শেফায়েত সরদার ১৯৫৪ সাল থেকে ভোট দিচ্ছেন।
শেফায়েত সরদার ১৯৫৪ সাল থেকে ভোট দিচ্ছেন।

ভোটচিত্র

‘টুকটাক’ ভোটের ‘ব্যতিক্রমী’ নির্বাচন

আওয়ামী লীগের মনোনীত এক, ডামি দুইসহ মোট ১৪ জন ঢাকা–৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ‘ব্যতিক্রমী’ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ‘টুকটাক’।

ভোট সম্পর্কে এই মূল্যায়ন যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দায়িত্বরত এক আনসার ও পুলিশ সদস্যের। চাকরিতে অসুবিধা হতে পারে—এই বিবেচনায় তাঁরা নাম প্রকাশ করেননি।

সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের প্রথম দুই ঘণ্টায় যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্রগুলোয় ভোট পড়েছে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ। যেমন একটি কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৪০টি ভোটের মধ্যে প্রথম ২ ঘণ্টায় ভোট পড়ে ৬৭টি, একই প্রতিষ্ঠানের অপর একটি কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৬৪টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়ে ১৪৪টি।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলেছেন, বেলা গড়ালে হয়তো ভোটের হার কিছুটা বাড়তে পারে।

এই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছয়টি কেন্দ্রের একটিতেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার জন্য কাউকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি। পরিবেশ ছিল নিরিবিলি। ভোটারদের চেয়ে সব সময় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের উপস্থিতি ছিল বেশি। আর কেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও ট্রাকের সমর্থকদের জটলা ছিল।

উৎসাহ–উদ্দীপনা ছিল মূলত আওয়ামী লীগের মূল ও ডামিদের অনুসারীদের মধ্যে।

শফিকুল ইসলাম রবিন শারীরিক প্রতিবন্ধী, কোমরের নিচ থেকে অচল। হাতে ভর দিয়ে তিনতলায় উঠে তিনি ভোট দেন। ৮৬ বছর বয়সী হাজী শেফায়েত উল্লাহ সরদার চোখে সুরমা ও সফেদ পাঞ্জাবি পরে স্বজনের ঘাড়ে হেলান দিয়ে ভোট দিতে আসেন। সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন তাসনীম সিদ্দিকি। প্রথমবার ভোটার হয়েছেন। তিনি এসেছিলেন বাবার সঙ্গে।

শফিকুল ভোট দিতে পেরে খুশি। বলেছেন, ভোট খুব ভালো হচ্ছে। কথা বলার সময় তাঁর জ্যাকেটের ভেতর থেকে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী ডেমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা ওরফে সজল মোল্লার কার্ড উঁকি দিচ্ছিল।

শেফায়েত সরদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে ভোট দিচ্ছেন। এবার খুবই ভালো ভোট হচ্ছে। তারুণ্যে আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন, এখন সমর্থক।

বিএনপি এল না, ভোটারদের লাইন নেই, এই নির্বাচন ব্যতিক্রমী কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি না আসায় কোনো অসুবিধা নেই। তারা কেন আসেনি, তারাই জানে। তাদের কোনো নেতা নেই।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নেসার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটার কম।

বেলা ১০টার দিকে কমনওয়েলথের একটি পর্যবেক্ষক দল আসে। তবে তারা ভোট কেমন দেখছে, সে প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

প্রার্থী বিবেচনায় ঢাকা–৫ আসন ‘তুমি, আমি আর ডামি’র আদর্শ উদাহরণ। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন যাত্রাবাড়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনর রশীদ মুন্না। তিনি নৌকার প্রার্থী। অপর দুজন হলেন ট্রাক প্রতীক নিয়ে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা ওরফে সজল মোল্লা এবং ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন।

এর বাইরেও এই কেন্দ্রে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএফ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ইসলামি ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছেন। তাঁদের অবশ্য এলাকার ভোটাররা খুব বেশি চেনে না।

  • শেখ সাবিহা আলম প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক। ই–মেইল: sabiha.alam@prothomalo.com