নির্বাচনের পর রাজনীতি কোন পথে

আজ ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং জোটের শরিক মিত্ররা অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত–সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। তবে সরকারঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ বলছেন, সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চেষ্টা করেছে। আবার অন্য পক্ষ বলছে, একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা আরও দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে পাঁচ কবি–লেখক, অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতার অভিমত।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চেষ্টা সরকারের ছিল

তারিক সুজাত, কবি, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন তো অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম। ভোটের আয়োজন এখন চূড়ান্ত পর্বে। ভোট যাতে অংশগ্রহণমূলক হয়, সে লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা ছিল গোড়া থেকে। এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন। পাশাপাশি নতুন ভোটারের সংখ্যা পূর্ববর্তী যেকোনো সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। তাঁরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্যতম প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন।

এবার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ছিল না বলে মনে করি না। তদুপরি কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে আমার কথা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদেরও একটি বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী। মূলধারার রাজনীতির জন্য অনুকূল নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অধিকসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে বলে আমি আশাবাদী।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক—এটি সবারই প্রত্যাশা। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কেবল নির্বাচন প্রশ্নে নয়, দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বিকল্প নেই।

কিছু কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা হচ্ছে বটে। কিন্তু নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ, এ কথা ঠিক নয়। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের নির্বাচনে সহিংসতার পরিমাণ কম। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ লক্ষণীয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অনেক পজিটিভ (ইতিবাচক) সংবাদও আমরা লক্ষ করেছি। আবার সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদও পরিবেশিত হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না, বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধেও বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভূমিকা সঠিক ছিল না।

আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেখানেই রয়ে গেলাম কি

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, চলচ্চিত্র নির্মাতা

আমার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, আমরা যে তিমিরে ছিলাম, সেখানেই রয়ে গেলাম কি? নাকি তিমির আরও গভীর হলো। নাকি সামনে ভোর আসছে। আমার এ রকম মনে হওয়ার কারণ, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগবিহীন একটি জাতীয় নির্বাচন যেমন অংশগ্রহণমূলক হয় না, একইভাবে বিএনপিবিহীন নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলে দাবি করা যায় কি?

আমরা সুশাসন চাই, অবিচারমুক্ত, জুলুমমুক্ত জীবন ও দেশ চাই। নিরাপত্তা চাই। নাগরিকের মর্যাদা চাই। লুটপাটমুক্ত রাষ্ট্র কাঠামো চাই। যদি না সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য একটা নির্বাচন হয়, তাহলে কোনো চাওয়াই কাজে আসবে কি? নির্বাচনই হলো নাগরিকদের সেই রক্ষাকবচ আর রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহির টুল (ভিত্তি)। আমার ভোটই যদি নেতাদের দরকার না হয়, তিনি কী কারণে আমার কথা শুনবেন বা আমাকে গ্রাহ্য করবেন?

উৎসবের সঙ্গে উৎকণ্ঠা যুক্ত হয়েছে, আছে নাশকতার শঙ্কাও

রাশেদা রওনক খান, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবিধান অনুযায়ী সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। সে অনুযায়ী এখন নির্বাচন হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব হলো সেই নির্বাচনে ভোট দেওয়া। তবে সব দলের অংশগ্রহণ থাকলে এই নির্বাচন আরও উৎসবমুখর হতো। কিন্তু এখন উৎসবের সঙ্গে উৎকণ্ঠা যুক্ত হয়েছে। এর সঙ্গে আছে নাশকতার শঙ্কাও। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে। ভোটের দিন আরও নাশকতা হয় কি না, সেটিও কেউ নিশ্চিত করতে বলতে পারছে না।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা। সে জন্য তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি বোঝা যাবে ভোটের দিনের পরিবেশের ওপর। তবে এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে ভোট শান্তিপূর্ণ হতে পারে।

আর এই নির্বাচনের পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে, সেটি এ মুহূর্তে বলা কঠিন। মনে রাখতে হবে, এখন সারা বিশ্বেই একধরনের অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি কী হয়, সেটি বলা মুশকিল। বোঝাই যাচ্ছে, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। কিন্তু বড় প্রশ্নটি হচ্ছে, বিরোধী দল কে হবে। কারণ, শক্তিশালী বিরোধী দল সংসদে থাকলে সুশাসন নিশ্চিত করতে অনেকটাই গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই শক্তিশালী বিরোধী দল কারা হবে, তার ওপর সামনের বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও নির্ভর করছে।

শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না হলে বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকট বাড়বে

শান্তনু মজুমদার, অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তরবঙ্গের একটি জেলা দুই দিন আগে ঘুরে এসেছি। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে বেশি আলোচনা দেখেছি। নির্বাচন নিয়ে দারুণ উত্তেজনা দেখিনি। একই সঙ্গে নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের এতটুকু আগ্রহ নেই, এ ধরনের কথাবার্তাকে অতিকথন মনে হয়েছে।

নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে—এই প্রশ্নের একটি সমস্যা হচ্ছে, আলোচনা স্কয়ার ওয়ানে ফিরে যাওয়ার সমস্যা। অর্থাৎ ঘুরেফিরে একই জায়গায় ফিরে যাওয়া। বিরোধীপক্ষ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে এবং ‘নিরপেক্ষ’ নামে পরিচিতি পাওয়া অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া না হলে নির্বাচন ত্যাগ করার কথা বলছিল। তারা তাদের অবস্থানে অনড় আছে। সরকারপক্ষ
এই দুই ক্ষেত্রে কোনো ছাড়ে আগ্রহী নয়। এমতাবস্থায় পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কীভাবে হতে পারে?

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট করে নজির করতে চায়, খুব ভালো কথা। নজির সৃষ্টি হলে খুব ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে মনে হয় কুতথ্য প্রচারকারী এবং সহিংসতাপ্রবণ প্রার্থীদের প্রতি সচেতন হওয়ার আহ্বানের পরিবর্তে ওনাদের আচরণগত পরিবর্তনে বাধ্য করাটা বেশি জরুরি। নির্বাচনের মৌসুমে বিবেক জাগ্রত করানোর সময় নেই। এখন বিনা-বিলম্ব শাস্তি দিয়ে, রূপক অর্থে বলছি, ওনাদের সিধা করার সময়। ভোটের দিনও এটাই মাথায় রাখা দরকার। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরা শুধু নন, ভোট ও ভোটারদের যারাই ঠেকাতে চাইবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। ২০২৪ সালে বিশ্বে সম্ভবত ৫০টির বেশি দেশে নির্বাচন হবে। আমাদেরটা বোধ হয় প্রথম। নির্বাচন নিয়ে কাজ করা যাবতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না হলে বহির্বিশ্বে ইমেজ (ভাবমূর্তি) সংকট বাড়বে। দলের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে গৃহদাহ বাড়বে। জনগণের আস্থা আরেকবার কমবে।

এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কী বলছে, কেন বলছে, কোন গণমাধ্যম কতটুকু বলছে—এগুলো দেখাটা নিশ্চয়ই ইন্টারেস্টিং হবে। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনের প্রভাব রাজনীতি ছাড়িয়ে সমাজের মধ্যে ঢুকে পড়ে কী ধরনের অনিষ্ট করছে, তা বুঝতে পারাটা। এই নির্বাচনের পরেও ফয়সালা না হওয়া দুই দাবি হয়তো আবার ফিরে আসবে। আসুক, কথা হোক। বাগ্‌বিতণ্ডা হোক। বার্তা চালাচালি হোক। কিন্তু সহিংসতা না হোক। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে কুতথ্য না হোক।

এ নির্বাচন গণতন্ত্র নয়, স্বৈরতন্ত্রের ভিত পোক্ত করবে

আ-আল মামুন, অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

গত এক যুগের রাজনৈতিক তৎপরতা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে কয়েকটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভিন্নমত প্রবলভাবে দমন করা হয়েছে, সরকারি নীতির সমালোচনামূলক কোনো রকম গণজমায়েত হতে দেওয়া হয়নি। সর্বোপরি বিরোধী দলগুলোর ওপরে চলেছে নিপীড়ন, জেল-জরিমানা। গত অক্টোবর থেকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশকে জেলে ঢোকানো হয়েছে, অদ্ভুত সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বারো শতাধিক নেতাকে। আর এসব দমন–পীড়নের ক্ষেত্রে সরকারি দল, তাদের অঙ্গসংগঠন, মিডিয়ার একটি অংশ, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন ও আদালত একযোগে কাজ করেছেন। সরকার, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের পার্থক্য একেবারে ঘুচিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে অংশীদারত্বমূলক ও অবাধ নির্বাচনের পরিস্থিতি আগে থেকেই ছিল অনুপস্থিত।

তফসিল ঘোষণার পরে সরকারি দলের প্রার্থী ও সমমনা নামসর্বস্ব দলগুলোকে যেভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, আসন ভাগাভাগি করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। এ ক্ষেত্রে এমন এক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে যে ভোটাররা ভোট দিক বা না দিক সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হবেই হবে। উপরন্তু যে বা যাঁরাই নির্বাচিত হয়ে আসুন না কেন, তাঁরা সরকারেরই পছন্দের লোক—নৌকার প্রার্থী, প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত ‘ডামি’ বা স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সরকারেরই পছন্দের তথাকথিত বিরোধী প্রার্থীরা সংসদ গঠন করবেন। সব রসুনের কোয়া গিয়ে বাঁধা পড়েছে এক হাতে! এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার অঙ্গীকার অযথা বাগাড়ম্বর। কারণ, ফলাফল তো আগেই আমরা জেনে ফেলেছি। কেবল, ভোট গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা ও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণার কাজটি বাকি আছে! ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে আমরা সংসদে ‘পুতুল’ বিরোধী দল পেয়েছিলাম। কিন্তু এবারের কৌশল এমনই এক পরিণতি ডেকে আনবে যে সংসদে আদতে বিরোধী দল বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই থাকবে না।

জনগণের ম্যান্ডেটের অনুপস্থিতির কারণে নিরঙ্কুশ আধিপত্যের নতুন পর্ব শুরু হবে নির্বাচনের পরে। প্রার্থীদের প্রচারণায় হুমকি–ধমকির প্রবল ব্যবহার তা স্পষ্ট করেও তুলেছে। দেশে–বিদেশে এ সরকার নৈতিক বৈধতা পাবে না। তাদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হবে আরও বেশি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, যা দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে বলেই আশঙ্কা। কারণ, জন–সন্তোষ মোকাবিলার আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তিমূলক চেতনা। স্বাধীনতার অর্ধশতক পরে সেই প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে আরও সুদূর অন্ধকারে পাঠিয়ে দেওয়ার সব আয়োজন এবার সম্পন্ন হয়েছে!