১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সামরিক বাহিনীর অনেক বাঙালি সদস্যের মতো ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারী পাকিস্তানে আটকে পড়েন। মেজর তাহের, মেজর জিয়াউদ্দিন ও মেজর মঞ্জুরের সঙ্গে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁর এসব অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথমা প্রকাশন থেকে সম্প্রতি নাসির উদ্দিন আহাম্মেদের সম্পাদনায় শত্রুভূমি থেকে সম্মুখসমরে নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বিজয়ের মাস উপলক্ষে সেই বই থেকে চুম্বক অংশ দুই পর্বে প্রথম আলোর পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব।
শিয়ালকোট পেছনে ফেলে আমরা জাফরওয়ালের রাস্তা ধরে রাত ১০টার দিকে সেতুর ওপর দিয়ে চেনাব নদী অতিক্রম করলাম। সামনে সীমান্ত শহর জাফরওয়াল। শহরটি পার হওয়ার পরই সীমান্তের দিককার রাস্তা। শহর এলাকা ত্যাগ করে আমাদের গাড়ি যতটা সম্ভব দ্রুত ছুটছে পূর্ব দিকে। মেজর মঞ্জুর তাঁর আগের অনুমান ও পরিকল্পনা মোতাবেক রাস্তার পাশের একটি মাইলফলক দেখে গাড়ি থামালেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির লাইট অফ করে দিলেন। শেষ মুহূর্তে দেখলাম, ঘড়িতে রাত সাড়ে ১০টা।
গাড়ি থেকে নেমে আমরা দ্রুতগতিতে রাস্তা ছেড়ে পূর্ব দিকের সীমান্ত বরাবর এগিয়ে গেলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার। চারদিকে সুনসান নীরবতা। পেছনে মেজর মঞ্জুরকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিল। তিনি গাড়ি লক করে চারদিকে একনজর দেখে নিলেন। ইশারা দিলেন সামনে এগিয়ে যেতে। তিনিও দ্রুত যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে।
একে তো অন্ধকার, তার ওপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাইরে কোনো লোকজন থাকার কথা নয়। তবু অজানা আশঙ্কা বারবার মনে দোলা দিচ্ছিল। কারণ, যুদ্ধকালে এমন নির্জন জায়গাতেই মাইন পুঁতে রাখা হয় বা তারকাঁটা ও বুবিট্র্যাপ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। তবে কোনো ভাবনাই এখন আর থামাতে পারবে বলে মনে হলো না। কারণ, বারবার মনে হচ্ছিল, পেছনে যমদূত তেড়ে আসছে। বাঁচার উপায় একটাই,Ñসামনে এগিয়ে যাওয়া।
হালকা বৃষ্টির কারণে একটু শীত শীত ভাব ছিল। তবু ঘামে ভেতরের কাপড় ভিজে যাচ্ছিল। বৃষ্টি ও সেচের পানির কারণে পায়ের নিচের মাটিও ভেজা ছিল। কোথাও আবার থিকথিকে কাদা। এমন অবস্থায়ই ঢুকে পড়লাম গমখেতে। বিশাল এলাকাজুড়ে এই গমখেতের ভেতর দিক নির্ণয় করা কঠিন। মেঘের কারণে আকাশে কোনো চাঁদ বা তারারও অস্তিত্ব ছিল না। কেবল অনুমান করেই পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতে থাকি।
অসমসাহসী কমান্ডো মেজর তাহের সবার সামনে। ভাবটা এমন যে কোনো বাধা এলে তিনি একাই সামাল দেবেন। কারও গায়ে কোনো আঁচড় লাগতে দেবেন না। আমাদের পায়ে বুট জুতা। বনজঙ্গল বা কর্দমাক্ত ফসলের মাঠ ধরে চলাচল আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু মিসেস মঞ্জুর ছিলেন নাজুক পরিস্থিতিতে। একদিকে এমন জায়গা দিয়ে চলাচলের অভ্যাস না থাকা, অন্যদিকে পায়ে কেডস থাকায় তাঁর পক্ষে এগিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল। বারবার তাঁর পা ও কেডস কাদায় আটকে যাচ্ছিল। মেজর মঞ্জুর দ্রুতই তাঁকে টেনে তুলতেন। আমরাও তাঁকে সামনে এগিয়ে যেতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। অতুলনীয় মনের জোর ছিল মিসেস মঞ্জুরের। মনে পড়ে, একবার কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ধরা পড়লে তিনি নিজেই নিজের ওপর গুলি চালাবেন, পশ্চিমাদের হাতে বন্দী বা নাজেহাল হবেন না। তবে বাচ্চা দুটির দিকে তাকালেই দুর্বল হয়ে যেতেন এই মা। আমরা পালাক্রমে বাচ্চাদের কখনো কোলে, আবার কখনো কাঁধে নিয়ে এগোতাম। কাঁধে নিলে দূর থেকে কেউ দেখে ফেলতে পারে, এমন ভয়ও ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে প্রায় আড়াই শ গজ এগিয়ে যাওয়ার পর দূর থেকে ভেসে আসা গাড়ির শব্দ আমাদের পথচলা স্তব্ধ করে দিল। পেছনে ফেলে আসা রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি, শিয়ালকোটের দিক থেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে একটি গাড়ি। হেডলাইটের তীব্রতা এবং গাড়ির শব্দ শুনে বুঝতে পারলাম, এটি একটি সামরিক জিপ। অন্ধকারে আমরা একে অপরের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না। তবে সবাই যে ভয় পেয়েছিলাম, তা বলাই যায়। কারও কোনো ইশারা ছাড়াই যে যার মতো গমখেতে বসে পড়লাম। প্রথমে যতটা সম্ভব মাটির সঙ্গে মিশে থাকার চেষ্টা করলাম। এরপর ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়ই একটু মাথা উঁচু করে আবারও ফেলে আসা রাস্তার দিকে তাকালাম।
সামরিক জিপ আরও এগিয়ে এল। মনে হলো, জিপের আরোহীরা একটু দূর থেকেই আমাদের ছেড়ে আসা ভক্সওয়াগন দেখতে পেয়েছে। ক্রমেই গতি কমিয়ে জিপটি ঠিক ঠিক থামল আমাদের ভক্সওয়াগনের কাছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এমন জিপে দূরপাল্লার মেশিনগান সংযোজন করে টহল দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাই মনে অজানা আশঙ্কা উঁকি দিল। মনে হলো, এই বুঝি তারা আমাদের দেখে ফেলবে আর মেশিনগানের গুলির বৃষ্টি ঝাঁঝরা করে দেবে আমাদের। পায়ের চিহ্ন বা গমখেতের ফাঁক দেখে আমাদের পিছু নেওয়া বা ধাওয়া করাও বিচিত্র নয়। তাই বুকের স্পন্দন বেড়ে গেল। এরই মধ্যে তারা যখন টর্চের আলো ফেলে চারদিকে দেখছিল, তখন আমাদের আশঙ্কা আরও বেড়ে গেল। মনে হচ্ছিল, এই তো এক্ষুনি ধারালো বেয়নেট–সংযুক্ত অস্ত্র নিয়ে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়বে আমাদের ওপর। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে তেমন কিছু হলো না। আলো ফেলে চারদিক দেখে কয়েক মিনিটের মধ্যে জিপটি সামনে এগিয়ে গেল। আমরা আরও কিছুক্ষণ ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাটিতে মিশে থাকলাম। কারণ, শত্রু ঘায়েলের একটি কৌশল হলো, গাড়ি থেকে অস্ত্রসহ নেমে গোপনে অবস্থান করা এবং গাড়িটি সামনে পাঠিয়ে দেওয়া। এরপর কোনো নড়াচড়া দেখলেই গুলি ছোড়া। এমনটা ভেবেই আমরা কিছুক্ষণ যার যার অবস্থানে অপেক্ষা করলাম। এরপর যখন বুঝলাম, না, কেউ গুলি করা বা আক্রমণ করার আশঙ্কা নেই, তখন আবার হাঁপ ছেড়ে দাঁড়ালাম এবং পূর্ব দিকের সীমান্ত বরাবর আবারও পথচলা শুরু করলাম।
এদিকে আকাশের অবস্থা আরও খারাপ হওয়া শুরু হলো। মেঘের ঘনঘটা ক্রমেই বাড়তে লাগল। মাঝে মাঝে তীব্র শব্দে বজ্রপাত হচ্ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। একেকবার বিদ্যুৎ চমকায় আর আমরা কলেমা পড়তে থাকি। একবার মনে হলো, পেছনের গুলি বা সামনের বিপদ নয়, এই বজ্রপাতেই নির্ঘাত প্রাণ যাবে সবার। তবু থামার উপায় নেই। প্রাণ বাঁচানোর একটাই উপায়,Ñসামনে ভারত সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলা। তা-ই করতে থাকলাম।
এরই মধ্যে মনে হলো, মেজর মঞ্জুরের ছেলেমেয়ে দুটি জেগে উঠেছে। বজ্রপাতের বিকট শব্দ কিংবা সিডাক্সিনের প্রভাব কেটে যাওয়ায় তাদের ঘুম ভেঙে গেছে। ভালোভাবে লক্ষ করে দেখলাম, ছেলেমেয়েরা এমন অদ্ভুত পরিবেশে ও অন্ধকারে ভুতুড়ে চেহারার আমাদের মতো মানুষ দেখে অবাক হয়ে ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শিয়ালকোট সেনানিবাসের বাসায় দেখা সেই প্রাণবন্ত ও হাসিমাখা মুখের সঙ্গে এই শিশুদের মুখ মেলানো যায় না। আবার জেদও চাপল; অন্তত এই শিশুদের জন্য হলেও একটা নিরাপদ দেশ আমাদের গড়তেই হবে।
ক্রমেই আমরা পূর্ব দিকে তথা সীমান্তের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। যেতে যেতে আমরা একটা বাজরা (একধরনের বার্লি) খেতের মধ্যে ঢুকে গেলাম। অতি সাবধানে চলা সত্ত্বেও হঠাৎ লক্ষ করলাম, আমাদের সামনে কিছুটা ডান দিকে টর্চলাইট জ্বলছে। বুঝতে বাকি থাকল না যে আমরা পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষী বা পাঞ্জাব রেঞ্জার্সদের কোনো সীমান্তচৌকি বা বর্ডার অবজারভেশন পোস্টের (বিওপি) কাছাকাছি চলে এসেছি। সবার মুখ শুকিয়ে গেল। আবারও বুকের স্পন্দন বেড়ে গেল। ভয়ার্ত চোখে দেখলাম, টর্চের আলো ফেলে বাজরাখেতে কী যেন খুঁজছে পাঞ্জাব রেঞ্জার্সের সদস্যরা। আমরা যথাসম্ভব মাটির সঙ্গে মিশে থাকলাম। তারপরও দেখলাম, একটি ছোট দল যেন আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। এবার মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।
কিছু দূর এগিয়ে তারা থামল। টর্চের আলো ফেলে চারদিকে কী যেন খুঁজছে বলে মনে হলো। টেনশনে আমাদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। কারণ, আমরা ভেবেছিলাম, তারা আমাদের দেখে ফেলেছে। এখনই গুলি করবে। আমরাও পিস্তল নিয়ে প্রস্তুত। এ সময় এমন ঘটনা ঘটল, যা কেবল অলৌকিক বললেও কম বলা হবে। একদিকে মেজর মঞ্জুরের ছোট্ট ছেলেটি ভয় পেয়ে বা অন্য কোনো কারণে কেঁদে উঠল। আর ঠিক তখনই আকাশ থেকে আশপাশে কোথাও বিকট শব্দে বজ্র পড়ল। মিসেস মঞ্জুর সর্বশক্তি দিয়ে ছেলের মুখ চেপে ধরলেন। আর সীমান্তরক্ষীরা হয়তো বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতেই দ্রুত ফিরে গেল। বুঝতে পারলাম, কেঁদে ওঠার ঠিক আগমুহূর্তে বজ্রপাত হওয়ায় কান্নার কোনো শব্দই হয়তো শুনতে পায়নি তারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে একটি কথাই মনে হলো, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে?’ এত দিন জানতাম, বজ্রপাতে খোলা মাঠে থাকা মানুষ মারা যায়। আজ নিজ জীবনে প্রত্যক্ষ করলাম যে বজ্রপাত বাঁচিয়ে দিয়েছে আমাদের আটটি জীবন।
এ ঘটনার পর আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এল। বুঝলাম, আমাদের ভাগ্যে পাকিস্তানিদের হাতে মৃত্যু লেখা নেই। তাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এবং নতুন জীবনদানের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এগিয়ে গেলাম সীমান্তের দিকে। মনে হলো, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। কেউ আর আমাদের আটকাতে পারবে না।
চারদিকে নজর রেখে হেঁটে হেঁটে পাড়ি দিলাম বেশ কিছুটা পথ। সমতল ভূমি হওয়ায় হাঁটার গতিও বাড়ল। রাত প্রায় শেষের দিকে মনে হলো, আমরা বোধ হয় সীমান্তরেখা অতিক্রম করে ফেলেছি। চারদিকে কাউকে না দেখে সতর্কতার সঙ্গে ঘড়ি দেখলাম। ভোররাত সাড়ে চারটা বাজে। ঘোর অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছিল না, আমরা ঠিক কোথায় আছি কিংবা এখন কোন দিকে যাওয়া উচিত। একটু অপেক্ষা করলাম সবাই।
রাতের অন্ধকার একটু একটু করে কমতে লাগল। সামান্য আলোর আভায় বুঝতে পারলাম, সামনেই একটি পাকা সেচ খাল। তড়িঘড়ি সবাই সেই সেচ খালে আশ্রয় নিলাম। এবার নিজেদের কিছুটা নিরাপদ মনে হলো। কারণ, মেশিনগানের গুলি এলেও আমাদের শরীরে লাগার আশঙ্কা নেই। একটু ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে চারদিকটা দেখার ও বোঝার চেষ্টা করলাম। আবছা অন্ধকারে অদূরে একটা টেলিগ্রাফ পোস্ট নজরে পড়ল। এটা দেখেই চোখেমুখে যেন আনন্দ আর তৃপ্তি নেমে এল। কারণ, আমরা জানতাম, এমন টেলিগ্রাফ লাইন কেবল ভারতের ভূখণ্ডেই আছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে নয়। আমাদের মনেই ছিল না যে পাকিস্তান অংশে এমন পাকা করা সেচ খালও নেই। তাই নিশ্চিত মনে সেচ খালে বসে রইলাম কিছুক্ষণ। টিপটিপ বৃষ্টি পড়লেও খালের তলদেশে তখনো পানি জমেনি। তাই খালে বসেই আরেকটু আলো ফোটার অপেক্ষায় থাকলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, দিনের আলোয় চারদিকে দেখব, বুঝব এবং তারপর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এগিয়ে যাব।
বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে তখন ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত মোটামুটি উত্তপ্ত এবং উভয় পক্ষ থেকে কড়া পাহারা বসিয়ে সতর্ক অবস্থা জারি করা ছিল। যে কারণে অসতর্ক হয়ে এগোতে গিয়ে আমাদের পক্ষে যেকোনো বিপদে পড়ার এমনকি যেকোনো পক্ষের গুলির শিকার হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই দিনের আলোয় দেখেশুনে পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। একটানা হেঁটে আসার ফলে আমরা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই কিছুক্ষণের মধ্যে সেচ খালের ভেতরে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঝিমোতে থাকি।
ভোর ছয়টা-সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা খালের ভেতর থেকে উঁকি মেরে আশপাশে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আসা লোকজনের আনাগোনা দেখতে পাই। বোঝা যায় যে পাঞ্জাব ও তার আশপাশের অঞ্চলের নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই মাঠে প্রকৃতির কাজ সম্পন্ন করতে অভ্যস্ত। লোকজনের চলাচল লক্ষ করে আরও নিশ্চিত হই যে আমরা ভারতের ভেতরেই ঢুকে পড়েছি। এবার কিছুটা আশ্বস্ত হই। এটা অপরিচিত এলাকা। আমাদের প্রতি লোকজনের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা তখন ছিল না। তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত আমাদের ছিল। এ কারণে সেচ খাল থেকে সবাই বেরিয়ে না এসে মেজর তাহের ও মেজর জিয়াউদ্দিনকে অবস্থা জানার জন্য গ্রামবাসীর কাছে পাঠালাম। এর মধ্যে আমাদের উপস্থিতি লক্ষ করে এক জায়গায় কিছু গ্রামবাসী জড়ো হয়েছিল। তাহের ও জিয়াউদ্দিনের হাতে আত্মরক্ষার জন্য দুটি গলফ স্টিক ছিল। ওই গলফ স্টিক ধরা হাতে তাঁরা গ্রামবাসীকে কাছে আসার জন্য ইশারা করলে গ্রামবাসী প্রথমে ইতস্তত করে এবং ভয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। অবশেষে তাদের ভেতর থেকে দুজন পুরুষ এগিয়ে আসে। তারা ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবের একেবারে অজপাড়াগাঁয়ের লোক। আমাদের উর্দু কথা তারা মোটেই বুঝতে পারল না। তাদের কাছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বা বিএসএফ ক্যাম্পের সন্ধান চাইলাম এবং সেখানে খবর দিতে বললাম। অনেক কষ্টে তারা আমাদের কথা বোঝে। তারা জানায় যে তাদের গ্রামের পাশেই বিএসএফের একটি ক্যাম্প রয়েছে। ...
কর্নেল (অব.) বজলুল গনি পাটোয়ারী সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন।