সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখের মধ্যে আমাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, এটাই সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিযোগিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। কারণ, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গীরা চায় বর্তমান সংবিধানের আওতায় অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
অন্যদিকে বিএনপিসহ আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের অধীন নির্বাচন। ইতিমধ্যেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজপথ ততই উত্তপ্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে জনদুর্ভোগ বাড়ছে।
এটি সুস্পষ্ট যে রাজনৈতিক দলগুলো যদি অবিলম্বে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে একটি সমঝোতায় না পৌঁছায়, তাহলে সামনের দিনগুলোয় উত্তাপ-উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং আমরা এক ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি। আমাদের অর্থনীতিও চরম বিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত হতে পারে। ফলে জাতি হিসেবে আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হতে পারি, যা কারোরই কাম্য হতে পারে না।
কিন্তু দলীয় সরকার বনাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার—এই অনড় দাবি থেকে কোনো পক্ষেরই এখন সরে আসা সম্ভব নয়, কারণ, যে পক্ষই এ বিষয়ে ছাড় দেবে, জনগণের দৃষ্টিতে ভোটের আগেই সে পক্ষের অনিবার্য পরাজয় ঘটবে। তাই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টিকে মূল বিরোধের কেন্দ্র হিসেবে ধরে নিলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান অচলাবস্থার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। কারণ, বর্তমানে বিষয়টি একটি ‘জিরো-সাম গেমে’ বা জয়-পরাজয়ের বিষয়ে পরিণত হয়ে পড়েছে। তাই সমাধান খোঁজার জন্য আমাদেরকে ‘উইন-উইন’ বা জয়-জয় অবস্থার অন্বেষণ করতে হবে। আর এর জন্য আমাদেরকে সমস্যার মূলে যেতে হবে।
আমাদের মূল ইস্যু হলো ভোটাধিকারের সমস্যা। জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃষ্টি হলেও গত ৫২ বছরে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা রদবদলের এবং একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সমস্যার টেকসই সমাধান করতে পারিনি, যার বহিঃপ্রকাশ চলমান অস্থিরতা। তাই এখন আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে আমাদের ভোটাধিকার তথা টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে একটি ‘কম্প্রিহেনসিভ’ বা সার্বিক সমাধানের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হতে হবে। এমন দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খোঁজার মধ্য দিয়েই একটি উইন-উইন ফর্মুলা বেরিয়ে আসতে পারে, যার ভিত্তিতে একটি সমঝোতা ও সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।
এটি সুস্পষ্ট যে রাজনৈতিক দলগুলো যদি অবিলম্বে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে একটি সমঝোতায় না পৌঁছায়, তাহলে সামনের দিনগুলোয় উত্তাপ-উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং আমরা এক ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদি সার্বিক সমাধানের বিষয়গুলো হতে পারে নিম্নরূপ:
১. রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণতার অবসান ঘটিয়ে রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচারবোধ ফিরিয়ে আনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির চর্চা করা। রাজপথে হানাহানির পরিবর্তে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব জাতীয় সমস্যার সমাধান করা। ব্যক্তি ও কোটারি স্বার্থের পরিবর্তে জনস্বার্থকে রাজনীতির লক্ষ্যে পরিণত করা।
২. কার্যকর জাতীয় সংসদ: জাতীয় সংসদকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস’ পদ্ধতি কার্যকর হয়। এ জন্য প্রয়োজন স্থানীয় উন্নয়নে জড়িত হওয়ার পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের আইন প্রণয়ন ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে নিবিষ্ট রাখা। সংসদ সদস্যদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন এবং সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ-অধিকার ও দায়মুক্তি আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে ‘সংসদ অবমাননার’ জন্য শাস্তি প্রদান করা।
৩. স্বাধীন বিচার বিভাগ: প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক্করণের মাধ্যমে এর স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সঠিক ব্যক্তিদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা।
৪. সাংবিধানিক সংস্কার: সাংবিধানিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, যাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে সংবিধান সংশোধন করা। সংবিধান সংশোধনের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো হতে পারে: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা, সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রচলন, সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করা ইত্যাদি।
৫. গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল: গণতান্ত্রিক, পরিচ্ছন্ন ও দায়বদ্ধ রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; সব রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক বিধিবিধান সংযোজন ও তা অনুসরণ; দলগুলোকে দুর্বৃত্তমুক্ত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী দলের লেজুড়বৃত্তির অঙ্গসহযোগী সংগঠন ও বিদেশি শাখা বিলুপ্ত করা, যাতে ফায়দা প্রদানের রাজনীতির অবসান হয়। সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার পরিহারের ঘোষণা প্রদান করা। সমাজের সব শুভ শক্তিকে সংগঠিত করে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা নিরসনে একটি সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করা।
৬. স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান: দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইনি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা এবং এসব প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করা।
৭. দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান: একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে (যুদ্ধাপরাধীদের মতো) দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধভাবে উপার্জিত ও পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর্থিক খাতে লুটপাট প্রতিরোধ এবং এ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার করা। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ও সব ধরনের লুণ্ঠনকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা।
৮. প্রশাসনিক সংস্কার: যথাযথ প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী জনপ্রশাসন আইন প্রণয়ন এবং মান্ধাতার আমলের পুলিশ আইনের সংস্কার করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারি নিশ্চিত করা। প্রশাসন, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতির অবসান করা এবং সরকারি কর্ম কমিশনকে একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।
৯. বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার: আইনকানুন ও বিধিবিধানের যথাযথ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, যাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত, নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও কার্যকর হতে পারে। স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করা অর্থ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যয় এবং এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলোর (এসডিজি) স্থানীয়করণ করা।
১০. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ আইনি সংস্কার, বিশেষত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮-এর সংস্কার করা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমের স্বায়ত্তশাসন ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্প্রচার কমিশন গঠন করা।
১১. শক্তিশালী নাগরিক সমাজ: একটি কার্যকর ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ গঠনের পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা, যাতে রাষ্ট্রবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারি করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কার্যকর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে পারে। অযাচিত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটানোর মাধ্যমে নাগরিক সমাজের কাজের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
১২. মানবাধিকার সংরক্ষণ: মানবাধিকার সংরক্ষণ ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার লক্ষ্যে নিবর্তনমূলক আইনগুলোর সংস্কার ও বাতিল করা এবং নিবর্তনমূলক নতুন আইন প্রণয়ন থেকে বিরত থাকা। গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসানের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতির অবসান করা।
১৩. একটি নতুন সামাজিক চুক্তি: রাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান আয় ও সুযোগের বৈষম্য নিরসনে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি প্রণয়ন করা, যাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হয়, তঁারা মানসম্মত সেবা সুলভ মূল্যে ও দায়বদ্ধতার ভিত্তিতে পান এবং সত্যিকারভাবেই রাষ্ট্রের মালিকে পরিণত হন। প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতি সব বৈষম্যের অবসান করা।
১৪. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পগুলো বাতিল করা।
১৫. তরুণদের জন্য বিনিয়োগ: ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাজনিত বিশেষ সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে তরুণদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। গ্রামীণ শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৬. নারীর ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সব নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সব ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমসুযোগের ব্যবস্থা করা।
১৭. পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন: পাহাড়ি আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার পূরণে লক্ষ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করা। একই সঙ্গে সমতলের আদিবাসীসহ দলিত সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের অগ্রগতির পথ সুগম করা।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো প্রাথমিক অ্যাজেন্ডা হিসেবে ধরে নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন ও স্বাক্ষর করা সম্ভব হলে আমাদের রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হবে, যেমনটি ঘটেছিল ১৯৯০ সালের ‘তিন জোটের রূপরেখায়’। এ জন্য অবশ্য মধ্যস্থতার প্রয়োজন হতে পারে। তবে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হবে সুষ্ঠু নির্বাচন তথা জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি নির্বাচিত সরকার।
তবে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হবে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার, যে সরকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে।
এ সরকার হতে পারে নির্দলীয়, বহুদলীয় কিংবা এ দুটির সমন্বয়ে গঠিত সরকার, যা ঠিক করার দায়িত্ব মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর, যদিও এ বিষয়ে অন্যান্য অংশীজনের সহায়তা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। এর জন্য আরও প্রয়োজন হবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, কারণ, বর্তমান কমিশনের নিয়োগ হয়েছে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। এ ছাড়া প্রয়োজন হবে অতীতের প্রজ্ঞাপনকে নতুন খোলস দিয়ে যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তার যুগোপযোগীকরণ। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের দায়িত্ব হবে জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
● ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)