োগের ব্যর্থতা।

তবে খুব কমই এমন ঘটে।

মজার ব্যাপার যে আপিল বিভাগের নির্দেশিকা (২০২৩ সালে রিভিউতে বহাল) অনুসারে ‘আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তার ব্যক্তি যদি চান, তাহলে তাঁর পছন্দের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ দেবেন’।

গ্রেপ্তারের সময় এই বিধান প্রায় কখনোই বাস্তবায়িত হয় না। যদি তা অনুসরণ করা হয় এবং শুরুতেই অভিযুক্ত ব্যক্তির আরও ভালো আইনি প্রতিনিধিত্ব থাকে, তাহলে পুলিশের পক্ষে ভিত্তিহীন মামলায় আটকের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা আরও কঠিন হবে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সরকার যা বিবেচনা করতে পারে, তা হলো সব পুলিশ কর্মকর্তার জন্য একটি নির্দেশনা প্রকাশ এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি আটক থাকাকালে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগ নিশ্চিত করা।

স্বয়ংক্রিয় রিমান্ড আদেশ

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারার অধীনে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করতে হবে, যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট হয় (ক) সেই ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে ফেরত পাঠাতে পারেন (যা রিমান্ড হিসেবে পরিচিত), যা ১৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে; (খ) সেই ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারেন অথবা (গ) তাঁদের জামিনে মুক্তি দিতে পারেন।

যাহোক, এমনকি যখন কোনো অপরাধে কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পুলিশের কাছে থাকে না, তখনো ম্যাজিস্ট্রেটরা রিমান্ডের জন্য পুলিশের অনুরোধ মানেননি এমনটা বিরল।

আর এমনটা হয় আইনের আরেক বিধান ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৪ ধারার কারণে। এ ধারা ম্যাজিস্ট্রেটকে কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর অনুরোধ গ্রহণ করার অনুমতি দেয় যদি ‘সন্দেহ জাগানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ থাকে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ করে থাকতেও পারে’ এবং মনে হয় যে রিমান্ডে নিলে সে বিষয়ে আরও প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।

তবু একই আপিল বিভাগের নির্দেশিকা বলেছে যে কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে ফেরত পাঠাতে ম্যাজিস্ট্রেটের তখনই রাজি হওয়া উচিত, যদি পুলিশ ফরোয়ার্ডিং লেটার ও কেস ডায়েরি দেখার পর তিনি মনে করেন যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তথ্য ‘সুপ্রতিষ্ঠিত’। তবে প্রমাণ উপযুক্তভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য এই মানদণ্ডকে খুব নিখুঁত সম্ভবত বলা যায় না।

তবু এ নির্দেশিকা যদি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় তাহলে, যার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, এমন কোনো ব্যক্তির বর্ধিত সময় আটক থাকা বন্ধ করার জন্য নির্দেশিকাটি একটি সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে। তবে বাস্তবে এর প্রয়োগ খুব কমই হয় বলে মনে হয়।

‘স্বয়ংক্রিয়’ রিমান্ড আদেশ বন্ধ করার জন্য এই আইনি বিধানটি সংশোধন করা উচিত। তা এমনভাবে করা উচিত, যাতে ম্যাজিস্ট্রেট শুধু তখনই কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডের আদেশ দিতে পারেন, যখন পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করতে পারে যে ওই ‘ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে’। আর এমন করার জন্য তাঁদের এ ব্যাপারটি লিখিতভাবে দিতে হবে।

এবং এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি ও সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ‘অধস্তন আদালতের জন্য তদারকি কমিটি’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার অধ্যায় ১ক-এর অধীনে তাঁদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ম্যাজিস্ট্রেটদের বর্তমান আপিল বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।

জামিন আইনের প্রয়োগ

অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ রিমান্ডে তাঁদের সময় অতিবাহিত করে ফেলার পর তাঁদের আদালতে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তাঁদের পক্ষে জামিনের আবেদন করা যায়। এমনকি যখন পুলিশ আসামির অপরাধী হওয়ার কোনো প্রমাণ দিতে পারে না বা খুবই সীমিত প্রমাণ উপস্থাপন করে, তখনো ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রায়ই এই পর্যায়ে জামিন প্রত্যাখ্যান করেন।

এটা যতটা না আইনের অপ্রতুলতা, তার চেয়ে বেশি প্রয়োগের ব্যর্থতা।

ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৭(১) বলে যেকোনো ব্যক্তিকে জামিন না দেওয়ার একমাত্র কারণ ‘যদি বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ দেখা যায় যে তিনি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধে দোষী হয়েছেন’।

‘বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ দেখা যায় যে তিনি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য কোনো অপরাধে দোষী হয়েছেন’—এটা যাচাইয়ের মান হিসেবে বেশ উঁচু। তাই আশা জাগবে যে সেই ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানোর ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য ওই ব্যক্তির অপরাধে ব্যক্তির জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণের প্রয়োজন হবে বিচারকের। আদালতের নজির থেকে বোঝা যায় যে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হলে ম্যাজিস্ট্রেট জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তির পালিয়ে যাওয়া বা প্রমাণ নিয়ে কারচুপির সম্ভাবনা বিবেচনা করতে পারেন।

তবে অনেক আইনজীবীর মতে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জামিনের আদেশ নিয়মিতভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। আর এমনটা প্রায়ই হয় সাক্ষ্য পরীক্ষার কোনো সূত্র ছাড়াই। আর অনেক ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কোনো স্পষ্ট যুক্তি ছাড়াই ধরে নেন যে অভিযুক্ত পলাতক হবে বা প্রমাণাদিতে হস্তক্ষেপ করবেন।

আবার প্রধান বিচারপতি ম্যাজিস্ট্রেটদের ন্যায্য ও স্বাধীনভাবে ধারা ৪৯৭(১) প্রয়োগ করার জন্য নির্দেশ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন, যেন যথোপযুক্ত হলে জামিন দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে একটি তদারকি প্রক্রিয়া স্থাপন করতে পারেন।

অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

ভিত্তিহীন কোনো মামলায় গ্রেপ্তারের সম্মুখীন কারও ‘অন্তর্বর্তীকালীন’ জামিনের আবেদন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলে তা আরেকটি সহায়ক পদক্ষেপ হতে পারে।

বর্তমানে হাইকোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শুধু জুলাই হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। এখন পর্যন্ত আদালত শুধু আইনজীবীদের এই সুযোগ দিয়েছেন। অনেক মানুষের ‘পাইকারি’ এফআইআরে তালিকাভুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই তালিকাভুক্তদের বেশির ভাগই আইনজীবী নন। সম্ভবত আদালত বা প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করতে পারেন যে বিভিন্ন স্তরের মানুষ অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাবেন। অন্য কোনো পদ্ধতি বৈষম্যমূলক বলে মনে হতে পারে।

সন্দেহ নেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার, দোষী সাব্যস্ত করা এবং শাস্তির নিশ্চয়তা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে নিরপরাধদের হয়রানি রোধ করতে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগত সংস্কার আনার জন্য শুধু উল্লিখিত পদ্ধতি এবং বিধিগুলোর সংস্কারই যথেষ্ট হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে পুলিশের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব অপসারণ করা এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ ছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা এখানে স্পষ্টতই মুখ্য। কিন্তু যতক্ষণ না এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো সম্পন্ন হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের উচিত ১২০ বছরের পুরোনো আইনটিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়া, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাগুলোকে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করা। গ্রেপ্তার ও আটকের ব্যাপারগুলো কেমন করে সামলাতে হবে, এ বিষয়ে স্বয়ং সুপ্রিম কোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটদের এবং উচ্চ আদালতের বিচারকদের নির্দেশনা দেওয়ার ব্যাপারটিও যাচাই করতে পারেন।

ডেভিড বার্গম্যান সাংবাদিক। বহু বছর ধরে আইসিটির বিচার কার্যক্রম ও বাংলাদেশ নিয়ে লিখছেন।

তাঁর এক্স হ্যান্ডল @TheDavidBergman