আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে জো বাইডেন সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের একজন।
গ্যালাপের জরিপে দেখা গেছে, ডোয়াইট আইজেনআওয়ার থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত যে কেউ দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করার সময় যতটা জনসমর্থন পেয়েছেন, সে তুলনায় বাইডেনের অ্যাপ্রুভাল রেটিং কম। তবে তারপরও বাইডেনের বাজে পোলিং নম্বর ঘিরে রহস্যময়তা ছড়িয়ে আছে।
দ্য ওয়াশিংটন ফ্রি বিকন নামের একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটে নিজের প্রতিবেদনে সাংবাদিক জো সিমোনসন সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন, বেশির ভাগ মার্কিন মিডিয়া এবং জনসংস্কৃতির বদৌলতে আপনি সম্ভবত বুঝতে পারবেন না, বাইডেনের ক্ষমতায় থাকার জন-অনুমোদনের রেটিং ঐতিহাসিকভাবে কতটা ভয়ানক অবস্থায় আছে।
আপনি সম্ভবত বুঝতে পারবেন না, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যে বাজে জন–অনুমোদন রেটিং ছিল, বাইডেনের রেটিং তার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে।
বাইডেনের বার্ধক্যজনিত উদ্বেগের বিষয়ে সাধারণ মানুষ একমত হলেও প্রেসিডেন্ট পদে আসীন থাকার বিষয়ে বাইডেনের মধ্যে কী খামতি আছে, সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য নেই।
সম্ভবত এ কারণেই বাইডেনের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণকে একটি সরব সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তাড়াহুড়া করা হয়েছিল। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর পরিবেশনার ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, বাইডেনের ঠিকঠাকভাবে যে কাজগুলো অবশ্যকরণীয় ছিল, তার মধ্যে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উচ্চ স্বরে কথা বলা একটি।
বাইডেনের আগের অন্য ‘সাম্প্রতিক’ প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা যখন কমেছিল, তখন তার পেছনে কোন কোন বিষয় কাজ করেছিল, তার একটা পরিষ্কার ধারণা সবার ছিল।
যেমন ট্রাম্পের অজনপ্রিয়তাকে তাঁর খামখেয়ালি ও পাগলামি আচরণ এবং কর্তৃত্ববাদী কাজকারবারের প্রতিফল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। জরিপে জর্জ ডব্লিউ বুশের জনসমর্থনের পারদ পড়ে যাওয়ার গল্পটি ইরাক এবং হারিকেন ক্যাটরিনাকে ঘিরে আবর্তিত ছিল।
এ অবস্থায় বাইডেনের পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি, তা প্রথমে আমলে নিতে হবে এবং সে বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। তা না হলে তিনি শেষ পর্যন্ত গদি হারিয়ে বসতে পারেন।
বারাক ওবামা যখন ভোটাভুটির সময় চাপে ছিলেন, তখন বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক তাঁর সময়ের বেকারত্বের হার এবং তাঁর চালু করা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম ওবামাকেয়ারের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে দায়ী করেছিলেন। বিল ক্লিনটন যখন চাপে ছিলেন, তখন তাঁর কর্মসম্পাদনে শৃঙ্খলার অভাব এবং হোয়াইট হাউসে তাঁকে জড়িয়ে সংঘটিত কেলেঙ্কারির বিষয়ে একটি স্পষ্ট মিডিয়াভাষ্য ছিল।
তবে বাইডেনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির হার কমিয়ে আনার জন্য তাঁর সংগ্রামকে খুবই সহমর্মিতা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাত ও মেরুকরণের অভিযোগ উঠলেও সেগুলোকে ব্যাখ্যার জন্য একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল। ফলে কিছুদিন আগে পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। এমনকি তাঁর বয়সের সমস্যাটি শুধু গত কয়েক মাসে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।
এই রহস্যময়তা সমসাময়িক পরিস্থিতি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে উদার সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষপাতকে প্রতিফলিত করে। বিশেষ করে অভিবাসন ও সীমান্তের বিষয়গুলোকে সামনে আনার বিষয়ে উদার সংবাদমাধ্যমের অনাগ্রহ অনেকটাই স্পষ্ট।
উগ্র ট্রাম্পবাদের বিরুদ্ধে একমাত্র বাধা হিসেবে দাঁড়ানো একজন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কিছু বলতে তাদের মধ্যে যে দ্বিধা কাজ করে, সেটিই তাদের সেই অনাগ্রহের কারণ হতে পারে।
তবে এই রহস্যময়তার বিষয়ে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আমি মনে করি, বাইডেনের রেকর্ডে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে এবং বাইডেন সমর্থকেরা তাঁদের প্রেসিডেন্টের আমলের অর্থনীতিকে যতটা সোনালি হিসেবে দেখাতে চান, আদতে ততটা নয়। সেই আমিই তাঁর অ্যাপ্রুভাল রেটিংয়ের দিকে চেয়ে তাঁর নম্বর দেখে অবাক বিস্ময় নিয়ে ভাবি, বাইডেনের অবস্থা আসলেই কি এতটা খারাপ?
আমি এ–ও মনে করি, আমরা যে রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস টের পাচ্ছি, সেখানে শ্রেণি ও শিক্ষার ভিত্তিতে কে ডানপন্থী, কে বামপন্থী, তা ঠিক করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানবিরোধী রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি ডানপন্থার দিকে মোড় নিচ্ছে। এ অবস্থায় এ ধরনের মিডিয়া রহস্যময়তাই আপনি আশা করতে পারেন।
এই রাজনৈতিক রূপান্তরের অর্থ হলো, যে রিপাবলিকান ভোটারদের সমর্থন বাইডেন কখনোই পাননি বা পাবেন না, তাঁরা ক্লিনটন বা ওবামার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগের সময়ের রিপাবলিকান ভোটারদের তুলনায় উদারপন্থীদের থেকে সাংস্কৃতিকভাবে অনেক বেশি দূরে সরে যাবেন।
সুইং ভোটাররা বাইডেনের অনুমোদনের রেটিংকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রবণতাকে সাংস্কৃতিক এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে অপ্রত্যাশিত বলে মনে হচ্ছে।
অনেকে আছেন রাজনৈতিকভাবে মধ্যপন্থী সংখ্যালঘু ভোটার, বিশেষত নিম্নমধ্যবিত্ত হিসপানিক এবং আফ্রিকান–আমেরিকান ভোটার, যাঁরা বড় সংখ্যায় বাইডেনকে পরিত্যাগ করছেন বলে মনে হচ্ছে।
এ অবস্থায় বাইডেনের পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি, তা প্রথমে আমলে নিতে হবে এবং সে বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। তা না হলে তিনি শেষ পর্যন্ত গদি হারিয়ে বসতে পারেন।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
রস ডোথ্যাট, নিউইয়র্ক টাইমসের কলাম লেখক