লেবাননে ইসরায়েলের বোমা হামলা
লেবাননে ইসরায়েলের বোমা হামলা

‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের’ স্বপ্ন দেখছে ইসরায়েল

হামাসের ইসরায়েলে হামলার বছর পূর্তির (অক্টোবর ৭) মাত্র কয়েক দিন আগে হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হলো। এভাবে লেবাননে হিজবুল্লাহর শিরশ্ছেদ করে ইসরায়েল সরকার এখন আশা করছে যে আঞ্চলিক শত্রুদের সঙ্গে লড়াইয়ে তারা অবশেষে বড়সড় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানাচ্ছিল, ইসরায়েল যেন সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে না দেয়। কিন্তু ইসরায়েল চলমান মুহূর্তকে এমন একটা চমৎকার সুযোগ হিসেবে দেখেছে, যা হাতছাড়া করা চলে না। আর এখন সে দেশের ভেতরে অনেকেই একে কাজে লাগিয়ে শুধু হিজবুল্লাহ নয়; বরং ইরানের বিরুদ্ধেও জোরেশোরে আঘাত হানার আশা করছে। হাজার হোক, ইরান হলো সেই ‘প্রতিরোধ অক্ষ’, যেখানে হামাস, হিজবুল্লাহ, ইরাক ও সিরিয়ার জঙ্গি দল এবং ইয়েমেনের হুতিরা অন্তর্ভুক্ত।

নাসরুল্লাহকে হত্যার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই ‘অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন’ ঘটার কথা বলেছেন। যদি ইসরায়েল ‘প্রতিরোধের অক্ষকে’ ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত করতে পারে, তাহলে এ অর্জনকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) নীরবে স্বাগত জানাবে। এ দুটি দেশই ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং তারা ইরানকে নিয়ে ভীত।

অবশ্য সৌদি আরব বারবারই বলে আসছে যে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপনের জন্য একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া আঞ্চলিক সংঘাত ও বৈরিতা বেড়ে গেলে তা সৌদি সরকারের উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

দুই.

ইসরায়েলের জন্য আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদল হওয়ার মানে হলো, ৭ অক্টোবর জাতীয় পর্যায়ে পরাজয় ও বিভ্রান্তির যে বয়ান তৈরি হয়েছিল, তাকে উল্টে দেওয়া। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য এক বড় অপমান। ইসরায়েল সব সময় শত্রুদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকে—এ সুনাম এক দিনেই ধসে পড়েছিল, যখন ইসরায়েল ব্যাপকভাবে হামাসের কাছে পরাভূত হয়।

এর পর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ ইসরায়েলের গর্ব বা নিরাপত্তা—কোনোটিই পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। যে অভিযানে বিপুল পরিমাণ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে, সেই অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল সব জিম্মিকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি। বৈশ্বিক জনমতের লড়াইয়েও ইসরায়েল ক্রমে হেরে যাচ্ছে। দেশটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে।

তবে পেজার বিস্ফোরণ দিয়ে শুরু হওয়া হিজবুল্লাহর ওপর ধারাবাহিক হামলার সাফল্য ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের সুনামকে পুনরুদ্ধার করেছে, দেশটির জনগণের মনোবলও চাঙা করছে। পেজার বিস্ফোরণে হিজবুল্লাহর অনেক পদাতিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আর এটা সত্যি যে বহু লেবাননি নাগরিক এবং গোটা আরব বিশ্বের অনেকেই হিজবুল্লাহর ওপর বীতশ্রদ্ধ। সে কারণেই ইসরায়েল গণহারে নিন্দিত হয়নি।

কোনো সন্দেহ নেই, হিজবুল্লাহ ও হামাস ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে গাজা কীভাবে শাসিত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর ইসরায়েলের জানা নেই। লেবাননের দুর্বল তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়তো হিজবুল্লাহর কারণে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে সক্ষম হবে না। এতে করে ইসরায়েল সীমান্তে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র দেখা দেবে।

হিজবুল্লাহর ওপর নেমে আসা ধ্বংসযজ্ঞ ইরান সরকারকে সম্ভবত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। ইসরায়েলের ঠিক পূর্ব সীমান্তে বিপুলসংখ্যক রকেটের ভান্ডার নিয়ে ইরানের মদদপুষ্ট একটি শক্তিশালী জঙ্গি বাহিনীর উপস্থিতি সব সময়ই ইরানের পক্ষে ইসরায়েলকে ঠেকিয়ে রাখার প্রধান ক্ষমতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এখানে হিসাবটা ছিল এ রকম: ইসরায়েল সরাসরি ইরানে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকবে, না হলে তেহরান হিজবুল্লাহকে লেলিয়ে দেবে।

যখন ইরানের মিত্র ও সহযোগী বা বিকল্প শক্তিগুলো ধুঁকছে, দেশটি দ্বিধায় পড়ে গেছে। ইরান হামাসকে সরাসরি সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। এখন হিজবুল্লাহর বিপর্যয়ের সময়ও যদি এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে তার মিত্ররা একে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করবে। এতে করে ইসরায়েল আরও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে। এমনকি দেশটি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়ও সরাসরি হামলা চালাতে পারে, যার হুমকি দিয়ে আসছে কয়েক দশক ধরে।

অন্যদিকে ইরান যদি ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে দেশটির সরকারের অস্তিত্বই ঝুঁকির মধ্যে পতিত হবে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র যখন সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। মার্কিনরা হলফ করেছে যে তারা মধ্যপ্রাচ্যে আর কোনো যুদ্ধে জড়াবে না। কিন্তু ইসরায়েলকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে তারা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা এটাও দেখিয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্যে সরকার বদলে দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সংঘটিত ইরাক যুদ্ধের যে রক্তাক্ত ও গোলযোগময় পরিণতি হয়েছে, তা তো ওয়াশিংটনের জন্য সাম্প্রতিক ও যন্ত্রণাময় স্মৃতি। কিন্তু ইরান যখন পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জনের খুব কাছাকাছি চলে গেছে, তখন সেখানে আঘাত হানার জন্য ইসরায়েলের উত্তেজনা এখন আরও বাড়বে।

তিন.

অনেক উত্তেজিত ইসরায়েলি সমর্থক চলমান মুহূর্তকে ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছেন। ওই ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিজয় মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যই বদলে দিয়েছিল।

এটা ঠিক যে ইসরায়েলের জন্য এখন পরিষ্কারভাবে অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি আছে বড় ধরনের বেশ কিছু ঝুঁকি। হিজবুল্লাহ ধুঁকছে বটে, কিন্তু ভান্ডারে যে ক্ষেপণাস্ত্র আছে, তা ব্যবহার করার সক্ষমতা ফুরিয়ে যায়নি। বরং তা দিয়ে ইসরায়েলের প্রধান শহরগুলোয় কয়েক দফা আঘাত হানতে পারবে। ইসরায়েল লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করেছে মঙ্গলবার। এতে করে দেশটি হয়তো সংঘাতের এমন পাকচক্রে আটকা পড়তে পারে, যা বছরের পর বছর চলবে। আর তা ঘটবে এমন এক সময়ে, যখন তার সেনাবাহিনী গাজায় যুদ্ধরত।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ দীর্ঘ মেয়াদে হিজবুল্লাহর নতুন প্রজন্মের যোদ্ধা তৈরি করতে পারে। আজকে হামাস যোদ্ধাদের ৬০ শতাংশই তো আগেকার সংঘাতগুলোয় যারা এতিম হয়েছিল, তাদের থেকে উঠে এসেছে বলে মনে করা হয়।

কোনো সন্দেহ নেই, হিজবুল্লাহ ও হামাস ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে গাজা কীভাবে শাসিত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর ইসরায়েলের জানা নেই। লেবাননের দুর্বল তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়তো হিজবুল্লাহর কারণে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে সক্ষম হবে না। এতে করে ইসরায়েল সীমান্তে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র দেখা দেবে।

নেতানিয়াহু হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু আঞ্চলিক গোলযোগ যেসব বিপদ ডেকে এনেছে, সেগুলোই হয়তো পরিণতি হিসেবে দেখা দেবে।

চার.

এদিকে এক বছর ধরে বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে এই আশঙ্কায় যে যুদ্ধ বাধলে তা যুক্তরাষ্ট্রকেও টেনে আনবে অথবা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় বিপর্যয় তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি এখন পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার পথে। এ বছরে দ্বিতীয়বারের মতো ইরান ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে আর যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো বিধ্বস্ত করতে ইসরায়েলকে সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইরানকে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে ‘ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করার’ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল যৌথ সামরিক অভিযানের হুমকির আশঙ্কাজনক বার্তাই দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এপ্রিল মাসে ইসরায়েলকে পাল্টা আঘাত করা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল এমনভাবে যেন ইরান তা কৌশলগতভাবে মেনে নেয়। ফলে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা আর ঘটেনি। তবে এবারও সে রকমটা হবে, তেমন সম্ভাবনা কম মনে হচ্ছে।

লেবাননে ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করার মধ্য দিয়ে মাত্রই তার আঞ্চলিক শত্রুদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় যুদ্ধক্ষেত্র খুলেছে। তার আগে ব্যাপক আঘাত হেনে হিজবুল্লাহকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। ফলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েল সরকার বেশ উল্লসিত যে শত্রুরা এখন দৌড়ের ওপর আছে। তাই তারা ইরানের ওপরও জোরেশোরে আঘাত হানতে চাইছে এই প্রত্যাশায় যে এতে করে দেশটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়বে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিও অনেক পিছিয়ে যাবে।

মঙ্গলবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর ইসরায়েল যে পাল্টা আঘাত হানতে পারে, সে ঝুঁকির কথাও ইরানের ভালোভাবে জানা আছে। দেশটির অনেকেই ভয় পাচ্ছেন যে আরেক দফা মিসাইল ছুড়ে তাঁরা এখন এক ফাঁদের ওপর দিয়ে হাঁটছেন। কিন্তু তেহরানে জুলাই মাসে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর এখন হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের আঘাতের প্রত্যুত্তর না দেওয়াটাও ইরানের জন্য বিরাট ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়।

যুদ্ধ ও প্রতিরোধের এক ক্রূর যুক্তি হলো যে যদি কোনো শক্তিধর দেশ তার বন্ধুদের রক্ষা করতে না পারে বা নিজ দেশের রাজধানীতে হামলার জবাব দিতে না পারে, তাহলে তার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আর এই দুর্বলতা আরেক দফা আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে, যা আবার দেশটির প্রভাব ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে।

পাঁচ.

প্রকাশ্যে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেও হোয়াইট হাউস হয়তো এখনো ইসরায়েলকে প্রত্যাঘাত এমনভাবে সংযত রাখার জন্য বুঝিয়ে যাচ্ছে যেন তা ভয়াবহ না হয় আর ইরানও যেন পাল্টা হামলা চালানোর বাধ্যবাধকতা অনুভব না করে। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যে আর কোনো সংঘাতে জড়ানোর খায়েশ যে নেই, তা তো আগেই বলা হয়েছে।

গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি সেনারা যুদ্ধরত থাকায় নেতানিয়াহু সরকার হয়তোবা নিজের স্বার্থেই ইরানের সঙ্গে এখনই সরাসরি সংঘাতে যাবে না। কিন্তু ইসরায়েল যদি ঠিক করে যে সে সরাসরি কঠোর পদক্ষেপ নেবে, তাহলে তারা হাসিমুখেই বাইডেন প্রশাসনের সংযত থাকার আহ্বান অবজ্ঞা করবে, যা আগেও করে এসেছে। হোয়াইট হাউসের আশা হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে কাজ করলে তারা ইসরায়েলের প্রত্যাঘাতের শক্তি ও ধরনের ওপর প্রভাব রাখতে পারবে।

কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে অনুরোধ জানিয়ে এসেছিল হিজবুল্লাহর ওপর আঘাত না হানতে। গত মাসে ইসরায়েল আঘাত হানা শুরু করলে বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অন্যদের সঙ্গে যোগ দেয় তাৎক্ষণিকভাবে লেবাননে যুদ্ধবিরতির আহ্বানে। এ আহ্বানও উপেক্ষিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে বিভ্রান্তির সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে নেতানিয়াহু সরকার তার ঘনিষ্ঠতম মিত্র ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দানকারীর আহ্বান, অনুরোধ বা ইচ্ছাকে ক্রমাগত উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করে চলেছে। বাইডেন প্রশাসন গাজা ও লেবাননে সংযত হওয়ার জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান করছে। পাশাপাশি সংঘাত বেড়ে গেলে ইরান ও অন্যান্য আঞ্চলিক শত্রুদের কাছ থেকে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অতিমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ফলে ইসরায়েল সরকার এটা বোঝে যে বাইডেন প্রশাসনকে উপেক্ষা করার তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। বরং ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তিকে যদি মাঠে টেনে আনা যায়, তাহলে লাভই আছে।

যেকোনো সংকটে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন দেবে না—এমন আশঙ্কা সব সময় খুবই কম। আর দেড় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এমন সময় তো তার প্রশ্নই আসে না। গাজা বিষয়ে নেতানিয়াহুকে কঠোর ভাষায় কথা বলার ভান করেছিলেন কমলা হ্যারিস। তবে এই বিপদের সময় তিনিও ইসরায়েলকে পুরোপুরি সমর্থন দিতে ও কঠিন অবস্থান দেখাতে চাইবেন। আর ইরানের বিষয়ে কোনো নরম অবস্থান দেখানোর ঝুঁকিও নেবেন না। সেই ১৯৭৯-৮১ সময়কালের জিম্মি সংকটের সময় থেকে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বৈরিতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

এই সবকিছুর পরও চলমান বিপজ্জনক পরিস্থিতি কমলা হ্যারিসের জন্য দুঃসংবাদই বয়ে আনতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো দাবি করে বসবেন যে তাঁর সময়কালে দুনিয়াজুড়ে শান্তি ছিল, কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের দুর্বলতা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সংঘাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি তো তাঁর এ দাবির সঙ্গে এখন বেশ খাপ খেয়ে যায়।

প্রতিবারই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালে ‘অক্টোবর বিস্ময়’ বলে একটা ব্যাপার নিয়ে বেশ জল্পনাকল্পনা হয়। এই ‘বিস্ময়’টা হলো হঠাৎ এমন কোনো ঘটনা, যা ভোটের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নির্বাচনী দৌড়ের হিসাব ওলট-পালট করে দিতে পারে। ইসরায়েল ও ইরান এখন সেই ‘বিস্ময়’ ঘটিয়েছে, যা থেকে ট্রাম্পই হয়তো সুবিধা পেয়ে যাবেন।

  • গিডিয়ন র‍্যাচম্যান ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার। এফটিতে প্রকাশিত লেখার ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছেন আসজাদুল কিবরিয়া