মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে গাধার সংখ্যা বেশি। সে কারণে এই প্রাণী কয়েকটি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে তোলা
মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ধারণক্ষমতার চেয়ে গাধার সংখ্যা বেশি। সে কারণে এই প্রাণী কয়েকটি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে তোলা

রম্যকথন

কার গাধা, কোন গাধা, কে বেচে, কে কেনে

জাতীয় চিড়িয়াখানা গাধা বিক্রি করতে চেয়েছে। গুনে গুনে সাতটি।

মানে, তাদের আছে ১৩টি গাধা। সাতটি সুপারনিউমেরারি মানে কিনা সংখ্যাতিরিক্তি। মানে বাড়তি। ফালতু।

সে বেচারাদের বিক্রি করার অনুমতি চেয়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মারফত খোদ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে (প্রথম আলো, ২৮ ফেব্রুয়ারি)।

খবরটা যাকে বলে জটিল। মনে নানা রকম প্রশ্ন আর আশা জাগছে। আনন্দ যেমন হচ্ছে, আশঙ্কাও উঁকি দিচ্ছে। সেটাও নানাবিধ।

যেমন চিড়িয়াখানা নাকি মাত্র ছয়টি গাধা ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। বাড়তি গাধার গুনতিতে ভুল হয়নি তো? মাত্র সাত?

চিড়িয়াখানায় আরবি আর দেশি ঘোড়া, ইমু পাখি, দেশি আর জালালি কবুতরও বাড়তি হয়েছে। তাদেরও বিক্রি করার অনুমোদন চেয়েছে চিড়িয়াখানা।

আরবি ঘোড়ার বাজার নিয়ে আমার চিন্তা হচ্ছে না। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হতে আগ্রহী রাজা-রানি রাজপুত্র-রাজকন্যাদের অভাব দেশে নেই।

আভিজাত্যের জোরে ইমু পাখিও খদ্দের পাবে। আর জালালি কবুতরেরা চরে খেতে পারবে। আমার চিন্তা গাধাদের নিয়ে। কোথায় যেন নিজের সঙ্গে মিল খুঁজে পাই...।

চিড়িয়াখানাতেই যদি গাধারা সংখ্যায় বাড়তি হয়, বিক্রি করার বাজার পাওয়া যাবে তো? মানে আমরা কি চিড়িয়াখানা-জগতের বাইরে গাধার সংখ্যা জানি? কখনো শুমারি হয়েছে বলে তো শুনিনি; তাই ভয় হচ্ছে, দেশের সব পরিসরেই যদি গাধার কোটা ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গিয়ে থাকে?

গাধার বাজারদর আছে কি নেই, সেটা নিয়ে অবশ্য কখনো ভাবিনি। চিড়িয়াখানার উদ্যোগের কথা জেনে একটু আশা হতে যাচ্ছিল, তবে একটা বেমক্কা প্রশ্ন মনে ভয় জাগাচ্ছে।

চিড়িয়াখানাতেই যদি গাধারা সংখ্যায় বাড়তি হয়, বিক্রি করার বাজার পাওয়া যাবে তো? মানে আমরা কি চিড়িয়াখানা-জগতের বাইরে গাধার সংখ্যা জানি?

কখনো শুমারি হয়েছে বলে তো শুনিনি; তাই ভয় হচ্ছে, দেশের সব পরিসরেই যদি গাধার কোটা ইতিমধ্যে পূরণ হয়ে গিয়ে থাকে?

আত্মস্বীকৃত এক নারী গাধা হিসেবে মোটামুটি আলো-ঝলমল একটা ভবিষ্যৎ প্রায় যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। এই এক প্রশ্ন সব মাটি করে দিল।

জাতীয় চিড়িয়াখানার উদ্বৃত্ত গাধারা যদিবা অন্য চিড়িয়াখানায় স্থান পায়, আমার মতো দুপেয়ে গাধারা কি ফালতু হয়েই ঝুলে থাকবে?

চারপেয়ে গাধারা দেখতে মিষ্টি, সুশীল। লেজবিশিষ্ট, তবে শান্তশিষ্ট। ব্রিটানিকা বিশ্বকোষ বলছে, তারা মানুষের বোঝা বহন করে আসছে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে।

তারা মানুষের খোঁচা আর অবজ্ঞার ভারও বহন করছে। তারা সুবিধাবঞ্চিত এবং দেশে দেশে কালে কালে কথায় কথায় শ্লেষের শিকার। দুপেয়ে গাধারাও তাদের দাম দেয় না।

গাধাদের কী গতি হবে, কেউ কি তাদের কথা ভাবে? গুগলমামাকে একটা টোকা দিতেই এক প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেলাম—দ্য ডাঙ্কি স্যাংকচুয়ারি, অর্থাৎ গাধাদের অভয়াশ্রম।

যুক্তরাজ্যে ডেভনের সিডমাউথ শহরে এই স্বেচ্ছাসেবী দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মূল দোকান। https://www.thedonkeysanctuary.org.uk/all-about-donkeys—এই ওয়েবঠিকানায় গেলে গাধা এবং গাধাহিতৈষীদের সম্পর্কে অনেক না-জানা কথা জানতে পারবেন।

প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, দুনিয়ায় পাঁচ কোটির বেশি গাধা আছে। প্রতিষ্ঠানটির কাজকারবার সবই অবশ্য চারপেয়ে গাধাদের নিয়ে।

গুগলমামাও দুপেয়ে গাধাদের খবর রাখে না। আর চিড়িয়াখানার সীমা কত দূর যায়, সে প্রশ্ন মনে রয়েই গেল।

  • কুর্‌রাতুল-আইন-তাহ্‌মিনা সাংবাদিক ও প্রশিক্ষক
    qurratul.tahmina@gmail.com